সিরিয়ার দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধ এবং সর্বশেষ সহিংসতার মাত্র ১২ দিনের মাথায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের নেপথ্যে অন্যতম কারিগর হলেন আবু মোহাম্মদ আল-জুলানি (৪২)। বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রধান এ নেতা কেবল সামরিক অভিযানের পরিকল্পনায় নয়, বরং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতেও দক্ষতা দেখিয়েছেন।
জুলানির প্রকৃত নাম আহমেদ হুসাইন আল-শারা। তিনি ১৯৮২ সালে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র সাত বছর বয়সে রিয়াদ থেকে পরিবারের সঙ্গে পাড়ি জমান সিরিয়ায়। তাঁর পরিবার ১৯৮৯ সালে সিরিয়ায় ফিরে আসে এবং দামেস্কের উপকণ্ঠে বসবাস শুরু করে। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে হামলা চালালে ওই সময় তিনি ইরাকে গিয়ে আল কায়দায় যোগ দেন এবং মার্কিনবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
২০০৬ সালে মার্কিন বাহিনী তাঁকে আটক করে এবং কারাবন্দি রাখে। পরবর্তী সময়ে তারা তাঁকে সিরিয়ায় আল কায়দার শাখা আল-নুসরা ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠার কাজ দেয়। এই গোষ্ঠীটিই মূলত সিরিয়ার বিরোধী অঞ্চলে বিশেষত ইদলিবে প্রভাব বিস্তার করে। ২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরুর সময় তিনি মুক্ত হন এবং তখন থেকেই সিরিয়ায় বিদ্রোহী আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন।
এ সময় আসাদ সরকারের পতনে তুমুল আন্দোলন শুরু হয়। এই সুযোগে দেশটিতে আবু বকর আল বাগদাদি আল কায়দার শাখা হিসেবে আল-নুসরা ফ্রন্ট গড়ে তোলার দায়িত্ব দেন জুলানির হাতে। যা তাঁকে এনে দেয় ব্যাপক পরিচিতি এবং ক্ষমতা।
তবে ২০১৩ সালে বাগদাদির সঙ্গে মতবিরোধ হলে জুলানি আল-নুসরা ফ্রন্টকে নতুনভাবে সংগঠিত করেন। ২০১৬ সালে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা ক্রমেই দুর্বল হতে থাকলে জুলানি বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ার চেষ্টা করেন। তিনি আল-নুসরা ফ্রন্টের নাম পরিবর্তন করে জাবাহাত ফাতাহ আল-শাম রাখেন।
আসাদ সরকারের পতন অভিযানে জুলানিই ছিলেন মূল পরিকল্পনাকারী ও কৌশলবিদ। বিদ্রোহীরা প্রথমে আলেপ্পো এবং পরে হামা শহর দখল করে। এর পর ১২ দিনের মধ্যেই তারা রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করে এবং আসাদের শাসনের অবসান ঘটায়। এই পুরো অভিযানেই জুলানির নেতৃত্ব ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।