সর্বশেষ সংবাদ

স্যাটেলাইট কি?স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে?এবং স্যাটেলাইটের সুবিধা অসুবিধা গুলো কি কি?

প্রযুক্তির দিক থেকে আজকের বিশ্ব কতটা এগিয়ে গেছে তা আমাদের কারও অজানা নয়।বর্তমানে মোবাইল,ইন্টারনেট সহ আরও অনেক উন্নত প্রযুক্তি মানুষ তৈরি করতে পেরেছে।এমনকি আমাদের তৈরি করা মহাকাশ যান ভয়েজার-১ এবং ভয়েজার-২ আমাদের এই সৌরজগৎ ছেড়ে অন্য গ্যালাক্সিতে পৌঁছে গেছে।তেমনি মানুষের তৈরি করা আরেকটি বিস্ময়কর প্রযুক্তির নাম হল স্যাটেলাইট।

স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বর্তমানে আমরা ক্যাবল টিভি দেখতে পারছি,বিশ্বের এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্তে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারছি,আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানার মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়-ক্ষতি কমিয়ে আনতে পেরেছি।এছারাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজেও স্যাটেলাইট ব্যাবহার করা হচ্ছে।

আজকের এই পোস্টে আমরা স্যাটেলাইট সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।আমি এই আর্টিকেলে স্যাটেলাইট কি?স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে এবং এর সুবিধা অসুবিধা গুলো কি কি? এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব।

স্যাটেলাইট কি?

স্যাটেলাইট (Satellite) এর বাংলা হল উপগ্রহ।যেমন পৃথিবীর কিত্রিম উপগ্রহের নাম হল চাঁদ।ঠিক একই রকমভাবে মানুষের তৈরি করা কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট  যা পৃথিবী থেকে মহাকাশে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং এই স্যাটেলাইট  মহাকাশে যেকোনো একটি মহাজাগতিক বস্তুকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে।কাজের ভিন্নতার উপরে নির্ভর করে অনেক রকমের স্যাটেলাইট  হতে পারে।যেমনঃ যোগাযোগ ব্যাবস্থা দ্রুত করতে কোন স্যাটেলাইট স্থাপন করা হলে সেটাকে কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট বলা হয়।আবার আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানার জন্য যখন কোন স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয় তখন তাঁকে ওয়েদার স্যাটেলাইট  বলে।এই রকমভাবে সকল স্যাটেলাইটেরই একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য মহাকাশে পাঠানো হয়ে থাকে এবং এই স্যাটেলাইট গুলো নিচের কন্ট্রোল ষ্টেশন থেকে দেওয়া নির্দেশ মোতাবেক তাঁদের কাজ সম্পন্ন করে।

স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে?

যখন কোন স্যাটেলাইটকে মহাকাশে স্থাপন করা হয় তখন অবশ্যই সেখানে পদার্থ বিজ্ঞানের সকল নীতি এবং গতির নীতি মেনেই স্থাপন করা হয়।কারন যদি স্যাটেলাইট স্থাপন করার সময় পদার্থ বিজ্ঞানের বৈজ্ঞানিক নীতি না মানা হয় তাহলে সেটা মহাকাশে তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে স্থির থাকবে না এবং পৃথিবীকে কেন্দ করে চারপাশে ঘুরতে পারবে না।

স্যাটেলাইটকে যখন মহাকাশে তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে স্তাপন করা হয় তখন সেই স্যাটেলাইট পৃথিবীর সাথে মহাকর্ষীয় টান এবং তার নিজ কক্ষপথের যে বেগ আছে তার সাথে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য অর্জন করে।এবং এই ভারসাম্য তাঁদের কক্ষপথে থাকার জন্য এমন একটি পরিস্থিথির সৃষ্টি করে যে একই সাথে স্যাটেলাইট পৃথিবীর দিকে নেমে আসতে চায় আবার তার নিজের কক্ষপথের বেগের কারনে দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যায়।

স্যাটেলাইটের সুবিধা-অসুবিধা গুলো কি কি?

আমরা জানি যে মানুষের তৈরি করা যেকোনো প্রযুক্তিরই সুবিধা এবং অসুবিধা উভয়ই আছে।সুতরাং স্যাটেলাইটেরও সুবিধা এবং অসুবিধা থাকবে এটায় স্বাভাবিক।আমি এখন আপনাদের সাথে আজকের আর্টিকেলের এই অংশে স্যাটেলাইটের সুবিধা-অসুবিধা গুলো কি কি সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।আমি স্যাটেলাইটের সুবিধা-অসুবিধা গুলো পয়েন্ট আকারে আপনাদের জন্য লিখব যাতে করে আপনাদের প্রতিটি সুবিধা এবং অসুবিধা আলাদা আলাদা ভাবে বুঝতে কোন ধরনের সমস্যা না হয়।

স্যাটেলাইটের সুবিধা গুলো হলঃ

১. দ্রুততম যোগাযোগঃ মহাকাশে যোগাযোগ করার জন্য যে গ্লোবাল কমিনিকেশন স্যাটেলাইটগুলো স্থাপন করা হয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে আমারা চোখের পলকে বিশ্বের এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্তে খুব অল্প সময়ের মধ্য মোবাইল,টেলিফোন এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারি।

২. ন্যাভিগেশন এবং জিপিএস ব্যসবস্থার উন্নতিঃ আগের দিনে জাহাজ অথবা বিমান চালানোর জন্য আকাশের নক্ষত্র দেখে দিন নির্ধারণ করা হত।কিন্তু বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে সেটা পরে কম্পাসের মাধ্যমে করা হত।বর্তমানে স্যাটেলাইট আবিস্কারের ফলে আমারা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) এর মাধ্যমে আমাদের দিক নির্ধারণ এবং আমাদের রিয়েল টাইম অবস্থান জানতে পারি।এছারাও আমরা আমাদের ফোন থেকে গুগল ম্যাপ এর মাধ্যমে যেকোনো অচেনা জায়গাতেও আমাদের গন্তব্য খুঁজে বের করতে পারি।

৩. আবহাওয়ার পূর্বাভাসঃ আগের দিনে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানার একমাত্র মাধ্যম ছিল রাডার।যেহেতু রাডার এর মাধ্যমে সচিত্র পূর্বাভাস পাওয়া যেত না সেহেতু অনেক চেষ্টা করেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ক্ষয়-ক্ষতি কমানো যেত না।কিন্তু মহাকাশে ওয়েদার স্যাটেলাইট স্থাপন করার কারনে আমারা যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের অনেক আগেই সেই দুর্যোগের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য পেয়ে যাই এবং আমারা সেভাবে প্রস্তুতি গ্রহন করে আমাদের যান মাল রক্ষা করতে পারি।এছারাও এই ওয়েদার স্যাটেলাইটগুলোর মাধ্যমে পাওয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসের কারনে আমাদের কৃষিকাজেও ব্যাপক উন্নতি লাভ করেছে।

৪. গবেষণার উন্নতিঃ মানুষের তৈরি করা স্যাটেলাইট গুলো ব্যাবহার করে আমরা আমাদের সৌরজগৎ এবং সৌরজগতের বাহিরের অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছি।বর্তমানে মঙ্গলগ্রহে আমাদের তৈরি করা যে মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে আমরা সেটার সাথেও এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমেই যোগাযোগ করতে পারি।এছারাও স্যাটেলাইট ব্যাবহার করে আমারা মহাকাশে থাকে যেকোনো বস্তুর উপরে নজরদারি করতে পারি।এবং আমাদের মানুষ প্রজাতির জন্য উপকার করবে এমন অনেক কিছুই খুঁজে পেতে পারি।

স্যাটেলাইটের অসুবিধা গুলো হলঃ

১. ব্যয়বহুল খরচঃ যখন কোন স্যাটেলাইট তৈরি করার জন্য এর ডিজাইন করা হয় এবং সেই ডিজাইন অনুসারে এটি তৈরি করা হয় তখন অনেক অর্থের প্রয়োজন হয়।এছারাও স্যাটেলাইট তৈরি করার পরে যখন এটা মহাকাশে পাঠানো হয় তখনও অনেক টাকার প্রয়োজন পরে।আর স্যাটেলাইট তৈরি করে মহাকাশে পাঠিয়ে দিলেই কাজ শেষ হয়ে যায় না।এটা দেখাশুনা করার জন্য এবং যদি ফিউচারে কোন ধরনের আপগ্রেড করার প্রয়োজন পরে তখনও অনেক টাকা ব্যায় হয়।মূল কথা হল, স্যাটেলাইট তৈরি করা থেকে শুরু করে রক্ষণাবেক্ষণ এবং আপগ্রেড করার জন্য অনেক বেশী টাকা খরচ হয়।

২. মহাকাশ ধ্বংসাবশেষের প্রভাবঃ আমরা জানি যে মহাকাশে সব সময়ই কিছু না কিছু ধ্বংস হতেই আছে।এর মধ্য আছে ছোট বা বড় ধরনের উল্কা,ছোট গ্রহানু ইত্যাদি।যখন এইগুল ধ্বংস হয়ে যায় তখন এই উল্কা অথবা গ্রহানুর ধ্বংস হয়ে যাওয়া টুকরার সাথে স্যাটেলাইটের সংঘর্ষ হলে স্যাটেলাইটের কোন অংশ অথবা অনেক সময় পুরাপুরি স্যাটেলাইটই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।অথবা উল্কা অথবা গ্রহানুর সাথে সংঘর্ষের ফলে স্যাটেলাইট গুলো তাঁদের কাজ করার ক্ষমতা হারাতে পারে অথবা মহাকাশে তাঁদের যে আয়ুস্কাল ছিল সেটা কমে যেতে পারে।

৩. কম আয়ুষ্কালঃ যখন কোন স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হয় তখনই তাঁদের মহাকাশের কাজ করার সময় সীমা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।অর্থাৎ সেই স্যাটেলাইট কত বছর পর্যন্ত তার নিজের কাজ করবে সেটা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।তবে স্যাটেলাইট তৈরি করতে যে পরিমাণ টাকা খরচ করা হয় সেই তুলানায় এদের আয়ুষ্কাল খুবই কম।

যেমনঃ বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ তৈরি করতে খরচ হয়েছে ২ হাজার ৯০২ কোটি টাকা এবং বঙ্গবন্ধু-১ এর আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে মাত্র ১৫ বছর। তথ্য সূত্রঃ উইকিপিডিয়া

যখন এই স্যাটেলাইট গুলোর আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যায় তখন স্যাটেলাইট গুলোকে পরিতাক্ত হিসাবে মহাকাশেই আবর্জনা হিসাবে রেখে দেওয়া হয়।যা আবার অনন্যা ভালো থাকা স্যাটেলাইট গুলোর জন্য ক্ষতির কারন হতে পারে।

৪. স্লো সিগন্যালঃ স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে যোগাযোগ সহ অনন্যা কাজ করা গেলেও অনেক সময় রিয়েল টাইম তথ্য দিতে কিছুটা বিলম্ব করে।

শেষ কথা

আমরা বর্তমানে যোগাযোগ,নেভিগেশন এবং জিপিএস,ইন্টারনেট যাই ব্যাবহার করিনা কেন এই সুবিধা গুলোকে আমাদের জন্য সহজলভ্য করেছে মহাকাশে আমাদের স্থাপন করা স্যাটেলাইট গুলো।স্যাটেলাইট আমাদেরকে যেমন যোগাযোগ,জিপিএস,আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং আমাদের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এগিয়ে নিয়ে গেছে ঠিক তেমনি এই স্যাটেলাইট তৈরি করা থেকে অপারেট করা পর্যন্তও কিছু চালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় , চালেঞ্জ গুলো হল, অতিরিক্ত নির্মাণ ব্যায়,মহাকাশে ধ্বংসাবশেষের সাথে সংঘর্ষে নষ্ট হয়ে যাওয়া,নির্মাণ ব্যায় অনুসারে অনেক কম আয়ুষ্কাল এবং সিগন্যাল বিলম্ব।তারপরেও আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে স্যাটেলাইট গুলো আমাদের জীবনকে অনেক উন্নত করেছে এবং আরও উন্নত করতে স্যাটেলাইট গুলোর মাধ্যমে আমাদের গবেষকরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *