বলা হয়ে থাকে ব্লগিং পেশা হল স্বাধীন পেশা।এখানে নেই কাজের নির্দিষ্ট কোন সময়,আছে অফুরন্ত স্বাধীনতা।এই পেশায় আপনি নিজেই নিজের বস হিসাবে কাজ করেন।আপনার আশেপাশে এমন অনেকই আপনি পাবেন যারা দীর্ঘ সময় ধরে ব্লগিং পেশার সাথে জরিত আছে এবং তাঁদের লাইফ স্টাইল খেয়াল করলেই আমার উপরের বলা কথা গুলোর সত্যতা পাবেন।
তবে তাঁদের লাইফ স্টাইল দেখে কখনো ভুলেও কোন কিছু না শিখে ব্লগিং শুরু করতে যাবেন না।যদি আপনি কোন কিছু না শিখেই ব্লগিং শুরু করতে যান তাহলে নিশ্চিত ভাবে বলা যায় আপনার ব্লগিং ক্যারিয়ার ব্যর্থ হবে।অর্থাৎ, ব্লগিং শুরু করার আগে আপনাকে বেসিক কিছু কাজ সম্পর্কে জানতে হবে।
আমি আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে আলোচনা করব ব্লগিং শুরু করার আগে আমাদের কোন কোন বিষয় গুলো সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।
ব্লগিং শুরু করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই নিচের কাজ গুলো সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা রাখতে হবে-
- ব্লগিং এর বিষয় নির্ধারণ করা
- যে বিষয়ে ব্লগিং করতে চান সেই বিষয়ে গবেষণা করা
- আপনার ব্লগের গঠন নিয়ে চিন্তা করা
- ব্লগ পোস্ট সম্পর্কে মাথা দিয়ে চিন্তা করা
- আপনার ব্লগ থেকে আপনি কিভাবে আয় করবেন সেই সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া
- আপনার সাইট কোথায় হোস্ট করবেন সেই সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া
- একটি ভালো হোস্টিং নির্বাচন করা
- আপনার নিশের সাথে মিল রেখে একটি ডোমেইন নাম পছন্দ করা এবং
- সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার সাইটের নামে পজ গ্রুপ চালু করার সুযোগ আছে কিনা চেক করে নেওয়া
ব্লগিং শুরু করার পূর্বে আমাদের যে বিষয় গুলো সম্পর্কে জেনে নিতে হবে আমরা উপরে সেই বিষয়গুলোর সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারনা পেয়েছি।আমি এখন আপনাদের সাথে উপরের প্রতিটা বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।আমি আশা করি যে আমার আজকের পোস্টের আলোচনা আপনার ব্লগিং ক্যারিয়ারে অনেক হেল্প করবে।
(১) ব্লগিং এর বিষয় নির্ধারণ করা
আপনি যখন আপনার ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তখন অবশ্যই আপনাকে আপনার জন্য যেকোনো একটি বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে নিতে হবে।এখন বিষয় বস্তু কিভাবে নির্ধারণ করবেন এটার সহজ উপায় হল আপনি যে বিষয়ে এক্সপার্ট অথবা যে বিষয়টি আপনার কাছে আগ্রহের সেই বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা।কারন আপনি এই বিষয়ে বিস্তর জ্ঞান রাখেন এবং আপনার কাছে এটা নিয়ে অনেক বেশী কন্টেন্ট তৈরি করার সুযোগ রয়েছে।উদাহরন হিসাবে বলা যায়, আপনি বর্তমানে কোন অফিসে চাকরি করেন এবং প্রতিদিন বাইসাইকেলে করে অফিসে যাতায়াত করেন।আপনার সাইকেলিং এর ব্যাপারে আছে অনেক বছরের অভিজ্ঞতা তাহলে আপনার ব্লগিং এর বিষয়বস্তু হতে পারে সাইকেলিং।আপনি যদি সাইকেলিং করার বিষয় নিয়ে কোন ব্লগ চালু করেন আপনি সফল হবে এই নিশ্চয়তা আমি আপনাকে দিতে পারি।

স্পেশাল টিপসঃ
- ব্লগিং এর বিষয়বস্তু নিয়ে শুধু আপনার আগ্রহ অথবা বেশী জানাশোনা থাকলেই হবে না।আপনার নির্ধারণ করা ব্লগিং করার বিষয়বস্তু নিয়ে অন্যদের জানার আগ্রহ আছে কিনা সেই বিষয়েও খেলার রাখতে হবে।
(২) যে বিষয়ে ব্লগিং করতে চান সেই বিষয়ে গবেষণা করা
আপনি আপনার ব্লগিং এর বিষয়বস্তু নির্ধারণ করেছেন এখন আপনাকে আপনার ব্লগিং এর বিষয়বস্তু নিয়ে গবেষণা শুরু করতে হবে।কিন্তু প্রশ্ন হল কি গবেষণা করবেন?আপনাকে দেখতে হবে আপনি ব্লগিং করার জন্য যে বিষয়বস্তুটি নির্ধারণ করেছেন সেই বিষয়ের প্রতি মানুষের বর্তমানে কেমন আগ্রহ আছে এবং ফিউচারে (১০-১৫ বছর) পরে মানুষের জানার আগ্রহ কমবে নাকি বাড়বে এই বিষয়গুলো জানতে হবে।যদি দেখেন বর্তমানে মানুষ এই বিষয়ে জানার জন্য গুগল সহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করে তাহলে অবশ্যই আপনি সেই বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন।মানুষের জানার আগ্রহ যদি ভালো হয় তাহলেই কাজ শুরু করা যাবে না।আপনাকে দেখতে হবে বর্তমানে এই বিষয়টি নিয়ে কারা কাজ করছে এবং তাঁরা তাঁদের ওয়েবসাইটে ভিসিটর পাচ্ছে কিনা সেটাও দেখতে হবে।যদি সবকিছু পজেটিভ দেখতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনি এই বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন।

(৩) আপনার ব্লগের গঠন নিয়ে চিন্তা করা
ব্লগের গঠন বলতে মূলত আপনার সাইট আপনার নির্ধারণ করা ব্লগিং এর বিষয়বস্তু এর কোন কোন ক্যাটেগরি গুলো নিয়ে লেখা পাবলিশ করবে এবং কোন ক্যাটেগরিতে কি কি আর্টিকেল পাবলিশ করা হবে সেই সম্পর্কে একটা রোডম্যাপ তৈরি করে নেওয়া বুঝানো হয়ে থাকে।

কোন ধরনের আর্টিকেল দিয়ে সাইটে পোস্ট পাবলিশ করা শুরু করতে হবে এবং কোন আর্টিকেলের পর কোন আর্টিকেল পাবলিশ করতে হবে এটা আপনি যখন আপনার সাইটের জন্য কী-ওয়ার্ড রিসার্চ করবেন তখনই বুঝতে পারবেন।কারন আপনি যেকোনো বিষয়ে কথা বলতে গেলে অবশ্যই সেই বিষয়ের ধারাবাহিকতা অনুসারেই কথা বলবেন।
(৪) ব্লগ পোস্ট সম্পর্কে মাথা দিয়ে চিন্তা করা
আপনি আপনার ব্লগের গঠন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।এখন আপনাকে চিন্তা করতে হবে আপনার আর্টিকেল গুলোর ফরম্যাট কেমন হবে।আর্টিকেল ফরম্যাট তৈরি করার জন্য অন্য কোন ওয়েবসাইট থেকে ধারনা না নিয়ে আপনি নিজে নিজে চিন্তা করে একটি ইউনিক ফরম্যাট তৈরি করার চেষ্টা করবেন।আপনি যখন কোন আর্টিকেলের জন্য ফরম্যাট তৈরি করবেন তখন সেই আর্টিকেলে আলোচনার বিষয়ে একটা ধারাবাহিকতা মেনে চলার চেষ্টা করবেন।কখনই আর্টিকেলের একটা বিষয়ে নিয়ে আলোচনা করার সময় তার পরে যে বিষয়ে আলোচনা করতে হবে সেটা বাদ দিয়ে অন্য কোন বিষয়ে আলোচনা করতে যাবেন না।অবশ্যই আর্টিকেল যেখানে যে বিষয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন সেই বিষয় সেখানে রেখেই আর্টিকেল ফরম্যাট তৈরি করবেন।

(৫) আপনার ব্লগ থেকে আপনি কিভাবে আয় করবেন সেই সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া
আমরা যখন কোন ব্লগ তৈরি করি তখন আমাদের সকলের একটাই উদ্দেশ্য থাকে সেটা হল আর্টিকেল লিখে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে আয় করা।আর এই ব্যাপারে প্রায় সকল ব্লগাররা তাঁদের ওয়েবসাইট তৈরি করার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখে।আর কিভাবে আয় করবে তার উপর নির্ভর করেই আর্টিকেল লেখার ধরন নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
তবে বেশীরভাগ ওয়েবসাইট বর্তমানে বিজ্ঞাপন এবং এফেলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমেই তাঁদের ওয়েবসাইট থেকে অর্থ উপার্জন করে থাকে।সুতরাং, আপনি আপনার ওয়েবসাইট থেকে কিভাবে আয় করবেন এই বিষয়ে ব্লগ শুরু করার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখতে হবে এবং সেই অনুসারে আপনার ব্লগে কন্টেন্ট পাবলিশ করতে হবে।

(৬) আপনার সাইট কোথায় হোস্ট করবেন সেই সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া
ব্লগিং শুরু করার জন্য অবশ্যই আপনার একটি ওয়েবসাইটের প্রয়োজন হবে এবং আপনার ওয়েবসাইটটি লাইভ রাখার জন্য একটি হোস্টিং এর প্রয়োজন হবে।আপনার সাইটের জন্য অবশ্যই আপনাকে এমন একটি হোস্টিং কোম্পানি নির্বাচন করতে হবে যারা খুব ভালো সার্ভিস প্রদান করে এবং দীর্ঘদিন ধরে সেবা প্রদান করে আসছে।বর্তমানে আমাদের দেশের ExonHost অনেক ভালো সেবা প্রদান করে আসছে।আমি নিজেই তাঁদের কিছু সাইট তাঁদের কোম্পানির সার্ভারে হোস্ট করেছি।

(৭) একটি ভালো হোস্টিং নির্বাচন করা
আমরা আমাদের ব্লগ সাইট লাইভ করার জন্য আমাদেরকে যে একটি ভালো হোস্টিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করতে হবে সেই সম্পর্কে উপরে জেনেছি।এখন আমাদের সাইটের জন্য একটি ভালো মানের হোস্টিং প্যাকেজ নির্বাচন করতে হবে।আমাদের সাইট যেহেতু নতুন সেহেতু আমাদের খুব বড় কোন হোস্টিং না হলেও চলবে।তবে অবশ্যই আমাদেরকে এমন একটি হোস্টিং প্যাকেজ নিতে হবে যেটা আমাদের ওয়েবসাইটের স্পিড ভালো রাখবে।পরবর্তীতে যখন আমাদের ওয়েবসাইটের ভিসিটর বাড়বে তখন আমরা বড় কোন হোস্টিং প্যাকেজ নিয়ে নিব।

(৮) আপনার নিশের সাথে মিল রেখে একটি ডোমেইন নাম পছন্দ করা
আমরা আমাদের ব্লগ সাইটের জন্য ভালো হোস্টিং কোম্পানি এবং উপযুক্ত হোস্টিং প্যাকেজ নির্বাচন কিভাবে করতে হবে সেই সম্পর্কে জেনেছি।এখন আমরা আমাদের ডোমেইন নাম নির্বাচন করা সম্পর্কে জানবো।আপনি যখন আপনার ব্লগের জন্য ডোমেইন নাম নির্বাচন করবেন তখন অবশ্যই আপনাকে আপনার ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তুর সাথে মিল রেখে ডোমেইন নাম নির্বাচন করতে হবে।উদাহরন সরূপঃ আপনি যদি বাই সাইকেল নিশ নিয়ে কাজ করেন তাহলে আপনাকে এমন একটি ডোমেইন নাম পছন্দ করতে হবে যেটা আপনার বাই সাইকেল নিশকে রি-প্রেজেন্ট করে।

(৯) সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার সাইটের নামে পজ গ্রুপ চালু করার সুযোগ আছে কিনা চেক করে নেওয়া
ব্লগিং শুরু করার পূর্বে আমাদের যে বিষয় গুলো সম্পর্কে জানা প্রয়োজন আমরা প্রায় তার সবকিছুই জেনে নিয়েছি।এখন আমরা যে নিশে কাজ করব বলে ডোমেইন কিনেছি সেই ডোমেইনের নামে আমাদের পরিচিত সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট ফেসবুক,টুইটার,ইউটিউব,পিনটারেস্ট ইত্যাদি সাইট গুলোতে পেজ,গ্রুপ,চ্যানেল এবং বোর্ড তৈরি করার সুযোগ আছে কিনা সেটা চেক করতে হবে।এই কাজটি ম্যানুয়ালি করা অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।আপনার ডোমেইন এর নামে ইন্টারনেটের পপুলার ওয়েবসাইট গুলোতে ইউজার নাম তৈরি করার সুযোগ আছে নাকি নাই এই রকম একটি টুলস হল BrandSnag।আপনি এই ওয়েবসাইটে যেয়ে আপনার ইউজার নাম লিখে সার্চ দিলেই এই সাইট আপনাকে দেখিয়ে দিবে কোন কোন পপুলার ওয়েবসাইটে আপনার দেওয়ার ইউজার তৈরি করা সম্ভব আর কোথায় সম্ভব না।নিচের ছবিটি দেখলে আপনি আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।

শেষ কথা
আপনি যদি উপরে আলোচিত বিষয় গুলো নিয়ে স্টাডি করার পর ব্লগিং করা শুরু করেন তাহলে আপনার ব্লগিং ক্যারিয়ার ব্যর্থ হবার সম্ভবনা অনেক কম।যারা নতুন ব্লগিং শুরু করেত চান তাঁরা এই বিষয়গুলো নিয়ে স্টাডি না করার কারনে সফলতার সংখ্যা অনেক কম বলেই আমি মনে করি।আমার আজকের এই পোস্টটি যারা নতুন ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করতে যাচ্ছেন বলে তাঁদের জন্য আমি অনেক উপকারী একটি ব্লগ পোস্ট লিখতে পেরেছি বলেই মনে হচ্ছে।আপনার যদি এই আর্টিকেল সম্পর্কিত কোন মতামত থাকে তাহলেও অবশ্যই আমাকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।