প্রতি বছর আমাদের দেশে যত সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী নিয়ে বের হয় সে তুলনায় আমাদের চাকুরীর বাজার খুবই ছোট বললে ভুল হবে না।দীর্ঘদিন লেখাপড়া শেষে আমাদের সকলেরই টার্গেট থাকে যেকোনো একটা চাকুরীতে যোগদান করা।আর এই কারনেই দেখা যায় কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেই একের পর এক চাকুরীতে সবাই আবেদন করতে থাকে।অনেক সময় দেখা যায় কোন চাকুরীতে যে কয়টা পদের উল্লেখ করা হয় তাঁর চাইতে কয়েকগুন বেশী চাকুরীর আবেদন আসে।
যেহেতু পদ সংখার চাইতে আবেদনকারীর সংখ্যা কয়েকগুন সেহেতু আপনাকে এখানে অন্যদের চাইতে সেরা প্রমান করতে হবে।কিন্তু কিভাবে অন্যদের চাইতে সেরা প্রমান করবেন?প্রমান করার জন্য আপনাকে লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে হবে এবং একই সাথে চাকুরীর ইন্টারভিউ এর সময়ও আপনাকে অন্যদের চাইতে সেরা প্রমান করতে হবে।
আমাদের আজকের এই পোস্টের মূল আলোচিত বিষয় হল আমরা যখন কোন প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর ইন্টারভিউ দিতে যাব তার পূর্বে আমাদের কি ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে।আজকের এই আর্টিকেল সম্পূর্ণ পড়লে অনেকের মাঝে যে চাকুরীর ইন্টারভিউ নিয়ে ভয় কাজ করে সেটাও চলে যাবে আশা করি।
চাকুরীর ইন্টারভিউয়ের প্রশ্ন এবং সেই প্রশ্ন গুলোর উত্তর সম্পর্কে আলোচনা
চাকুরীর ইন্টারভিউয়ে করা প্রশ্ন গুলো কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপরে করা হয়ে থাকেনা।আপনার মেধা কেমন সেটা আপনার লিখিত পরীক্ষা এবং একাডেমিক ফলাফল দেখলেই বুঝা যাবে।মূলত আপনাকে চাকরির ইন্টারভিউ ডাকা হয় আপনার ব্যাক্তিত্ত এবং আপনার মানুষিকতা যাচাই করার জন্য।তারপরেও আমরা বেশ কিছু এমন ব্যাক্তির সাথে তাঁদের চাকুরীর ইন্টারভিউয়ে করা প্রশ্নের ধরন এবং কি ধরনের প্রশ্ন করা হয় সেগুলো জানার চেষ্টা করেছি।এবং বেশীরভাগ চাকরির ইন্টারভিউয়ে যে ধরনের প্রশ্ন গুলো বেশী করা হয় সেই প্রশ্ন গুলো নিয়েই আপনাদের জন্য আজকের এই লেখা সাজিয়েছি।
(১) নিজেকে উপস্থাপন করা
আমরা প্রায় পঞ্চাশের অধিক চাকুরীজিবির সাথে কথা বলে এটা বুঝতে পেরেছি যে চাকুরীর ইন্টারভিউ বোর্ডে সব চাইতে বেশী যে প্রশ্নটি করা হয়ে থাকে সেটি হলঃ আপনার নিজের সম্পর্কে বলুন।এখন নিজের সম্পর্কে বলা বলতে কি বুঝায়?আপনার সম্পূর্ণ জীবন কাহিনী?না সম্পূর্ণ জীবন কাহিনী বুঝায় না।এই প্রশ্নটির মাধ্যমে তাঁরা আপনার নাম,ঠিকানা,শিক্ষাগত যোগ্যতা,আপনার বর্তমান অবস্থা (আপনি এখন কি করছেন) এবং আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি এই বিষয় গুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে জানতে চায়।
এখন যদি আপনি তাঁদের আপনার সম্পূর্ণ জীবনের কাহিনী বলতে যান তাঁরা বিরক্ত হতে পারে এবং আপনাকে একজন বাচাল স্বভাবের মানুষ মনে করতে পারে।তাই যথাসম্ভব সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করতে হবে।
(২) আপনি আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে কেন চাকুরী করতে চান?
ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যরা আপনার কাছে জানতে চাইবে এত এত প্রতিষ্ঠান থাকতে আপনি কেন আমাদের প্রতিষ্ঠান কে বেছে নিলেন চাকুরী করার জন্য।আপনাকে এই প্রশ্নটির উত্তর খুব সাবধানতার সাথে দিতে হবে।কারন ইন্টারভিউ বোর্ডে থাকা সদস্যরা খুব সহজেই এই প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে অনেক জনের মধ্য থেকে সেরা একজনকে আলাদা করে ফেলতে পারে।
আপনি যখন এই প্রশ্নের উত্তর দিবেন তখন আপনাকে এই প্রতিষ্ঠানের ভালো দিক গুলো সম্পর্কে বলতে হবে।এবং খেয়াল রাখতে হবে এই কোম্পানির ভালো দিক গুলো উপস্থাপন করতে যেয়ে কোনভাবেই অন্য কোন কোম্পানিকে খারাপ ভাবে তাঁদের সামনে উপস্থাপন করা যাবে না।
আবার এই প্রতিষ্ঠানের সব গুলো ভালো কারনের উপরে নির্ভর করে চাকুরী করতে আগ্রহী সেটাও বলা যাবে না।সব চাইতে ভালো উপায় হল সেই কোম্পানির যতগুলো ভালো দিক আছে তার মধ্য থেকে যেকোনো একটি ভালো দিকের উপরে ফোকাস করে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া।
(৩) চাকুরী সম্পর্কে কিভাবে জানলেন?
আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হবে আপনি যে আমাদের প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর আবেদন করেছেন আপনি কিভাবে জেনেছেন আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানে লোক নিয়োগ দিব?এই প্রশ্নের উত্তর খুবই সোজা আপনি যে সোর্স থেকে চাকুরীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে জেনেছেন সেটা বলে দেওয়া।আপনি যদি কোন পত্রিকা মারফত জেনে থাকেন তাহলে সেই পত্রিকার নাম বলে দিবেন (সম্ভব হলে তারিখ সহ বলবেন)।আর যদি কোন অনলাইন চাকুরীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ওয়েবসাইট থেকে জেনে থাকেন সেই ওয়েবসাইটের নাম বলবেন।
(৪) এখানে আরও চাকুরী প্রার্থী থাকতে আপনাকেই কেন আমরা চাকুরী দিব?
আমরা যাদের সাথে কথা বলেছি তাঁরা আমাদের জানিয়েছে এই প্রশ্নটি ইন্টারভিউ বোর্ডে খুব বেশিবার করা হয়নি।কিন্তু যদি করা হয়ে থাকে তাহলে এটা আপনার জন্য দারুন একটি সুযোগ তৈরি করতে পারে।কারন এই প্রশ্নের উত্তরে আপনি আপনার যোগ্যতা,অভিজ্ঞতা,কর্ম দক্ষতা সহ আপনার সকল পজেটিভ দিকগুলো তাঁদের সামনে তুলে ধরতে পারেন।যা আপনাকে চাকুরী পাওয়ার সম্ভবনা বাড়িয়ে দেয় অনেক।সুতরাং এই প্রশ্নের উত্তর আপনাকে খুব বেশী সাবধানতার সাথে দিতে হবে।
(৫) আপনার কি এমন কোন খারাপ অভ্যাস অথবা দুর্বলতা আছে যা আপনি ছাড়ার চেষ্টা করছেন?
এই প্রশ্নের মাধ্যমে মূলত আপনার দুর্বল দিক জানার চেষ্টা করা হয় এবং একই সাথে আপনার সততার পরীক্ষাও নেওয়া হয়।এই প্রশ্নের মাধ্যমে বুঝার চেষ্টা করা হয় আপনি নিজে নিজেকে কতটুকু জানেন।আপনার যে ধরনেরই দুর্বলতা থাক না কেন আপনার উচিত হবে এই প্রশ্নের উত্তর সত্য বলে দেওয়া।
কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তরে কখনও বলবেন না আপনার কোন দুর্বল দিক নেই।এটা বললে তাঁরা বুঝে ফেলবে যে আপনি তাঁদের মিথ্যা বলছেন।কারন এই পৃথিবীতে কেউ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়।আপনি তাঁদের আপনার সকল দুর্বলতা না বলে এমন একটি দুর্বলতার কথা বলবেন যেটা আপনি ঠিক করার চেষ্টা করছেন।যেমন হতে পারে আপনি অনেক মানুষের সামনে কথা বলতে ভয় পান।
আবার আপনি যে পদের জন্য চাকুরীর আবেদন করেছেন সেই পদের যে কাজ সেই সম্পর্কে কোন দুর্বলতা থাকলে সেটাও তাঁদের বলে দিতে পারেন।এতে করে আপনার সততা সম্পর্কে তাঁদের কাছে ভালো একটা ধারনা সৃষ্টি হবে।
(৬) আপনিত আগে চাকুরী করতেন সেই চাকরি ছেড়ে কেন এখানে চাকরি করতে চান?
আপনাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়ে হয় যে আপনি আগের কোম্পানির চাকরি ছেড়ে দিলেন কেন।তাহলে সেই কোম্পানি সম্পর্কে খারাপ কোন কিছু মন্তব্য না করে বরং আপনি সেই কোম্পানি থেকে এই কোম্পানিতে কি কি ভালো দেখেছেন সেই সম্পর্কে বলা।আর যদি বেতন সম্পর্কিত কোন কারনে আগের চাকুরী না করতে চান তাহলে উচিত হবে এই তথ্য গোপন করে যাওয়া।
আগের কোম্পানি সম্পর্কে বেশী কিছু না বলে আপনি সেই কোম্পানি থেকে এই কোম্পানিতে ভালো যে বিষয় গুলো দেখছেন সেই সম্পর্কে বলা।মূল কথা আপনি যে কারনে এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে চান সেই সম্পর্কে কিছু বলা।
(৭) কাজের চাপ বেশী হলে তখন আপনি কি করেন?
আপনি যখন এই প্রশ্নের উত্তর দিবেন তখন একেবারেই বলবেন না আমি কখনও কাজের চাপ অনুভব করিনা।আবার এটাও বলবেন না আপনি কাজের চাপ নিতে খুবই ভয় পান।এর চাইতে বলা ভালো যে কাজের চাপ বেশী হলে সেটা নিয়ে আমি আমার সহকর্মীদের সাহায্য নেওয়ার চেষ্টা করি এবং কোন সমস্যার সম্মুখীন হলেও আমি আমার সহকর্মীদের থেকে পরামর্শ নিয়ে সমধান করতে পছন্দ করি।
এছারা আমার (আপনার) যদি কাজ করতে যেয়ে অতিরিক্ত প্রেশার অনুভব করি তাহলে একটু হেঁটে আসি অথবা যোগ ব্যায়াম করতে পছন্দ করি।অথবা কিছু সময়ের জন্য কাজ থেকে বিরতি নিয়ে একা সময় কাঁটাতে পছন্দ করি।
আরও পড়ুনঃ চাকরির ইন্টারভিউ ভালো করার সেরা পাঁচটি কৌশল
শেষ কথা
আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে চাকুরীর ইন্টারভিউ এর পূর্ব প্রস্তুতি সম্পর্কে যে তথ্য গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম সেইগুলো যদি আপনি চাকুরীর ইন্টারভিউ এর সময় প্রয়োগ করেন তাহলে আপনার চাকুরী পাওয়ার ব্যাপারে অন্যদের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে থাকবেন।কারন আমরা এই প্রশ্ন এবং উত্তর গুলো এমন কিছু মানুষের সাথে কথা বলে জেনেছি যারা এই কৌশলগুলো তাঁদের ইন্টারভিউয়ের সময় প্রয়োগ করেছিল।