আপনি যখন কোন অফিসে চাকরি করছেন তখন সেই অফিসে শুধু আপনার কাজের উপরে বিবেচনা করেই আপনাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় না।বরং আপনি অফিসে কি করছেন,আপনার চলাফেরা কেমন,আপনি আপনার আপনার সহকর্মীর সাথে কেমন আচারন করছেন এসব সহ আরও অনেক কিছু সম্পর্কে যাচাই-বাছাই করার পরেই আপনাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়ে থাকে।
সুতরাং অফিসে থাকাকালীন সময়ে আমাদের কি করা উচিত আর কি করা উচিত নয় এই সম্পর্কে জেনে নেওয়া জরুরী।আজকের এই লেখায় আমরা জানবো যে কাজ গুলো আমাদের অফিস চলাকালীন সময়ে কোনভাবেই করা উচিত নয়।
যে কাজগুলো অফিসে কখনোই করবেন না (সর্বমোট ৯ টি টিপস)
(১) অন্য চাকরি খুঁজছেন এটা শেয়ার করবেন না
চাকরি জীবনে সকলেই উন্নতি চায়।আর এই কারনেই আমাদের মাঝে অনেকেই একটি চাকরি করার সময়ে অন্য কোন চাকরি খুঁজে থাকেন ভালো সুযোগ সুবিধা পাবার আশায়।এটা খারাপ কিছু নয় তবে এটা যদি আপনার কোন সহকর্মীর সাথে শেয়ার করেন তাহলে এটা আপনার জন্য ভালোকিছু বয়ে আনবে না।দিন শেষে আপনার এই ব্যাপারটা আপনার বসের কানে চলে গেছে আর আপনার উপরে এক্সট্রা প্রেশার আশা শুরু হয়ে গেছে বসের তরফ থেকে।সুতরাং আপনি যে অন্য কোথাও চাকরি খুঁজছেন সেটা আপনার কারও সাথে শেয়ার করার দরকার নাই।
(২) নিজের বেতন সম্পর্কিত আলোচনা না করা
আপনি যখন কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন তখন সেই প্রতিষ্ঠান আপনাকে আপনার যোগ্যতা এবং তাঁদের নিয়মানুসারে বেতন এবং অনন্যা সুবিধা প্রদান করছে।এখন আপনি যদি আপনার পরিশ্রমের তুলনায় মনে করেন আপনাকে তাঁরা সঠিক বেতন প্রদান করছে না।তাহলে এই ব্যাপারে আপনার সহকর্মীর সাথে গল্প/আলোচনা না করে আপনার উচিত হবে সরাসরি আপনার ঊর্ধ্বতন কারও সাথে কথা বলা।কারন আপনার সহকর্মী আপনার বেতুন বাড়ানোর ক্ষমতা রাখেনা।
(৩) ব্যাক্তিগত বিষয়গুলো নিজের কাছেই রাখুন
যখন আপনি কোন চাকরি করবেন দেখবেন আপনি নিজের বাসার চাইতে বেশী সময় অফিসেই কাটিয়ে দিচ্ছেন।এখন এই দীর্ঘ সময় অফিসে থাকার ফলে নিজের ব্যাক্তিগত অনেক বিষয়ই সহকর্মীদের সাথে শেয়ার করা হয়ে যায়।যেহেতু সহকর্মী সেকারনে তাঁর আপনার ব্যাক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকবে এটাই স্বাভাবিক।কিন্তু আমি আপনাকে বলব কোন সহকর্মীর সাথে জীবনের সব গল্প শেয়ার করবেন না।বিশেষ করে আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন আপনার এবং আপনার স্ত্রীর একান্ত মুহূর্ত গুলো কখনই আপনি অফিসে কারও সাথে শেয়ার করবেন না।আর আপনি যদি মেয়ে হয়ে থাকেন তাহলেও একই পরামর্শ আপনার জন্যও প্রযোজ্য হবে।
আরও পড়ুনঃ অফিসে যেভাবে আপনার বসের আস্থাভাজন হবেন (সেরা ৯ টি টিপস)
(৪) হাসিঠাট্টা করবেন সাবধানতার সাথে
আপনি হয়ত ব্যাক্তি হিসাবে খুব রসিক মানুষ।আর এই কারনেই প্রায়ই আপনি আপনার সহকর্মীদের সাথে হাসিঠাট্টা করে রসিকতা করেন।কিন্তু আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা রসিকতা পছন্দ করেন না আবার কেউ আল্প একটু রসিকতা করলেও সহ্য করতে পারেন না।সুতরাং আপনি যখন অফিসে কারও সাথে হাসিঠাট্টা করবেন অবশ্যই সেই সহকর্মীর মেজাজ বুঝে-শুনে করবেন।
(৫) সহকর্মীর ব্যাক্তিগত বিষয় সম্পর্কে আগ্রহ দেখাবেন না
সব সময় মনে রাখবেন আপনি এখানে কাজ করতে এসেছেন।কারও ব্যাক্তিগত জবন সম্পর্কে গবেষণা করতে আসেন নি।সুতরাং, অফিস শেষ করে আপনার সহকর্মী কোথায় যায়,কি করে এসব বিষয়ে কখনও জিজ্ঞাসা করতে যাবেন না।আবার ছুটির দিনগুলোতে সে কি করে এসব বিষয়েও জিগাস করবেন না।তবে আপনার কোন সহকর্মী যদি নিজে থেকে আপনাকে এসব বলতে চায় অবশ্যই সেটা শুনবেন।
(৬) সোশ্যাল শেয়ারিং সম্পর্কে সাবধান থাকা
অফিসে থাকাকালীন সময় আপনি কি কি করছেন সেগুলার আপডেট প্রতিনিয়ত আপনার সোশ্যাল ওয়েবসাইটের প্রোফাইলে শেয়ার করবেন না।তবে মাঝে মাঝে করা যেতে পারে।এবার আপনাকে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করি-ধরেন আপনার বন্ধু তালিকায় ফেসবুকে কেউ একজন আছে যে কিনা দিনে ১০-১২ বার তার অফিসে সে কি কি করছে সেই ব্যাপারে পোস্ট করছে তখন কি আপনার বিরক্ত লাগেনা?আমি জানি বিরক্ত আপনারও লাগে।সুতরাং এখন আপনিই ভাবুন আপনিও এমন সবার কাছে বিরক্তিকর ব্যাক্তিতে পরিচিত হতে চান কিনা।
আরও পড়ুনঃ কর্পোরেট জীবনে যে ১০ টিপস মেনে চলতে হবে
(৭) প্রতিদ্বন্দ্বিতা গোপন রাখতে হবে
আমরা যখন কোন অফিসে চাকরি করি তখন আমাদের সকলের একজনের সাথে আরেক জনের প্রতিযোগিতা থাকে যে কে কত ভালো কাজ করে আরেক জোনের থেকে সামনে যেতে পারে।আর এই প্রতিযোগিতা শুধু প্রমোশন পাওয়ার জন্যই করে থাকে সবাই।এখন আপনি যদি এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয় আপনার কোন সহকর্মীর সাথে আলোচনা করেন তাহলে বিষয়টা আপনার জন্য কোনভাবেই ভালো হবেনা।সুতরাং, সকল ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়গুলো নিজের মনের মধ্য রেখে দিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ইন্টারভিউয়ের পর যে ৭ টি লক্ষনে আপনি বুঝবেন চাকরি পাবেন নাকি পাবেন না
(৮) আপনার বদ অভ্যাস সম্পর্কে আলোচনা করবেন না
একেক জনের একেক রকমের বদ অভ্যাস থেকে থাকে সেইগুলা সম্পর্কে আপনি কখনও অফিসে আপনার কলিগদের সাথে আলোচনা করতে যাবেন না।আপনি হয়ত ভালো মনে আপনার সহকর্মীদের সাথে এসব আলোচনা করবেন কিন্তু কখনও যদি এই কথাগুলো আপনার বসের কানে যায় তাহলে আপনার চাকরি নাও থাকতে পারে।সুতরাং এসব আলোচনা আপনার বন্ধুদের সাথে করাই ভালো কোন সহকর্মীর সাথে নয়।
(৯) অসন্তুষ্টি বিষয়গুলো নিয়ে কারও সাথে আলোচনা করবেন না
আপনি এখানে চাকরি করতে এসে অনেক বিপদে আছেন,এই কাজ করতে আপনার আর ভালো লাগে না,এই চাকরিটা অচিরেই ছেড়ে দিবেন ইত্যাদি ইত্যাদি এই রকমের কথা গুলো কারও সাথে আলোচনা করবেন না।এসব কথা আপনার বসের কানে গেলে আপনার চাকরি জীবনে অনেক সমস্যা হতে পারে।
শেষ কথা
আমি আপনাদের সাথে উপরে যে ৯ টি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করলাম আপনি যদি আপনার অফিসে থাকাকালীন সময়ে এসব মেনে চলেন তাহলে আপনি অবশ্যই আপনার অফিসে আপনার অন্য সহকর্মীদের চাইতে বেশী ভালো থাকবেন আশা করা যায়।এবং একই সাথে আপনার এরুপ আচারন আপনাকে পদোন্নতি পেতেও সহয়তা করবে।