সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের কারাগারে বন্দী ছিলেন লক্ষাধিক মানুষ। আসাদ সরকার পতনের পরপরই বিভিন্ন কারাগার থেকে হাজারো মানুষকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। মুক্ত হয়ে অনেকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কাছে নিজেদের সঙ্গে ঘটা নির্যাতন ও অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন।
এ যেন ঘটনার পুনরাবৃত্তি। সিরিয়ার সরকার পতন, ভাস্কর্য ভাঙচুর, বাসভবনে লুট থেকে শুরু করে গোপন বন্দিশালা। বলা হচ্ছে হাসিনা সরকারের গোপন বন্দিশালা আয়নাঘরের কথা, এবার সন্ধান মিলল বাশার আল আসাদ সরকারের পরিচালিত আয়নাঘরের। যে ঘরে বন্দী ছিল হাজারো মানুষ। বিদ্রোহীরা দামেস্ক দখল করার পর সামনে এসেছে এই গোপন বন্দিশালা।
স্থানীয় লোকজন জানাচ্ছে, বিপ্লবীরা এমন কিছু বন্দীকে তারা মুক্তি দিয়েছে, যারা জানেই না যে হাফেজ আল-আসাদ মা-রা গেছেন।
উল্লেখ্য, হাফেজ আল-আসাদ হচ্ছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাবা। যিনি আজ থেকে ২৪ বছর আগেই মা-রা গেছেন।
হাফেজ আল-আসাদ ১৯৭১ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিরিয়া শাসন করেছে। এরপর থেকে তার ছেলে বাশার আল-আসাদ শাসন করছে।
খবরে বলা হয়, বন্দীরা ভেবেছিল যে সিরিয়া আক্রমণকারী সাদ্দাম হোসেনের সেনাবাহিনী তাদের ছেড়ে দিয়েছে। অর্থাৎ বন্দীরা জানেই না পৃথিবীতে এমনকি তাদের নিজেদের দেশে গত বিশ বছরে কী ঘটেছে।
নিজের কারাবন্দি জীবনের নির্মম স্মৃতিচারণ করে এই নারী বলেন, ‘তাকে নাম ধরে ডাকা হতো না, শুধু নম্বর দিয়ে ডাকা হতো। তারই সঙ্গে বন্দি ছিলেন এক কিশোরী। যিনি বাশার আল-আসাদ বাহিনীর নির্যাতনের কারণে মাত্র ১৬ বছর বয়সেই মারা যান। এ সময় মুক্তিদাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে হালা বলেন, এটা যেন তার নতুন জন্ম।’
বাশার আল আসাদের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া আরেক বন্দি ৪৯ বছর বয়সী সাফি আল-ইয়াসিন বলেন, বন্দি হওয়ার আগে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার উপকূলীয় শহর বানিয়াসে নৌকা তৈরির কাজ করতেন। তিনি বলেন, ২০১১ সালে সিরিয়ার বিপ্লবের সময়কার এক বিক্ষোভে অংশগ্রহণের অভিযোগে ৩১ বছর সাজা হয়েছিল তার। এরই মধ্যে তিনি সেই সাজার অর্ধেক পার করে ফেলেছেন। সাফিকে বিভিন্ন কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল এবং প্রত্যেক কারাগারে আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে নির্যাতন চালিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।
মানবাধিকার সংগঠন সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটসের তথ্য অনুযায়ী, আসাদের কারাগারে অন্তত ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬১৪ বন্দি ছিলেন। সিরিয়ার কারাগারগুলো ছিল বাশার আল আসাদের রেজিমকে টিকিয়ে রাখার অন্যতম মূল স্তম্ভ। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, সিরিয়ার সরকারি আটক কেন্দ্রে তীব্র নির্যাতন, অনাহার, প্রহার এবং রোগের ব্যাপক প্রমাণ আছে। একে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
আল-জাজিরার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মুক্তি পাওয়াদের এক নারী এখনো ভয়ে তার আসল নাম প্রকাশ করেননি। ছদ্মনামের হালা জানান, ২০১৯ সালে হামার একটি চেকপয়েন্ট থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে ‘সন্ত্রাসবাদের’ অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় এ নারীকে। সে সময় হাজার হাজার সরকারবিরোধীর ওপর একই অভিযোগ আরোপ করা হয়েছিল বলে জানান তিনি। এরপর আলেপ্পোতে নিয়ে বিভিন্ন কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছিল হালাকে।