সর্বশেষ সংবাদ

চোর সন্দেহে পুলিশের সামনেই গণপিটুনিতে ২ জন নিহত

কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামের মহিষচোর সন্দেহে পুলিশের সামনেই গণপিটুনিতে দুইজন নিহত হয়েছেন। আজ শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল ৬টার দিকে উপজেলার দেওঘর ইউনিয়নের দেওঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, অষ্টগ্রাম উপজেলার কাগজী গ্রামের হিরা মিয়ার ছেলে নাসির মিয়া (২৮) ও পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় গ্রামের চারু মিয়ার ছেলে মো. শাহজাহান (৪০)।

অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন জানান, গণপিটুনিতে নিহত দুজনের বিরুদ্ধেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানায় একাধিক চুরির মামলা রয়েছে।

এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। শুক্রবার রাত আনুমানিক ৩টার দিকে দেওঘর ১নং ওয়ার্ডের শেখের বাড়ির পেছনে তাদের স্থানীয় জনতা আটক করে। পরে দেওঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে নিয়ে গণপিটুনি দিলে তারা নিহত হন।

খবর পেয়ে অষ্টগ্রাম থানা পুলিশ তাদের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর কাজ পক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। চুরি করা মহিষটি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে যে নৌকাটি চুরির কাজে ব্যবহার হয়েছিল তা চিহ্নিত করা যায়নি।

দেওঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আক্তার হোসেন জানান, শাহজাহান ও নাসির পার্শ্ববর্তী মনোহরপুর থেকে নৌকাযোগে একটি মহিষ চুরি করে নিয়ে আসেন। এ খবর পেয়ে স্থানীয় জনতা দেওঘর এলাকার লুডডা নদীর পাড় থেকে তাদেরকে ধরে নিয়ে আসে। পরে তাদেরকে দেওঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এনে বেঁধে রাখে। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে হাজারো উত্তেজিত জনতা স্কুলে গিয়ে তাদেরকে পিটিয়ে মেরে ফেলে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এলাকার দুই ব্যক্তির সঙ্গে কথা হলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দুই চোরকে ধরে আনার খবর পুলিশকে দেওয়া হয়।

ঘটনাস্থলে পুলিশও যায়। তবে শত শত মানুষের আক্রমণ প্রতিহত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাদের সামনেই দুই ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে সেনাবাহিনীও ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু এর আগেই চোর সন্দেহে ধরে আনা দুজন মারা যায়।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মহিষ চুরির অভিযোগে ওই দুইজনকে রাত সাড়ে তিনটার দিকে আটক করে এলাকার লোকজন। পুলিশকে খবর দেওয়া হয় ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে। দুজনকে ধরার পর থেকে তাদের বেদম মারধর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুইজনকে নিজেদের জিম্মায় নিতে গেলে পুলিশের ওপর চাড়াও হয় লোকজন। পরে গণপিটুনিতে পুলিশের সামনেই মারা যায় চুরির অভিযোগ আটক দুইজন।

সূত্র জানায়, প্রকৃতপক্ষে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে, পুলিশের কিছুই করার ছিল না।

এ বিষয়ে অষ্টগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. দিলশাদ জাহান বলেন, গণপিটুনির সময় পুলিশ উপস্থিত ছিল কি-না তা আমার জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হবে। তদন্তে জানা যাবে প্রকৃত ঘটনা কী ছিল।

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *