সিরিয়ার বাসার আল-আসাদের শাসনের পতনের পর থেকে সায়দনায়া কারাগারের সামনে ভিড় জমিয়েছে শত শত মানুষ। কারাগারটি দীর্ঘদিন ধরে আসাদ সরকারের দমনমূলক শাসনের প্রতীক হয়ে আছে, যেখানে হাজার হাজার মানুষকে আটক রাখা হতো। তাদের অধিকাংশই ছিল সরকারবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত।
তুরস্কে বসবাসরত সিরীয় নাগরিক জওয়ান ওমর তাঁর শ্বশুরের খোঁজে সায়দনায়া কারাগারে যান। ২০১৩ সালে সরকারবিরোধী কার্যক্রমের অভিযোগে তাঁর শ্বশুরকে আটক করা হয়।
ওমর জানান, কারাগারে শ্বশুরের ছবি দেখিয়েও কোনো খোঁজ মেলেনি। তাঁর স্ত্রী ১১ বছর ধরে বাবাকে খুঁজে পাওয়ার আশায় রয়েছেন। তবে বন্দিদের অন্যত্র স্থানান্তরের খবর তাঁদের আশা ভেঙে দিয়েছে।
সিরীয় সাহায্য সংস্থা বাহার-এর প্রধান নির্বাহী ডা. শারভান ইবেশ জানান, সায়দনায়া কারাগারের বাইরে শত শত মানুষ প্রিয়জনদের খোঁজে জড়ো হয়েছেন। উদ্ধার কাজের বিশৃঙ্খলার কারণে ভেতরে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি।
আসাদ শাসনের পতনের পর বহু পরিবার নিখোঁজ প্রিয়জনকে খুঁজে পাওয়ার আশা করছেন। ইদলিবের নাদাফ পরিবার ২০১১ সালে আটক থায়ের নাদাফের সন্ধানে রয়েছেন। তাঁর ছেলে মুস্তাফা, যে তখন শিশু ছিল, এখন ১২ বছর বয়সী। সে জানায়, “আমি আশা করি বাবা ফিরে আসবেন। আমি কখনও তাঁর কণ্ঠ শুনিনি।”
কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েকজনকে ২০ কিমি দূরের একটি মসজিদে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ডা. ইবেশ বলেন, মুক্তি পাওয়া কয়েকজন বন্দির মানসিক অবস্থা অত্যন্ত করুণ। তাঁরা সময় বা নিজের নামও বলতে পারছিলেন না। দেখে তাঁদের বয়স অনুমান করাও কঠিন ছিল।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো সায়দনায়া কারাগারকে “মৃত্যুক্যাম্প” বলে অভিহিত করেছে। গৃহযুদ্ধের সময় সেখানে হাজার হাজার বন্দিকে নির্যাতন ও হত্যার শিকার হতে হয়েছে। অনেক পরিবার তাদের প্রিয়জনদের ফিরে পেতে সক্ষম হলেও, আরও অনেকের খোঁজ এখনো চলছে।
আসাদ শাসনের পতন সিরিয়ার জন্য নতুন আশার সূচনা হলেও, নিখোঁজ প্রিয়জনদের খোঁজে পরিবারগুলোর সংগ্রাম চলমান।
সোর্সঃ দৈনিক জনকণ্ঠ