সর্বশেষ সংবাদ

আইপি এড্রেস কি?আইপি এড্রেস কিভাবে কাজ করে এবং কেন আইপি এড্রেস দরকার?

আপনি জানেন কি আপনার বাসার ঠিকানার মত আমাদের হাতে থাকা কম্পিউটার, মোবাইল প্রতিটি ডিভাইসের জন্য আলাদা আলাদা ঠিকানা থাকে?আমাদের সবার বাসার ঠিকানা যেমন আলাদা আলাদা হয় এসব ডিভাইসেরও আলাদা আলাদা ঠিকানা থাকে এবং এই ইউনিক ঠিকানা দিয়ে আমাদের হাতে থাকা প্রতিটা ডিভাইস আলদা আলদা ভাবে চিহ্নিত করা যায়।

আপনার বাসা যেমন আপনার বাসার ঠিকানা দিয়ে চেনা যায় আবার আমার বাসার থিকনা দিয়ে আমার বাসা চেনা যায় ঠিক তেমনি আমাদের ডিজিটাল ডিভাইসের ঠিকানা দিয়ে আমাদের ডিভাইস গুলো চেনা সম্ভব হয়।আর আমাদের ডিভাইসের এই ঠিকানাকে প্রযুক্তির ভাষায় সংক্ষেপে আইপি এড্রেস বলা হয়ে থাকে।

আমি আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে আইপি এড্রেস সম্পর্কিত প্রায় সকল প্রশ্নাবলীর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।আমি আশা করছি আজকের এই পোস্ট শেষ পর্যন্ত পড়া শেষ করলে আপনার মনের মধ্য আইপি এড্রেস নিয়ে এতদিন যে প্রশ্ন গুলো জমে ছিল সেগুলার ব্যাপারে আপনার একটা ভালো এবং পরিস্কার ধারনা তৈরি হয়ে যাবে।তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

আইপি এড্রেস কি?

আইপি এড্রেস (IP Address) এর পূর্ণ রূপ হল ইন্টারনেট প্রোটোকল এড্রেস।যখন কোন কম্পিউটার ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত থাকে তখন এই কম্পিউটার গুলোর একটি আইপি এড্রেস থাকে এবং আমাদের ডিভাইস গুলো যখন ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত থাকা অন্য কোন ডিভাইসের সাথে কানেক্ট হয় তখন আমাদের ডিভাইস গুলো এই আইপি এড্রেস ব্যবহার করেই সেই কম্পিউটারকে খুঁজে বের করে তার সাথে যুক্ত হতে পারে।অর্থাৎ, আমারা বলতে পারি যে, আইপি এড্রেস (IP Address) হল সেই সিস্টেম যার মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত থাকা সকল ডিভাইসকে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।

আইপি এড্রেসের প্রয়োজনীয়তা কি?

আমার একটু আগেই জানলাম যে আইপি এড্রেস (IP Address) এর পূর্ণ রূপ হল ইন্টারনেট প্রোটোকল এড্রেস।এখন এই আইপি এড্রেস কেন আমাদের প্রয়োজন হবে বা হয় সেটা জানার আগে আমাদেরকে প্রোটোকল (Protocol) এই শব্দটির অর্থ জানতে হবে এবং এই শব্দ দ্বারা কি বুঝানো হয়ে থাকে সেটা জানতে হবে।যদি আমরা প্রোটোকল (Protocol) শব্দটি সম্পর্কে ভালভাবে বুঝতে পারি তাহলে আমাদের আইপি এড্রেস কেন দরকার হয় অথবা আইপি এড্রেসের প্রয়োজনীয়তা কি সেটা আমাদের বুঝতে সুবিধা হবে।

প্রোটোকল (Protocol) শব্দের অর্থ হল যে কাজটি অথবা নিয়ম অবশ্যই মানতে হবে।যেমনঃ আপনি যদি কোন ওয়েবসাইট ভিসিট করতে চান তাহলে আপনার কম্পিউটার অথবা মোবাইল ডিভাইসে অবশ্যই ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে এবং আপনাকে অবশ্যই কোন ইন্টারনেট ব্রাউজারের মাধ্যমে সেই ওয়েবসাইট ভিসিট করতে হবে।।এখানে ইন্টারনেট সংযোগ এবং ইন্টারনেট ব্রাউজার হল প্রোটোকল (Protocol)।এখন যদি আপনার এই দুইটি প্রোটোকল (Protocol) এর যেকোনো একটি থাকে এবং অপরটি না থাকে তাহলে আপনি সেই ওয়েবসাইটটি ভিসিট করতে পারবেন না।

একইভাবে আইপি এড্রেস কোন কম্পিউটারকে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত রাখার এবং যুক্ত থাকা কম্পিউটারের সাথে যদি যেকোনো ডিভাইস (কম্পিউটার অথবা স্মার্টফোন) যুক্ত হতে চায় সেই সিস্টেমের প্রোটোকল (Protocol)।কারন আপনি যদি আপনার কম্পিউটারকে সর্বক্ষণ ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত রেখে কোন সেবার প্রদান করতে চান এবং যদি অন্য সবাই যেকোনো স্থান থেকে আপনার কম্পিউটারক আক্সেস করতে পারে তাহলে অবশ্যই আপনার কম্পিউটারকে একটি আইপি দ্বারা ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত রাখতে হয় এবং যারা আপনার কম্পিউটারের সাথে যুক্ত হতে চায় তাঁদেরকেও এই আইপি এড্রেস দ্বারাই যুক্ত হতে হয়।সুতরাং, বলা যাচ্ছে যে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত রাখা অথবা যুক্ত হওয়ার জন্য আমাদের আইপি এড্রেস খুবই প্রয়োজনীয় একটি বিষয়।

আইপি এড্রেস কি কি কাজে ব্যবহার করা হয়?

আইপি এড্রেস কি ধরনের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেই বিষয়ে আপনাকে আমি উপরে একটু ধারনা দিয়েছি।এখন আমারা বিস্তারিত ভাবে জানব যে আইপি এড্রেস কোন কোন কাজে এবং কিভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।কি কি কাজে বেবয়াহ্র করা হয়ে থাকে সেই ব্যাপারে আমি আপনাকে প্রাথমিক ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করব।তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক যে এই আইপি এড্রেস কি কি কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

  • প্রতিটা ডিভাইসকে আলাদা আলদা করে চিহ্নিত করা

আমরা সাধারণত যে ডিভাইস গুলো ব্যবহার করে থাকি সেগুলোর প্রতিটার আলাদা আলদা আইপি থাকে ফলে আমরা যদি কাউকে খুঁজে বের করতে চাই তাহলে খুব সহজেই এই আইপি এড্রেসের মাধ্যমে চিহ্নিত করে খুঁজে বের করতে পারি।

যেমনঃ আইপি এড্রেস দিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গুলো খুব সহজেই অপরাধীকে শনাক্ত করতে পারে।

এছারা যে কম্পিউটার গুলো হোস্টিং সেবা প্রদান করে তাঁদের আইপি এড্রেস আলাদা আলদা হবার কারনে আমারা যখন কোন ওয়েবসাইট ব্রাউজ করি তখন আমাদের ইন্টারনেট ব্রাউজার গুলো এই আইপি এড্রেসের মাধ্যমে সেই ওয়েবসাইটটি কোন আইপি ব্যবহার করে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হয়ে সেবা প্রদান করছে সেটা খুব সহজেই খুঁজে পেতে পারে।

অর্থাৎ, আমরা বলতে পারি যে আইপি এড্রেসের কারনে আমরা সেবা প্রদানকারী ডিভাইস হোক আর সেবা গ্রহনকারী ডিভাইস হোক সেটা আমরা খুব সহজে চিহ্নিত করতে পারি।

  • সেবা প্রদান এবং সেবা গ্রহন করা

উপরে আমি যেটা বললাম যেই কম্পিউটার গুলো সেবা প্রদান করে এবার যে কম্পিউটার গুলো সেবা গ্রহন করে উভয়ের মধ্যই যোগাযোগ স্থাপন করার জন্য আইপি এড্রেস বেবয়াহ্র করা হয়ে থাকে।

যেমনঃ আপনি যখন আমাদের এই ওয়েবসাইটে এসেছেন তখন আপনার কম্পিউটারের (সেবা গ্রহণকারী) আইপি আমাদের ওয়েবসাইট যে সার্ভারে রাখা হয়েছে সেই সার্ভারের আইপি এর সাথে যোগাযোগ করে আমাদের এই ওয়েবসাইটের ডাটা দেখতে চেয়ে অনুরোধ করার পরেই সেই সার্ভার কম্পিউটার (সেবা প্রদানকারী) আপনাকে এই তথ্য দিয়েছে।

  • ডোমেইন নাম চিহ্নিত করার জন্য

আপনি যখন কোন ওয়েবসাইট ভিসিট করেন তখন অবশ্যই আপনি আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজারে সেই ওয়েবসাইটের ডোমেইন নাম লিখে তারপর সেই ওয়েবসাইট ভিসিট করে থাকেন। কিন্তু আপনি জানেন কি যে এই ডোমেইন নাম গুলো মূলত একটা আইপি এড্রেস!যেমনঃ আমাদের সকলের পরিচিত ওয়েবসাইট facebook.com এর আইপি হল 157.240.241.35।কি বিশ্বাস হচ্ছে না?তাহলে আপনি এই আইপি এড্রেস আপনার ব্রাউজারে লিখে ব্রাউজ করে দেখেন আপনাকে কোন ওয়েবসাইটে নিয়ে যায়।

আপনি যদি ফেসবুক এর আইপি এড্রেস ব্রাউজ করে থাকেন তাহলে ডোমেইন কিভাবে আইপি এড্রেস সেটা সম্পর্কে অবশ্যই ভালো ধারনা পেয়ে গেছেন।এভাবে ইন্টারনেট জগতের সকল ডোমেইনেরই আলাদা আলদা আইপি থাকে।আমরা মনে রাখব না বিধায় বর্তমানে যেভাবে আমরা ডোমেইন নাম দেখি সেই সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে।

আইপি এড্রেসের প্রকারভেদ গুলো কি কি?

কাজ করার ধরন এবং ব্যাবহারের উপরে ভিত্তি করে আইপি এড্রেসকে দুই ভাগে ভাগ কর করা যায়।দুই ধরনের আইপি এড্রেস হলঃ

  1. IPv4 এবং
  2. IPv6

IPv4 আইপি এড্রেস কাকে বলে?

IPv4 হল আইপি এড্রেসের চার নাম্বার ভার্সন।১৯৮৩ সালে এই IPv4 ভার্সন তৈরি করা হয়েছিল এবং এই IPv4 দ্বারা আমরা প্রায় ৫ বিলিয়ন ইউনিক এড্রেস তৈরি করতে পারব এবং এই ৩২ বিটের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছিল।আর বর্তমানে যেভাবে প্রযুক্তির প্রসার হচ্ছে সেই অনুসারে IPv4 আইপি এড্রেস যথেষ্ট নয়।প্রযুক্তিবিদদের দেওয়া তথ্য অনুসারে IPv4 আইপি এড্রেস শেষ হবার পথে।আমরা এই মুহূর্তে আমাদের ডিভাইস গুলোতে IPv4 আইপি এড্রেস ব্যবহার করছি।

IPv6 আইপি এড্রেস কাকে বলে?

IPv4 আইপি এড্রেস যেহেতু অনেক কম এবং আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয় এই কারনে IANA আইপি এড্রেসের একটি নতুন সংস্করন তৈরি করে এবং যার নাম দেওয়া হয় IPv6।IPv6 আইপি এড্রেস ১২৮ টি বিটের সমন্বয়ে তৈরি করা স্পেস এবং এটিকে 340 Undecillion বলা হয়ে থাকে।340 Undecillion এর মানে হল ৩৪০ এর পরে ৩৬ টি শুন্য বসালে যা পাওয়া যাবে সেটাকে 340 Undecillion বলা হবে।

বর্তমানে অনেক নেটওয়ার্ক এবং ডিভাইসে IPv6 ব্যাবহার করা শুরু করা হয়েছে আবার কোথাও কোথাও IPv4 এবং IPv6 সমন্বয় করে এক সাথে ব্যাবহার করা হচ্ছে।

আর এই পদ্ধিত যেন আরও সহজে ব্যাবহার করা যায় সেই জন্য ইন্টারনেট ইঞ্জিনিয়ারিং টাস্ক ফোর্স (আইআইটিপি) তিনটি সহজ সমধান তৈরি করেছে।সেগুলো হলঃ

  1. ডুয়াল স্টাক পদ্ধতি
  2. টানেলিং পদ্ধতি এবং
  3. ট্রান্সলেট পদ্ধতি

ডুয়াল স্টাক পদ্ধতিঃ

ইন্টারনেট ইঞ্জিনিয়ারিং টাস্ক ফোর্স (আইআইটিপি) ডুয়াল স্টাক পদ্ধতিটি এমন ভাবে তৈরি করেছে যার মাধ্যমে আমরা একটি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে একই সাথে IPv4 এবং Ipv6 ইন্টারনেট প্রোটোকল ব্যবহার করতে পারি।

টানেলিং পদ্ধতিঃ

এই পদ্ধতি ব্যাবহার করে আমাদেরকে IPv4 এর নেটওয়ার্কের ভেতর দিয়ে Ipv6 কে চলাচল করাতে পারি।

ট্রান্সলেট পদ্ধতিঃ

আমার যেমন ট্রান্সলেট পদ্ধতি ব্যাবহার করে এক ভাষা থেকে আরেক ভাষায় রুপান্তর করি ঠিক তেমনি ইন্টারনেট ইঞ্জিনিয়ারিং টাস্ক ফোর্স (আইআইটিপি) এর তৈরি করা এই ট্রান্সলেট পদ্ধতি আমাদেরকে IPv4 এর নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে IPv6 এর প্যাকেট এবং IPv6 এর প্যাকেট সমুহের মধ্য দিয়ে IPv4 এর প্যাকেট সমুহু ট্রান্সলেট সুবিধার মাধ্যমে চালনা করতে দেয়।ট্রান্সলেট করার জন্য এখানে NAT64 নামক একটি ট্রান্সলেট পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

আইপি এড্রেস জানার পদ্ধতি গুলো কি কি?

আপনি যদি আপনার কম্পিউটার অথবা আপনার ব্যবহার করা নেটওয়ার্ক এর আইপি এড্রেস জানতে তাহলে আপনাকে হয় আপনাকে ইন্টারনেটে সার্চ করে আইপি এড্রেস চেক করার যে ওয়েবসাইট গুলো আছে সেই ওয়েবসাইট ব্যাবহার করে আপনার আইপি এড্রেস ব্যাবহার করতে হবে অথবা আপনার কম্পিউটারের কমান্ড প্রমোট ব্যবহার করে বের করতে হবে।

ইন্টারনেট সার্চ এবং আইপি এড্রেস চেক করার ওয়েবসাইট

আপনি যদি আপনার আইপি এড্রেস জানতে চান তাহলে আপনাকে শুধু কষ্ট করে গুগল সার্চে যেয়ে IP অথবা IP Address এই দুইটার যেকোনো একটা লিখে সার্চ করতে হবে।সার্চ করার পর অনেক সময় গুগল  নিজে থেকে প্রথম সার্চ ফলাফলেই আপনার আইপি এড্রেস দেখিয়ে দিতে পারে।আর যদি গুগল আপনার আইপি এড্রেস না দেখায় তাহলে আপনাকে শুধু WhatismyIPaddress.com এই ওয়েবসাইটে যেতে হবে এবং কিছু সময় অপেক্ষা করলেই এই ওয়েবসাইট আপনাকে আপনার ডিভাইস অথবা নেটওয়ার্কের আইপি এড্রেস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করবে।

কম্পিউটারের কমান্ড প্রমোট ব্যবহার করে

আপনি চাইলে উপরের পদ্ধতি ছাড়াও কম্পিউটারের কমান্ড প্রমোট ব্যবহার করে আপনার ডিভাইস অথবা নেটওয়ার্কের আইপি এড্রেস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য খুঁজে বের করতে পারবেন।এর জন্য আপনাকে আপনার কম্পিউটারের কমান্ড প্রমোট ওপেন করে নিতে হবে এবং আপনাকে এখানে IPconfig এটা লিখে ইন্টার প্রেস করে দিলেই সাথে সাথে আপনাকে আপনার কম্পিউটারের IPv4 এবং IPv6 সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে দেওয়া হবে।

আমার শেষ কথা

আজকের এই পোস্টে আমি আইপি এড্রেস সম্পর্কে যে প্রাথমিক ধারনা আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি তাতে করে আপনি যদি একজন সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তাহলে আমার মনে হয় যে আইপি এড্রেস সম্পর্কে আপনার এর বেশী কিছু জানার প্রয়োজন পরবে না।

আর আপনি যদি প্রফেশনাল কেউ হয়ে থাকেন  তাহলে আপনার উচিত হবে গুগল অথবা অন্য কোন সার্চ ইঞ্জিনে আজকে পোস্টের আলোচিত বিষয়গুলো সম্পর্কে সার্চ করে আরও বিস্তারিত তথ্য যেনে নেওয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *