সঞ্জয় কুমার দেবনাথ। তিনি চিকিৎসক। তবে ভুয়া চিকিৎসক। নিজেকে পরিচয় দেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার। এমবিবিএস চিকিৎসক হওয়ার জন্য নেই কোনো ডিগ্রি তার। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত রোগী দেখেন। পরিচয় দেন বগুড়ার ২৫০ শয্যা সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হিসেবে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালটিতে এ ধরনের কোনো পদবি নেই।
এর আগে গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট সেজে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। ওইসময় পুলিশ বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেছিল। পরে জামিনে বের হয়ে বগুড়া সদরের ফণিরমোড় এলাকায় আরাদ্ধা মেডিকেল হল খুলে বসেছেন। নিজের নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন ‘সঞ্জয় চন্দ্র দেব’।
চিকিৎসা বিদ্যা পাস না করেও নামের আগে ‘ডাক্তার’ লিখে ওই চেম্বারে বসে মা ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ পরিচয়ে নিয়মিত রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এখানে যেসব মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন তারা নিতান্তই গরিব ও অশিক্ষিত। তাই অতি সহজেই এ মানুষদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন সঞ্জয়।
গত বছর ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট সেজে গ্রেপ্তার হওয়ার হন তিনি। কিছুটা সময় নিয়ে সঞ্জয় জানান, গত বছর গ্রেপ্তারের বিষয়টি ছিল ভুল বোঝাবুঝি। পরে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছি। বর্তমানে ২৫০ শয্যা সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।
তার সামনেই হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শফিক আমিন কাজলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। এ সময় ওই চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালটিতে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার বলতে কোনো পদ নেই। এছাড়া সঞ্জয় চন্দ্র দেব নামের কোনো চিকিৎসকও সেখানে কর্মরত নেই। কেউ এ ধরনের পরিচয় ব্যবহার করে থাকলে তিনি ভুয়া।
সিভিল সার্জন শফিউল আজম বলেন, সঞ্জয় নামে কাউকে আমি চিনি না। এছাড়া সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে পদায়নের ক্ষমতা আমার নেই। আদেশপত্রটি পুরোপুরি ভুয়া। তিনি একজন জালিয়াত ও প্রতারক। এ বিষয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরপর সঞ্জয় নিজেকে চিকিৎসক প্রমাণে ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ ও ইনস্টিটিউটের সনদপত্রের ফটোকপি বের করেন। এখানেও জালিয়াতি ধরা পড়ে যায়। ওই সনদপত্রে তার নাম লেখা আছে ‘সঞ্জয় চন্দ্র শীল’। অথচ ফণিরমোড়ে তিনি নিজেকে ‘সঞ্জয় চন্দ্র দেব’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছেন। সনদপত্র অনুযায়ী সঞ্জয়ের মেডিকেল ডিপ্লোমা শেষ হয়েছে ২০২১ সালে। অথচ তিনি ২০১৯ সাল থেকে রংপুরের মিঠাপুকুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত আছেন বলে দাবি করেন।
ফণিরমোড়ের বাসিন্দা ইসতিয়াক আহম্মেদ বলেন, কোনো কিছু পরীক্ষা না করেই ইনজেকশন দিয়ে এক হাজার ৬০০ টাকা নেন। সাতগ্রামে কয়েকটা ফার্মেসি গিয়ে দেখি তিনি যে ওষুধ লিখেছেন তা নেই। এরপর জানান, আর কোনো ওষুধের প্রয়োজন নেই। তিন দিন পরে বোন আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে শহরে নিয়ে যাই। উনি আসলে কসাই ডাক্তার।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইহান ওলিউল্লাহ জানান, সঞ্জয় নামের এক ব্যক্তি ভুয়া চিকিৎসক সেজে প্রতারণা করে আসছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। তাকে খোঁজা হচ্ছে। দ্রুতই আটক করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।