সর্বশেষ সংবাদ

ফোন ট্র্যাকিং কি?ফোন ট্র্যাকিং হচ্ছে কিনা বুঝার এবং বাঁচার উপায় কি?

টেকনোলজি যত আমাদেরকে স্মার্ট করছে ততই আমাদেরকে আবার বিপদেও ফেলছে।বর্তমানে টেকনোলজির বিস্ময়কর অবদান হল স্মার্টফোন।এই স্মার্টফোন ছাড়া আমাদের এক মুহূর্ত চলে না।কিন্তু আপনি জানেন কি এই স্মার্টফোনের মাধ্যমেই আপনার সকল তথ্য হাতিয়ে নেওয়া সম্ভব?হ্যাঁ আপনি ঠিকই শুনছেন,স্মার্টফোন ট্রাকিং এর মাধ্যমে আপনার সকল তথ্য চাইলেই আপনার অনুমতি ছাড়াি আক্সেস করা সম্ভব।

আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমারা জানব ফোন ট্র্যাকিং কি?কেন ফোন ট্র্যাকিং করা হয়?কি কি উপায়ে আমাদের ফোন ট্র্যাকিং করা হয় এবং কিভাবে বুঝতে পারব যে কেউ আমাদের হাতে থাকা ফোন ট্র্যাকিং করছে এবং কিভাবে আমারা আমাদের ফোনকে ট্র্যাকিং হতে সুরক্ষা প্রদান করতে পারি।

ফোন ট্র্যাকিং কি?

আলোচনার শুরুতেই আমরা জেনে নিব ফোন ট্র্যাকিং কি?ফোন ট্র্যাকিং হল সেই পদ্ধতি যেখানে বিশেষ কিছু টেকনোলজি ব্যাবহার করে কোন ফোনের মালিকের অনুমতি ছাড়া তার ফোনের অ্যাক্টিভিটির উপরে নজর রাখা হয় এবং বিশেষ ক্ষেত্রে তার ফোনে থাকা সকল তথ্য তার অনুমতি ব্যাতিত অন্য কোথাও স্থানান্তর করা হয়।

কোন পদ্ধতি গুলোর মাধ্যমে আমাদের ফোন ট্র্যাকিং করা হয়?

আমারা ফোন ট্র্যাকিং কি সেই সম্পর্কে জেনে নিয়েছি।এখন আমদের জানতে হবে যারা ফোন ট্র্যাকিং করে তারা কি কি পদ্ধতি ব্যাবহার করে আমাদের হাতে থাকা ফোন গুলো ট্র্যাকিং করে থাকে।আমাদের হাতে থাকা ফোন গুলো নিচের পদ্ধতি অনুসরন করে ট্র্যাকিং করা হয়ে থাকে।

  1. অন্য কারও প্রবেশের অধিকার থাকলে
  2. কর্মক্ষেত্রে আপনার নিয়োগকর্তার দ্বারা
  3. আপনার ফোনের বিল্ট-ইন ট্র্যাকিং ফিচার দ্বারা
  4. আপনার ব্যাবহার করা অ্যাপ দ্বারা এবং
  5. আপনি যে নেটওয়ার্ক ব্যাবহার করছেন সেই নেটওয়ার্ক দ্বারা

আমরা এখানে জানলাম যে কি কি উপায়ে আমাদের ফোন ট্র্যাকিং করা সম্ভব।এখন আমরা এই পদ্ধতি গুলোর সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।

(১) অন্য কারও প্রবেশের অধিকার থাকলে

আপনি যদি আপনার ফোনে অন্য কারও প্রবেশের অনুমতি দিয়ে থাকেন তাহলে সেই ব্যাক্তি খুব সহজেই আপনার ফোনের লোকেশন ফিচার ব্যাবহার করে আপনাকে ট্রাক করতে পারে।যদি আপনি এমনটা করে থাকেন আপনি বুঝতেই পারবেন না যে কেউ একজন আড়ালে থেকে আপনার সব সময় আপনার ফোনের মাধ্যমে ট্রাক করে চলেছে।

(২) কর্মক্ষেত্রে আপনার নিয়োগকর্তার দ্বারা

আপনি যদি কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আর আপনার হাতে থাকা ফোনটি যদি আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে ইস্যু করা হয় তাহলে আপনি আপনার বসের দ্বারাও ফোন ট্র্যাকিং এর শিকার হতে পারেন।আবার আপনার ফোন যদি সেই কোম্পানির নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত থাকে তাহলেও তারা আপানাকে ট্র্যাকিং করতে পারে।

(৩) আপনার ফোনের বিল্ট-ইন ট্র্যাকিং ফিচার দ্বারা

আমাদের হাতে থাকা ফোনেই বিল্ট-ইন ট্র্যাকিং ফিচার যুক্ত করা থাকে এবং এটা আমাদের প্রয়োজনের জন্যই যুক্ত করা থাকে।আমরা যখন কোন অপরিচিত এলাকায় যাই তখন আমাদের ফোনে থাকে এই বিল্ট-ইন ট্র্যাকিং ফিচার গুলো নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়ে আশেপাশের তথ্য সংগ্রহ করে সেই এলাক সম্পর্কিত একটা ধারনা আমাদেরকে দিতে পারে।

(৪) আপনার ব্যাবহার করা অ্যাপ দ্বারা

আমরা অনেক সময় ফোনে থাকা বিল্ট-ইন অ্যাপ গুলো ছারও আমদের প্রয়োজনে অনেক ধরনের অ্যাপস ব্যাবহার করে থাকি।কিন্তু আপনি জানেন কি এই অ্যাপস গুলো আপনি যখন ইন্সটল করেন তখন আপনার অসাবধানতার কারনেই কিছু কিছু অ্যাপস আপান্র লোকেশন এবং আপনার ফোনের স্টোরেজ আক্সেস করতে পারে।কি অবাক হচ্ছেন?হ্যাঁ এটা সম্ভব যদি আপনি সেই অ্যাপস ইন্সটল করার সময় তাদের অনুমতি দেন।

এই সমস্যা থেকে বাঁচতেঃ-

  • আপনি যখন কোন থার্ড-পার্টি অ্যাপস আপনার ফোনে ইন্সটল করবেন তখন যদি সেই অ্যাপস আপনার ফোনের লোকেশন এবং আপনার স্টোরেজ আক্সেস চায় তাহলে দিবেন না।কারন এই এক্সেস না দিলেও আপনি এই অ্যাপস গুলো স্মুথলি ইউজ করতে পারবেন।
  • আর যদি দেখেন কোন অ্যাপস ইন্সটল করার সময়ে বলছে যদি আপনি সেই অ্যাপস ব্যাবহার করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই আপনার ফোনের লোকেশন এবং স্টোরেজের আক্সেস দিতেই হবে তাহলে সেই অ্যাপস কখনো ইন্সটল করবেন না।কারন সেই অ্যাপস হয়তবা তৈরিই করা হয়েছে ব্যাবহারকারীদের ট্রাক করার জন্য।

(৫) আপনি যে নেটওয়ার্ক ব্যাবহার করছেন সেই নেটওয়ার্ক দ্বারা

আপনি আপনার ফোনে যে কোম্পানির সিম/নেটওয়ার্ক ব্যাবহার করছেন তারা আপনার অবস্থান ট্রাক করতে পারে।তবে এটা নিয়ে ভয় পাবার কিছু নাই কারন আপনার এই তথ্য যদি তারা ট্রাক না করতে পারে তাহলে তারা আপনাকে তাদের নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্ট করতে পারবে না।তবে এই বিষয়ে গবেষণা চলছে যে কিভাবে একজন নেটওয়ার্ক ব্যাবহারকারীর পরিচয় গোপন রেখে তাঁকে নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্ট করা যায়।

কিভাবে বুঝেবন আপনার হাতে থাকা ফোনটি ট্র্যাকিং করা হচ্ছে?

যদি কখনো কোন ফোন ট্র্যাকিং এর শিকার হয় তখন অনেকেই এই ব্যাপারে কিছু কিছু লক্ষন শনাক্ত করতে পারে।যেমন দেখা যায় ফোন অনেক ধীরে কাজ করছে আবার ফোনের কিছু কিছু সেটিংস নিজে থেকেই পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।বার বার সেটিংস গুলো পরিবর্তন করা হলেও সেটা নিজে থেকে আবার পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।তবে বেশিভাগ সময় একজন সাধারণ মোবাইল ব্যাবহারকারী বুঝতে পারেন না যে তার মোবাইল ফোনটি ট্র্যাকিং এর শিকার হয়েছে।

যদি কখনো এমনটা আপনার সাথে ঘটে তাহলে আপনাকে কিছু কিছু সেটিংস চেক করে নিতে হবে।আপনাকে দেখতে হবে আপনার ফোনের কল/এসএমএস অন্য কোন জায়গায় ফরওয়ার্ড করা হচ্ছে কিনা।আপনার ফোনে অন্য কোন নেটওয়ার্ক ব্যাবহার করে ইন্টারনেট সেবা ব্যাবহার করা হচ্ছে কিনা যেখানে আপনি কোনদিন হয়ত যাননি।

আবার আপনাকে হয়তবা কেউ ই-মেইল পাঠিয়ে কল/এসএমএস করে বলে দিল যে আপনাকে একটি মেইল পাঠিয়েছি।যখন আপনি সেই মেইল চেক করতে গেলেন তখন দেখলেন আপনার মেইলবক্সে পাঠানো সর্বশেষ মেইলটি আপনার আগেই অন্য কেউ পড়ে নিয়েছে।যদি এই রকম হয় তাহএল আপনি ১০০% নিশ্চিত হতে পারেন যে আপনার ফোনটি ট্র্যাকিং এর শিকার হয়েছে।

কিভাবে আমাদের ফোনকে ট্র্যাকিং থেকে সুরক্ষিত রাখা যাবে?

আমরা উপরে আলোচনার মাধ্যমে জেনেছি যে কি কি মাধ্যমে আমাদের ফোন ট্র্যাকিং করা যেতে পারে এবং ট্র্যাকিং এর শিকার হলে কি কি লক্ষন দেখে আমরা বুঝতে পারব যে আমাদের হাতে থাকা ফোনটি অন্য কেউ নিয়ন্ত্রন করছে অর্থাৎ, আমাদের ফোনটি ট্র্যাক করছে।এখন আমরা জানবো এমন কোন পদ্ধতি কি নাই যেগুলো অনুসরন করে আমরা আমাদের ফোনকে ট্র্যাকিং এর থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারি?হ্যাঁ অবশ্যই আছে এবং আমরা আজকের লেখার এই অংশে সেই সম্পর্কেই বিস্তারিত জানব।

আমাদের মোবাইল ফোনকে ট্র্যাকিং থেকে সুরক্ষিত রাখতে আমদের করনীয় গুলো হল-

  1. জিপিএস লোকেশন অপশন বন্ধ করে দেওয়া
  2. ফোনের অপারেটিং সিস্টেমের দিকে নজর রাখা এবং
  3. ইন্টারনেট ব্রাউজার ব্যাবহারে সতর্ক থাকা

আমরা এখন এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করব।আমি আশা করি যে এই বিষয় গুলোর প্রতি যদি আমরা যত্নশীল থাকি তাহলে আমাদের ফোন কখনো ট্র্যাকিং করা সম্ভব হবেনা।

(১) জিপিএস লোকেশন অপশন বন্ধ করে দেওয়া

আমরা উপরে জেনেছি যে আমাদের ফোনে কিছু কিছু বিল্ট-ইন ট্র্যাকিং ফিচার ফোন তৈরি করার সময়েই যুক্ত করা থাকে।এমন একটি বিল্ট-ইন ফিচার হল জিপিএস।এই জিপিএস এর মাধ্যমে আমাদের শতভাগ সঠিক লোকেশন ট্রাক করা সম্ভব।যা অনেক সময় আমাদের বিপদের কারন হতে পারে।সুতরাং, আপনি যদি নিরাপদ থাকতে চান তাহলে এখনই আপনার ফোনের এই জিপিএস সুবিধা বন্ধ করে দিন।

(২) ফোনের অপারেটিং সিস্টেমের দিকে নজর রাখা

আপনি যে ফোনটি ব্যাবহার করছেন সেই ফোনে যে অপারেটিং সিস্টেম ব্যাবহার করা হয়েছে সেই অপারেটিং সিস্টেম আপনাকে আপনার ফোনে থাকা সকল অ্যাপসের ট্র্যাকিং ক্ষমতা বন্ধ করার সুবিধা প্রদান করে কিনা সেটা চেক করতে হবে।যদি এই ধরনের সুবিধা আপনার ফোনের অপারেটিং সিস্টেমে থাকে তাহলে সেটা এখনই চালু করে দিতে হবে।বর্তমানে অ্যাপলের আইফোন এবং গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে এই ধরনের সুবিধা চালু করা হয়েছে।

(৩) ইন্টারনেট ব্রাউজার ব্যাবহারে সতর্ক থাকা

বর্তমানে আমরা সবাই প্রায় আমাদের ফোনে ইন্টারনেট ব্রাউজার হিসাবে গুগলের ক্রোম ব্রাউজারকেই আমাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রাখি।কিন্তু আপনি জানেন কি যে এই ইন্টারনেট ব্রাউজার আমদের সকল ধরনের ইন্টারনেট ব্রাউজিং সংক্রান্ত তথ্য ট্রাক করতে পারে এবং সে এটা করে যতক্ষণ না আমরা এর সেটিংস থেকে তার এই ট্র্যাকিং করার ক্ষমতা নিস্ক্রিয় না করি।

তবে আপনি চাইলেই এই ধরনের সমস্যা বাইপাস করতে পারেন।বর্তমানে এমন অনেক ইন্টারনেট ব্রাউজার আছে যেগুলো আপনার অ্যাক্টিভিটি ট্রাক করেনা।এই ধরনের কিছু ইন্টারনেট ব্রাউজার হলঃ বারভি,মজিলা ফায়ারফক্স,ডাকডাকগো,দ্যা টর ব্রাউজার এবং মূলভাদ ইন্টারনেট ব্রাউজার।

আমার শেষ কথা

আমরা যেহেতু এই পোস্টের মাধ্যমে জেনেছি যে কিভাবে আমাদের ফোন ট্র্যাকিং এর শিকার হতে পারে সেহেতু এখন থেকে আমরা আগের চাইতে অনেকটা সতর্ক থাকতে পারব এই ব্যাপারে।তাছারা আমি উপরে আমাদের ফোন ট্র্যাকিং এর শিকার হতে সুরক্ষিত রাখার জন্য যে তিনটি টিপস আলোচনা করেছি আপনি যদি সেগুলো যথাযথ ভাবে অনুসরণ করেন তাহলে আশা করা যায় আপনার ফোনটি ট্র্যাকিং এর শিকার হওয়া থেকে অনেকটাি নিরাপদ থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *