আপনি যদি একজন সাধারণ ফেসবুক ব্যাবহারকারীও হয়ে থাকেন তাহলে অনেক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে হলেও ডিজিটাল মার্কেটিং এই শব্দ দুইটির সাথে পরিচিত হয়ে থাকবেন।আবার হয়ত ফেসবুকে আপনার বন্ধু তালিকারী হয়ত কেউ ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ করে।কিন্তু কখনো বিস্তারিত ভাবে জানা হয়নি ডিজিটাল মার্কেটিং কি?কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং কাজ করে?আবার আপনার নিজেরও কি ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা উচিত?এই প্রশ্ন গুলো যদি আপনার মনের মধ্যই এতদিন ঘুরপাক খেতে থাকে তাহলে আপনি একদন সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন।কারন আমি এই পোস্টে ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে আপনার মনের মধ্য ঘুরতে থাকা সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।তাহলে চলুন আলোচনার মাধ্যমে জেনে যাক ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিস্তারিত।
ডিজিটাল মার্কেটিং কি?
আপনার হাতে থাকা মোবাইল ফোন অথবা আপনার বাসায় থাকা কম্পিউটার অথবা অন্য যেকোনো ডিজিটাল ডিভাইস এবং ইন্টারনেট ব্যাবহার করে যখন আপনি কোন প্রোডাক্টের প্রচার করবেন তখন সেটাকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলা হবে।অনেকে আবার ডিজিটাল মার্কেটিং কে অনলাইন মার্কেটিং এবং ইন্টারনেট মার্কেটিং বলেই অভিহিত করে থাকে।
কেন ডিজিটাল মার্কেটিং করতে হবে বা, করতে হয়?
যেহেতু বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যাবহার অনেক বেড়েছে এবং বেশীরভাগ মানুষই বর্তমানে ইন্টারনেট এর সুবাদে অনলাইনে কেনাকাটা করে থাকে।এছারাও বর্তমানে মানুষ কোন পণ্য কেনার আগে সেই প্রোডাক্ট সম্পর্কে ইন্টারনেট থেকে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেয়।এবং বর্তমানে আগের চাইতে অনলাইন ভিত্তিক বেচা-কেনা অনেক বেরছে সুতরাং আপনাকে মার্কেটে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গেলে অবশ্যই ডিজিটাল মার্কেটিং করতে হবে এবং এর বিকল্প কোন কিছু নাই।
আপনার কি ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা উচিত?এবং কেন শেখা উচিত?
বর্তমান সময় যেহেতু প্রযুক্তির যুগ সেহেতু আপনাকে অফিসিয়াল চাকরি করতে গেলেও যেকোনো একটি প্রযুক্তিগত বিষয়ে এক্সপার্ট হতে হবে।কারন এখন বেশীরভাগ প্রতিষ্ঠানও তাঁদের প্রতিষ্ঠানের এবং তাঁদের পণ্যর প্রচার অনলাইনে ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে শুরু করেছে।এবং তাঁরা অবশ্যই চাইবে তাঁদের কর্মীরা যেন এই বিষয়ে এক্সপার্ট হয়ে তাঁদের প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানের পণ্য/সেবা সম্পর্কে ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ গুলো করতে পারে।সুতরাং, যেকোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে চাইলেও আপনাকে এখন ডিজিটাল মার্কেটিং জানতে হবে।
আবার আপনি যদি অনেক বছর ধরে কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এবং মনে করেন আপনার দ্বারা আর চাকরি করা সম্ভব হবে না তখন আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে অনলাইন ভিত্তিক কোন প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যাক্তির ডিজিটাল মার্কেটিং রিলেটেড কাজ গুলো করে একটা ভালো পরিমানের টাকা আয় করতে পারবেন।
সুতরাং, দেখা যাচ্ছে যে ইন্টারনেটের প্রসার এবং এর ব্যাবহারকারী বাড়ার কারনে সবাই দিন দিন ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রতি ঝুঁকছে।এবং তাঁদের কাজ গুলো করিয়ে নেওয়ার জন্য নতুন দক্ষ জনবলের প্রয়োজনও বাড়ছে।এসব কারন মাথায় রেখেই আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা উচিত।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর সুবিধা গুলো কি কি?
আমি উপরে লেখার মধ্য অনেকবারই বলেছি যে বর্তমানে প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানই তাঁদের পণ্য/সেবার প্রচার করতে ডিজিটাল মার্কেটিং এর সহায়তা নিচ্ছে।আগের দিনে যেখানে টিভি এবং পত্রিকাতে বিজ্ঞাপন দিয়ে তাঁরা তাঁদের পণ্য/সেবার প্রচার করত সেখানে কেন তাঁরা ইন্টারনেট ভিত্তিক মার্কেটিং এর দিকে ঝুঁকছে?তাহলে এখানে অবশ্যই এখানে এমন কোন সুবিধা আছে যার কারনে তাঁরা টিভি,পত্রিকা বাদ দিয়ে অনলাইন ভিত্তিক মার্কেটিং এর দিকে বেশী আগ্রহ দেখাচ্ছে।এখন আমরা ডিজিটাল মার্কেটিং এর কিছু সুবিধা সম্পর্কে জানব।
(১) পৃথিবী ব্যাপী প্রচারের সুযোগ
টিভি এবং পত্রিকার মাধ্যমে যেখানে দেশের বাহিরে খুব একটা পৌঁছানোর সুযোগ নেই সেখানে ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি সারা পৃথিবী ব্যাপী আপনার সেবা/পণ্যর প্রচার চালাতে পারবেন।
(২) নির্দিষ্ট এলাকায় বিজ্ঞাপন দেখানোর সুযোগ
মনে করুন আপনি এমন কোন সেবা প্রদান করেন যেটা শুধু মাত্র ঢাকার মানুষ জন ব্যাবহার করে আর সারা দেশের কেউ এই সেবা/পণ্য ব্যাবহার করেনা অথবা করার দরকার পরেনা।আরও স্পেসেফিক ভাবে যদি ধরি যে ঢাকার মধ্য শুধু গুলশান এলাকার মানুষের এই সেবা/পণ্যর প্রয়োজন পরে।তাহলে আপনি কি এই রকম পণ্য/সেবার প্রচার সারা দেশ ব্যাপী করবেন নাকি সেই নির্দিষ্ট এলাকায় করবেন?অবশ্যই সেই নির্দিষ্ট এলাকায় করবেন।এখন টিভি অথবা পত্রিকাতে যেহেতু শুধুমাত্র গুলশান এলাকায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার সুযোগ নাই আবার শুধু মাত্র গুলশাল এলাকার জন্য প্রচার হয় এমন কোন টিভি চ্যানেলও নাই আবার কোন পত্রিকাও নাই।তাহলে গুলশান এলাকায় আপনার সেবা/পণ্যর প্রচার চালানোর উপায় কি?উপায় একটায় সেটা হল ডিজিটাল মার্কেটিং।ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাহায্যে আপনি খুব কম খরচেই গুলশান এলাকাকে টার্গেট করে আপনার সেবা/পণ্যর বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন।
(৩) ডিজিটাল মার্কেটিং এর খরচ অনেক কম
অনন্যা মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের খরচের চেয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের খরচ অনেক কম।আপনি যখন টিভি অথবা পত্রিকাতে বিজ্ঞাপন দিবেন তখন সেই বিজ্ঞাপন কেউ দেখুক বা না দেখুক আপনাকে কিন্তু বিজ্ঞাপনের জন্য পেমেন্ট করতেই হবে।অপরদিকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপন চালানো হলে আপনি দুই রকমভাবে বিজ্ঞাপন চালাতে পারবেন।প্রথমত আপনি কাম্পেইন সেট করার সময়ে বলে দিবেন এই যে আমি তোমাকে আগেই টাকা দিচ্ছি তুমি আমার বিজ্ঞাপন আমার টার্গেট গ্রাহকদের দেখাও আবার আপনি বলে দিতে পারেন যে আমি তখনই টাকা দিব যখন আমার সেবা/পণ্যর বিজ্ঞাপন যখন কেউ দেখবে।তবে বর্তমানে দ্বিতীয় পদ্ধতিই বেশী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
(৪) টার্গেটেড মার্কেটিং করার সুযোগ
আপনি যখন ডিজিটাল মাধ্যম ব্যাবহার করে বিজ্ঞাপন দিতে যাবেন তখন আপনি চাইলেই আপনার নির্দিষ্ট গ্রাহককে টার্গেট করে বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন।অর্থাৎ,আপনার পণ্য/সেবা নিয়ে যারা আগ্রহী তাঁদের টার্গেট করেই আপনি বিজ্ঞাপন রান করার সুযোগ পাবেন।
(৫) আপনার প্রতিষ্ঠানের চাইতে বড় প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ
মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে আপনি যত টাকা খরচ করবেন আপনি ততই অন্য প্রতিষ্ঠানের চাইতে এগিয়ে থাকবেন।প্রথাগত বিজ্ঞাপনে বড় বড় প্রতিষ্ঠান গুলো অনেক টাকা খরচ করে এখন যদি আপনার প্রতিষ্ঠান তাঁদের প্রতিষ্ঠানের চাইতে ছোট হয় তাহলে অবশ্যই তাঁদের সাথে আপনি সেই বিজ্ঞাপন মাধ্যম গুলোতে টিকতে পারবেন না।কিন্তু আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে প্রচার চালান তাহলে খুব সহজেই এবং অল্প খরচে তাঁদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারবেন।
শেষ কথা
উপরের আলোচনার পরিপেক্ষিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে বর্তমানে এবং সামনের সময় গুলোতে প্রতিটি সেবা অথবা পণ্যর প্রচার চালানো হবে ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যাবস্থা ব্যাবহার করে।এবং সেদিন খুব দেরি নয় চাকরির জন্য যোগ্যতা হিসাবে ডিজিটাল মার্কেটিং জানা আবশ্যক এমনটা বলে দেওয়া হবে।এছারাও বেকারত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় হতে পারে ডিজিটাল মার্কেটিং।সর্বপরি আমাদের প্রযুক্তির সাথে টাল মিলিয়ে চলার জন্য হলেও ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে হবে।