বিগত বছর গুলোর চাইতে ল্যাপটপের ব্যাবহার বেড়েছে কয়েকগুন এবং প্রতিনিয়ত ল্যাপটপের ব্যাবহার বেড়েই চলেছে।একই সাথে বর্তমান বাজারে থাকে ল্যাপটপ গুলোতে ব্যাপকহারে উন্নত প্রযুক্তি ব্যাবহার করা হয়েছে এবং একই সাথে ডিজাইনেও অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আর এই প্রযুক্তির ব্যাবহার এবং ডিজাইন পরিবর্তন আনার কারনে বাজারে এত পরিমাণ ব্যান্ড এসেছে যে কোন ল্যাপটপটি আপনি কিনবেন এই সিদ্ধান্ত নিতেই আপনাকে হিমশিম খেতে হবে।তবে আমারা কিছু বিষয়ে ল্যাপটপ গুলোর মধ্য কম্প্রেয়ার করলেই আমাদের জন্য সঠিক ল্যাপটপটি নির্বাচন করতে পারি।
আজকের পোস্টে আমি আপনাদের সাথে এমন ৭ টি বিষয়ে আলোচনা করব যে গুলোর মাধ্যমে বাজারে থাকা ল্যাপটপ গুলোর মধ্য কম্প্রেয়ার করলে আপনি আপনার জন্য সঠিক ল্যাপটপটির সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।তাহলে চলুন সেই ৭ টি বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য আলোচনার মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক।
ল্যাপটপ কেনার পূর্বে অবশ্যই যে ৭ টি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবেঃ-
- টাচস্ক্রিন সুবিধা
- ডিজাইন এবং ওজন
- ডাটা ধারন ক্ষমতা
- ল্যাপটপের আকার আয়তন
- অপারেটিং সিস্টেম
- ল্যাপটপটিতে কি কি ফিচার আছে এবং
- কোন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ
ল্যাপটপ কেনার আগে আমাদের যেসব বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে আমরা উপরে লিস্ট আকারে সেইগুলোর নাম জেনেছি।এখন আমরা প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানব।
(১) টাচস্ক্রিন সুবিধা আছে কিনা জেনে নিতে হবে
বর্তমানে বাজারে স্মার্টফোন গুলোর মত টাচস্ক্রিন সুবিধা আছে এমন ল্যাপটপ কিনতে পাওয়া যায়।আপনার যদি টাচস্কিন সুবিধা ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই এই সুবিধা আছে এমন কোন ল্যাপটপ কিনবেন।টাচস্কিন সুবিধা ল্যাপটপ এবং উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম আছে এমন ল্যাপটপে ইন্টারনেট ব্যাবহার করা অনেক সহজ।এছারাও অফিসিয়াল কাজ-কর্ম করতেও টাচস্কিন ল্যাপটপ আপনাকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করবে।বর্তমানে আপনি বাজারে ৫০-৬০ হাজার টাকার মধ্য টাচস্কিন সুবিধা আছে এমন ল্যাপটপ কিনতে পারবেন।
(২) ডিজাইন এবং ওজন
আপনি যদি খুব বেশী ভ্রমন করেন অথবা আপনাকে অফিসের কাজে সারাক্ষন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছুটে বেড়াতে হয় তাহলে অবশ্যই আপনি হালকা ওজনের কোন ল্যাপটপ পছন্দ করবেন।বাজারে যে ১২ থেকে ১৩ ইঞ্চির ল্যাপটপ গুলো পাওয়া যায় সেগুলো আপনার জন্য সেরা একটি ল্যাপটপ হতে পারে।তবে আপনি যদি আপনার বাসা অথবা অফিসে ব্যাবহার করার জন্য ল্যাপটপ কিনতে চান তাহলে অবশ্যই আপনি ১৪ ইঞ্চি থেকে ১৫.৬ ইঞ্চির যে ল্যাপটপ পাওয়া যায় সেগুলো কিনবেন।
আর যদি আপনি আপনার ল্যাপটপের মাধ্যমে গেমিং করতে চান অথবা ভিডিও এডিটিং এর কাজ করতে চান তাহলে ১৫.৬ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ১৭ ইঞ্চি পর্যন্ত যে ল্যাপটপ পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্য থেকে একটি কিনবেন।
একই সাথে আপনি যে ল্যাপটপ কিনবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেই ল্যাপটপটি কতটা ব্যাটারি ব্যাকআপ দিতে পারবে এবং ল্যাপটপের ব্যাটারি লিথিয়াম আয়নের কিনা এই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।কারন লিথিয়াম আয়নের ব্যাটারি গুলো আপনাকে দীর্ঘ সময় ব্যাকআপ দিতে পারবে।
(৩) ডাটা ধারন ক্ষমতা
আপনি যখন কোন ল্যাপটপ কিনবেন তখন অবশ্যই আপনাকে জেনে নিতে হবে যে এই ল্যাপটপে আপনি কতটা ডাটা স্টোর করতে পারবেন।আবার আপনাকে সেই ল্যাপটপ কি ধরনের স্টোরেজ সুবিধা (হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ নাকি এসএসডি) দেওয়া হবে এই বিষয়েও আপনাকে জেনে নিতে হবে।বর্তমানে প্রায় সকল ল্যাপটপেই এসএসডি সুবিধা দেওয়া হয়।এসএসডি স্টোরেজ সুবিধায় খরচ বেশী হলেও এটা সহজে নষ্ট হয় না এবং এর কাজের গতি অনেক বেশী।
(৪) ল্যাপটপের আকার আয়তন
আপনি যে ল্যাপটপটি কিনতে চাচ্ছেন সেটা যদি শুধু অফিস অথবা বাড়ীতে ব্যাবহার করার জন্য কিনেন তাহলে অবশ্যই আকারে বড় ল্যাপটপ কিনবেন।ডিসপ্লে বড় হলে আপনার চোখের জন্য ভালো হবে আবার বাড়তি কিছু কাজের সুবিধাও পাবেন।আর যদি শুধু অফিসের প্রেজেন্টেশন সংক্রান্ত কাজের জন্য ল্যাপটপ কিনতে চান তাহলে ওজনে হালকা এবং ছোট স্ক্রিনের ল্যাপটপ হবে আপনার জন্য বেস্ট চয়েজ।
(৫) অপারেটিং সিস্টেম
আপনি যখন কোন ল্যাপটপ কিনবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং পছন্দ করেছেন তখন আপনাকে জেনে নিতে হবে যে সেই ল্যাপটপে সর্বশেষ ভার্সনের অপারেটিং সিস্টেম ব্যাবহার করা হয়েছে কিনা।যদি করা হয়ে থাকে তাহলে সেই ল্যাপটপ আপনি নিয়ে নিতে পারেন।আর যদি দেখেন সর্বশেষ ভার্সনের অপারেটিং সিস্টেম দেওয়া নাই তাহলে সেটা না কেনাই ভালো।এই রকমের ল্যাপটপ কিনলে হয়তবা আপনার কিছু পরিমাণ টাকা সাশ্রয় হবে কিন্তু ভোগান্তির শেষ থাকবে না।আর অপারেটিং সিস্টেম পছন্দ করার ক্ষেত্রে আপনি যে অপারেটিং সিস্টেমে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সেইটা ব্যাবহার করাই উত্তম।
(৬) ল্যাপটপটিতে কি কি ফিচার আছে
যখন আপনি কোন ল্যাপটপ পছন্দ করবেন তখন সেই ল্যাপটপে কি কি ফিচার আছে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।কারন এই ফিচার গুলোর উপরেই আপনার ল্যাপটপের পারফরমান্স নির্ভর করবে।ল্যাপটপ কেনার ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিচের ফিচার গুলো দেখে নেওয়া ভালো।
- যদি কোন ল্যাপটপে মাল্টিকোর সিপিইউ থাকে সেটা অবশ্যই আপনাকে অনেক ভালো পারফরমান্স প্রদান করবে এতে কোন সন্দেহ নাই।যদি আপনার পছন্দ করা ল্যাপটপে ইনটেল বা এএমডির মাল্টিকোর সিপিইউ থাকে তাহলে চোখ বন্ধ করে সেই ল্যাপটপ কিনে ফেলুন।
- ল্যাপটপে কমপক্ষে ৩-৪ টি পোর্ট থাকা ভালো এবং একই সাথে সেই ল্যাপটপের স্পিড কেমন সেটাো দেখে নিতে হবে।
- বিভিন্ন ধরনের গেম খেলার জন্য,ভিডিও এডিট করার জন্য ভালো গতির ল্যাপটপ প্রয়োজন এর জন্য আমাদেরকে উচ্চ গতি সম্পন্ন প্রসেসর আছে এমন ল্যাপটপ কিনতে হবে।সাধারণত প্রসেসরের ক্লক স্পিড কমপক্ষে ৩.০ গিগাহার্টজ অথবা তার বেশী হলে সেই ল্যাপটপ কেনা যাবে।একই সাথে প্রসেসরটি কোন সিরিজের সেই সম্পর্কেও জেনে নিতে হবে।
- আপনি যদি ল্যাপটপটি ব্যাবহার করে গেমিং করতে চান অথবা ভিডিও এডিট করতে চান অথবা বিভিন্ন ধরনের গ্রাফিক্স রিলেটেড কাজ করতে চান তাহলে অবশ্যই ডিডিআর থ্রি এর ৪ গিগাবাইটের র্যাম নিতে হবে।
(৭) কোন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ
আপনি যখন কোন ল্যাপটপ কিনতে চাইবেন তখন অবশ্যই আপনি ভালো কোন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ কেনার চেষ্টা করবে।বর্তমানে বাজারে অসংখ্য ল্যাপটপের ব্র্যান্ড আছে।তাদের মধ্য অ্যাপল, এইচপি, লেনোভো, ডেল, আসুস, এমএসআই, এসেয়ার,সামসাং, মাইক্রোসফট এবং রাজার জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে।আপনার এই ব্র্যান্ড গুলোর যেকোনো একটি থেকে আপনার ল্যাপটপ কিনবেন।
ল্যাপটপ কেনার আগে আপনি ল্যাপটপের সাথে কি কি পাবেন এবং প্রোডাক্ট কেনার পরে কতদিন ওয়ারেন্টি/গ্যারান্টি সার্ভিস পাবেন সেই সংক্রান্ত সকল তথ্য জেনে নিবেন।
শেষ কথা
আমি আপনাদের সাথে এই লেখায় ল্যাপটপ কেনার পূর্বে আমাদের যে বিষয় গুলোর প্রতি খেয়াল রেখে আমাদের জন্য একটি উপযুক্ত ল্যাপটপ নির্বাচন করতে হবে সেই সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা করেছি।আপনি যদি এই লেখায় আলোচিত বিষয়গুলোর প্রতি নজর রেখে কোন ল্যাপটপ সিলেক্ট করেন তাহলে অবশ্যই আপনি একটি ভালো ল্যাপটপ কিনতে পারবেন বলে আমি আশাবাদী।