চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে আমাদের যে বিষয়গুলো মনে রাখা উচিত

পড়াশোনা শেষ করার পর আমাদের সবাইকে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে হয়।আর এই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করার প্রথম ধাপ হিসাবে আমাদের সামনে আসে চাকরির ইন্টারভিউ।আপনি একাডেমিক দিক থেকে যত ভালোই হোন আর দেখতে যতই স্মার্ট হোন না কেন আপনাকে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে ইন্টারভিউ এর প্রস্তুতি নিতেই হবে।

চাকরির ইন্টারভিউ যেহেতু আপনি ছারাও আরও অনেকেই দিতে আসবে সেহেতু সেখানে আপনাকে অন্যদের চাইতে যোগ্য প্রমান করতে হবে।সুতরাং, শুধু পড়াশোনা নয় সাথে আরও অনেক কিছুতেই আপনাকে তাঁদের চাইতে এগিয়ে থাকতে হবে।

আমি আপনাদের সাথে আজকে এমন ১০ টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যেগুলো আপনি যখন কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাবেন তখন যদি মেইনটেইন করতে পারেন তাহলে আশা করা যায় সেখানে ইন্টারভিউ দিতে আসা অন্যদের চাইতে চাকরি দাতাদের পছন্দের তালিকায় উপরের দিকেই থাকবেন।তাহলে চলুন মূল আলোচনা শুরু করা যাক।

চাকরির ইন্টারভিউ এর সময় আমাদের যে বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে সেগুলো হলঃ

(১) আপনার উপস্থিতি বুঝানো

আপনি যখন ইন্টারভিউ দিতে রুমে প্রবেশ করবেন তখন প্রথমে তাঁদের সাথে অন্য কোন বিষয়ে কথা না বলে প্রথমে হাসি মুখে তাঁদের সালাম দিয়ে তাঁদের সাথে হ্যান্ডশেক করবেন এবং তাঁরা আপনাকে বস্তে বললে বসবেন।এই রকম করলে তাঁরা আপনার আত্মবিশ্বাস সম্পর্কে অবগত হবে এবং আপনার প্রতি তাঁদের আগ্রহ তৈরি হবে।

(২) পোশাক হতে হবে মার্জিত

আমারা বাসায় পরিধান করে থাকি এমন পোশাক পরিধান করে কখনই চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাওয়া উচিত নয়।আপনি যে কোম্পানিতে চাকরির আবেদন করেছেন তাঁদের কোম্পানির সাথে মিল হয় এমন পোশাক পরিধান করে ইন্টারভিউ দিতে যাওয়া উচিত।চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে সম্ভব হলে সেই কোম্পানি কোন ড্রেস কোড আছে কিনা জানার চেষ্টা করা উচিত।

আরও পড়ুনঃ চাকরির ইন্টারভিউতে কি ধরনের পোশাক পরে যাওয়া উচিত?

(৩) ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যদের কথা মনোযোগ সহকারে শোনা

আপনার ইন্টারভিউ শুরু হবার আগে আপনাকে অবশ্যই ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্য/সদস্যরা কিছু তথ্য প্রদান করবে।সেই কথাগুলো মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে।কারন এই তথ্য গুলো ইন্টারভিউ এর সময় আপনার প্রয়োজন হবে জন্যই প্রশ্নকর্তা আপনাকে বলেছে।

এখন ইন্টারভিউ চলাকালীন যখন তাঁদের বলা তথ্য থেকে আপনার উত্তর দেওয়ার পালা আসবে তখন যদি আপনি সঠিকভাবে উত্তর না দিতে পারেন তাহলে তাঁরা ধরে নিবে আপনি যেকোনো বিষয়ে কারও কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে আগ্রহী না।আর যদি সঠিক ভাবে উত্তর দিতে পারেন তাহলে তাঁরা ধরে নিবে আপনি যেকোনো কাজ এবং কারও বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শুনতে পছন্দ করেন।সুতরাং তাঁদের শুরুর কথাগুলো খুব মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে।

(৪) অতিরিক্ত কথা না বলা

চাকরির ইন্টারভিউ এর সময় আপনার ইন্টারভিউ যিনি নিচ্ছেন তিনি যা জানতে চাইবেন অর্থাৎ, প্রশ্ন করবেন কখনই তার বেশী কিছু উত্তর দিতে যাবেন না।আবার প্রশ্নকর্তার কোন প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে তাঁকে সরাসরি বলে দিবেন যে আপনি এই প্রশ্নের উত্তর জানেন না।কোন প্রশ্নের উত্তর না জানা থাকলে আন্দাজে কোন উত্তর দিবেন না।

সব চাইতে ভালো হল আপনি ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে আপনি যে পদের জন্য চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন সেই সম্পর্কে ভালোভাবে পড়াশোনা করে যাওয়া।এবং যে প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউ দিতে যাবেন সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য গুলো সম্পর্কে পড়াশোনা করা।

আরও পড়ুনঃ চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যেয়ে যে ৭ টি কাজ ভুলেও করবেন না

(৫) ইন্টারভিউ এর সময় গা ছাড়া ভাব দেখানো

আপনি যখন ইন্টারভিউ সদস্যদের সামেন বসে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন তখন আপনাকে মনে রাখতে হবে এখানে কেউ আপনার বন্ধু নয়।আর এই কারনেই যা প্রশ্ন করা হোক না কেন আপনাকে সিরিয়াস ভাবেই উত্তর দিতে হবে।আর এই উত্তরের আমাঝে যেন আপনার পেশাদারী ভাবটা ফুটে উঠে সেটাও আপনাকে মনে রাখতে হবে।আরেকটা বিষয় হল আপনাকে বোর্ডের সদস্যরা যে ভঙ্গিতে প্রশ্ন করবে আপনিো চেষ্টা করবেন একই ভঙ্গিতে উত্তর দেওয়ার।তবে খেয়াল রাখতে হবে এসব করতে যেয়ে ব্যাপারটা যেন সুন্দরের পরিবর্তে দৃষ্টিকটু না হয়ে যায়।

(৬) সঠিক ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করা

আপনি যখন ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যদের প্রশ্নের উত্তর দিবেন সেটা যেন অবশ্যই পেশাদারী ভাষা হয় সেইদিকে আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে।আপনি এমন কোন ভাষা ব্যাবহার করবেন না যেটা আসলে কর্পোরেট লাইফের সাথে মানানসই না।আপনার কেমন ভাষা ব্যাবহার করবেন তার উপরেও আপনার চাকরি হবে কি হবে না সেটা নির্ভর করে।সুতরাং, ভাষা চয়নে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

(৭) শিষ্টাচার নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা করা

ইন্টারভিউ বোর্ডে আপনার নিজের শিষ্টাচার কে নিয়ন্ত্রন করতে হবে।আপনি যখন ইন্টারভিউ দিচ্ছেন তখন আপনার শিষ্টাচার,আত্মবিশ্বাস আর পেশাদারিত্ব আপনাকে অন্য সবার চাইতে তাঁদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে নিয়ে যেতে পারে।তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে এসব করতে যেয়ে ভারসম্য যে না হারিয়ে যায়।অর্থাৎ, সবকিছু এমন ভাবে নিয়ন্ত্রন করতে হবে যেন দেখে মনে নহয় এইগুলা আপনার স্বাভাবিক আচারন।

(৮) সতর্কতার সাথে উত্তর দেওয়া

ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রায়শই এমন কিছু প্রশ্ন করা হয়ে থাকে যেগুলোর উত্তর আমাদের খুবই সতর্কতার সাথে দিতে হবে।যেমনঃ আপনি যদি আগে কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে থাকেন তাহলে আপনাকে প্রশ্ন করা হতে পারে আপনি আগের চাকরি কেন ছাড়তে চান অথবা কেন ছাড়লেন?

এখন আপনাকে এই প্রশ্নের উত্তর এমনভাবে দিতে হবে যেন আপনার উত্তরের মাঝে পেশাদারিত্ব ফুটে উঠে।উত্তর দেওয়ার সময় কোনভাবেই আগের প্রতিষ্ঠানের দুর্নাম করা যাবে না এবং সেই প্রতিষ্ঠানে আপনার যিনি বস ছিলেন তার সম্পর্কেও কোন বাজে মন্তব্য করা যাবে না।

আরও পড়ুনঃ চাকরির ইন্টারভিউ ভালো করার সেরা পাঁচটি কৌশল

(৯) অবশ্যই প্রশ্ন করুন

ইন্টারভিউ বোর্ডে আপনার ইন্টারভিউ শেষ হওয়ার পর আপনাকে যখন ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যরা জিজ্ঞাসা করবে আপনার কোন প্রশ্ন আছে কি?থাকলে আমাদেরকে করতে পারেন।এই প্রশ্নটির উত্তর প্রায়ই সবাই বলে না কোন প্রশ্ন নেই।কিন্তু আসলে এখানে প্রশ্ন করা উচিত।এখন কথা হল আপনি তাঁদেরকে কি প্রশ্ন করবেন?যে ধরনের প্রশ্ন করা উচিত সেটা হল, আপনাকে তাঁরা ইন্টারভিউ এর সময় যে প্রশ্ন গুলো করেছে এবং আপনি উত্তর দিয়েছেন সেই প্রশ্নগুলোর কোথাও বুঝতে না পারলে সেই ব্যাপারগুলো তাঁদের কে জিজ্ঞাসা করা।

আপনি কি মনে করছেন এতে করে তাঁরা আপনার প্রতি নেগেটিভ মনোভাব দেখাবে?না তাঁরা কখনই নেগেটিভ মনোভাব দেখাবে না।বরং কেউ প্রশ্ন করলে তাঁরা খুশি হয় যে তাঁরা তাঁদের কোম্পানিতে এমন একজনকে পেতে যাচ্ছে যে কিনা কোন কিছু বুঝতে না পারলে তার সিনিয়রদের জিজ্ঞাসা করতে পছন্দ করে।সুতরাং তাঁদেরকে প্রশ্ন করুন।

(১০) আমাকে চাকরিটা দিন এটা না বলা

আপনাকে মনে রাখতে হবে সেখানে যারা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসেছে তাঁদের সকলেরই এই চাকরিটা দরকার।সুতরাং ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যদের কখনই বলবেন না যে আমাকে চাকরিটা দিন আমার খুব দরকার এই চাকরির।আপনার যেহেতু সেই চাকরি পাওয়ার যোগ্যতা আছে সুতরাং পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে ইন্টারভিউ দিবেন।জয় আপনার হবেই নিশ্চিত।

আরও পড়ুনঃ ইন্টারভিউয়ের পর যে ৭ টি লক্ষনে আপনি বুঝবেন চাকরি পাবেন নাকি পাবেন না

শেষ কথা

আমি আপনাদের সাথে এতক্ষন যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করলাম আপনি যদি এই বিষয়গুলো ইন্টারভিউ বোর্ডে মেনে চলেন তাহলে আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি সেই চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান পছন্দের ব্যাক্তির তালিকায় আপনাকে উপরের দিকে রাখবেই।