ইন্টারনেট ব্রাউজার ক্রাশ করলে কি করা উচিত?

আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য আমাদের কম্পিউটার অথবা মোবাইল প্রতিনিয়ত কোন না কোন ইন্টারনেট ব্রাউজার ব্যবহার করে থাকি।আর এই ইন্টারনেট ব্রাউজার ব্যবহার করতে যেয়ে আমাদের ডিভাইসে থাকা ইন্টারনেট ব্রাউজার গুলো ক্রাশ হয়ে যায়।বিভিন্ন কারনেই ইন্টারনেট ব্রাউজার ক্রাশ হতে পারে।আমাদের আজকের এই পোস্টে আমরা জানব কি কি কারনে আমাদের ইন্টারনেট ব্রাউজার ক্রাশ হতে পারে এবং কি কি উপায়ে ইন্টারনেট ব্রাউজার ক্রাশ হওয়া থেকে মুক্ত থাকা যায়।

অ্যাড-অন, ইন্টারনেট ব্রাউজারের পুরাতন ভার্শন এছারা আরও অনেক কারনেই আমাদের ইন্টারনেট ব্রাউজার ক্রাশ হতে পারে।যে কারন গুলর জন্য আপনার ডিভাইসে থাকা ইন্টারনেট ব্রাউজার ক্রাশ হতে পারে আমরা এখন সেই কারন গুলো সম্পরকে বিস্তারিত আলচনা করব।

ইন্টারনেট ব্রাউজার ক্রাশ হওয়ার প্রধান কারন গুলো হলঃ

আমাদের ইন্টারনেট ব্রাউজার গুলো অনেক কারনেই ক্রাশ করতে পারে।আমাদের সেই সমস্যা গুলো সম্পর্কে প্রথমে জেনে নিতে হবে এরপরে সমস্যাটি খুজে পেলে সেটা সমধানের জন্য কাজ শুরু করতে হবে।নিচে ইন্টারনেট ব্রাউজার ক্রাশ করার জন্য দায়ী প্রধান কারন গুলো উল্লেখ করা হল।

  • পোগ্রামিং ত্রুটিঃ আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য যে ইন্টারনেট ব্রাউজার ব্যবহার করে থাকি সেটা মূলত একটি প্রোগ্রাম। আর আমরা জানি যে অনেক সময় এই পোগ্রাম গুলোতে কিছু ত্রুটি তৈরি হয় যেই ত্রুটি গুলো এই পোগ্রাম গুলোকে তাদের স্বাভাবিক কাজ সম্পন্ন করতে দেয় না।ফলে পোগ্রাম গুলো ক্রাশ করে।একই ভাবে যখন আমাদের ইন্টারনেট ব্রাউজার গুলোতে কোন ত্রুটি তৈরি হয় তখন আমাদের ব্রাউজার গুলো ক্রাশ করে।
  • এক্সটেনশন অথবা এড-অন প্রেসেসিং সমস্যাঃ আমরা আমাদের ইন্টারনেট ব্রাউজার গুলোতে আমাদের প্রয়োজনীয় অনেক অ্যাড অন ব্যবহার করি। এই অ্যাড অন গুলোতে কন ধরনের টেকনিক্যাল সমস্যা থাকলে আমাদের ব্রাউজার ক্রাশ করতে পারে।কারন অ্যাড অন গুলোতে টেকনিক্যাল সমস্যা থাকার কারনে আমাদের ব্রাউজার গুলো যখন আমরা ওপেন করি তখন এই অ্যাড অন গুলো প্রেসেস হতে পারে না বিধায় আমাদের ইন্টারনেট ব্রাউজার ক্রাশ করে।
  • অপর্যাপ্ত মেমোরিঃ আপনি যখন আপনার কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্রাউজার ওপেন করতে জাচ্ছেন সেই সময়ে যদি আপনার পিসিতে মেমোরি কম থাকে তাহলেও আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজার ক্রাশ করতে পারে।
  • ভাইরাস দ্বারা আক্রান্তঃ বর্তমানে এমন অনেক ভাইরাস আছে যেগুলো আমাদের ইন্টারনেট ব্রাউজার গুলোকে আক্রমন করে।অনেক সময় এই ভাইরাসের আক্রমনের ফলেও আমাদের ইন্টারনেট ব্রাউজার ক্রাশ করে।
  • নেটওয়ার্ক জনিত সমস্যাঃ আপনার ইন্টারনেট সংযোগে সমস্যা হলেও আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজার ক্রাশ করতে পারে।যেমন ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া।
  • পুরাতন ভার্শনের ব্রাউজার ব্যবহারঃ আমরা অনেক সময় আমাদের ইন্টারনেট ব্রাউজারের নতুন ভার্শনে আপডেট করতে অনীহা করি অথবা আপডেট করার কথা ভুলে যাই।আপনি যদি পুরাতন ভার্শনের ব্রাউজার ব্যবহার করেন তাহলেও আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজার ক্রাশ হতে পারে।
  • ক্যাশ অথবা কুকি জনিত সমস্যাঃ অনেক সময় আমাদের ব্রাউজারে ক্যাশ কুকি বেশি থাকার কারনেও ক্রাশ করতে পারে।
  • হার্ডওয়্যার জনিত সমস্যাঃ আপনার হার্ডওয়্যার জনিত সমস্যার কারনেও আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজার ক্রাশ করতে পারে।আবার কিছু কিছু ড্রাইভের কারনেও আপনার ব্রাউজার ক্রাশ করতে পারে।
  • সেশন জনিত সমস্যাঃ আমরা কাজ করার সময় যদি মাত্রাতিরিক্ত ট্যাব আমাদের ব্রাউজারে ওপেন রাখি সেই কারনেও আমাদের ইন্টারনেট ব্রাউজার ক্রাশ করার সম্ভবনা থাকে।

আমরা উপরে ইন্টারনেট ব্রাউজার ক্রাশ  করার কারন গুলো সম্পর্কে জেনেছি।এখন আমরা এই সমস্যা গুলো কিভাবে সমাধান করতে পারি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিব।উপরের তথ্য গুলো থেকে আপনাকে প্রথমে জেনে নিতে হবে যে ঠিক কি কারনে আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজার ক্রাশ করছে।কারন জানার পরে এখানে আলোচিত সমধান অনুসারে কাজ করলে আমি আশা করি যে আপনার ব্রাউজার আর কখনো ক্রাশ করবে না।তাহলে চলুন সমাধান গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

(১) পোগ্রামিং ত্রুটি

সুধু ইন্টারনেট ব্রাউজার নয় আপনার কম্পিউটারে থাকা যেকোনো সফটওয়্যারে যদি পোগ্রামিং ত্রুটি থাকে তাহলে আপনার সেই সফটওয়্যার আপনি ব্যবহার করতে পারবেন না।যখনই আপনি সেই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে চাইবেন তখনই সেটা ক্রাশ করবে।আমরা ইন্টারনেট আক্সেস করার জন্য যে ব্রাউজার ব্যবহার করি সেটাও এক ধরনের সফটওয়্যার।আর যখনই আমাদের ইন্টারনেট ব্রাউজারে কোন পোগ্রামিং ত্রুটি তৈরি হয় তখনই আমাদের ব্রাউজার ক্রাশ করে।

আপনার ব্রাউজারে যদি কন পোগ্রামিং ত্রুটি থেকে থাকে তাহলে আপনার উচিত হবে ব্রাউজারটির সর্বশেষ ভার্শনে আপডেট করে নেওয়া।এই জন্যই বিশেষজ্ঞরা যেকোনো সফটওয়্যারের নতুন ভারশন আসলেই পুরাতন ভার্শনকে আপডেট করে নেওয়ার পরামর্শ দেন।

(২) এক্সটেনশন অথবা এড-অন প্রেসেসিং সমস্যা

আমরা অনেক সময়ই আমাদের বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে আমাদের ইন্টারনেট ব্রাউজারে বিভিন্ন ধরনের এক্সটেনশন অথবা এড-অন ব্যবহার করে থাকি।অনেক সময় এই এক্সটেনশন অথবা এড-অন আমাদের ব্রাউজারকে ক্রাশ করে ফেলে।এক্সটেনশন অথবা এড-অনের কারনে আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজার ক্রাশ হচ্ছে কিনা এটা বুঝার জন্য এক এক করে এক্সটেনশন অথবা এড-অন গুলো অফ করে দেখতে হবে যে ঠিক কোন এক্সটেনশনের জন্য ইন্টারনেট ব্রাউজার ক্রাশ হচ্ছে।এভাবে চেক করতে করতে যখন আপনি সমস্যা যুক্ত এক্সটেনশন অথবা এড-অনটি খুজে পাবেন তখন আপনাকে সেই এক্সটেনশন অথবা এড-অনটি ব্রাউজার থেকে রিমুভ করে দিতে হবে।

খুব বেশি দরকারি না হলে সেই এক্সটেনশন অথবা এড-অনটি আর ব্রাউজারে ইন্সটল করার দরকার নেই।আর যদি খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে সেই এক্সটেনশন অথবা এড-অনটির নতুন ভার্শন অ্যাড করে নিতে হবে।এবং খেয়াল রাখতে হবে যে এই নতুন ভার্শনের এক্সটেনশন অথবা এড-অনটি অ্যাড করার পড়ে আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজারটি আর ক্রাশ করছে কিনা।

(৩) অপর্যাপ্ত মেমোরি

আপনি নিশ্চয় এটা মানেন যে, সব কিছুরই একটা নির্দিষ্ট লিমিট আছে? আমরা অনেক সময় একসাথে আমাদের ইন্টারনেট ব্রাউজারে অনেক গুলো ট্যাব চালু করে রাখি।এতে করে আপনার কম্পিউটার মেমোরির উপরে অতিরিক্ত চাপ পড়ে যায় এবং আপনার ব্রাউজার খুব ধীর গতিতে কাজ করতে থাকে এবং অনেক সময় ক্রাশ করে।এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটাই উপায় সেটা হল আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজারে অপ্রয়োজনীয় ট্যাব গুলো বন্ধ করে দেওয়া।

(৪) ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত

যদি আপনার কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তাহলে এই ভাইরাসের প্রভাব আপনার কম্পিউটারের ইন্টারনেট ব্রাউজারের উপরেও প্রভাব বিস্তার করতে পারে।আর যদি আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তাহলে আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজার স্বাভাবিকভাবে কাজ করবে না এটাই স্বাভাবিক।

এই রকম সমস্যা হলে আপনাকে যেকোনো এন্ট্রি-ভাইরাস সফটওয়্যার দ্বারা সম্পূর্ণ কম্পিউটার এর পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্রাউজারও স্ক্যান করে নিতে হবে এবং কোন ভাইরাস ফাইল পাওয়া গেলে সেটা রিমুভ করে দিলেই দেখবেন আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজার আর ক্রাশ করছে না।

(৫) নেটওয়ার্ক জনিত সমস্যা

ইন্টারনেট ব্যবহার করা সময়ে যদি আপনার ইন্টারনেট সংযোগ বার বার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাহলে আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজার ক্রাশ করতে পারে।আর এই কারনে যদি ব্রাউজার ক্রাশ করে তাহলে ভয় পাবার কিছু নেই, কারন এই সমস্যাটি সাময়িক।এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এমন ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করুন যেটা ঘন ঘন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবার সম্ভবনা নেই।

(৬) পুরাতন ভার্শনের ব্রাউজার ব্যবহার

আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা কিনা বছর পর বছর তাদের কম্পিউটারে পুরাতন ভার্শনের ইন্টারনেট ব্রাউজার ব্যবহার করে চলেছে।কিন্তু আপনার জানেন কি যেকোনো সফটওয়্যার যখন আপডেট করা হয় তখন সেটা আমার আপনার সুবিধার জন্যই করা হয়ে থাকে? আপনি যদি পুরাতন ভার্শনের ইন্টারনেট ব্রাউজার ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজার ক্রাশ করতে পারে।সুতরাং, এখন থেকে চেষ্টা করুন নতুন ভার্শনের ইন্টারনেট ব্রাউজার ব্যবহার করার।

নতুন ভার্শনের ইন্টারনেট ব্রাউজার ব্যবহার করলে শুধু ইন্টারনেট ব্রাউজার ক্রাশ থেকেই মুক্তি পাবেন না, পাশাপাশি আপনি নিরাপত্তাও পাবেন।

(৭) হার্ডওয়্যার জনিত সমস্যা

অনেক সময় আমাদের হার্ডওয়্যার পুরাতন হয়ে যাবার কারনেও আমাদের ইন্টারনেট ব্রাউজার গুলো ক্রাশ করে।আমরা যখন কোন সফটওয়্যার আমাদের কম্পিউটারে ইন্সটল করি তখন সেই সফটওয়্যার গুলোর একটা রিকোয়ারমেন্ট থাকে যে আপনি যদি এই সফটওয়্যার ব্যবহার করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারের কনফিগারেশন এই রকম হতে হবে।

এখন যদি সফটওয়্যার (মনে করুন ইন্টারনেট ব্রাউজার) এর রিকোয়ারমেন্ট অনুসারে আপনার কম্পিউটার হার্ডওয়্যার না হয়ে থাকে এবং আপনি যদি সেই হার্ডওয়্যারে ইন্টারনেট ব্রাউজারটি ইন্সটল করেন তাহলে অবশ্যই আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজারটি চালু করতে গেলে অথবা ব্যবহার করার সময়ে ক্রাশ করবে।

এই সমস্যা  থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনি যে সফটওয়্যার গুলো ব্যবহার করতে চান সেই সফটওয়্যার গুলোর রিকোয়ারমেন্ট অনুসারে আপনার কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।

শেষ কথা

আপনি যদি ইন্টারনেট ব্রাউজার ক্রাশ সংক্রান্ত সমস্যার ভুক্তভুগি হয়ে থাকেন তাহলে আমি এই আর্টিকেলে যে বিষয় গুলো সম্পর্কে আলোচনা করেছি সেই অনুসারে পদক্ষেপ নিলে আশা করা যায় যে আপনার আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজার আর ক্রাশ করবে না।