ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) সাত শৌচাগার সংস্কারে খরচ হয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা টাকা। শুধু শৌচাগার নয়; জিমনেশিয়ামের কক্ষ সংস্কার, থাই অ্যালুমিনিয়ামের জানালা স্থাপন, টিচার্স লাউঞ্জ মেরামত, দেয়াল সংস্কার, ছাত্রাবাস ভবনের স্যালুন, গেস্টরুম ও লন্ড্রি এরিয়া রুমের সংস্কারে আরও ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। তবে কাজের অধিকাংশই শেষ না করে ২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢামেকের অবকাঠামো উন্নয়ন সংস্কার ও মেরামত প্রকল্পে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এ কাজ বাস্তবায়ন করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। এ খরচকে অতিরিক্ত বলছেন কলেজের চিকিৎসক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঢামেকের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে সাতটি শৌচাগার সংস্কারে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে ফজলে রাব্বি ছাত্রাবাসের ‘ডি’ ব্লক ভবনের চারটি শৌচাগারের টাইলস মেরামতে ব্যয় করা হয়েছে ৪৭ লাখ টাকা। ডা. আলীম চৌধুরী নতুন ছাত্রী হোস্টেলের শৌচাগারে টাইলস ও স্যানিটারি ফিটিংস পরিবর্তনে ব্যয় হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। তবে এখানে টাইলস আগেই লাগানো ছিল। ডা. মিলন ইন্টার্নি ছাত্রী হোস্টেলে শৌচাগার সংস্কারে খরচ করা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। এ হোস্টেলের ক্যান্টিনের শৌচাগার মেরামতে ১২ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। তবে সরেজমিন এসব শৌচাগারে টাইলস ও স্যানিটারি ফিটিংস পরিবর্তন ছাড়া কিছুই সংস্কার করা হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চিকিৎসক ও শিক্ষার্থী বলছেন, এসব কাজের প্রতিটিতে ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ লাখ টাকা খরচ হবে। বাকি টাকা ঢাকা মেডিকেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগেরই আরেকটি প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)। দেশে সর্বাধিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করেছে সংস্থাটি। ডিপিএইচইর প্রকৌশলী ও উপপ্রকল্প পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ঢাকা শহরে একটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা লাগতে পারে। মেরামতে কীভাবে এত টাকা খরচ হয়– প্রশ্ন তাঁর।
মেডিকেল কলেজের দক্ষিণ পাশের ভেতরের চত্বরসংলগ্ন অংশের নিচতলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত কাঠের জানালার পরিবর্তে থাই অ্যালুমিনিয়ামের জানালা স্থাপনে খরচ দেখানো হয়েছে ১৭ লাখ টাকা। একইভাবে টিচার্স লাউঞ্জ সংস্কারে ১২ লাখ টাকা, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের বিভিন্ন কক্ষ সংস্কারসহ আনুষঙ্গিক কাজে ২৪ লাখ এবং ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভিন্ন কক্ষ সংস্কারসহ আনুষঙ্গিক কাজে ১২ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে।
এসব কাজ তদারকি করার জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন কমিটি করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। কমিটিতে ছিলেন ঢামেকের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. শফিকুল আলম চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহারিয়ার নদী, সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রদ্যুৎ কুমার সাহা এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম। এই চারজনের সিন্ডিকেট সংস্কারের নামে বেশির ভাগ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কমিটির সদস্যরা সংস্কার ও মেরামত সরেজমিন পরিদর্শন করে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়েছে বলে মতামত দিয়েছিলেন।
অস্বাভাবিক ব্যয়ের বিষয়ে ডা. প্রদ্যুৎ কুমার সাহা সমকালকে বলেন, অতিরিক্ত ব্যয়ের বিষয়ে আমরাও প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যয় নির্ধারণ করেছে। ব্যয়ের বিষয়ে আর কিছুই জানি না। যেহেতু ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, তাই এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
ডা. শাহারিয়ার নদী বলেন, অর্থ ব্যয়ের বিষয়টি দেখে গণপূর্ত অধিদপ্তর। অস্বাভাবিক ব্যয়ের বিষয়ে তারা বলতে পারবে। আমরা শুধু সংস্কার ও মেরামতের কাজ বুঝে নিয়েছি। কাজ শেষ হওয়ার আগে সম্পূর্ণ কাজ শেষ বলে মতামত কেন দিয়েছেন– এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সব কাজই শেষ হয়েছে।
এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, কলেজের ৭০টি শৌচাগার মেরামত করা হয়েছে। তবে তাঁর সঙ্গে দেখতে যেতে চাইলে তিনি অস্বীকৃতি জানান। জিমনেশিয়ামের কাজ শেষ না করেই ২৫ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, প্লাস্টার ও টাইলসের কাজ করা হয়েছে।