সর্বশেষ সংবাদ

ইসলামী ব্যাংকের খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড কিভাবে পাবেন?

বর্তমান সময় হচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তির সময়।আর তথ্য-প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশের অনেক ব্যাংকই তাঁদের গ্রাহকদের অনলাইন এবং অফলাইনে শপিং করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করছে।তবে আমাদের মাঝে ক্রেডিট কার্ড নিয়ে যে ভয় ছরিয়ে দেওয়া হয়েছে সেগুলোর কারনে ক্রেডিট কার্ডের অনেক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও আমরা ক্রেডিট কার্ড নিতে ভয় পাই।তবে আমি আজকের এই লেখায় আপনার সেই ভয় দূর করে দেওয়ার চেষ্টা করব।

আমি আমার আগের একটি লেখায় ডাচ বাংলা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে আলোচনা করেছিলাম।আজকের এই লেখায় আমি আপনাদের সাথে ইসলামী ব্যাংকের খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে বিস্তারিত আলচনা করব।এই আর্টিকেল পড়া সেশে আপনি যে তথ্য গুলো জানতে পারবেন সেগুলো হলঃ

  • ইসলামী ব্যাংকের খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড কি?
  • খিদমাহক্রেডিট কার্ড কত ধরনের কার্ড ইস্যু করে?
  • কোন ক্রেডিট কার্ডের চার্জ কত এবং কোন কার্ডের কি সুবিধা

ইসলামী ব্যাংকের খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড কি?

ইসলামী ব্যাংক তাঁদের গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে বেশ কিছু সুবিধা যুক্ত করে সাম্প্রতিক সময়ে একটি ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করছে যেটার নাম ইসলামী ব্যাংক খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড।আপনি যদি ইসলামী ব্যাংকের খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড গ্রহন করেন তাহলে এই কার্ড দিয়ে অনলাইনে (দেশে এবং দেশের বাহিরে) কেনাকাটা করতে পারবেন এবং এই কার্ড ব্যবহার করে কার্ডের ধরন অনুসারে একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা এটিএম বুথ থেকে উত্তোলন করতে পারবেন।

খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড কত ধরনের কার্ড ইস্যু করে?

ইসলামী ব্যাংক এই মুহূর্তে তাঁদের গ্রাহকদের জন্য চার ধরনের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করছে।এখান থেকে গ্রাহক তাঁদের পছন্দ মত যেকোনো ক্রেডিট কার্ড গ্রহন করতে পারে।ইসলামী ব্যাংক বর্তমানে নিচের চারটি ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করছে।

(১) ইসলামী ব্যাংক ভিসা খিদমাহ কার্ড (প্লাটিনাম)

(২) ইসলামী ব্যাংক ভিসা খিদমাহ কার্ড (পাইওরিটি প্ল্যাটিনাম)

(৩) ইসলামী ব্যাংক ভিসা খিদমাহ কার্ড (গোল্ড) এবং

(৪) ইসলামী ব্যাংক ভিসা খিদমাহ কার্ড (সিলভার)

কোন ক্রেডিট কার্ডের চার্জ কত এবং কোন কার্ডের কি সুবিধা?

আমরা উপরে ইসলামী ব্যাংকের সকল ক্রেডিট কার্ডের নাম জেনে নিয়েছি এখন আমরা ইসলামী ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডগুলো চার্জ এবং সুবিধা গুলো সম্পর্কে জেনে নিব।এই এই আর্টিকেলের শেষের দিকে ইসলামী ব্যাংকের খিদমাহ ক্রেডিট কার্ডের কিছু অসুবিধা সম্পর্কেও জানব।

(১) ইসলামী ব্যাংক ভিসা খিদমাহ কার্ড (প্লাটিনাম)

আপনি যদি ইসলামী ব্যাংকের ভিসা খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড (প্লাটিনাম) গ্রহন করেন তাহলে আপনার নিম্নোক্ত হারে চার্জ প্রদান করতে হবে এবং নিচে উল্লেখিত সুবিধা গুলো পাবেন।

চার্জঃ

  • ক্রেডিট লিমিটঃ ৩০০,০০০ টাকা
  • বাৎসরিক ফিঃ ২৫০০ টাকা
  • মাসিক রক্ষানাবেক্ষন ফিঃ ১৫০০ টাকা
  • লেট পেমেন্ট ফিঃ ৭৫০ টাকা
  • অতিরিক্ত ব্যবহার ফিঃ ৭৫০ টাকা
  • কার্ড রিপ্লেসমেন্ট ফিঃ ৬০০ টাকা
  • ইস্যু ফিঃ ফ্রি
  • এটিএম ফিঃ প্রতি লেনদেনের জন্য ১৭০ টাকা
  • এসএমএস চার্জঃ ২০০ টাকা (প্রতি বছর)
  • ডুপ্লিকেট স্টেটমেন্ট ফিঃ ৫০০ টাকা
  • ফান্ড ট্রান্সফার ফিঃ লেনদেনের পরিমাণের ০.৭০%
  • ই-কমার্স ফিঃ লেনদেনের পরিমাণের ০.৫০%
  • পিন রিপ্লেসমেন্ট ফিঃ ১০০ টাকা

সুবিধাঃ

  • সকল প্রকার ইন্টারন্যাশনাল লেনদেন করতে পারবেন।
  • অনুমোদিত ক্রেডিট লিমিটের ৫০% টাকা আপনি নগদ উত্তোলন করতে পারবেন।

(২) ইসলামী ব্যাংক ভিসা খিদমাহ কার্ড (পাইওরিটি প্ল্যাটিনাম)

আপনি যদি ইসলামী ব্যাংকের ভিসা খিদমাহ ক্রেডিট কার্ডটি (পাইওরিটি প্ল্যাটিনাম) গ্রহন করেন তাহলে আপনার নিম্নোক্ত হারে চার্জ প্রদান করতে হবে এবং নিচে উল্লেখিত সুবিধা গুলো পাবেন।

চার্জঃ

  • ক্রেডিট লিমিটঃ ৫০০,০০০ টাকা
  • বাৎসরিক ফিঃ ৩৫০০টাকা
  • মাসিক রক্ষানাবেক্ষন ফিঃ  ২৫০০ টাকা
  • লেট পেমেন্ট ফিঃ ৭৫০ টাকা
  • অতিরিক্ত ব্যবহার ফিঃ ৭৫০ টাকা
  • কার্ড রিপ্লেসমেন্ট ফিঃ ৮০০ টাকা
  • ইস্যু ফিঃ ফ্রি
  • এটিএম ফিঃ ১৭০ টাকা প্রতিটি লেনদেনের জন্য
  • এসএমএস চার্জঃ ২০০ টাকা (১ বছরের জন্য)
  • ডুপ্লিকেট স্টেটমেন্ট ফিঃ ৫০০ টাকা
  • ফান্ড ট্রান্সফার ফিঃ লেনদেনের পরিমাণের ০.৭০%
  • ই-কমার্স ফিঃ লেনদেনের পরিমাণের ০.৫০%
  • পিন রিপ্লেসমেন্ট ফিঃ ১০০ টাকা

সুবিধাঃ

  • আপনার ক্রেডিট কার্ডের লিমিট থেকে ৫০% টাকা আপনি নগদ ক্যাশ করতে পারবেন এবং বাকি ৫০% শপিং এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।
  • ইন্টারন্যাশনাল লেনদেন করতে পারবেন।

(৩) ইসলামী ব্যাংক ভিসা খিদমাহ কার্ড (গোল্ড)

আপনি যদি ইসলামী ব্যাংকের ভিসা খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড (গোল্ড) গ্রহন করেন তাহলে আপনার নিম্নোক্ত হারে চার্জ প্রদান করতে হবে এবং নিচে উল্লেখিত সুবিধা গুলো পাবেন।

চার্জঃ

  • ক্রেডিট লিমিটঃ ২০০,০০০ টাকা এবং ১০০,০০০ টাকা (দুই ধরনের কার্ড রয়েছে)
  • বাৎসরিক ফিঃ ২০০০ টাকা
  • মাসিক রক্ষানাবেক্ষন ফিঃ ১০০০ টাকা
  • লেট পেমেন্ট ফিঃ ৫০০ টাকা
  • অতিরিক্ত ব্যবহার ফিঃ ৫০০ টাকা
  • কার্ড রিপ্লেসমেন্ট ফিঃ ৪০০ টাকা
  • ইস্যু ফিঃ ফ্রী
  • এটিএম ফিঃ ১৭০ টাকা প্রতিটি এটিএম ক্যাশ উত্তোলনের জন্য
  • এসএমএস চার্জঃ ২০০ প্রতি বছরে
  • ডুপ্লিকেট স্টেটমেন্ট ফিঃ ৫০০
  • ফান্ড ট্রান্সফার ফিঃ লেনদেনের পরিমাণের ০.৭০%
  • ই-কমার্স ফিঃ লেনদেনের পরিমাণের ০.৫০%
  • পিন রিপ্লেসমেন্ট ফিঃ ১০০ টাকা মাত্র।

সুবিধাঃ

  • ইসলামী ব্যাংক দুই ধরনের ভিসা খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড (গোল্ড) প্রদান করে থাকে।সুতরাং আপমি যে কার্ডটি গ্রহন করবেন সেই কার্ডের সুবিধা সম্পর্কে আপনার ব্যাংক থেকে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে হবে।

(৪) ইসলামী ব্যাংক ভিসা খিদমাহ কার্ড (সিলভার)

আপনি যদি ইসলামী ব্যাংকের ভিসা খিদমাহ ক্রেডিট কার্ডটি (সিলভার) গ্রহন করেন তাহলে আপনার নিম্নোক্ত হারে চার্জ প্রদান করতে হবে এবং নিচে উল্লেখিত সুবিধা গুলো পাবেন।

চার্জঃ

  • ক্রেডিট লিমিটঃ ৩০,০০০ টাকা থেকে ১০০,০০০ টাকার মধ্য
  • বাৎসরিক ফিঃ ১৫০০
  • মাসিক রক্ষানাবেক্ষন ফিঃ ৫০০
  • লেট পেমেন্ট ফিঃ ৫০০
  • অতিরিক্ত ব্যবহার ফিঃ ৫০০
  • কার্ড রিপ্লেসমেন্ট ফিঃ ৩০০
  • ইস্যু ফিঃ ফ্রি
  • এটিএম ফিঃ ১৭০ টাকা প্রতি লেনদেনের জন্য
  • এসএমএস চার্জঃ ২০০ টাকা (প্রতি বছরে)
  • ডুপ্লিকেট স্টেটমেন্ট ফিঃ ৫০০ টাকা (প্রতিবারের জন্য)
  • ফান্ড ট্রান্সফার ফিঃ লেনদেনের পরিমাণের ০.৭০%
  • ই-কমার্স ফিঃ লেনদেনের পরিমাণের ০.৫০%
  • পিন রিপ্লেসমেন্ট ফিঃ ১০০ টাকা প্রতিবার

সুবিধাঃ

  • ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময়ে সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ব্যাংকে আলচনার মাধ্যমে জেনে নিতে হবে।

ভ্যাটঃ ইসলামী ব্যাংকের সকল প্রকার খিদমাহ ক্রেডিট কার্ডের সকল ধরনের চার্জের উপরে সরকার নির্ধারিত ১৫% ভ্যাট সংযোজন হবে।

ইসলামী ব্যাংকের খিদমাহ ক্রেডিট কার্ডের বিশেষ দুইটি সুবিধাঃ

প্রায় সকল ব্যাংকই তাঁদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীদের বিশেষ কিছু সুবিধা প্রদান করে থাকে।তেমনি ইসলামী ব্যাংকও তাঁদের গ্রাহকদের নিচের দুইটি সুবিধা প্রদান করে থাকে।

  • আপনার যদি ১০০ টাকা পর্যন্ত বিল বকেয়া থাকে তাহলে আপনার কাছে থেকে ইসলামী ব্যাংক কোন বকেয়া জরিমানা গ্রহন করে না।যেখানে অন্য ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড গুলোতে জরিমানা প্রদান করতে হয়।
  • অনন্যা ব্যাংক যেখানে বিল বাকি থাকলে একটা বড় অংকের ফি নিয়ে থাকে সেখানে ইসলামী ব্যাংক তাঁদের কিদমা ক্রেডিট কার্ডের জন্য লেট পেমেন্ট ফি এবং মেইনটেন্যান্স ফি নিয়ে থাকে।আর এই ফি একটা নির্দিষ্ট পরিমানের হয়ে থাকবে।

কখন ইসলামী ব্যাংকের খিদমাহ ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করতে হয়?

ইসলামী ব্যাংকের তাঁদের ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকদের ঠিকানায় প্রতি মাসের ২৭ তারিখের ভেতরে বিল পাঠিয়ে দেয় এবং এই বিল পরবর্তী ১৫ কর্ম দিবসের মধ্য পরিশোধ করতে হয়।

কোন ধরনের ব্যাক্তি ইসলামী ব্যাংকের খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবে?

আপনি যদি ইসলামী ব্যাংকের খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড নিতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে যেকোনো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মী হতে হবে।এছারাও, প্রথম শ্রেণির সরকারী কর্মকর্তা,কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,ডাক্তার,প্রকৌশলী,ইসলামী ব্যাংকের ইনভেস্টমেন্ট গ্রাহক,ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেটের মালিক এবং ইসলামী ব্যাংকের শাখা আছে এমন জমির মালিক ইসলামী ব্যাংকের খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবে।

এর বাহিরে কেউ যদি ইসলামী ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নিতে চায় তাহলে অবশ্যই তাকে একটা নির্দিষ্ট পরিমানের টাকা ইসলামী ব্যাংকে ডিপোজিট হিসাবে রাখতে হবে।

ইসলামী ব্যাংকে ক্রেডিট কার্ডের আবেদন করার জন্য নিচের ডকুমেন্টস গুলো প্রয়োজন হবেঃ

  • সদ্য তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি।
  • আপনার ন্যাশনাল আইডি কার্ডের (ভোটার আইডি কার্ড) ফটোকপি।
  • আপনার টিআইএন সার্টিফিকেটের ফটোকপি।
  • বিজেনস কার্ড অথবা কর্মী কার্ড।
  • আপনি যদি চাকরিজীবী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার সেলারি সার্টিফিকেট এবং আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিগত ছয় (৬) অথবা বার (১২) মাসের ব্যাংক লেনদেনের তথ্য।
  • আপনি যদি একজন ব্যাবসায়ী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স এবং গত এক বছরের ব্যাংক লেনদেনের তথ্য।
  • আপনি যদি একজন সেলফ-ইমপ্লয়ী (ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,ফ্রিলান্সার) হয়ে থাকেন তাহলে সেটার প্রমান পত্র।

খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য আর্থিক যোগ্যতাঃ

ইসলামী ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য একজন চাকরিজীবীর সিলভার কার্ডের জন্য সর্বনিম্ন বেতন হতে হবে ২০,০০০ টাকা,গোল্ড কার্ড নেওয়ার জন্য বেতন হতে হবে সর্বনিম্ন ৫০,০০০ টাকা এবং প্লাটিনাম কার্ড নিতে হলে সবনিম্ন ১০০,০০০ টাকা বেতনধারী হতে হবে।

আপনি যদি বিজনেস ম্যান হয়ে থাকেন তাহলে আপনার সিলভার কার্ডের জন্য ৫০,০০০ টাকা,গোল্ড কার্ডের জন্য ১০০,০০০ টাকা এবং প্লাটিনাম কার্ডের জন্য ১৫০,০০০ টাকা মাসিক আয় থাকতে হবে।

এছারাও আপনি যদি উপরে আলোচিত বিষয়ে আর বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে ইসলামী ব্যাংকের যেকোনো শাখায় উপস্থিথ হয়ে সকল প্রকারের তথ্য সম্পর্কে সরাসরি ব্যাংক অফিসারের নিকট হতে জেনে নিতে পারবেন।

তথ্য সুত্রঃ ইসলামী ব্যাংকের ওয়েবসাইট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *