দীর্ঘ আট বছরের প্রবাস জীবন শেষে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন। গানের শুরু চলমান, প্রবাসে কেন গেলেন, কেমন ছিলেন সেখানে, আবার ফিরলেনই বা কেন, এসব প্রশ্ন নিয়ে এই গায়িকার মুখোমুখি হয়েছিলেন মাহতাব হোসেন।
রংপুর টু ঢাকা
ঢাকায় আসার গল্পটা অন্যরকম। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তখন উত্তরবঙ্গে খাল কাটতে গেছেন। খালকাটা কর্মসূচি চলছিল। উনি উলিপুর-কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় খাল কাটা কর্মসূচি শেষ করে রংপুরে এসেছেন। তার সম্মানার্থেই আয়োজন করা হয় সংগীত অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে আমি গাই।
আমার গান শুনে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মুগ্ধ হন। এরপর বলেন, তোমাকে বড় শিল্পী হতে হবে। তোমার রংপুরে থাকলে চলবে না। এখানে থাকলে তুমি বড় শিল্পী হতে পারবে না। এরপর তিনি আমাকে ঢাকায় নিয়ে এলেন। যদিও আমি আরও আগে জাতীয় পুরস্কার নিতে ঢাকায় এসেছি, তবে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাকে ঢাকায় নিয়ে এলেন স্থায়ীভাবে।
দেশ ছাড়ার গল্প
আমি যখন দেশে ছিলাম তখন নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছিলাম। কনসার্ট করতে পারতাম না, কোথাও কনসার্ট করছি, হুট করে এসে কয়েকজন কনসার্ট বন্ধ করে দেবে। আমার গান করা যাবে না। মানে আমি একদম প্রকাশ্যে ব্ল্যাকলিস্টেড ছিলাম। ধরেন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, আমাকে আটকে ফেলা হলো, নানা রকম হয়রানির চেষ্টা চলতে থাকল। গাড়িতে কোথাও যাচ্ছি, আমাকে থামানো হলো, নানা রকম মামলা দিয়ে আটকানো হলো।
নানা রকম হুমকি তো পেতামই, কিন্তু অনেক সময় দেখতাম রাস্তা দিয়ে অপরিচিত লোকজন আমাকে অনুসরণ করছে। একটা সময় মনে হলো এই দেশে আমার থাকা সম্ভব না। তখন আমি পরিকল্পনা করলাম, চিন্তা করলাম আমাকে চলে যেতে হবে। এরপর তো চলে গেলাম। আমি থাকলে হয়তো আমাকে মেরে ফেলা হতো।
প্রবাস জীবন
আমি যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম, বেশ ভালো ছিলাম। সবাই আমাকে খুবই আপন করে নিয়েছিল। নিয়মিত কনসার্ট ছিল। নানা জায়গা থেকেই আমন্ত্রণ পেতাম। বিভিন্ন রাজ্যে গাইতে যেতাম। মানে যুক্তরাষ্ট্রে যে ক’বছর ছিলাম খুবই চমৎকার ছিলাম। গানের আয়োজন তো ছিলই, সেখানকার মানুষের আতিথেয়তাও মুগ্ধ করার মতো ছিল। আমাকে সবাই ভালোবাসতেন। মানে যুক্তরাষ্ট্রে আমি প্রচুর কনসার্ট, গানের আয়োজন করতাম, সবই ছিল, কিন্তু যেটা ছিল না সেটা হলো গানের রেকর্ডিং। আমি ১৮টি ভাষায় গান গাইতে পারি, বিভিন্ন ভাষাতেও বিভিন্ন রাজ্যে গেয়েছি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে তো আর গান রেকর্ডিং কিংবা বাজারজাত করা যাচ্ছে না এটাই ছিল আমার আফসোস।
এই সময়ের শিল্পীরা
এ সময়ে যারা গাইছেন, তারা অনেকেই মেধাবী। খুবই ট্যালেন্টেড। তবে তাদের মধ্যে এক ধরনের ঘাটতি আছে। ঘাটতিটা হলো তাদের কণ্ঠের জোরটা কম। সময়টা এখন প্রযুক্তির। এই প্রযুক্তির কারণেই হয়তো তারা অনেকটাই প্রযুক্তির ওপরে ছেড়ে দিচ্ছেন। এই কারণে আমি সেই জোরের শূন্যতা টের পাচ্ছি। যেহেতু আমি দেশে ফিরেছি গান তো গাইব, আপনারা যেটা বলছিলেন সিনেমার জন্য গাইব কি না অবশ্যই গাইব। এই সময়ের শিল্পীদের সঙ্গেও যৌথ কাজ হতে পারে।
গান ও রাজনীতি
আমি গানের মানুষ। আবার যারা অনেক মানুষকে বিনোদিত করতে পারে, তাদের এক ধরনের দায়বদ্ধতাও তৈরি হয়। সেই দায়বদ্ধতা হলো তাদের জন্য কিছু করা। আর এজন্য কিন্তু একটা প্ল্যাটফর্ম দরকার হয়। সেটাই হলো রাজনৈতিক। আমার রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম হলো জাতীয়তাবাদী দল। আমি মানুষের জন্য আবার গান করব, আবার মানুষের সেবার জন্যও নিজেকে নিয়োজিত করব। আমি দেশে ফিরেছিই আমার মানুষের কথা ভেবে, আমি তাদের পাশে আছি, গানে ও প্রাণে।
সোর্সঃ দেশ রুপান্তর