বর্তমানে সরকারী চাকরি বলেন আর বেসরকারি চাকরি বলেন উভয় ধরনের চাকরি পাওয়াটা অনেক ভাগ্যর ব্যাপার হয়ে গেছে।একটা সময় ছিল যখন কেউ সহজে সরকারী চাকরি করতে চাইত না।কিন্তু বর্তমানের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।অনেকেই বেসরকারি চাকরি ছেড়ে এসে সরকারী চাকরিতে যোগদান করতে চাচ্ছে এবং অনেকেই যোগদান করছে।
কিন্তু যতজন সরকারী চাকরি করতে চান সেই অনুসারে এত সংখ্যক চাকরির পদ সরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোতে নেই।আর এই কারনেই সরকারী চাকরি গুলোতে প্রচুর প্রতিযোগিতা থাকে।আবার আমাদের মাঝে অনেকই বলে থাকে যে কেউ সুপারিশ না করলে সরকারী চাকরি হয়না।কিন্তু আমি বলব আপনি যদি নিজেকে যোগ্য করে তৈরি করতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনার সরকারী চাকরি হয়ে যাবে কারও সুপারিশ ছাড়া।
তাহলে কারও সুপারিশ ছাড়া কিভাবে সরকারী চাকরি পাবেন?আপনি যদি সরকারী চাকরি করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে সরকারী চাকরির জন্য যেভাবে পড়াশোনা করে চাকরির পরীক্ষা অথবা ইন্টারভিউ এর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হয় সেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।তাহলে দেখবেন অবশ্যই আপনি কারও সুপারিশ ছাড়াই সরকারী চাকরি পেয়ে গেছেন।
আমি আজকের এই লেখায় আপনাদের সাথে আলোচনা করব কিভাবে আপনি সরকারী চাকরির জন্য পড়াশোনা করবেন এবং নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সরকারী চাকরির জন্য একজন উপযুক্ত ব্যাক্তি হিসাবে গড়ে তুলবেন।তাহলে চলুন অযথা কথা না বাড়িয়ে সরকারী চাকরির জন্য যেভাবে পড়াশোনা করা উচিত সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা শুরু করা যাক।
সরকারী চাকরি পাওয়ার জন্য যেভাবে পড়াশোনা করা উচিত
শুধু চাকরি না যেকোনো পরীক্ষার জন্য আপনাকে কত ঘণ্টা পড়াশোনা করতে হবে সেটার নির্দিষ্ট কোন স্কেল নাই।আপনি যতটা সময় আপনার মস্তিস্ককে স্বাভাবিক রেখে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবেন আপনার ঠিক ততটা সময়ই পড়াশোনা করা উচিত।তবে চেষ্টা করতে হবে সরকারী চাকরির সিলেবাস এবং বিষয় অনুসারে প্রতিদিন রুটিন মাফিক পড়াশোনা করা।
অনেকেই বলে থাকেন আমিত পড়াশোনা করছি তাহলে আমি কোন ক্লাসে পড়াশোনা করার সময়ে চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ার পড়াশোনা শুরু করব।এটার সহজ উত্তর হল আপনি যখন ইন্টার পাশ করে অনার্সে ভর্তি হবেন তখন থেকেই অল্প অল্প করে চাকরির প্রস্তুতির পড়াশোনা শুরু করা উচিত।কারন এখানে আপনি ৪-৫ বছর একটা দীর্ঘ সময় পাবেন নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য।
কিভাবে পড়াশোনা করলে চাকরির পরীক্ষায় বেশী প্রশ্ন কমন পাওয়া যাবে?
আপনার পড়াশোনা করার পদ্ধতির উপরেও অনেক সময় নির্ভর করে যে আপনি চাকরির পরীক্ষায় কত বেশী প্রশ্ন কমন পেতে পারেন।যেকোনো চাকরির জন্য নিজেকে যখন প্রস্তুত করা শুরু করবেন তখন আপনাকে চাকরির প্রস্তুতি সম্পর্কিত বিবিন্ন বই পড়া শুরু করতে হবে।আপনি যখনই কোন এই ধরনের বই কিনে নিয়ে আসবেন তখনই আপনাকে দেখতে সেই বইয়ে কত গুলো অধ্যায় আছে।যত গুলো অধ্যায় আছে সেইগুলো কত বড় অথবা ছোট এটাও দেখে নিতে হবে।এরপরে আপনি কয়দিনে একটা করে অধ্যায় শেষ করতে পারবেন সেই অনুসারে রুটিন তৈরি করে অবশ্যই রুটিন অনুসারে সেই বইটি শেষ করতে হবে।
কখনও প্রেশার নিয়ে কোন বই এক বা দুই দিনে শেষ করবেন না।এতে করে আপনার এই পড়া গুলো কখনো মনে থাকবে না।আর এই কারনেই আমি আর্টিকেলের শুরুতেই বলেছি যে প্রতিদিন আপনার মস্তিস্ককে ঠাণ্ডা রেখে স্বাভাবিক ভাবে যতটুকু পড়াশোনা করতে পারবেন ঠিক ততটুকু সময়ই পড়াশোনা করবেন।
আপনি যদি সরকারী চাকরির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে বাংলা,ইংরেজি,গনিত,সাধারণ জ্ঞান এবং আইটি বিষয়ে পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে হবে।
এখন আপনি কোন বিষয়ে কিভাবে পড়াশোনা করবেন সেই সম্পর্কে আমি প্রতিটা বিষয়ের জন্য নিচে আলাদা আলদা ভাবে আলোচনা করব।
বাংলা বিষয়ে যেভাবে পড়াশোনা করবেন
যেহেতু আমাদের মাতৃভাষা বাংলা সেহেতু বাংলা বিষয়ে আমাদেরকে ভালো ভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী রচিত আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি এবং উচ্চতর বাংলা ব্যাকরণ ও রচনা বই দুইটি ভালো ভাবে পড়ে নিতে হবে।এছারাও মাহবুবুল হক স্যার রচিত বাংলা ব্যাকরণ বইটি থেকে বাংলা ব্যাকারন অংশটুকু খুব ভালোভাবে আয়ত্ত করে নিতে হবে।আরও ভালোভাবে বাংলা ব্যাকারন আয়ত্ত করার জন্য আমাদেরকে নবম এবং দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকারন বই খুব ভালোভাবে পরতে হবে।
এছারা বাংলা সাহিত্য বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আপনাকে ক্লাস সিক্স থেকে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত সকল কবিতা,গল্প এবং প্রবন্ধের লেখক/লেখিকার বিষয়ে সকল বিষয়ে পড়াশোনা করতে হবে।এবং কোন কবিতা কোন ছন্দে রচিত সেই বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
এছারা যে বই গুলো অন্য কোন ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে সেই বই গুলো সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।এবং বাংলা বাকারনের ভাব-সম্প্রসারন গুলো ভালোভাবে পড়ে নিতে হবে।
উপরের বিষয় গুলো ছাড়াও বাংলা সাহিত্যের জন্য পিএসসি নির্ধারিত যে কবি সাহিত্যকরা আছেন তাদের তাদের জীবনী,রচনা এবং বাংলা সাহিত্যে তাদের অবদান গুলোর বিষয়ে ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হবে।
পিএসসি নির্ধারিত কবি সাহিত্যকরা হলেন-
- দীনবন্ধু মিত্র
- মাইকেল মধুসূদন দত্ত
- বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- জসীম উদ্দীন
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- ফররুক আহমদ
- কাজী নজরুল ইসলাম
- মীর মশাররফ হোসেন এবং
- কায়কোবাদ
এছারাও পঞ্চ কবিগণ হলেন-
- বিষ্ণু দে
- বুদ্ধদেব বসু
- সুধেন্দ্রনাথ দত্ত
- জীবনানন্দ দাস এবং
- অমিয় চক্রবর্তী
বাংলার জন্য প্রস্তুতি হিসাবে অবশ্যই বাংলা ব্যাকারন বেশী বেশী পড়বেন।কারন বাংলাতে বেশীরভাগ প্রশ্ন ব্যাকারন থেকেই বেশী করা হয় যেকোনো সরকারী চাকরির পরীক্ষায়।
সরকারী চাকরির প্রস্তুতির জন্য ইংরেজি যেভাবে পড়বেন
ইংরেজি বিষয়ের প্রস্তুতির জন্য অবশ্যই বাংলা বিষয়ের মত ইংরেজি গ্রামারের সকল বিষয়ে পড়াশোনা করতে হবে।বিশেষ করে বাক্য, বক্তব্যের অংশ, কাল, কণ্ঠস্বর, বর্ণনা, লিঙ্গ, প্রতিশব্দ, বিপরীতার্থক শব্দ এই অংশ গুলোর প্রতি বিশেষ ভাবে যত্নশীল হতে হবে।এবং একই সাথে অনুবাদ বিষয়ে ভালোভাবে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
ইংলিশ গ্রামার ভালোভাবে আয়ত্ত করার জন্য আপনি স্কুল এবং হাইস্কুল লেভেলে যে গ্রামার বই গুলো পড়ে এসেছেন সেই গুলো থেকে পড়াশোনা করলেই হবে।
ইংরেজি গ্রামারের যে টপিক গুলো বেশী বেশী পড়তে হবে সেগুলো হল-
ইংরেজি গ্রামারের বিশেষ্য, ক্রিয়া, বিশেষণ, ক্রিয়াবিশেষণ, অব্যয় এই টপিক গুলো বিষয়ে যা যা আছে তার সবগুলো পড়তে হবে।
এছারা পরিবর্তন করুন- সরল, যৌগিক এবং জটিল, ভয়েস পরিবর্তন, মুড, অসীম, পার্টিসিপল, জেরুন্ড, ইডিয়মস এবং বাক্যাংশ, সঠিক শব্দ, প্রতিশব্দ এবং বিপরীত শব্দ, শব্দভাণ্ডার এই বিষয় গুলোতে পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
ইংরেজি গ্রামারের উপরের বিষয় গুলো সহ বিগত সময়ের বিভিন্ন সরকারী চাকরির পরীক্ষায় যে প্রশ্নগুলো এসেছিল সেই প্রশ্ন গুলোর প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে।কারন আপনি যদি একটু ভালোভাবে এনালাইসিস করেন তাহলে দেখবেন বিগত বছর গুলোতে আসা ইংরেজি গ্রামারের প্রশ্ন গুলোই ঘুরে ফিরে চাকরির পরীক্ষায় করা হয়।
সরকারী চাকরির জন্য গনিত বিষয়ের প্রস্তুতি নিবেন যেভাবে
সরকারী চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে গনিত বিষয়ে খুব ভালোভাবে প্রস্তুতি গ্রহন করতে হবে।গনিত বিষয়ে পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ৪র্থ শ্রেণী থেকে শুরু করে ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত গনিত বইয়ের সকল অধ্যায় ভালোভাবে রপ্ত করতে হবে।
বিশেষ করে পাটিগণিতের পিতা-পুত্র মাতা-কণ্যা অনুপাত,লাভ-ক্ষতি,ঐকিক নিয়ম সংখ্যার ধারণা,ল.সা.গু, গ.সা.গু., সুদ-কষা,গড় সময়+গতিবেগ,দূরত্ব ধারা ও মানসিক দক্ষতা এবং ভগ্নাংশ থেকে প্রায় প্রতিটা সরকারী চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে।সুতরাং আপনাকে এই অধ্যায় গুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে।
এছারাও বীজগণিত এবং জ্যামাতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলোতে আপনাকে অবশ্যই দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে সরকারী চাকরির জন্য যেভাবে প্রস্তুতি নিবেন
বাংলা,ইংরেজি এবং গনিত বিষয়ের পাশাপাশি আপনাকে অবশ্যই সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে ভালো জ্ঞান অর্জন করে নিতে হবে।তবে প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো যে সাধারণ জ্ঞান কোন মুখস্থ করার বিষয় নয়।সাধারণ জ্ঞান বিষয় আপনাকে সব সময় চর্চার উপরে রাখতে হবে।
সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে চাকরির পরীক্ষায় ভালো করার জন্য আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশ এবং এই ভারতীয় উপ মহাদেশের ইতিহাস বিষয়ে ভালো জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
এছারা পৃথিবীর সকল দেশ সম্পর্কে সাধারণ তথ্য গুলো আয়ত্ত করে নিতে হবে।এবং সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে বর্তমানে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সহ আরও অন্যান্য বই বাজারে কিনতে পাওয়া যায় সেই বই গুলো নিয়মিত পড়তে হবে।কারন এই বই গুলোতে সারা পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের সাম্প্রতিক বিষয় গুলো সম্পর্কে আপডেট তথ্য পাওয়া যায়।
আইটি/আইসিটি বিষয়ের প্রস্তুতি
উপরে আলোচিত বিষয় গুলো ছাড়াও আপনাকে অবশ্যই আইটি/আইসিটি বিষয়ে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।কারন বর্তমান সময় হল টেকনোলোজির যুগ আর এই কারনে আপনি বর্তমানে সরকারী অথবা বেসরকারি চাকরি যেটাই করতে যান না কেন আপনাকে কম্পিউটার,ইন্টারনেট,সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদি আইটি/আইসিটি বিষয়ক বিষয় গুলোতে ভালো জ্ঞান অর্জন এবং দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
আমার শেষ কথা
আমাকে প্রায়ই অনেকেই প্রশ্ন করে থাকে যে কিভাবে তারা সরকারী চাকরির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করবে ছাত্র জীবন থেকেই।আমি যখন ছাত্র ছিলাম তখন আমি দেখেছি প্রায় সকলেই এমন এলোমেলো ভাবে সরকারী অথবা বেসরকারি চাকরির জন্য পড়াশোনা শুরু করে যেটা একদমই ভালো কোন প্রাকটিস নয় বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে।আর এই কারনেই আমার আজকের আর্টিকেলটি লেখা।আশা করি যারা সিদ্ধান্তই নিতে পারেন না কিভাবে সরকারী চাকরির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা শুরু করবে তাদের জন্য অবশ্যই আজকের এই লেখাটি অনেক উপকারী হবে।