আপনি কর্পোরেট জীবনে চাকরিই করেন অথবা নিজেই বিজনেস করেন না কেন আপনার চাকরির উন্নতি অথবা বিজনেসের উন্নতি করার জন্য অবশ্যই কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে।তবেই না আপনার নিজের এবং বিজেসের উন্নতি আশা করা যাবে।আজকের এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের সাথে এমন ১০ টি টিপস শেয়ার করব যেগুলো ব্যাবহার করে আপনি আপনার কর্পোরেট লাইফে অনেক উন্নতি করতে পারবেন এবং আপনার কর্পোরেট বিজনেসের প্রজেক্ট গুলোতেও এই টিপস প্রয়োগ করে সেগুলো সফল করতে পারবেন।
কর্পোরেট জীবনে যে টিপস গুলো মেনে চলবেন
আপনি যদি কর্পোরেট লাইফে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনি এই জগতের অনেক কিছুই জানেন না।আর এই না জানার কারনে আপনার নিজেকে অনেক ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় আবার আপনার বিজনেসেরও অনেক সময় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
কর্পোরেট লাইফে আপনাকে যে বিষয় গুলো মেনে চলতে হবে-
- আপনার নিজেকে এবং কর্মীদের হাতে কলমে শিখতে হবে
- অন্যদের বোঝার চেষ্টা করতে হবে
- অন্যদের সিদ্ধান্তকে সম্মান করতে হবে
- অবশ্যই ভালো শ্রোতা হতে হবে
- সবার বিশ্বাস অর্জন করতে হবে
- অজুহাতকে আজকে থেকে না বলতে হবে
- প্রশংসা করতে হবে
- সমালোচনার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে
- বস না হয়ে বন্ধু হয়ে যান এবং
- প্রতিদিন নতুন কিছু শিখুন
আমরা এখানে কর্পোরেট জীবনের এমন ১০ টি বিষয় সম্পর্কে জানলাম যেগুলো মেনে চললে আমাদের কর্পোরেট লাইফ অথব বিজনেস অন্যদের চাইতে খুব সহজেই উন্নতি করবে।আমি এখন আপনাদের সাথে উপরের ১০ টি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব যাতে করে আপনি আপনার নিজের অথবা আপনার বিজনেসের ক্ষেত্রে এই বিষয় গুলো সরাসরি প্রয়োগ করতে পারেন।
(১) আপনার নিজেকে এবং কর্মীদের হাতে কলমে শিখতে হবে
আপনি হয়ত কারও কাছে থেকে কোন বিষয়ে শিখতে চাচ্ছেন অথব আপনি নিজেই অন্য কাউকে কোন বিষয়ে সেখাতে চাচ্ছেন তখন ভিডিও কল,মোবাইলে কথা বলে শেখার/শিখানোর চাইতে সরাসরি কারও কাছে থেকে শিখে নেওয়া অথবা শিখে দেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ।কারন গবেষণা বলছে যখন কেউ কোন বিষয়ে কারও কাছে শুনে শিখে তখন সেই বিষয়ে সেই ব্যাক্তি মাত্র ২০% শিখতে পারে এবং মনে রাখতে পারে।
কিন্তু কেউ যদি কোন বিষয়ে সরাসরি দেখে শিখে তাহলে সেই ব্যাক্তি সেই বিষয়ে ৪০% দক্ষতা অর্জন করে ফেলে এবং বাকি ৬০% সে তার কাজে প্রয়োগ করে সম্পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করে নেয়।তাহলে বুঝতেই পারছেন আপনি নিজে যখন কিছু শিখবেন অথবা কাউকে কিছু শেখাবেন তখন সেটা হাতে কলমে শেখার এবং শিখানোর চেষ্টা করবেন।
(২) অন্যদের বোঝার চেষ্টা করতে হবে
আপনি যখন কারও সাথে বিজনেস করতে চাইবেন অথবা চাকরি জীবনে আপনার কলিগের সাথে অফিস করবেন তখন আপনাকে সেই বিজনেস পার্টনার অথবা কলিগের মানুষিক দিকটা ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে।কিছুদিন ভালোভাবে তাঁকে ফলো করে বুঝে নিতে হবে কোন ধরনের কথা বলে সে খুশি থাকে আবার কোন ধরনের কথা বললে সে রেগে যায়।কিছু দিন এভাবে নজরদারি করলে দেখবেন তার মন-মানুষিকতা আপনি সম্পূর্ণ আয়ত্ত করতে পেড়েছেন।এখন আপনি খুব সহজেই তাঁকে হ্যান্ডেল করতে পারছেন।এভাবে আপনার আশেপাশের সবাইকে বুঝার চেষ্টা করতে হবে।
(৩) অন্যদের সিদ্ধান্তকে সম্মান করতে হবে
আপনি অফিসে যদি ভালো কোন পজিশনেও থাকেন তবু আপনাকে চেষ্টা করতে হবে অন্যদের সিদ্ধান্তকে সম্মান দেওয়ার।একই ভাবে আপনি যদি কোন বিজনেস শুরু করেন এবং আপনার প্রতিষ্ঠানে যারা কর্মী হিসাবে কাজ করবে তারা যদি কোম্পানির ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত আপনাকে জানায় এবং দেখেন যে তাদের দেওয়া সিদ্ধান্ত আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য অনেক ভালো কিছু বয়ে আনবে তখন অবশ্যই তাদের সিদ্ধান্ত এবং মতামতকে সম্মান জানিয়ে সম্মতি দিবেন।কারন আপনি যদি অন্যদের সিদ্ধান্তকে সম্মান করেন তাহলে দেখবেন তারাও আপনার সিদ্ধান্তকে সব সময় সম্মান করা শুরু করেছে।
(৪) অবশ্যই ভালো শ্রোতা হতে হবে
আপনি কর্মী হোন আর কর্মকর্তা হোন অথবা প্রতিষ্ঠানের মালিক হোন আপনাকে অবশ্যই অন্য সবার কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।যখন আপনার সাথে কেউ কোন বিষয়ে আলোচনা করছে অবশ্যই তার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে তার কথা গুলো আপনাকে মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে।এবং কথা শোনার মাঝে মাঝে সেই টপিক সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করতে হবে।এতে করে সে বুঝতে পারবে আপনি তার কথা শোনার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী।তবে যখন কেউ কথা বলছে সেই সময়ে তার কথার মাঝে অন্য কোন বিষয়ে কথা বলবেন না। এতে করে যিনি আপনার সাথে কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে কথা বলছেন তার কথা বলার ছন্দ পতন হবার সম্ভবনা থাকে।
(৫) সবার বিশ্বাস অর্জন করতে হবে
আপনি চাকরি করেন আর ব্যাবসা করেন আপনাকে অবশ্যই সবার কাছে বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।ধরুন আপনার বস আপনাকে অফিসে একটা প্রজেক্ট ফাইল তৈরি করতে বলল এবং সেই সাথে কিছু দিক নির্দেশনা দিয়ে বলল আপনি এই ফাইলটা আগামী ৪ বা ৫ দিনের মধ্য কমপ্লিট করে ফেলবেন কারন ৭ম দিনে আমাদের এই প্রজেক্ট ব্যাপারে একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে।আপনি আপনার বসকে বললেন ঠিক আছে আমি (আপনি) এটা যত দ্রুত সম্ভব রেডি করে দিবেন এবং অবশ্যই মিটিং এঁর আগেই।কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল আপনি এই কাজ করেন নি এবং আপনার এই গাফলতির কারনে মিটিং ক্যান্সেল করে দিতে হয়েছে।আপনার এই আচারনের জন্য আপনি আপনার বসের কাছে সারা জীবনের জন্য অবিশ্বাসী হয়ে গেলেন।
আব্র আপনি যদি নিজেই ব্যাবসায়ী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে অন্যদের দেওয়া কথা রাখতে হবে।যেমন আপনি কাউকে বললেন যে আগামী ২ দিনের মধ্য তাদের প্রোডাক্ট গুলো আপনি ডেলিভারি দিবেন।এখন কোন কারনে আপনি তাদের প্রোডাক্ট গুলো ডেলিভারি দিলেন না এমনকি আপনার যে সমস্যার জন্য ডেলিভারি দিলেন না সেই বিষয়ে তাদের অবগত করলেন না।এই রকম করলে সেই প্রতিষ্ঠান আর কখনো আপনার সাথে বিজনেস করতে চাইবে না এবং আপনি তাদের কাছে অবিশ্বাসী হিসাবেই পরিচত থাকবেন।যদি কোন সমস্যার কারনে প্রোডাক্ট ডেলিভারি না করা যায় যত দ্রুত সম্ভব তাদের জানিয়ে দিতে হবে।এতে করে তারা আপনার দায়িত্ব জ্ঞান সম্পর্কে একটা ভালো ধারনা পোষণ করবে।
(৬) অজুহাতকে আজকে থেকে না বলতে হবে
আমাদের সকলেরই একটা কমন সমস্যা আছে সেটা হল যেকোনো কাজে আমাদের অজুহাত দেখানো।আমরা নিজেকে বাঁচানোর জন্য এত পরিমানের অজুহাত রেডি করে রাখি যে সেটা দিয়ে কয়েকশ পৃষ্ঠার একটা বই লিখে ফেলা সম্ভব।আপনি যদি আপনার কর্পোরেট লাইফে নিজের অথবা আপনার ব্যবসার উন্নতি করতে চান তাহলে অবশ্যই আজকে থেকে যেকোনো ধরনের কাজে অজুহাত দেখানোকে না বলুন।
(৭) প্রশংসা করতে হবে
আমাদের একটা কমন সমস্যা আছে সেটা হল আমাদের কাছের মানুষদের প্রশংসা করতে আমরা মোটেই পছন্দ করিনা তা সে যতই ভালো কাজ করুক।কিন্তু আমার কথা হল যখন কেউ আপনার জন্য ভালো কাজ করছে তাঁকে বাহবা দিতে সমস্যা কথায়?তার এবং তার কাজের প্রশংসা করতে আপনারত আর টাকা খরচ করতে হচ্ছে না।
যখন আপনার প্রতিষ্ঠানে কেউ ভালো কাজ করবে (হোক সেটা অনেক ছোট) তখন অবশ্যই তার কাজের প্রশংসা করবেন।এতে করে দেখবেন তার কাজের গতি আগের চাইতে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে যা আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্যই ভালো।আর যদি আপনি কারও কাজের প্রশংসা না করেন দেখবেন তার কাজের গতি কমে গেছে যা আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো কিছু নয়।আবার এমনও হতে পারে যে আপনার এই রকম আচারনের জন্য সে আপনার প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলেও যেতে পারে।
সুতরাং, সবার ভালো কাজের প্রশংসা করা শুরু করুন আজকে থেকেই।
(৮) সমালোচনার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে
আপনি যখন কারও প্রশংসা করবেন তখন অবশ্যই আপনার তার কাজের ব্যাপারে সমালোচনা অধিকার থাকবে।তবে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যখন আপনি কারও সমালোচনা করবেন সেটা যেন তার ব্যাক্তিগত সমালোচনা না হয়ে যায়।সমালোচনা করবেন তার কাজের।কখনও কারও ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে অফিসে কোন সমালোচনা করতে যাবেন না।এতে করে আপনার কোন লাভ হবে না বরং আপনার নিজের ব্যাক্তিত্ব নিয়ে সবাই প্রশ্ন তুলতে পারে।
আর যখন কারও সমালোচনা করবেন প্রথমে তার ভালো কাজের প্রশংসা করবেন এবং এটা চালিয়ে যাওয়ার মুহূর্তেই তার ভুল গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন এবং শেষে আবার তার ভালো কাজের প্রশংসা করে আলোচনা শেষ করবেন।
এখানে আরও একটা কাজ আপনাকে করতে হবে সেটা হল, আপনি যখন তার ভুল গুলো নিয়ে সমালোচনা করছেন তখন অবশ্যই সেগুলোর সমাধান সম্পর্কে তাঁকে বলে দিবেন।এভাবে যদি আপনি কারও কাজের সমালোচনা করেন দেখবেন সে কখনও আপান্র সমালোচনা কারনে রাগ করবেনা বরং সেও আপনার প্রশংসা করবে অন্যদের কাছে।
(৯) বস না হয়ে বন্ধু হয়ে যান
আমাদের দেশের প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানেই প্রায় সকল কর্মী তাদের বসকে জমের মত ভয় পায়।আর এই ভয় পাবার কারনে অনেক সময় তাদের বস কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিলেও তারা কিছু বলে না।কারন তারা জানে যে তারা যদি তাদের বসকে তার ভুল ধরিয়ে দেয় তাহলে তাদের হয় অনেক অপমান সহ্য করতে হবে নতুবা তার চাকরিই থাকবে না।কিন্তু আপনি জানেন কি যে আপনার বসগিরি দেখানোর ফলে অনেক সময় প্রতিষ্ঠানের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়?
সুতরাং, আজকে এই মুহূর্তে থেকে বস নয় আপনার অধীনে যারা কাজ করছে তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন দেখবেন আপনার প্রতিষ্ঠান অনেক দ্রুত সফলতার দিকে এগিয়ে যাওয়া শুরু করবে।
আরও পড়ুনঃ অফিসে যেভাবে আপনার বসের আস্থাভাজন হবেন (সেরা ৯ টি টিপস)
(১০) প্রতিদিন নতুন কিছু শিখুন
আপনি কর্পোরেট লাইফে চাকরি করেন অথবা ব্যবসা যাই করেন না কেন আপনাকে অবশ্যই প্রতিদিন নতুন নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করতে হবে অথবা শিখতে হবে।ধরেন আপনি এমএস-এক্সেলের কোন একটি বিষয়ে জানেন না তাই বলে এই অজানা নিয়ে থাকা যাবেনা।আপনি অফিসে বস হোন আর কর্মী হোন না কেন যারা এমএস-এক্সেলের সেই বিষয়ে পারদর্শী তাদের কাছে থেকে সেই বিষয়ে শিখে নিতে হবে।
এখানে এমএস-এক্সেলের বিষয়টা শুধু আপনাকে বুঝানোর জন্য বলা হয়েছে।এমএস-এক্সেলেরমত আপনি যা জানেন না সেটা অন্য কারও কাছে থেকে শিখে নেওয়া দোষের কিছু না।এভাবেই প্রতিদিন আপনি যে বিষয় গুলো জানেন না সেগুলো আপনার বস অথবা আপনার কলিগদের কাছে শেখার অভ্যাস করতে হবে।
আমার শেষ কথা
আমরা যদি কর্পোরেট চাকরি করতে চাই অথবা নিজের বিজনেস শুরু করতে চাই তাহলে অবশ্যই আমাদের উপরের আলোচিত ১০ টি টিপস মেনে চলতে হবে।কারন এই বিষয় গুলো আপনি যখন মেনে চলবেন তখন কর্মী আর বসের মধ্য কোন ভেদাভেদ থাকবে না।আর এই কর্মী আর বসের মধ্য ভেদাভেদ না থাকার কারনে উন্নত দেশ গুলোতে তাদের কর্মীদের কাজের আউটপুট অনেক ভালো এবং তাদের প্রতিষ্ঠান গুলো খুব দ্রুত উন্নতি করে।