বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন যে আমাদের জীবনের সাথে কিভাবে জরিয়ে আছে এটা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নাই।কারন আপনি হয়ত আমার এই লেখা এই মুহূর্তে আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোন ব্যবহার করেই পড়ছেন।এছারা আপনি প্রতিদিন কথা বলা থেকে শুরু করে আপনার প্রতিদিনের ব্যাংকিং লেনদেনও আপনার হাতে থাকা ছোট স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে করতে পারেন।
তবে আপনি জানেন কি আপনার ছোট একটি ভুলের কারনে আপনার স্মার্টফোনের নিয়ন্ত্রন চলে যেতে পারে অন্য কারও হাতে।আর একবার অন্য কারও হাতে যদি আপনার স্মার্ট ফোনের নিয়ন্ত্রন চলে যায় তাহলে সে খুব সহজেই আপনার ফোনে লগিন থাকা ই-মেইল,সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট,মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট গুলো আক্সেস করতে পারবে।আর এসবের আক্সেস যদি একবার অন্য কারও হাতে চলে যায় তাহলে আপনি পড়তে পারেন বড় ধরনের বিপদে।সুতরাং স্মার্ট ফোনের ব্যবহারে আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
আজকের এই লেখায় আমি আপনাদের সাথে এমন ৫ টি কারন সম্পর্কে আলোচনা করব যেগুলোর কারনে আপনার স্মার্টফোনের নিয়ন্ত্রন চলে যেতে পারে হ্যাকারদের কাছে।আপনি যদি এই পাঁচটি বিষয়ে সতর্ক থাকেন তাহলে খুব সহজেই এই ধরনের বিপদ গুলো এড়িয়ে চলতে পারেন।
যে ৫ টি কারনে আপনার স্মার্টফোন হ্যাক হয়ে যেতে পারে
যে ৫ টি কারনে আপনার স্মার্টফোনের নিয়ন্ত্রন অন্য কারও হাতে চলে যেতে পারে সেগুলো হল-
- কমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার
- অপরিচিত লিংকে ক্লিক করা
- পুরাতন ভার্সনের অ্যাপস/সফটওয়্যার ব্যবহার করা
- নিশ্চিত না হয়ে অ্যাপস ইন্সটল করা এবং
- ডিভাইসের আক্সেস অন্য কাউকে দেওয়া
আমাদের স্মার্ট ফোনের নিয়ন্ত্রন যে কারন গুলোর জন্য হ্যকারদের কাছে চলে যেতে পারে সেই কারন গুলো আমরা এখানে জেনেছি।এখন আমরা হ্যাক হওয়ার কারন গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানব।তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।
(১) কমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা
আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছে যাদের ফোনের পাসওয়ার্ড অথবা আক্সেস পিন যেকোনো কমন একটি শব্দ অথবা সংখ্যা হয়ে থাকে।যেমনঃ ১২৩৪ অথবা তাঁদের ফোনের প্রথম অথবা শেষ ৪ ডিজিট অথবা তাঁদের জন্ম সাল।কিন্তু আইটি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছে, যখন কোন হ্যাকার কোন ব্যাক্তিকে টার্গেট করে তখন সে তাঁর ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য গুলো জেনে নিয়েই তাঁর কাজ শুরু করে।ফলে আমরা যদি উপরের মত কমন পাসওয়ার্ড গুলো ব্যবহার করি তাহলে সে খুব সহজেই আমাদের স্মার্টফোনের আক্সেস নিয়ে নিতে পারে এবং আমাদের তথ্য গুলো হাতিয়ে নিতে পারে।বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হল আপনার স্মার্টফোনে এমন কোন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন যাতে করে কেউ সেগুলো আইডিয়া করতে না পারে।
(২) অপরিচিত লিংকে ক্লিক করা
অনেক সময় আমাদের মেইলে হ্যাকাররা মেইল করে থাকে এবং এই মেইল গুলো বেশীরভাগ চটকদার অফার করা হয়ে থাকে অথবা এমন কোন কিছু পাঠানো হয়ে থাকে যেগুলো দেখলেই ক্লিক করতে মন চায়।আবার অনেক সময় আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইটেও এমন চটকদার লিংক সেন্ট করে থাকে।
এখন কেউ যদি সেই লিংক গুলোতে ক্লিক করে তাহলে আপনার ডিভাইস আক্সেস তাঁদের কাছে চলে যায় ফলে তাঁরা তখন খুব সহজেই আপনার ডিভাইস থেকে তথ্য নিয়ে নিতে পারে।
সুতরাং,কোন মেইল আসলে অথবা সোশ্যাল মিডিয়াতে কেউ কোন লিংক সহ মেসেজ দিলে সেইগুলো সন্দেহজনক মনে হলে ক্লিক করা যাবেনা।
(৩) পুরাতন ভার্সনের অ্যাপস/সফটওয়্যার ব্যবহার করা
আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা সামান্য কিছু ইন্টারনেট ডাটা বাঁচানোর জন্য অনেক পুরাতন ভার্সনের অ্যাপস অথবা সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকেন।
কিন্তু আপনি জানেন কি যেকোনো অ্যাপস অথবা সফটওয়্যারে কেন আপডেট নিয়ে আসা হয়?যেকোনো অ্যাপস অথবা সফটওয়্যারে যখন কোন নিরাপত্তা ত্রুটি পাওয়া যায় অথবা যেকোনো ধরনের ফিচার উন্নত করার জন্য নতুন আপডেট নিয়ে আসা হয়।
এখন আপনি যদি আপনার ফোনে থাকা অ্যাপস অথবা সফটওয়্যারটি নতুন ভার্শনে আপডেট না করেন তাহলে হ্যাকার খুব সহজেই সেই অ্যাপ অথবা সফটওয়্যারের নিরাপত্তা ত্রুটির সুযোগ নিয়ে আপনার ফোন হ্যাক করে ফেলে এবং আপনার তথ্য গুলো হাতিয়ে নেয়।
সুতরাং, যখনই কোন অ্যাপস অথবা সফটওয়্যারের নতুন ভার্শন রিলিজ করব সাথে সাথে সেই নতুন ভার্শনে আপনার অ্যাপ অথবা সফটওয়্যার আপডেট করে নিবেন।
এছারাও বর্তমানে প্রায় সকল ফোনেই অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করার ব্যবস্থা আছে।যখনই আপনার ফোনের অপারেটিং সিস্টেমের আপডেট আসবে আপনার উচিত হবে সাথে সাথে নতুন ভার্শনে আপডেট করে নেওয়া।
(৪) নিশ্চিত না হয়ে অ্যাপস ইন্সটল করা
অনেক সময় সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইটে এমন সব অ্যাপের বিজ্ঞাপন দেখা যায় যেগুলোর কার্যকারিতা সম্পর্কে বলা থাকে একরকম আর ইন্সটল করার পর দেখা যায় সেই সম্পর্কিত কোন কাজই সেই অ্যাপস গুলো করতে পারেনা।মূলত এগুলো স্পাইওয়্যার!
আপনি যদি একবার এই অ্যাপস গুলো ইন্সটল করেন তাহলে আপনার আর বিশেষ কিছু করা থাকবে না।কারন এই অ্যাপস গুলো ইন্সটল করার সাথে সাথে আপনার ফোনের সকল তথ্য এই স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে হ্যাকারদের হাতে চলে যাবে।
সুতরাং, আপনার যদি কোন অ্যাপস ইন্সটল করতেই হয় তাহলে সেই অ্যাপস গুগলের প্লে স্টোর অথবা অ্যাপলের অ্যাপস স্টোর থেকে সার্চ দিয়ে ইন্সটল করে নিন।এতে করে অন্তত আপনি স্পাইওয়্যারের অ্যাটাক থেকে আপনার স্মার্ট ফোনকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।
(৫) ডিভাইসের আক্সেস অন্য কাউকে দেওয়া
আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা তাঁদের বিভিন্ন ধরনের কাজের প্রয়োজনে তাঁদের ডিভাইসের আক্সেস অন্য কাউকে দিয়ে দেয়।আপনি জানেন কি এই ধরনের অনুমোদিত আক্সেস পারমিশন গুলোর মাধ্যমেও আপনার তথ্য গুলো হাতিয়ে নেওয়া সম্ভব!
২০২১ সাল থেকে এই পর্যন্ত আমার পরিচিত যাদের কম্পিউটার এবং ল্যাপটপ হ্যাক হয়েছে তাঁদের ৯৫% এরও বেশী হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছে অনুমোদিত আক্সেস পারমিশনের মাধ্যমে।
তাঁরা তাঁদের ডেস্কটপ এবং ল্যাপটপ গুলোতে এনিডেস্কের মাধ্যমে তাঁদের আক্সেস দিত এবং তাঁরা আক্সেস পাওয়ার পরে তাঁদের ডিভাইসে শুধু একটি টেক্সট ফাইল অথবা যেকোনো ধরনের একটা ছোট ফাইল রেখে দিত এবং এটা রেখে দেওয়ার সাথে সাথে তাঁদের ডিভাইস গুলো র্যানসমওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হয়ে যেত এবং তাঁরা তাঁদের ডিভাইসে থাকা সকল তথ্য হারিয়ে ফেলত।
সুতরাং, আপনি যখন কাউকে আপনার ডিভাইস আক্সেস দিবেন তখন অবশ্যই খুব বেশী সতর্কতা অবলম্বন করবেন।এবং যদি সম্ভব হয় তাহলে এই ধরনের আক্সেস দেওয়াই বন্ধ করে দিন।যেমন আমি কাউকে কখনো আমার মোবাইল বলেন আর কম্পিউটার বলেন সেগুলোতে কাউকে আক্সেস দেইনা।
আমার শেষ কথা
আমি উপরে যে পাঁচটি বিষয়ে আলোচনা করলাম আপনি যদি এই বিষয় গুলোর প্রতি সতর্ক থাকেন তাহলে আপনার স্মার্ট ফোন অন্যদের চাইতে অনেক বেশী নিরাপদ থাকবে।আর আপনার ফোন নিরাপদ থাকা মানে আপনার তথ্য এবং আপনিও নিরাপদ থাকবেন।