সর্বশেষ সংবাদ

যে আট প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক

আট প্রকল্পে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতির নথি চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এদিকে হাসিনা-রেহানা পরিবারের দেশে-বিদেশে লেনদেনের যাবতীয় নথি তলব করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া পদ্মা সেতু দুর্নীতি ষড়যন্ত্র মামলার পুনরায় তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান।

আক্তার হোসেন জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিশেষ অগ্রাধিকারের আট প্রকল্পে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নথি চেয়ে মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক।
অগ্রাধিকারের এ প্রকল্পগুলোতে ২১ হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে।

প্রকল্পগুলো হচ্ছেÑ মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২, মিরসরাই বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল-প্রথম পর্যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের পানি শোধনাগার ও গভীর নলকূপ স্থাপন, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে দুটি মডার্ন ফায়ার স্টেশন স্থাপন, মিরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন প্রকল্প।

চিঠিতে এসব প্রকল্পের প্রস্তাব বা প্রাক্কলন, অনুমোদিত প্রস্তাব বা প্রাক্কলন, বাজেট অনুমোদন, বরাদ্দ, অর্থ ছাড়করণ, ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ ও এই সংক্রান্ত যাবতীয় নথি এবং এসব প্রকল্প নিয়ে কোনো তদন্ত হয়ে থাকলে প্রতিবেদন ও প্রকল্পগুলোর সারসংক্ষেপের কপি চেয়েছে দুদক। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বোন শেখ রেহানা ও তার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

পরদিন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি দলকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দুদকের পাঁচ সদস্যের এ দল আওয়ামী লীগ সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকারের আট প্রকল্পে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ওঠা ২১ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করবে। একই দল অনুসন্ধান করবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ৫৯ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ। শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিষয়ে হাইকোর্ট রুল জারির দুইদিন পর দুদকের পক্ষ থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

অনুসন্ধান দল গঠনের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এ বিষয়ে কমিশনের অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্তের পর পরবর্তী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে এ দল গঠন করা হয়েছে।

দুদকের নথিতে বলা হয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে দুর্নীতির ওই অভিযোগ কমিশনের গোচরে এনেছেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ।

এর আগে রবিবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ৩০ কোটি ডলার পাচারের আরেকটি অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।

দেশে-বিদেশে লেনদেনের সব নথি তলব ॥ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার মেয়ে ব্রিটিশমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের দেশে-বিদেশে লেনদেনের যাবতীয় নথি তলব করে বিএফআইইউর কাছে চিঠি দিয়েছে দুদক।

মঙ্গলবার পাঠানো চিঠিতে সংস্থাটির অনুসন্ধান টিম সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের নামে পরিচালিত অফশোর ব্যাংকের হিসাব বিবরণীসহ সব অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে।

একইসঙ্গে টিম নির্বাচন কমিশন অফিস এবং ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসেও তাদের ব্যক্তিগত নথিপত্র তলব করে চিঠি দিয়েছে বলেও জানা গেছে। দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান, অনুসন্ধান টিম প্রথম দফায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত নথিপত্র তলব করে নির্বাচন কমিশন এবং ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসের নথি তলব করে। মঙ্গলবার তাদের নামে পরিচালিত অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নথি ও দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের বিস্তারিত বিবরণ সরবরাহের জন্য বিএফআইইউ’র কাছে চিঠি দিয়েছে। শীঘ্রই আরও কিছু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নথি তলব করে চিঠি পাঠানো হবে।

পদ্মা সেতু দুর্নীতি ষড়যন্ত্র মামলার পুনরায় তদন্তের সিদ্ধান্ত ॥ দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন জানান, পদ্মা সেতুর দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মামলা পুনরায় তদন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। ইতোমধ্যে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ২০১০ সালে নিজেরা তদন্ত শুরু করে। অভিযোগ সম্পর্কে নিজেদের তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশকে (আরসিএমপি) অনুরোধ জানায়। ওই অনুরোধে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে কানাডায় এসএনসি লাভালিনের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে রমেশ শাহ ও সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

২০১২ সালে টরন্টোর আদালতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরে এসএনসি-লাভালিনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস ও ব্যবসায়ী জুলফিকার ভূইয়াকেও এ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। সে সময় রমেশ শাহের কাছ থেকে কানাডীয় পুলিশের জব্দ করা একটি ডায়েরি নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়, ‘যাতে বাংলাদেশের কাকে কত শতাংশ ঘুষ দেওয়া হবে’ তার সাংকেতিক বিবরণ ছিল বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়।

এদিকে বিশ্বব্যাংকের চাপে ‘ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে দুদক ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর বনানী থানায় একটি মামলা করেন। মামলা করার ২২ মাস পর তদন্তকারীরা বলেন, অভিযোগের কোনো প্রমাণ তারা তদন্তে পাননি। দুদক চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ায় ২০১৪ সালের অক্টোবরে ওই দুর্নীতি মামলার অবসান ঘটে। তখনকার সেতু সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ সাত আসামির সবাইকে অব্যাহতি দেয় আদালত।

সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *