আমাদের মধ্য যাদের ওয়েবসাইট আছে প্রায়ই দেখা যায় যে আমাদের ওয়েবসাইট কিছু কিছু সময় ডাউন হয়ে থাকে।তখন আমাদের মধ্য যারা একদম নুতুন ওয়েবসাইট করেছে তাদের চিন্তার শেষ থাকে না।কারন যেহেতু তারা এই লাইনে নতুন তাই তারা মনে করে যে তাদের ওয়েবসাইট হয়তবা হোস্টিং সমস্যার কারনেই ডাউন হয়েছে।কিন্তু আমাদের ওয়েবসাইট যে সব সময় শুধু হোস্টিং সমস্যার কারনে ডাউন হবে এমনটা ভাবা একদমই ভুল হবে।
হোস্টিং সমস্যা ছারাও আরও বেশী কিছু কারনে আমাদের ওয়েবসাইট ডাউন থাকতে পারে।আজকের এই লেখায় আমি আপনাদের সাথে হোস্টিং সমস্যা ছাড়া আরও যে সমস্যা গুলোর কারনে আমাদের ওয়েবসাইট ডাউন হতে পারে সেই ব্যাপারে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করব।আমার আজকের এই লেখা সম্পূর্ণ পড়া শেষ করলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে শুধু হোস্টিং সমস্যার কারনেই আমাদের ওয়েবসাইট ডাউন থাকে না, ওয়েবসাইট ডাউন হবার জন্য আরও বেশী কিছু কারন আছে।তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ওয়েবসাইট ডাউন হওয়ার কারণ গুলো কি কি?
ওয়েবসাইট ডাউন হওয়ার কারণ গুলো কি কি?
আমাদের ওয়েবসাইট গুলো একেক সময়ে একেক কারনে ডাউন হয়ে যেতে পারে আর এই কারনেই সব গুলো কারন প্রপার চেক না করে বলা যাবে না ঠিক কি কারনে আমাদের ওয়েবসাইট ডাউন হয়ে যাচ্ছে।তবে আমাদের যদি জানা থাকে কেন আমাদের ওয়েবসাইট ডাউন হতে পারে তাহলে আমরা সেই কারন গুলো এক এক করে চেক দিয়ে নিশ্চিত হতে পারি যে কেন আমাদের ওয়েবসাইটটি ডাউন দেখানো হচ্ছে।
ওয়েবসাইট ডাউন থাকার কারন গুলো হল-
- কোডিং জনিত সমস্যা
- সিএমএস থিম অথবা প্লাগিনসের সমস্যা
- আপনার ডোমেইনের মেয়াদ
- হোস্টিং অথবা সার্ভারে সমস্যা
- ধারন ক্ষমতার চাইতে বেশী ট্রাফিক
- ডিএনএস সমস্যা
- সাইবার আক্রমনের শিকার
আমরা এখানে যে ৭ টি কারন সম্পর্কে জানলাম বেশীরভাগ এক্সপার্টদের মতে এই কারন গুলোর জন্যই আমাদের ওয়েবসাইট বেশীরভাগ সময় ডাউন থাকে।এখন আমরা উপরের কারন গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
কোডিং জনিত সমস্যা
আমরা অনেক সময় আমাদের প্রয়োজনে আমাদের ওয়েবসাইটের বিভিন্ন ধরনের কোড পরিবর্তন করে থাকি।আপনি জানলে অবাক হয়ে যাবেন যে, মাত্র একটা ডট এর কারনেও আপনার সাইটের কোডিং এরর তৈরি হতে পারে এবং এই ধরনের এররের জন্য আমাদের সাইটের স্ক্রিপ্ট ক্রাশ করে।আর যদি কোন ওয়েবসাইটের সিএমএস ক্রাশ করে তাহলে সেই ওয়েবসাইট ডাউন থাকবে এটাই স্বাভাবিক।সুতরাং, আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইট ডাউন দেখেন তাহলে সাথে সাথে হোস্টিং কোম্পানির সাথে যোগাযোগ না করে প্রথমে আপনাকে চেক দিতে হবে কোন কোডিং ইস্যুর কারনে আপনার সাইটটি ডাউন দেখাচ্ছে কিনা।
প্রতিকারঃ
- আপনি যখন আপনার সাইটের কোন কোড পরিবর্তন করতে চাইবেন সেটা আগে আপনাকে আপনার লোকাল হোস্টে চেক করে নিতে হবে যে কোডটি ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা।যদি লোকাল হোস্টে ঠিকভাবে কাজ করে তাহলে তখন সেই কোড আপনার সাইটের লাইভ সার্ভারে ব্যাবহার করতে হবে।
সিএমএস থিম অথবা প্লাগিনসের সমস্যা
আমাদের মাঝে অনেকেই এমন আছে যারা তাদের ওয়েবসাইটের থিম প্লাগিনস আপডেট করতে চায়না।আবার অনেকেই আছে যারা কিছু টাকা বাঁচানোর জন্য নাল থিম এবং প্লাগিনস ব্যাবহার করে থাকে।কিন্তু এই থিম আপডেট না করার ফলে আমাদের ওয়েবসাইটে ব্যাবহার করা থিম এবং প্লাগিন আমাদের সিএমএস (কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার) এর সাথে কনফ্লিক্ট করে এবং সেই সময়ে এই থিমস,প্লাগিনস গুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনা ফলে আমাদের সাইট ক্রাশ করে ডাউন হয়ে যায়।
প্রতিকারঃ
- আপনি যে থিমস,প্লাগিনস গুলো ব্যাবহার করছেন সেগুলোর যখন অফিসিয়াল আপডেট আসবে তখন সাথে সাথে এই থিমস,প্লাগিনস গুলো আপডেট করে নিতে হবে।
- আপনি যে সিএমএস ব্যাবহার করে আপনার ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন সেটার আপডেট আসলেই আপডেট করে নিতে হবে।
- সব সময় ওয়েবসাইটে পেইড থিমস এবং প্লাগিনস করতে হবে।আপনার যদি থিম এবং প্লাগিন কেনার জন্য পর্যাপ্ত বাজেট নাও থাকে তবু নাল থিম,প্লাগিন ব্যাবহার করা যাবে না।প্রয়োজনে ফ্রি থিম এবং প্লাগিনস ব্যাবহার করতে হবে।
আপনার ডোমেইনের মেয়াদ
অনেক সময় আমাদের ওয়েবসাইটের ডোমেইন এক্সপায়ার হয়ে যায় যেটা আমাদের খেয়াল থাকে না ফলে আমাদের ডোমেইনের কারনেও অনেক সময় আমাদের ওয়েবসাইট ডাউন দেখায়।এর জন্য আপনার সাইট যখন ডাউন দেখাবে তখন অবশ্যই আপনার ডোমেইনের মেয়াদ চেক করে নিবেন।যদি দেখেন যে আপনার ডোমেইন নাম টি এক্সপায়ার হয়ে গেছে তাহলে দেখবেন আপনার ডোমেইন রিনিউ করলেই আবার আপনার ওয়েবসাইট লাইভ হয়ে যাবে।
নির্দেশনাঃ
- একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর আপনাকে আপনার ডোমেইনের এক্সপায়ার তারিখ চেক করতে হবে।
- যে কোম্পানি থেকে ডোমেইন কিনেছেন সেই কোম্পানি থেকে যেকোনো মেইল আসলে অবশ্যই সেটা চেক করতে হবে।
হোস্টিং অথবা সার্ভারে সমস্যা
আপনার ওয়েবসাইটটি যে হোস্টিং অথবা সার্ভারে রাখা হয়েছে সেখানে আপনার ওয়েবসাইটের সাথে আরও ওয়েবসাইট রেখে দেওয়া হয়েছে।যদি কখনো সেই হোস্টিং অথবা সার্ভারে কোন সমস্যা দেখা যায় তাহলে আপনার ওয়েবসাইট সহ আরও যেসব ওয়েবসাইট সেই হোস্টিং অথবা সার্ভারে রাখা হয়েছে সব গুলো ওয়েবসাইট ডাউন হয়ে যাবে।আপনার ওয়েবসাইট যে হোস্টিং অথবা সার্ভারে রাখা হয়েছে সেখানে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা সেটা আপনি যে কোম্পানি থেকে হোস্টিং কিনেছেন তাদের সাপোর্টে কথা বলে জেনে নিতে হবে।
প্রতিকারঃ
- সাপোর্টে কথা বলে জেনে নিতে হবে আপনার সাইট যে হোস্টিং অথবা সার্ভারে রাখা হয়েছে সেই হোস্টিং অথবা সার্ভারের সকল সাইটে সমস্যা নাকি শুধু আপনার ওয়েবসাইটে সমস্যা।
- যদি আপনার সাইটে সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে সেটা হোস্টিংয়ের সমস্যার কারনে হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।
ধারন ক্ষমতার চাইতে বেশী ট্রাফিক
আচ্ছা আপনি এই মুহূর্তে যে কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ ব্যাবহার করছেন সেই কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপের ধারন ক্ষমতা থেকে যদি বেশী কাজ করতে বলা হয় তাহলে কি সেটা করতে পারবে?অবশ্যই করতে পারবে না।আর করলেও অনেক ধীর গতিতে করবে অথবা হ্যাং হয়ে যাবে।
আমি আমার আগের অনেক পোস্টে বলেছি যে আমাদের ওয়েবসাইট গুলো মূলত এমন একটি কম্পিউটারে রাখা হয় যেগুলো আইপি এড্রেস দ্বারা ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত থাকে।এবং এই পুরো কম্পিউটারকে সার্ভার বলা হয়ে থাকে এবং যখন আমরা এই কম্পিউটারের একটা নির্দিষ্ট অংশ ব্যাবহার করি তখন সেটাকে হোস্টিং বলা হয়ে থাকে।
আপনি যখন হোস্টিং কিনেন তখন আপনাকে একটা নির্দিষ্ট ডিস্ক স্পেস,ব্যান্ডউইথ এবং ভিসিটরের লিমিত দিয়ে দেওয়া হয়।এবং আপনি সেই লিমিটের বেশী কোন কিছু আপনার হোস্টিংয়ে ব্যাবহার করতে পারেন না।
এখন যদি আপনার লিমিটের বেশী ভিসিটর আপনার ওয়েবসাইট ভিসিট করে তাহলে আপনার ওয়েবসাইট ডাউন হয়ে যাবে।
প্রতিকারঃ
- যদি আপনার হোস্টিংয়ের ভিসিটরের যে লিমিত আছে সেটা অতিক্রম করে তাহলে আপনার উচিত হবে আপনার বর্তমান হোস্টিং প্যাকেজটি আপগ্রেড করে নেওয়া।
ডিএনএস সমস্যা
ডোমেইন নেইম সার্ভার (ডিএনএস) আপনার ডোমেইনের মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইট আক্সেস করার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।অনেক সময় বিভিন্ন কারনে ডিএনএস সমস্যার জন্য আপনার ওয়েবসাইটটি ডাউন হতে পারে।অনেক সময় আপনার হোস্টিং কোম্পানি যদি আপনার হোস্টিংয়ের ডিএনএস পরিবর্তন করে আর যদি সেটা আপনার ডোমেইনে আপনি সেট না করেন তাহলে আপনার ওয়েবসাইট ডাউন দেখাবে আবার অনেক সময় ডিএনএস অ্যাটাক হলেও আপনার ওয়েবসাইট ডাউন হয়ে যেতে পারে।
প্রতিকারঃ
- যখন আপনার হোস্টিং কোম্পানি আপনার ওয়েবসাইটের হোস্টিংয়ের ডিএনএস পরিবর্তন করে তখন আপনাকে মেইল করে নতুন ডিএনএস জানিয়ে দেয়।হয়তবা আপনি নিয়মিত তাদের মেইল গুলো চেক না করার কারনে ডিএনএস পরিবর্তনের বিষয়টা জানেন না।যদি এমন হয় তাহলে মেইল চেক করে নতুন ডিএনএস আপনার ডোমেইনে সেট করে দিলেই দেখবেন আপনার ওয়েবসাইটটি পুনরায় লাইভ হয়ে গেছে।
- যদি দেখেন আপনার হোস্টিংয়ের ডিএনএস পরিবর্তন করা হয়নি তবু আপনার সাইট ডাউন তাহলে আপনার উচিত হবে আপনার হোস্টিং প্রোভাইডারের সাথে যোগাযোগ করে মূল সমস্যাটি জেনে নিয়ে সেই অনুসারে সমাধান করা।
সাইবার আক্রমনের শিকার
অনেক সময় আমাদের ওয়েবসাইট অথবা হোস্টিং গুলো সাইবার অ্যাটাকের শিকার হয়ে থাকে।সেই সময়ে অতিরিক্ত ট্রাফিকের কারনে আমাদের হোস্টিং গুলো ডাউন হয়ে যায়।আর হোস্টিং ডাউন হয়ে গেলে আমাদের ওয়েবসাইট গুলো ডাউন হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক।যারা এই সাইবার অ্যাটাক গুলো করে থাকে তারা মূলত তাদের অর্থনৈতিক লাভের আশায় এসব করে থাকে।তারা আপনার ওয়েবসাইটের আক্সেস নিয়ে আপনার কাছে টাকা দাবী করতে পারে।
প্রতিকারঃ
- আপনার ওয়েবসাইটের নিরাপত্তার প্রতি নজর দিতে হবে যাতে করে কেউ অ্যাটাক করে আপনার ওয়েবসাইটের ডাটা গুলো নিয়ে নিতে না পারে।
আমার শেষ কথা
আপনি হয়ত উপরের লেখা গুলো পড়ার পর বুঝতে পেড়েছেন যে কেন আপনার ওয়েবসাইট ডাউন হয়ে যেতে পারে বা, যায়।যদি উপরের কোন কারনেই আপনার ওয়েবসাইট ডাউন না হয় তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে যে আপনার ওয়েবসাইটে অনেক বড় ধরনের কোন টেকনিক্যাল সমস্যা আছে যা হয়ত আপনার নজরে পড়ছে না।এই খেত্রে আপনার উচিত হবে আপনার ওয়েবসাইটের সমস্যা সমধান করার জন্য কোন প্রফেশনাল আইটি বিশেষজ্ঞর সাথে আলোচনা করা এবং তিনি যে পরামর্শ দিবেন সেই অনুসারে ব্যাবস্থা গ্রহন করা।