সর্বশেষ সংবাদ

পদ্মা সেতু দুর্নীতির নিষ্পন্ন মামলা আবার তদন্ত হবে

দশ বছর আগে নিষ্পত্তি হওয়া আলোচিত পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলা অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যোগসাজশের অভিযোগে সেতু বিভাগের সাবেক সচিব, প্রধান প্রকৌশলী, এসএনসি-লাভালিনসহ আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্ত করবে সংস্থাটি।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে বিষয়টি পুনঃপর্যালোচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্মাণকাজে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্মাণ তদারকি পরামর্শক নিয়োগ-সংক্রান্ত দরপত্রের অন্যতম দরদাতা এসএনসি-লাভালিন ইন্টারন্যাশনাল ইনক-কে কার্যাদেশ পাইয়ে দেওয়ার অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করায় বনানী থানায় মামলা করা হয়। পরে তদন্ত শেষে ২০১৪ সালে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (এফআরটি) দাখিল করা হয়। ওই মামলা পুনঃপর্যালোচনা করে কমিশন মামলাটি অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দুর্নীতির প্রমাণ না মেলার কথা বলে যে মামলার সমাপ্তি টেনেছিল দুদক, সেই পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলা ১০ বছর পর ফের সচল হতে যাচ্ছে।

২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী থানায় সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। মামলার প্রধান আসামি করা হয় সেতু বিভাগের তৎকালীন সচিব মোশাররফ হোসেইন ভূঁইয়াকে। তাঁকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। এক পর্যায়ে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে তাঁকে চাকরিও ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

এ ছাড়া সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস, সাবেক সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইপিসির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা, কানাডীয় প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ ও সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল এ মামলা এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছিল, এই আসামিরা পারস্পরিক যোগসাজশে ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্র করার মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পের তদারকি পরামর্শকের কাজ এর অন্যতম দরদাতা এসএনসি-লাভালিন ইন্টারন্যাশনালকে পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। এসএনসি-লাভালিন ওই কার্যাদেশ পেলে ‘ঘুষ লেনদেন সম্পন্ন হতো’ বলেও এজাহারে লেখা হয়।

২২ মাস তদন্তের পর ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দুদক আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। দুদকের তৎকালীন উপপরিচালক মীর্জা জাহিদুল আলমের নেতৃত্বাধীন একটি টিম এ মামলাটি তদন্ত করে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, পদ্মা সেতু নির্মাণে ‘দুর্নীতি বা ষড়যন্ত্রের’ কোনো প্রমাণ মেলেনি। ওই বছরের ১৬ অক্টোবর দুদকের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে সাত আসামির সবাইকে অব্যাহতি দেন ঢাকার একটি আদালত।

পদ্মা সেতু দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মামলার এজাহারে সন্দেহভাজনের তালিকায় ছিলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী প্রয়াত সৈয়দ আবুল হোসেন ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী। দুর্নীতির ওই ষড়যন্ত্রে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে পদত্যাগে বাধ্য হন আবুল হোসেন। মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে তারাও এ অভিযোগ থেকে রেহাই পান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *