অফিসে যেভাবে আপনার বসের আস্থাভাজন হবেন (সেরা ৯ টি টিপস)

আমরা যখন কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে যাব তখন অবশ্যই সেই অফিসে আমাদের একজন বস থাকবে।আমাদের মধ্য অনেকেই বলে থাকে যে তাঁর অফিসে বসে সঙ্গে ভালো সম্পর্ক নেই।এবং বসকে সব সময় খারাপ ভাবে অন্যদের সামনে উপস্থাপন করে।আপনার কি মনে হয় সব অফিসের বসেরাই খারাপ।আর যারা অফিসে চাকরি করে তাঁদের কি কোন দোষ নেই?অবশ্যই আছে।

আমি আপনাদের সাথে আজকের এই আর্টিকেলে এমন কিছু টিপস শেয়ার করব যেগুলো আপনি অফিসে মেনে চললে খুব সহজেই আপনি আপনার বসের কাছে একজন আস্থাভাজন ব্যাক্তি হিসাবে বিবেচিত হবেন।তাহলে চলুন আজকের লেখার মূল আলোচনা শুরু কর যাক।

নিচে আলোচিত ৯ টি উপায়ে আপনি খুব সহজেই আপনার বসের আস্থাভাজন ব্যাক্তি হিসাবে বিবেচিত হতে পারেন

(১) সব সময় ফ্রেশ এবং হাসি খুশি থাকতে হবে

আমরা সকলেই জানি যে হাসি খুশি মানুষদেরকে সবাই পছন্দ করে।আবার অনেক সময় ঝারি মারার চাইতে মুখের হাসি দিয়েও অনেক অসাধ্যকে সাধন  করা যায়।আপনি যখন অফিসে চাকরি করতে যাবেন তখন বস এবংআপনার সহকর্মীদের সাথে অবশ্যই  চেষ্টা করবেন সব সময় হাসি মুখে কথা বলার।

আর আপনাকে অবশ্যই সব সময় ফ্রেশ মাইন্ড থাকতে হবে।কারন ফ্রেশ মাইন্ড মানেই ফ্রেশ কাজ।আপনি মানুষিক ভাবে খারাপ থাকলে কখনই আপনার থেকে ভালো কাজের আউটপুট আসবে না।আপনি যখন সবার সাথে সব সময় হাসি খুশি থেকেন এবং ফ্রেশ মাইন্ড থাকার কারনে আপনার কাজের আউটপুট ভালো হবে তখন খুব সহজেই দেখবেন আপনার বস আপনার প্রতি নির্ভর করতে শুরু করেছে।

(২) চেষ্টা করবে সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন করার

আপনার বস যখন আপনার কাছে কোন কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইবে তখন অযথা কথা বাড়াতে যাবেন না।আপনার বস আপনাকে কোন প্রশ্ন করলে চেষ্টা করবেন হ্যাঁ অথবা না এর মাধ্যমে উত্তর দিতে।হ্যাঁ অথবা না দিয়ে উত্তর দেওয়ার পরে আপনার বস আরও কিছু জানতে চাইলে তখন সেই বিষয়ের ব্যাখ্যা করবেন।আর খুব ছোট করে কম সময় নিয়ে মূল পয়েন্টে কথা বলে তাঁকে বুঝাতে চাইবেন।কারন আপনার কাছে অনেক বেশী কথা শুনবার মত এত টাইম তাঁর হাতে থাকেনা।তাঁকে আরও অনেক কাজ করতে হয়।আর আরেকটা বিষয় হল কথা বলার শেষে আপনার বসকে অবশ্যই বলবেন যে আপনার কথার মধ্য কোন ভুল হলে তিনি যেন সেটাকে ক্ষমাসুদর দৃষ্টিতে দেখেন।এবং কথা শেষে ধন্যবাদ জানাতে ভুলবেন না।

(৩) নির্দিষ্টভাবে উত্তর দিতে হবে

আপনার বস আপনাকে যখন জিজ্ঞাসা করে কাজ কিরকম চলছে?তখন আমরা অফিসে অনেকেই উত্তর দিয়ে থাকি এই ভাবে-বস সবকিছু ঠিকঠাক চলছে।এবার আপনি একটু ভেবে দেখেন আপনি যে উত্তর টা দিচ্ছেন সেটা কি কোন অর্থ প্রকাশ করে?না এই কথা কোন কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে কোন অর্থ প্রকাশ করেনা।বরং এভাবে বললে ভালো হয় যে বস আপনি যে কাজটি আমাকে দিয়েছেন আমি সেটা এখন পর্যন্ত ৩০-৪০% (এখানে ৩০-৪০% উধাহরন সরূপ ব্যাবহার করা হয়েছে, আপনার যত % শেষ হয়েছে সেটাই বলতে হবে) শেষ করেছি আমার এই কাজটি কমপ্লিট করতে আরও কয়েক ঘণ্টা অথবা দিনের প্রয়োজন হবে।আমি এখন যে সময় চেয়েছি তাঁর অনেক আগেই আপনার দেওয়া কাজটি শেষ করতে পারব বলে ধারনা করছি।

আবার আমরা অনেক সময় উত্তর দিই যে বস আপনি আমাকে যে কাজটি দিয়েছেন সেটা শেষ করার জন্য আমি আমার সর্বচ্চো চেষ্টা করে যাচ্ছি।এইভাবে উত্তর দিলে আপনার বস আপনার উপরে রাগ হতে পারে।সুতরাং, এভাবে কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নির্দিষ্টভাবে যেকোনো কথার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

(৪) বস জিজ্ঞাসা করার আগেই কাজের আপডেট প্রদান করা

আপনার বস কখন আপনাকে আপনাকে দেওয়া কাজের ব্যাপারে জানতে চাইবে সেই আশায় বসে না থেকে বস জিজ্ঞাসা করার আগেই সেই কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে বসকে জানানো আপনার জন্য বসের মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।আপনাকে দেওয়া কোন কাজের যদি সময়সীমা শেষ হয়ে যাবার পরেও বস আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে ভুলে যায় তাহলে আপনার উচিত হবে চুপ করে বসে না থেকে সেই কাজের সর্বশেষ আপডেট বসকে জানিয়ে দেওয়া।

(৫) বসের সাথে যোগাযোগ রাখা

আপনি যখন কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন তখন আপনার উচিত হবে বসের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলা।যেমনঃ আপনি কখন অফিসে আসছেন আবার কখন অফিস থেকে যাচ্ছেন এটা আপনার বসকে জানানো খুবই জরুরী।আবার আপনার যদি কোন বিশেষ কারনে অফিসে আসতে দেরি হয় (যেমনঃ ট্রাফিক জ্যাম) তাহলে অবশ্যই সেটা আপনার বসকে জানাতে হবে।

আবার আপনার কোন কাজ না থাকলে ডেস্কে বসে থাকবেন না।বসের কাছে যেয়ে আপনার পরবর্তী কাজ কি সেই ব্যাপারে জেনে নিবেন এবং বসের মন মেজাজ ভালো থাকলে আপনার ব্যাক্তিগত কোন ব্যাপারেও আলোচনা করতে পারেন।তবে আপনার ব্যাক্তিগত বিষয় নিয়ে বসের সাথে গভীর আলোচনায় যাবেন না।এতে তিনি বিরক্ত হতে পারে।বেশীরভাগ সময় আপনার ব্যাক্তিগত তথ্য তাঁর কাছে তুলে ধরবেন তাঁর কাছে পরামর্শ পাবার আশায়।

আবার আপনি হয়ত ছুটি কাঁটাতে যাবেন তখন মাঝে মাঝে আপনার বসকে মেইল/এসএমএস করতে পারেন।এতে করে আপনার বস মনে করবে আপনি তাঁকে ভুলে যাননি।ছুটিতে কোথাও বেড়াতে গেলে আসার সময় তাঁর জন্য কোন উপহারও নিয়ে আসতে পারেন।তবে খেয়াল রাখবেন উপহারটি যেন অনেক দামী না হয়ে যায়।

(৬) বসের ব্যাক্তিগত বিষয়ে কথা না বলা এবং সমালোচনা না করা

আপনাকে এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে আপনি যেমন আপনার বসের ব্যাক্তিগত জীবনে কোন প্রভাব ফেলেন না আবার আপনার বসও আপনার ব্যাক্তিগত জীবনে কোন প্রভাব ফেলবে না সেহেতু কেন কেন আপনি আপনার বসের ব্যাক্তিগত বিষয়ে কথা বলে বসের কাছে শত্রু সাজতে যাবেন?

আবার আপনি যদি আপনার বসের পছন্দের তালিকায় থাকেন তাহলে আপনার সহকর্মীদের মাধ্যমে আপনার বলা কথা গুলো ভুলভাবে আপনার বসের কাছে উপস্থাপন করা হতে পারে।আপনি বসের সম্পর্কে সমালোচনা না করে সবার সাথে মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করুন।

(৭) সমস্যার সমধান নিয়ে ভাবুন

কাজ করতে যেয়ে যখনই কোন সমস্যার সম্মুখীন হবেন তখনই আপানকে সেই সমস্যার সমাধান নিয়ে ভাবতে হবে।সমাধান খুঁজে পেলে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে যাবেন না।আপনার উচিত হবে যেকোনো সমস্যা হলে সেই সমধান থেকে মুক্তির জন্য ৪-৫ টি সমধানের রাস্তা তৈরি করা।এবং এই সমধান গুলো আপনার বসের কাছে উপস্থাপন করা।এখন যদি দেখেন আপনার দেওয়া সমাধান থেকে বস যেকোনো একটি সমাধানকে বেছে নিচ্ছে তখন আপনাকে বুঝে নিতে হবে আপনি চাকরি জীবনে সঠিক পথে এগুচ্ছেন।আর যদি দেখেন আপনার সমাধান থেকে বস কোনটা না নিয়ে সে নিজে একটা সমাধান এর পদ্ধতি বলে দিচ্ছে যা কিনা আপনাকে অনেকবার সুযোগ দিলেও আপনি চিন্তা করতেন না।তখন আপনার বসকে আপনার গুরু বলে মেনে নিয়ে আরও শেখার চেষ্টা করতে হবে।

(৮) বসের বিরক্তির কারন হবে না

আপনি কিছুদিন চাকরি করার পরেই বুঝে যাবেন আপনার বস কি পছন্দ করেন আর কি করেন না।তবে কিছু কমন জিনিস কেউই পছন্দ করেন না।যেমনঃ বস কোন মিটিং করছে এমন সময় আপনি আপনার বসকে কখনই এসএমএস করতে যাবেন না।মিটিং চলাকালীন সময়ে আপনার নখ কামড়াবেন না অথবা নাকে হাত দিবেন না।

এর চাইতে ভালো হবে আপনার বসকে এটা বুঝানো যে বস আপনি যা বলছেন আমি সেই ব্যাপারে সম্পূর্ণ মনযোগী আছি।আর মিটিং চলকালীন সময়ে আপনার কিছু বলার থাকেল কথা বলতে যেয়ে কখনোই বোধ হয়,আমার মনে হচ্ছে এই রকম শব্দ গুলো যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে।এভাবে বলার চাইতে আপনি যা বলতে চান সেটা সরাসরি বলে দেওয়াই ভালো হবে আপনার জন্য।

(৯) নির্ভরযোগ্যতা বাড়াতে হবে

বসের কাছে আস্থাভাজন হবার আরও একটি উপায় হল আপনাকে নির্ভরযোগ্য ব্যাক্তি হিসাবে উপস্তাহপন করা।আপনি হয়ত অনেক সময় অফিস টাইম শেষ হবার সাথে সাথে আপনার হাতে থাকা কাজটি শেষ না করেই দ্রুত অফিস ত্যাগ করেন।যদি আপনার এই অভ্যাস থেকে থাকে তাহলে এখনই এটা পরিহার করুন।অফিস টাইম শেষ হলে আপনি যখন হাতে থাকা কাজ শেষ করে অফিস ত্যাগ করবেন তখন আপনি আপনার বসের চোখে নির্ভরযোগ্য ব্যাক্তি হিসাবে বিবেচিত হবেন।

আবার অফিসে থাকাকালীন হয়ত অনেক সময় আপনার কাজ শেষ হয়ে যাবার পরে আপনার হাতে অনেক অবসর সময় থাকে এই সময়টুকু আপনার ডেস্কে বসে না থেকে বরং অফিসের মধ্য ঘুরে বেরান এবং আপনার সহকর্মীদের সাথে হাসি মুখে কথা বলে তাঁদের খোঁজ খবর নিন।আপনার এই অভ্যাস আপনার সাথে সহকর্মীদের সম্পর্ক অনেক ভালো করে তুলবে এবং একই সাথে আপনাকে আপনার বসের কাছে একজন ভালো মানুষ হিসাবে উপস্থাপন করবে যে কিনা সবা সাথে মিলে মিশে থাকতে পছন্দ করে।অবসর থাকলে আপনার কোন সহকর্মীর কাজে হেল্প লাগলে সেটাও করতে পারেন।

শেষ কথা

আপনি যদি আমার আজকের লেখার উপরের এই ৯ টি টিপস মেনে চলেন আমি আশা করি আপনি খুব সহজেই আপনার বসের কাছে এবং আপনার সহকর্মীদের কাছে একজন আস্থাভাজন ব্যাক্তি হিসাবে পরিচিত হবেন।আপনার যদি এই সম্পর্কিত আর কোন জিজ্ঞাসা থাকে তাহলে অবশ্যই আমাকে জানাতে পারেন কমেন্টের মাধ্যমে।