আমি আমার পূর্বের একটি লেখাতে আপনাদের সাথে আলোচনা করেছিলাম যে ওয়েবসাইট কি কিভাবে ওয়েবসাইট গুলো কাজ করে এবং কেন আমাদের একটি ওয়েবসাইট থাকা প্রয়োজন।সেই আর্টিকেলটি আপনি এখান হতে পড়ে নিতে পারবেন।আর যদি আপনি আগে থেকেই এই আর্টিকেল পড়ে থাকেন এবং মনে করেন আপনার একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা প্রয়োজন তাহলে এই লেখাটি পড়া চালিয়ে যান।
আপনি যদি আপনার নিজের জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান তাহলে আপনি সেটা ফ্রি অথবা অল্প কিছু টাকা খরচ করে তৈরি করে নিতে পারবেন।আপনার যদি খুব প্রফেশনাল মানের কোন প্রয়োজনে ওয়েবসাইট দরকার না হয় তাহলে আপনার জন্য ফ্রি ওয়েবসাইটই এনাফ।আর যদি আপনি প্রফেশনাল মানের কোন কাজ করতে চান তাহলে আপনাকে অল্প কিছু টাকা খরচ করে একটি ডোমেইন নাম এবং একটি হোস্টিং প্যাকেজ ক্রয় করে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে নিতে হবে।
কিভাবে একটি ফ্রি অথবা পেইড ওয়েবসাইট তৈরি করতে হয় সেই বিষয়ে আপনাদের সাথে আমি অন্য কোন একটি আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব।যেহেতু আপনি ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেহেতু আপনাকে ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করার অসুবিধা গুলো প্রথমে জেনে নিতে হবে।এবং অসুবিধা গুলো জানার পর যদি আপনার মনে হয় যে না আপনার ফ্রি ওয়েবসাইট দিয়েই আপাতত চলবে তাহলে পরবর্তী ধাপে আপনাকে ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করা শুরু করতে হবে।আর এই কারনেই আমি পরের কোন লেখায় কিভাবে ফ্রি অথবা পেইড ওয়েবসাইট তৈরি করতে হয় সেই বিষয়ে আলোচনা করতে চেয়েছি।
ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করলে কি কি অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়?
আপনি অবশ্যই এটা মানবেন যে ফ্রি জিনিসে কিছুটা বাধ্যবাধকতা এবং বিধি-নিষেধ থাকবে এটাই স্বাভাবিক।ঠিক একই ভাবে আপনি যখন ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করতে যাবেন সেখানে আপনাকে আপনার ইচ্ছামাফিক সব কিছু করতে দেওয়া হবেনা।আমরা এখন জানার চেষ্টা করব ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করলে আমাদের কি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করলে নিচের সমস্যাগুলোর সম্মুখীন আপনাকে হতে হবে-
- সাব ডোমেইন/ডিরেক্টরি ব্যাবহার করতে হবে
- বিজ্ঞাপনের উপরে কন্ট্রোল থাকবে না
- ওয়েবসাইটের স্পিড অনেক স্লো হবে
- কম ব্যান্ডউইথ এবং অনেক কম হোস্টিং স্পেস
- ওয়েবসাইট হ্যাক হবার সম্ভবনা
- ম্যালওয়ার ছড়ানোর ঝুঁকি
- ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যেতে পারে
- ইনফর্মেশন বিক্রি
- ডিজাইন সমস্যা এবং
- ব্র্যান্ডেড ইমেইল তৈরির সুযোগ নেই
আমরা এখানে ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করলে যে ধরনের সমস্যায় পরতে পারি সেই সমস্যা গুলো সম্পর্কে জানলাম।এখন আমরা উপরের প্রতিটা বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিব।
(১) সাব ডোমেইন/ডিরেক্টরি ব্যাবহার করতে হবে
আপনি যখন ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করতে দেয় এমন কোন সাইটে আপনার ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করবেন তখন আপনাকে তাদের ডোমেইন নামের সাথে যুক্ত করে দেওয়া সাব ডোমেইন/ডিরেক্টরি নাম ব্যাবহার করতে হবে।যেটা দেখতে একদমই সুন্দর না এবং দেখতেও প্রফেশনাল নয়।
যেমনঃ আমরা আলোচনার পেক্ষিতে ধরে নিচ্ছি আপনার নাম ফারহান এখন যদি আপনি যদি Weebly.com এই ওয়েবসাইটে আপনার নিজের জন্য কোন ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান এবং সেখানে যদি আপনি আপনার একটি ব্লগ তৈরি করে ব্লগিং শুরু করতে চান তাহলে আপনার ওয়েবসাইটের ইউআরএল হবে এই রকম farhan.weebly.com এখানে ফারহান হল আপনার দেওয়ার ইউজার নাম।এখন আপনাকেই যদি বলা হয় যে এই ওয়েবসাইটের ঠিকানা আপনার কাছে কেমন লাগছে?সত্যি কথা আপনার নিজের কাছেও ভালো লাগবে না।
(২) বিজ্ঞাপনের উপরে কন্ট্রোল থাকবে না
আপনি যেখানে ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করবেন সেই ওয়েবসাইট গুলোতে বিজ্ঞাপনের উপরে নির্ভর করে তাদের সেবা পরিচালনা করে।আর এই ব্যাপারে আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা হল এই ওয়েবসাইট গুলো বেশীরভাগ সময় প্রাপ্ত বয়স্কদের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে থাকে।
এখন আপনি যদি এখানে আপনার নিজের জন্য ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করেন তাহলে আপনার সাইটেও এই ধরনের বিজ্ঞাপন দেখাবে যেটা আপনার জন্য এবং আপনার সাইট যারা ব্যাবহার করবে তাদের জন্য খুব বিব্রতকর একটা পরিস্থিথি সৃষ্টি করবে।আর ফ্রিতে ওয়েবসাইট তৈরি করার ফলে আপনি এই ধরনের বিজ্ঞাপন গুলো বন্ধ করতে পারবেন না।এমনকি সম্পূর্ণভাবে বিজ্ঞাপন বন্ধ করার কন্ট্রোলও আপনার হাতে থাকবে না।
(৩) ওয়েবসাইটের স্পিড অনেক স্লো হবে
যেই ওয়েবসাইট গুলো ফ্রিতে ওয়েবসাইট তৈরি করার সুযোগ দেয় তাদের সার্ভারে একই সাথে অনেক সাইট চালু থাকার ফলে সেখানে থাকা সাইট গুলোর স্পিড অনেক কম থাকে।আর যদি কোন ওয়েবসাইটের গতি কম হয় তাহলে সেটা সেই সাইটের এসইও এর ক্ষেত্রে অনেক খারাপ প্রভাব ফেলে।
(৪) কম ব্যান্ডউইথ এবং অনেক কম হোস্টিং স্পেস
যেহেতু তারা আপানাকে সম্পূর্ণ ফ্রিতে তাদের সেবা ব্যাবহার করতে দিচ্ছে সেহেতু তারা আপনাকে সব কিছু আনলিমিটেড ব্যাবহার করতে দিবে না এটাই স্বাভাবিক।তারা আপনাকে অনেক কম পরিমানে ব্যান্ডউইথ এবং হোস্টিং স্পেস ব্যাবহার করতে দিবে।এখন যদি আপনা ওয়েবসাইটের ভিসিটর বেশী হয় আর ব্যান্ডউইথ কম হয় তাহলে আপনার সাইটটি বেশীরভাগ সময় ডাউন থাকবে।আবার তারা আপনাকে খুব কম পরিমানের হোস্টিং স্পেস দিবে ফলে আপনার যদি অনেক বেশী ফাইল আপনার ওয়েবসাইটে রাখার দরকার হয় তাহলে সেটা আপনি কখনো পারবেন না।
এখানে এই ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করার ওয়েবসাইট গুলো অনেক সময় যারা তাদের ফ্রি সাইট এখানে রাখে তাদের কাছে ব্যান্ডউইথ এবং হোস্টিং বিক্রি করে বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি অতিরিক্ত আয় করে থাকে।
(৫) ওয়েবসাইট হ্যাক হবার সম্ভবনা
ফ্রি জিনিসে নিরাপত্তা জনিত সমস্যা থাকবে এটাই স্বাভাবিক নয় কি?এই ওয়েবসাইট গুলোর নিরাপত্তা জনিত বিষয়ে তেমন শক্ত কোন ব্যাবস্থা থাকে না বললেই চলে।আর এই কারনেই প্রায়ই এই সাইট গুলো হ্যাক হয়ে থাকে।এভাবে একবার যদি আপনার সাইট হ্যাক হয়ে যায় তাহলে আপনার ডাটা ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে আপনার জন্য।কারন তারা আপনাকে সবকিছুর ব্যাপারেই লিমিটেড আক্সেস দিয়ে রাখবে।
(৬) ম্যালওয়ার ছড়ানোর ঝুঁকি
যেহেতু ফ্রি ওয়েবসাইট গুলোতে নিরাপত্তার বিষয়ে খুব একটা নজর দেওয়া হয়না এবং অনেক নিম্নমানের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করানো হয় সেই কারনে ফ্রি ওয়েবসাইট গুলোর মাধ্যমে ম্যালওয়ার ছড়ানোর ঝুঁকি পেইড ওয়েবসাইটের তুলনায় অনেক গুন বেশী।এই দুইটি কারনে ম্যালওয়ার দ্বারা আপনার ডিভাইস,ফ্রি ওয়েবসাইট এবং আপনার সাইটের ব্যাবহারকারীদের ডিভাইসে ম্যালওয়ার দ্বারা অ্যাটাক হতে পারে এবং আপনার নিজের এবং তাদের (সাইটের ব্যাবহারকারীদের) ডাটা বেহাত হবার সম্ভবনা থাকে।
(৭) ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যেতে পারে
যে ওয়েবসাইট গুলো ফ্রিতে ওয়েবসাইট তৈরি করার সুযোগ দেয় তারা বিজ্ঞাপন সহ বিভিন্ন উপায়ে আয় করার চিন্তা করেই এই রকম সার্ভিস প্রদান করে থাকে।কিন্তু কখনও যদি দেখে যে এই সার্ভিস দিয়ে তাদের কোন লাভ হচ্ছে না তখন তারা কোন রকমের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই তাদের ব্যাবসা বন্ধ করে দিতে পারে এবং সেই সাথে আপনার সাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারনে আপনার ওয়েবসাইটের সকল ডাটা হারিয়ে যেতে পারে।
(৮) ইনফর্মেশন বিক্রি
যারা ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য সুযোগ প্রদান করে থাকে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে এই সার্ভিসের মাধ্যমে যেকোনো উপায়ে টাক আয় করা।আপনি জেহতু তাদের সার্ভিস ব্যাবহার করেন এবং এঁর জন্য তাদের কোন চার্জ প্রদান করেন না সাহেতু তারা আপনার বিভিন্ন ইনফর্মেশন যেমনঃ আপনার ইমেইল,আপনার ওয়েবসাইটের তথ্য,এমনকি তাদের সাইট তৈরি করা আপনার সাইটের ইউআরএল পর্যন্ত তারা বিক্রি করে দিতে পারে।
আপনি যদি কখনো এসব বিষয়ে তাদের কাছে অভিযোগ করেন তাহলে দেখবেন তারা আপনাকে তাদের বিভিন্ন রকমের পলিসি দেখিয়ে এই ইনফর্মেশন বিক্রি করার বিষয়কে বৈধ করে ফেলবে।
(৯) ডিজাইন সমস্যা
আপনি যদি টাকা খরচ করে পেইড কোন ওয়েবসাইট তৈরি করেন তাহলে আপনি আপনার ইচ্ছামত আপনি সেটা কাস্টমাইজ এবং ডিজাইন করতে পারবেন কিন্তু ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করলে এই ক্ষেত্রে আপনাকে দেওয়া লিমিটের মধ্যই আপনাকে থাকতে হবে।আরও একটা ব্যাপার সেটা হল ফ্রি ওয়েবসাইটের ওয়েব অ্যাপস গুলো ডেস্কটপ ভার্সনের উপযুক্ত করে তৈরি করা হয় বিধায় এখানে তৈরি করা ওয়েবসাইট গুলো মোবাইল ফ্রেন্ডলি ডিজাইন হয়না।আর বর্তমানে কোন ওয়েবসাইট যদি মোবাইল ফ্রেন্ডলি না হয় তবে সেটা এসইও এর ক্ষেত্রে মারাত্মক খারাপ প্রভাব ফেলে।
(১০) ব্র্যান্ডেড ইমেইল তৈরির সুযোগ নেই
আপনি যখন আপনার নিজের ডোমেইন এবং হোস্টিং ব্যাবহার করে কোন ওয়েবসাইট তৈরি করেন তখন আপনি চাইলেই সেখানে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য ব্র্যান্ডেড ইমেইল আইডি তৈরি করতে পারেন।ব্র্যান্ডেড ইমেইল আইডি দেখতে [email protected] এই রকমের হয়ে থাকে।আর এই ব্র্যান্ডেড মেইল আইডি আপনার ওয়েবসাইটের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।অপরদিকে আপনি যদি ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করেন তাহলে তারা আপনাকে কখনোই আপনার ওয়েবসাইট অথবা আপনার পার্সোনাল ব্যাবহারের জন্য কোন ধরনের ব্র্যান্ডেড ইমেইল আইডি তৈরি করতে দিবেনা।
আমার শেষ কথা
উপরের আলোচনায় অসুবিধা গুলো জানার পরেও কি আপনার উচিত হবে আপনার নিজের জন্য কোন ফ্রি ওয়েবসাইট চালু করা?অবশ্যই না।কারন এত এত অসুবিধার মাঝে কেন আপনি আপনার নিজের একটি ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন?আপনার উচিত হবে অল্প কিছু টাকা খরচ করে হলেও আপনার পছন্দের ডোমেইন নাম এবং একটি হোস্টিং প্যাকেজ কিনে নিয়ে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা। যেখানে কোন কিছুরই কোন লিমিটেশন থাকবে না।