শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন এবং প্রায় দেড় যুগ ধরে এই পদে ছিলেন। তবে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র ও জনতার আন্দোলনের মুখে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন। ভারতে পালানোর পরপরই শেখ হাসিনা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য প্রকাশিত হতে থাকে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুর্নীতি
পালানোর পর শেখ হাসিনা পরিবারের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে, তা হলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, এই প্রকল্প থেকে শেখ রেহানা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা) চুরি করা হয়েছে। এই অভিযোগে শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের নামও উঠে আসে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের পদক্ষেপ
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ চারটি প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠায়। চিঠিতে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, এবং টিউলিপ সিদ্দিকের দুর্নীতির তথ্য চেয়ে আগামী ৭ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
বেজা ও বেপজা প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাৎ
শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিদেশে অর্থ পাচার ও টিউলিপ সিদ্দিকের সম্পদ বিতর্ক
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, শেখ হাসিনা ও তাঁর ছেলে জয় বিদেশে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এ বিষয়ে প্রমাণ পেয়েছে। যুক্তরাজ্যে টিউলিপ সিদ্দিকের সম্পদ নিয়ে একাধিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, টিউলিপ একটি বাড়ি ক্রয় করলেও সেই সম্পদের বিবরণ তিনি তার আয়কর নথিতে উল্লেখ করেননি। এমনকি বাড়ির ক্রয়ের অর্থের উৎস সম্পর্কেও কোনো সঠিক তথ্য দিতে পারেননি।
রূপপুর প্রকল্প থেকে অর্থ পাচারের প্রক্রিয়া
রূপপুর প্রকল্পে রাশিয়ার ঋণের অর্থ বাংলাদেশে স্থানান্তরের সময় ৫০০ কোটি ডলার সরাসরি মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। এই অর্থ প্রকল্পের ব্যয়ের অংশ হিসেবে দেখানো হলেও, প্রকৃতপক্ষে এটি শেখ হাসিনা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনা এই প্রকল্পের মাধ্যমে তার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিককে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ব্যবহার করে এবং ৩০% কমিশন হিসেবে প্রদান করেন।
ভুয়া কোম্পানি ও বিদেশে অর্থ পাচার
শেখ রেহানা, তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং টিউলিপ সিদ্দিক যৌথভাবে ভুয়া কোম্পানি “প্রচ্ছায়া লিমিটেড” এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক “জুমানা ইনভেস্টমেন্ট” চালু করেন। এই কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে বিদেশে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়। এছাড়া, এই প্রক্রিয়ায় তাঁরা ডেসটিনি গ্রুপ নামের একটি বিতর্কিত কোম্পানির সহায়তা নেন।
মেগা প্রকল্প থেকে অর্থ লোপাটের পরিমাণ
আলোচিত সব মেগা প্রকল্প থেকে শেখ হাসিনা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব প্রকল্পের দুর্নীতি সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা জানলেও চাকরির ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেনি।
শেখ হাসিনার পরিবার এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এই সময়কালজুড়ে অনিয়ম এবং অর্থপাচারে জড়িত ছিলেন। তাঁদের এই কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে এনেছে।