সর্বশেষ সংবাদ

অ্যাম্বুলেন্সের ঝাঁকুনিতে ‘মৃত’ ব্যক্তির ফিরে এল প্রাণ!

ভারতের মহারাষ্ট্রের কোলহাপুরে ঘটে গেল এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসক কর্তৃক মৃত ঘোষিত এক বৃদ্ধ অ্যাম্বুলেন্সের ঝাঁকুনিতে প্রাণ ফিরে পেলেন। পরে সুস্থ হয়ে তিনি নিজেই হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরেছেন। খবর টাইমস অফ ইন্ডিয়ার।

৬৫ বছর বয়সী পানদুরাং উল্পে নামের এই বৃদ্ধ কয়েকদিন আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পরিবারের সদস্যরা জানান, হাঁটতে বেরিয়ে ফিরে এসে চা খাওয়ার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। বমি করার পর অজ্ঞান হয়ে যান।

পরিবার দ্রুত তাকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃতদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়ি নেওয়া হচ্ছিল। এরপর শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতিও চলছিল। তার মৃত্যুসংবাদে আত্মীয়স্বজন জড়ো হয়ে শেষযাত্রার আয়োজন শুরু করেন। রাস্তায় একটি স্পিডব্রেকার পার হওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্সটি ঝাঁকুনি খায়। ঠিক তখনই পরিবারের সদস্যরা লক্ষ্য করেন, বৃদ্ধের হাতের আঙুল নড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে দ্রুত আরেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নতুন হাসপাতালে তাকে দুই সপ্তাহ ধরে চিকিৎসা দেওয়া হয়। হার্টের সমস্যার কারণে অস্ত্রোপচারও হয়। এরপর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান পানদুরাং। যে হাসপাতাল থেকে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল, সেই হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানা।

মৃত্যু নিশ্চিত করাটা কখনোই সহজ ছিল না। ঊনবিংশ শতাব্দীতে মৃত্যু নিশ্চিত করার ৩০টি তত্ত্ব প্রচলিত ছিল। তবে প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসাবিজ্ঞানে তার কোনোটিই সামগ্রিকভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল না। ১৮৪৬ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে একাডেমি অব সায়েন্স। মৃত্যুর আগেই কাউকে সমাধিস্থ করার ঘটনা প্রতিরোধে মৃত্যুর সঠিক সংজ্ঞা নিয়ে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

তত দিনে স্টেথিসকোপ আবিষ্কার হয়ে গেছে। ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া তরুণ এক চিকিৎসক মতপ্রকাশ করে বলেন, স্টেথিসকোপের মাধ্যমে চিকিৎসকেরা যদি দুই মিনিট কোনো হৃৎস্পন্দন না পান, তবে নিশ্চিতভাবেই সে মৃত। তাকে নিরাপদে সমাধিস্থ করা যেতে পারে।

এ পদ্ধতি বাতলে দিয়ে তরুণ ওই চিকিৎসক প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করেন। তখন থেকে মৃত্যু ঘোষণার এ পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ১৯২০-এর দশকের এক আবিষ্কারে দেখা যায়, হৃৎস্পন্দন বন্ধের পরও রোগীর বেঁচে ওঠার সুযোগ রয়েছে। ফলে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভিত্তিতে মৃত শনাক্ত করার ওই তত্ত্ব নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।

কাউকে মৃত ঘোষণা করা কঠিন। প্রযুক্তির অভাবের কারণে নয়, বরং প্রযুক্তি প্রাচুর্যই এর কারণ। দুই শতাব্দী আগে চিকিৎসকেরা মৃত্যু নির্ণয়ে সমস্যায় পড়তেন। কারণ, তখন পর্যাপ্ত পরীক্ষার সুযোগ ছিল না। প্রাচীন পদ্ধতিতে তাঁরা শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করতেন। আর এখন সমস্যার কারণ, অত্যাধুনিক পরীক্ষার প্রাচুর্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *