সর্বশেষ সংবাদ

এক রাফির হিসাবেই ৩২ কোটি টাকা!

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে চট্টগ্রামের রাজপথে সাহসী তরুণ তুর্কি হিসেবে আবির্ভূত হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি। আন্দোলনে মুক্তিযোদ্ধার নাতি কোটায় চবিতে ভর্তি হওয়া রাফির ভূমিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। পরবর্তীতে তাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক করা হয়। কিন্তু ৫ আগস্টের পর তদবির বাণিজ্য, বিকাশে বিপুল অংকের টাকা লেনদেনসহ খান তালাত মাহমুদ রাফির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। অভিযোগের অনেক বিষয়ই এখন প্রকাশ্যে, আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি চট্টগ্রামের সমন্বয়করাও তার ওপর ক্ষুব্ধ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে ব্যবসার নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফিকে ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করেন। ২ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম বন্দরের প্রশাসনিক ভবনে হাজির হন রাফি। রাফির সঙ্গে অন্য কয়েকজন সমন্বয়ক চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় উপস্থিত ছিলেন। ঘণ্টাখানেক আগেই রাফির অবস্থান ছিল আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার হোটেল সেন্টমার্টিনে। হোটেল সেন্টমার্টিনে গোপনে বৈঠক শেষে বন্দর চেয়ারম্যানের কক্ষে হাজির হন তিনি।

সূত্রমতে, হোটেল সেন্টমার্টিনে ঘণ্টাখানেক বৈঠক করেন রাফি। সেখানে বন্দরভিত্তিক ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। রাজস্ব দিতে না পারায় আটকে যাওয়া ১৬৪ কোটি টাকার পণ্য খালাসে তদবির করেন রাফি।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, রাফির নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্টে (০১৯৯৫৮৮৭১৫১) ১ আগস্ট থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে ৬১ লাখ ৩২০ টাকা। নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে খোলা এই বিকাশ অ্যাকাউন্টে সর্বশেষ স্থিতির পরিমাণ এক লাখ ২৫ হাজার ২৪৩ টাকা ৫৬ পয়সা।

সমন্বয়ক রাফি তার মায়ের এনআইডি ব্যবহার করে আরেকটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলেন। মায়ের মোবাইল নম্বর দিয়ে খোলা ঐ বিকাশ অ্যাকাউন্টে (০১৭০৯১৯৭৩৭৩) ১ আগস্ট থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে ৩১ লাখ ৯০ হাজার ৩৫ টাকা। মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে খোলা এই বিকাশ অ্যাকাউন্টে সর্বশেষ স্থিতির পরিমাণ ৫০ হাজার ৪০৩ টাকা ৪৭ পয়সা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি গত ৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় রাজস্ব উন্নয়ন বোর্ড থেকে একটি টিন সার্টিফিকেট বানান, যেখানে তিনি নিজের বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করেছেন নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ উপজেলার নিহারা জয়পুর এলাকা। প্রথম বর্ষের একটি ছেলে বিপ্লবের এক মাস পরই হঠাৎ কেন টিন সার্টিফিকেট বানালেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রতিবেদকের হাতে আসা টিন সার্টিফিকেট অনুযায়ী, ট্যাক্স পেয়ার ট্যাক্স সার্কেল-১৮ ময়মনসিংয়ের অধীনে এই টিন সার্টিফিকেট বানিয়েছেন রাফি।

রাফির বিরুদ্ধে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বদলি, বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহারে তদবিরের অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুখে মুখে এখন এই সমন্বয়কের অনৈতিক তদবিরের তথ্য।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ উপবিভাগের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশকে চাকরিতে ফেরত আনার কাজে রাফির তদবির ছিল। পট পরিবর্তনের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কর্পোরেশন থেকে ঝুলন কুমার দাশকে বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তকৃত ঐ কর্মকর্তাকে হঠাৎ করে ২৬ সেপ্টেম্বর রংপুরে বদলি করা হয়। বরখাস্ত থাকা অবস্থায় একজন কর্মকর্তাকে বদলি করা যায় না। অথচ ঐ বদলির জন্য রাফিই তদবির করেন। বদলি আদেশ হওয়ার একদিন আগের তারিখ বসিয়ে বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

নথি অনুযায়ী, প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশকে ২৬ সেপ্টেম্বর রংপুর সিটি কর্পোরেশনে বদলির আদেশ দেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন, সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শামসুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ‘স্ববেতন ও স্বপদে’ বদলি করা হয় বরখাস্তকৃত প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশকে। ২৮ সেপ্টেম্বর তার বরখাস্ত প্রত্যাহার করা হয়। অথচ তাকে বরখাস্ত করার সময় চসিকের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই তদন্ত কমিটি এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুজন সমন্বয়ক জানান, আন্দোলনের সময় চসিকের সাবেক মেয়রের ঘনিষ্ঠ প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ চট্টগ্রাম নগরের সব সড়ক বাতি বন্ধ করে দেন। তখন পুরো নগরীকে অন্ধকার করে রাখা হয়েছিল। এছাড়া প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় এলইডি বাতি প্রকল্পসহ চসিকের বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, টাকা বিদেশি অর্থে কনভার্ট করার একটি বাইনেন্স অ্যাকাউন্ট রয়েছে রাফির। তার এনআইডি দিয়ে ঐ অ্যাকাউন্ট খোলা হয় (০১৭০৯১১৯৭৩৭৩)। অ্যাকাউন্টের ইউজার আইডি ডোনার ওয়ান। ঐ অ্যাকাউন্টের ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সর্বশেষ ব্যালেন্স ২৬ লাখ ডলার ৮৪ হাজার ৯০০ ডলার। প্রতি ডলার (১১৯ টাকা ৪৫ পয়সা) বাজার দাম অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩২ কোটি সাত লাখ ১২ হাজার ৬১৯ টাকা।

এছাড়া চন্দন নামে এক নিকটাত্মীয়ের সঙ্গেও তার বিপুল পরিমাণে আর্থিক লেনদেন রয়েছে। সম্পর্কে চন্দন তার দুলাভাই। তার ব্যাংক ও অনলাইনের মাধ্যমে দুলাভাই চন্দনের সঙ্গে তার রয়েছে আর্থিক লেনদেন। বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তান ও আমেরিকার নম্বর ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে রাফির নিয়মিত যোগাযোগের তথ্য হাতে এসেছে। (+১৩২২২৩৬৩২৩২) জিয়োং সু নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার প্রায়ই কথা হয়। তিনি আমেরিকার মন্টিভ্যালি শহরে বসবাস করেন। এছাড়া পাকিস্তানি একাধিক নম্বরের সঙ্গে তার যোগাযোগের তথ্য মিলেছে। পাকিস্তানি নাগরিকদের সঙ্গে রাফির যোগাযোগ থাকার বিষয়টি নিয়ে বিব্রত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করাও।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত দুই মাসে একাধিকবার কক্সবাজারে গিয়ে গোপন বৈঠক করেন খান তালাত মাহমুদ রাফি। ১২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় কক্সবাজারের হোটেল সি প্যালেসে অবস্থান করেন তিনি। তার আগে একই দিনে তার অবস্থান ছিল হোটেল সি কুইনে। এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের জিয়া ম্যানশন ও সি প্যালেসে দেখা যায় তাকে। ১৩ সপ্টেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারেই অবস্থান করছিলেন তিনি।

সূত্রমতে, কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেলে বসে অনিয়ম ও তদবিরের বিষয়ে গোপন বৈঠকে যোগ দেন রাফি ও রনি নামের আরেক ব্যক্তি। ঢাকা থেকে যোগ দেন তার রাজনীতির গুরু হিসেবে পরিচিত ঐ ব্যক্তি। তিনিও সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে পরিচিত। পূর্ব খুলশীর ৪১৬ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে রাফির। ফ্ল্যাটটি তার এক বন্ধু রাজধানের, যার সঙ্গে তার পরিচয় হয় ৫ আগস্টের পরে। রাজধানের ব্যক্তিগত গাড়ি ও বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে। উর্মিলা, নুসরাত, আয়েশা, লাবিবা ও আলিয়ানা জাহানসহ বেশ কয়েকজন মেয়ের সঙ্গেও রাফির নিয়মিত যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

মুক্তিযোদ্ধার নাতি হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে ভর্তি হন রাফি। নথি অনুযায়ী, ৬ নম্বর সোহাইর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ার‌ম্যান কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র ব্যবহার কর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন রাফি।

চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের কিছু ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর হুন্ডি, স্বর্ণসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হস্তক্ষেপ করেন সমন্বয়ক রাফি। এছাড়া চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারখ্যাত রিয়াজুদ্দিন বাজারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব মেটাতে ব্যবহৃত হন সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হৃদয় তনুয়া হত্যা মামলার এজাহারে ৩৯ নম্বরে আসামি করা হয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশকে। বাদীকে ফোন করে মামলা প্রসঙ্গে জানতে চান সমন্বয়ক রাফি। বাদীর কাছে রাফি জানতে চান- মামলা করার আগে কেন তাকে জানানো হয়নি। পরে সেই বাদী রাফিকে জানান, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদকে মামলার বিষয়ে জানানো হয়েছে।

বাদীর ছোট ভাই হৃদয় চন্দ তরুয়ার বন্ধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ফজলুল হক জানান, ‘হৃদয় চন্দ্র তরুয়ার পরিবারের লিখিত অনুমতি নিয়ে চান্দগাঁও থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। হৃদয় গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম। মামলা করার আগে সমন্বয়ক রাফিকে অবহিত করেছিলাম।’

২২ অক্টোবর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দেখা যায় খান রাফিসহ চার সমন্বয়ককে। চট্টগ্রাম বন্দরের একটি বিরোধপূর্ণ জমির বিরোধ মেটাতে তদবির করতে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই চার সমন্বয়ক।

এদিকে, বিকাশ অ্যাকাউন্টে বিপুল অর্থের লেনদেন, ভিনদেশি নাগরিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ, দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তার পক্ষে তদবির, চট্টগ্রাম বন্দরের অনৈতিক সুবিধা নেয়া, কক্সবাজারে গোপন বৈঠকসহ নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। অভিযোগ সত্য নয়। মিডিয়া সব সময় ছাত্রদের বিরুদ্ধে কাজ করেছে।’

প্রথম বর্ষে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীর টিন খোলা ও ডলার কনভার্ট অ্যাকাউন্ট (বাইনেন্স অ্যাকাউন্ট) খোলা প্রসঙ্গে রাফি বলেন, ‘ছাত্রদের টিন অ্যাকাউন্ট খোলার আইনি নিষেধাজ্ঞা নেই। আমার প্রয়োজন হয়েছে আমি টিন খুলেছি।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আলোচিত সমন্বয়কের এসব কর্মকাণ্ডে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অনুপ্রেরণা নষ্ট হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আক্তার উল কবির বলেন, ‘দেশের ১৮ কোটি মানুষ ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন চেয়েছে; দুর্নীতির অবসান চেয়েছে বলেই ছাত্রজনতার গণবিপ্লব সফল হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালাতে বাধ্য হয়েছে। এখন পরিবর্তিত বাংলাদেশে দুর্নীতিবাজদের বাঁচাতে কেউ তাদের পক্ষে অবস্থান নিলে; কিংবা দুর্নীতি অনিয়মকে প্রশ্রয় দিলে তারাও জনগণের শত্রুতে পরিণত হবে।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর দ্বিতীয়বারের মতো তদবির-আবদার নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, এখন প্রতিদিন অন্তত ৫০ জন আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন, এর মধ্যে ৪৮ জনেরই নানা তদবির থাকে। দায়িত্ব নেয়ার পরপরই বলেছিলাম ব্যক্তিগত তদবির-আবদার নিয়ে কেউ আসবেন না।

প্রতারণা, চাঁদাবাজি ও মানহানির অভিযোগে করা এক মামলায় ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কথিত সমন্বয়ক ওমর ফারুক শুভকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ওমর ফারুক শুভ ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদনগর ইউনিয়নের জগতজীবনপুর গ্রামের নুরুজ্জামানের ছেলে। গত আগস্টে আন্দোলনে শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকায় তাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফেনী জেলার সহ-সমন্বয়ক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তারপরও বিগত কয়েক মাস ধরে জেলার অন্য সমন্বয়ক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দিয়েই শুভকে বিভিন্ন কর্মসূচি ও সভা-সমাবেশে অংশ নিতে দেখা গেছে।

এর আগে, নানা কেলেঙ্কারির দায়ে সাময়িক বরখাস্ত ফেনী আলিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মাহমুদুল হাসানকে স্বপদে বহাল রাখার আশ্বাস দিয়ে চাঁদা দাবি করেন শুভ। গত মঙ্গলবার চাঁদা দাবির ১৫ মিনিট ১২ সেকেন্ডের একটি কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর থেকে জেলাজুড়ে শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা।

ভাইরাল ঐ কলরেকর্ডে শোনা যায়, ওমর ফারুক শুভ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল কাদের ও হামজা মাহবুবের কথা বলে অধ্যক্ষ মাওলানা মাহমুদুল হাসানের কাছে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। যেখানে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ফেনীর সন্তান আজিজুর রহমান রিজভীর নাম উল্লেখ করেন তিনি।

মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মৌলভীবাজারে ছাত্র আন্দোলনের দুই কর্মীকে অব্যাহতি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মৌলভীবাজার জেলা। জেলার সাবেক সমন্বয়ক ও ছাত্র প্রতিনিধি সুমন ভূঁইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জেলা শাখার প্যাডে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দুইজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আরেকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় সকল কার্যক্রম থেকে তাকে বিরত রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মৌলভীবাজারের সক্রিয় কর্মী মীর নিজাম আহমদ ও শেখ সাব্বির আহমদের বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্যের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়েছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মৌলভীবাজারের অন্যতম প্রতিনিধি তানজিয়া শিশিরের বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্যে সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগ ওঠায় তাকেও সকল কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয় এবং তার বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারো কাছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মৌলভীবাজারের যে কোনো প্রতিনিধির বিপক্ষে সুস্পষ্ট অভিযোগ (তথ্য-প্রমাণসহ) থাকলে তা দিয়ে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়।

মৌলভীবাজার জেলার ছাত্র প্রতিনিধি সুমন ভূঁইয়া বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় আমাদের বর্তমানে কোনো কমিটি নেই। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন কমিটি আন-অফিসিয়ালি প্রকাশিত হয়েছে। এখন অনেকেই নিজেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দেন। আমাদের অনেক সমন্বয়ক বা কর্মী মামলা করেছেন। আবার মামলাকে কেন্দ্র করে বাণিজ্য হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় দুই কর্মীর মামলা বাণিজ্যের ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। তাই আমাদের পক্ষ থেকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *