বর্তমানে আমাদের আশে পাশেই এমন অনেক পরিচিত ব্যাক্তি আছেন যারা গতানুগতিক চাকরি বাদ দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং কে তাঁদের ফুল টাইম পেশা হিসাবে নিয়েছেন এবং তাঁদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে তাঁদের গ্রাহকদের কাজ করে মাস শেষে ভালো পরিমানে টাকা আয় করছেন।এবং তাঁদেরকে দেখে অনেকেই নিজেকে একজন ফ্রিলান্সার হিসাবে তৈরি করতে চাইছেন।
কিন্তু আপনি কি জানেন ফ্রিল্যান্সার একটি স্বাধীন পেশা হলেও এখানে চাকরির বাজারের চাইতে অনেক বেশী প্রতিযোগিতা।আপনি যখন দেশের মধ্য কোন চাকরির জন্য আবেদন করেন সেখানে আপনাকে শুধু দেশের যারা সেই চাকরিতে আবেদন করে তাঁদের সাথেই প্রতিযোগিতা করতে হয়।কিন্তু আপনি যখন নিজে ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ করতে চাইবেন এবং বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে কাজের চেষ্টা করবেন তখন আপনাকে সারা পৃথিবী ব্যাপী আরও যারা আপনার মত ফ্রিল্যান্সিং করে তাঁদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে এবং তাঁদের চাইতে দক্ষ হলেই কাজ করতে পারবেন।
অর্থাৎ, আপনাকে সারা পৃথিবীর সকল দেশের ফ্রিল্যান্সারদের সাথে প্রতিযোগিতা করে কাজ নিতে হবে।আর এই কারনেই আপনাকে হতে হবে অনেক বেশী দক্ষ হতে হবে।আপনি যদি নিজেকে একজন সফল ফ্রিলান্সার হিসাবে দেখতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই কিছু কিছু বিষয়ের প্রতি অনেক বেশী নজর রাখতে হবে এবং সেভাবে নিজেকে তৈরি করতে হবে তাহলেই আপনি হতে পারবেন একজন দক্ষ এবং সফল ফ্রিল্যান্সার।
আজকের এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের সাথে এমন পাঁচটি বিষয় শেয়ার করব যেগুলো আপনাকে মেনে চলতেই হবে যদি আপনি নিজেকে এই ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে সফল করতে চান।তাহলে চলুন সফল ফ্রিল্যাসার হওয়ার জন্য আমাদের যে পাঁচটি বিষয়ে মেনে চলতে হবে সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
সফল ফ্রিল্যান্সার হতে চাইলে যে ৫টি বিষয় মানতে হবে
আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করতে চান এবং নিজেকে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হিসাবে দেখতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই নিচের পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে সব সময় সচেতন থাকতে হবে এবং সর্বদা মেনে চলতে হবে।
- অনেক বেশী পরিশ্রম করতে হবে
- যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে হবে
- পেশাদারিত্ব মেনে চলতে হবে
- আপনার মধ্য আগ্রহ থাকতে হবে এবং
- সততা ধরে রাখতে হবে
আমরা এখানে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জানলাম যেগুলো আমাদের অবশ্যই মেনে চলতে হবে যদি আমরা নিজেকে একজন সফল ফ্রিলান্সার হিসাবে গড়ে তুলতে চাই।চলুন আমরা এখন এই পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
(১) অনেক বেশী পরিশ্রম করতে হবে
আপনি যদি ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ শুরু করতে চান তাহলে আপনার অবশ্যই অনেক বেশী প্ররিশ্রম করা মন মানুষিকতা থাকতে হবে।প্রথমে আপনাকে অবশ্যই কাজ শেখার জন্য কোঠর পরিশ্রম করতে হবে এবং কাজ শেখার পড়ে আপনি যখন আপনার কোন কাজ নিবেন আপনাকে সেই কাজ শেষ হবার যে ডেড লাইন আছে তার মধ্যই শেষ করে জমা দিতে হবে।
এখন সেই কাজ ডেড লাইনের আগে জমা দেওয়ার জন্য যত কোঠর পরিশ্রমই হোক না কেন সেটা আপনাকে করতেই হবে।কারন কাজ শেষ করার তারিখ শেষ হয়ে যাবার পরেও যদি আপনি কাজটি জমা না দেন তাহলে সেটা আপনার অনলাইন মার্কেটপ্লেসের প্রোফাইলের উপরে প্রভাব ফেলবে।
সুতরাং, আপনি যদি মনে করেন ফ্রিল্যান্সিং মানেই শুধু কম্পিউটারে বসে থাকা তাহলে আমি আপনাকে পরামর্শ দিব যে আপনার জন্য এই ক্যারিয়ার নয় আপনি অন্য কিছু চেষ্টা করুন।আর যদি আপনি কাজ শেখার জন্য এবং কাজ শেখার পরে যখন কাজ নিবেন সেটা ডেড লাইনের মধ্য শেষ করার জন্য যতই কোঠর পরিশ্রম হোক না কেন সেটা আপনি করতে রাজি আছেন তাহলে আপনাকে স্বাগতম।
(২) যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে হবে
আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার খুব ভালো যোগাযোগ করার দক্ষতা থাকতে হবে।কারন আপনি যখন কোন ক্লাইন্টের কাজ করবেন তখন তাঁর সাথে আপনাকে বিভিন্ন প্রয়োজনে বার বার যোগাযোগ করতে হবে এছারাও প্রজেক্টের কাজ গুলো বুঝে নেওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই তাঁর সাথে বিভিন্ন সময়ে মিটিং করতে হতে পারে।মূল কথা আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে আপনার ক্লাইন্টের সাথে যোগাযোগ রাখতেই হবে।আর এই কারনেই আপনাকে যোগাযোগ করার দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
স্পেশাল টিপসঃ
- যোগাযোগ করার জন্য ইংরেজি ভাষার প্রয়োজন হবে সুতরাং, খুব ভালোভাবে ইংরেজি ভাষা (ইউএসএ ইংলিশ) শিখে নিতে হবে।
- যোগাযোগ করার মাধ্যম এবং সফটওয়্যার অথবা অ্যাপস গুলো ব্যবহারে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে।
(৩) পেশাদারিত্ব মেনে চলতে হবে
যখন আপনি ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ শুরু করবেন আপনাকে অবশ্যই পেশাদারিত্ব মেনে চলতে হবে।এখন আমাদেরকে বুঝতে হবে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে পেশাদারিত্ব বলতে কি কি বুঝানো হয় অথবা কিভাবে পেশাদারিত্ব ফুটিয়ে তুলতে হয়।
আপনি যখন কোন ক্লাইন্টের সাথে কোন কাজের (আপনি যে বিষয়ে ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ করতে চান) ব্যাপারে কথা বলবেন তখন আপনাকে অবশ্যই এমনভাবে কথা বলতে হবে যাতে করে আপনার ক্লাইন্টসরা বুঝতে পারে যে আপনি আসলেই সেই কাজে এক্সপার্ট।এবং যখন কাজের ব্যাপারে কথা বলবেন তখন অবশ্যই কাজের বিষয় গুলোর বাহিরে কোন কথা বলবেন না যদি আন আপনার ক্লাইন্ট নিজে থেকে আপনাকে জিজ্ঞাসা না করে।
এছারাও আপনার আচার-আচারনের মধ্যও পেশাদারিত্ব আভব দেখাতে হবে এবং আপনি যখন কোন কাজ নিবেন অবশ্যই সেই কাজটি কাজ শেষ করার তারিখ আসার আগেই জমা দেওয়ার চেষ্টা করবেন।কারন এই আচার আচারন এবং নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করাটাও ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে পেশাদারিত্বের মধ্য পরে।
(৪) আপনার মধ্য আগ্রহ থাকতে হবে
একজন সফল ফ্রিল্যান্সার কখনো একটি নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত কাজ শিখে নতুন কিছু শেখা বন্ধ করে দেয়না।বরং, একজন ফ্রিল্যান্সারকে প্রতিনিয়ত কাজ শিখে যেতে হয়।কারন ফ্রিল্যান্সিংয়ের বেশীরভাগ কাজ হয় প্রযুক্তি নির্ভর।আর আপনি নিশ্চয় জানেন যে প্রযুক্তির কোন বিষয় একটা নির্দিষ্ট জায়গায় আটকে থাকে না।
আপনি যখন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন তখন আপনি যে বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করবেন তখন সেই বিষয়ের নতুন যে আপডেট আসবে সেগুলো প্রিনিয়ত শিখে নিয়ে নিজেকে সময়ের সাথে আপডেট রাখতে হবে তবেই আপনি এই জগতে টিকে থাকতে পারবেন।
আর যদি আপনার এই নতুন নতুন বিষয় গুলো শেখার কোন আগ্রহ না থাকে তাহলে যারা আপনার মত একই ধরনের কাজ করছে তাঁদের থেকে আপনি পিছিয়ে থাকবেন বিধায় আপনার পরিচত ক্লাইন্টও দেখবেন একটা সময়ে আপনাকে আর কাজ দিতে চাইবে না।
সুতরাং, আপনি যদি নিজেকে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হিসাবে দেখতে তাহলে অবশ্যই আপনার মাঝে শেখার আগ্রহ থাকতে হবে এবং প্রতিদিন নতুন কিছু শেখার জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় বরাদ্দ রাখতে হবে।
(৫) সততা ধরে রাখতে হবে
আমরা ছোটকালে বইয়ে পড়েছিলাম “সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা” আর এই কথাটা যে শতভাগ সত্য এটা নিয়ে আমাদের কারোরই কোন অভিযোগ নাই।আপনি যখন ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ করবেন তখন আপনাকে প্রথমে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে হবে।কারন ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে বিশ্বাসযোগ্যতাকে কোন ব্যাক্তির কাজ পাবার জন্য প্রাথমিক যোগ্যতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
আপনি যখন কোন ক্লাইন্টের কাজ করবেন তখন আপনি এই কাজ যে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস থেকে নিবেন সেখানে কাজ শেষে আপনার ক্লাইন্ট আপনাকে তাঁর ইচ্ছা মত রিভিউ দিতে পারবে এবং পরবর্তীতে অন্য যারা সেই মার্কেটপ্লেসে আপনার মত বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে কাজ করিয়ে নেয় তাঁদের প্রোফাইলে অন্য ক্লাইন্টদের ফিডব্যাক দেখে তাঁর পরে সিদ্ধান্ত নেয় যে তাঁকে কাজ দেওয়া যাবে কিনা।
এখন আপনি যদি কাজ নিয়ে আপনার ক্লাইন্টেদের সাথে উল্টা-পাল্টা করেন আর সেই ফিডব্যাক যদি আপনার মার্কেটপ্লেসের প্রোফাইলে থাকে তাহলে অন্য ক্লাইন্ট গুলো আপনার যোগ্যতা থাকার পরেও আপনাকে কাজ দিতে চাইবে না।
উপরক্ত কারন গুলো থেকে সহজেই আমরা বুঝতে পারছি যে আমরা যদি আমাদেরকে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হিসাবে দেখতে চাই তাহলে অবশ্যই আমাদের সততা ধরে রেখে ভালোভাবে ক্লাইন্টদের সাথে কাজ করে যেতে হবে।
আরও পড়ুনঃ সিপিএ মার্কেটিং কি?কিভাবে সিপিএ মার্কেটিং এর কাজ করে আয় করা যায়?
আমার শেষ কথা
আজকের এই পোস্টে আমরা সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য আমাদের যে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম।আপনি যদি উপরে আলোচিত পরামর্শ গুলো মেনে চলে ফ্রিল্যাসিং ক্যারিয়ার চালিয়ে যান তাহলে অবশ্যই আপনি নিজেকে খুব শীঘ্রয় সফল ফ্রিল্যান্সারদের সারিতে দেখতে পারবেন।