আইফোন ১৫ এর যে ফিচার গুলো সহ বাজারে আসতে পারে

প্রতি বছরই অ্যাপল যখন তাঁদের নতুন ফোন রিলিজ করে তখন সেটা নিয়ে প্রযুক্তি বিশ্বে এক রকম হইচই পরে যায়।সাম্প্রতিক সময়ে অ্যাপল তাঁদের নতুন মডেল (আইফোন ১৫) রিলিজ করার ব্যাপারে ঘোষণা দিয়েছে।এবং খুব শীঘ্রই তাঁদের আইফোন ১৫ বাজারে আসতে চলেছে।

অ্যাপল যখন তাঁদের নতুন ফোন বাজারে নিয়ে আসে তখন তাঁদের আগের যে মডেল রিলিজ করে তাঁর চাইতে আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং ফিচার যোগ করে।আবার দেখা যায় আগের মডেলের চাইতে দামও কিছুটা বেশী।আপনি যদি আইফোনের ফিচারের সাথে অন্য কোন স্মার্টফোনের ফিচারের (আইফোনে যে ফিচার গুলো আছে) তুলনা করেন তাহলে দেখবেন অন্য স্মার্টফোন গুলো থেকে আইফোনের দাম কয়েক গুন বেশী।কিন্তু তাঁর পরেও দেখা যায় আইফোনের চাহিদা আগের চাইতে কয়েক গুন বেড়ে যায়।

শীর্ষ স্থানীয় ম্যাগাজিন ফোর্বস বলছে, অ্যাপলের আগের ফোন গুলোর চাইতে আইফোন ১৫ সিরিজের ফোন গুলোর মূল্য প্রায় ২০০ ডলার বেশী হতে পারে এবং এর মূল্য দাঁড়াতে পারে প্রায় ১৩০০ ডলারের মত।কিন্তু বাজারে এই মুহূর্তে মাত্র ২০০ ডলারের বিনিময়ে আইফোন ১৫ এর যে ফিচার গুলো রয়েছে সেই কাছাকাছি ফিচারের অনেক ফোন পাওয়া যায়।এত দাম সত্ত্বেও আইফোন গ্রাহকদের চাহিদার শীর্ষেই অবস্থান ধরে রেখেছে।

গত বছরে স্মার্টফোন তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান গুলোর জন্য খুবই খারাপ একটি বছর বলা চলে।কোম্পানি গুলো শেয়ার বাজারের নিচের দিকে অবস্থান করছিল।তারপরেও অ্যাপলের তৈরি করা আইফোন ১৪ সিরিজের এত ফোন বিক্রি হয়েছে যে সামসাংকে মার্কেটের শীর্ষ অবস্থান থেকে সরিয়ে সেই অবস্থান অ্যাপল দখন করে নেয়।

অ্যাপলের সিইও টিম কুক তাঁদের আইফোনের দাম বৃদ্ধিকে কোন সমস্যা হিসাবে দেকছেন না।তিনি মনে করেন তাঁদের তৈরি করা আইফোন গুলোতে যে ফিচার গুলো থাকে এবং আইফোনের পারফরম্যান্সের জন্য গ্রাহকরা আরও বেশী টাকা দিয়েও আইফোন কিনতে কোন রকম দ্বিধাবোধ করেন না।তিনি মনে করেন ছবি তোলা এবং ভিডিও রেকর্ড করার জন্য তাঁদের তৈরি ফোন গুলো বাজারে থাকা অনন্যা ফোন গুলোর চাইতে সব সময়ই সেরা।

আগের মডেল গুলোতে সামসাংয়ের ক্যামেরা সেন্সর ব্যবহার করা হলেও এবারের আইফোনে সনির সেন্সর ব্যবহার করা হবে বল জানানো হয়েছে।এছারাও আইফোন ১৫ এর ক্যামেরাতে আরও বেশী কিছু পরিবর্তন দেখা যাবে।আর এবারে সিরিজে হয়তবা ভলিউম এবং পাওয়ার বাটনও থাকতে পারে।

আইফোন ১৫ এর ক্যামেরাতে যে ফিচার গুলো থাকতে পারে

আইফোনের প্রায় সকল মডেলের স্মার্টফোন গুলোর ক্যামেরা অনেক ভালো মানের।সর্বশেষ আইফোন ১৪ সিরিজে ৪৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছিল।তবে স্মার্টফোনের ক্যামেরা গুলোর একটা সমস্যা আছে সেটা হল,আপনি যখন বেশী মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে ক্রপ করবেন তখন এই ছবিটির রেজুলেশন কমে যায়।কিন্তু আইফোন ১৫ তে যাতে ছবি ক্রপ করলেও সেটার মান ঠিক থাকে সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে।

এছারা জাপান ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম নিক্কেই এশিয়া মাধ্যমে জানা গেছে যে সনি স্টেট-অফ-দ্য-আর্ট নামের যে ইমেজ সেন্সর গুলো অ্যাপলকে সরবরাহ করেছে সেই সেন্সর গুলো বাজারে প্রচলিত ক্যামেরা সেন্সর গুলোর চাইতে ছবির প্রতিটি পিক্সেলের স্যাচুরেশন সিগন্যালের লেভেলকে প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

এছারা ক্যামেরাতে নির্দিষ্ট কিছু সেটিংস ঠিক করে দিলে আইফোন ১৫ এর ক্যামেরা খুব অল্প আলোতেও একজন মানুষের মুখের ছবি স্পষ্ট করে তুলতে পারবে।আবার কেউ যদি অনেক বেশী আলোতে ছবি তুলে তাহলে বেশী আলোর কারনে সেই ছবির সাবজেক্ট বার্ন করবে না বরং সাবজেক্ট সম্পূর্ণ ঠিক থাকবে।

ক্যামেরার প্রধান আকর্ষণ হল পেরিস্কোপ ক্যামেরার ব্যবহার।তবে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুসারে এই পেরিস্কোপ লেন্স সিস্টেম শুধু আইফোন ১৫ প্রো এর টেলি-ফটো ক্যামেরার জন্যই ব্যবহার করা হবে।এছারাও আইফোন ১৫ এর ক্যামেরায় ৬ এক্স অপটিক্যাল জুম করার সুবিধা থাকবে।এর আগের মডেল আইফোন ১৪ তে ৩ এক্স পর্যন্ত অপটিক্যাল জুম করার সুবিধা ছিল।

থাকছে এ১৭ চিপ ও কোয়ালকম এক্স৭০ মডেম

আইফোন ১৫ তে ব্যবহার করা হবে এ১৭ চিপস।এ১৭ হল নতুন প্রজন্মের চিপস।যা তাইওান ভিত্তিক সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে এবং এটাই এ সিরিজের প্রথম চিপ যা আইফোন ১৫ তে ব্যবহার করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

ফোর্বসের মাধ্যমে জানাগেছে, এ১৭ চিপটি মাত্র ৩ ন্যানোমিটারের।আর চিপের সাহায্যে ফোন গুলো আগের চাইতে আরও দ্রুত চলবে এবং অনেক অল্প চার্জেই চলবে বিধায় ফোন থাকবে ঠাণ্ডা।একই সাথে এ১৭ সিরিজের ন্যানো চিপ গুলো স্মার্টফোন গুলোর কর্মক্ষমতা এবং ব্যাটারি লাইফ বাড়াতে ব্যপক ভূমিকা রাখবে বলেই আশাবাদী চিপ তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান টিএসএমসি।

এছারাও আইফোন ১৫ তে কোয়ালকম এক্স৭০ মডেম ব্যবহার করা হবে।এক্স৭০ মডেমের তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান কোয়ালকম এই প্রসেসরের ব্যপক আপলোড এবং ডাউনলোড পারফরম্যান্স দাবী করছে।তাঁরা বলছে আইফোন ১৫ তে এক্স৭০ মডেম ব্যবহার করার কারনে আইফোন ১৫ ব্যবহারকারীরা প্রতি সেকেন্ডে ৩.৫ গিগাবাইট আপলোড সুবিধা এবং ১০ গিগাবাইট ডাউনলোড সুবিধা পাবে।

আইফোন ১৫ এর ডিজাইন কেমন হবে?

আইফোন ১৫ এর আগের মডেল আইফোন ১৪ এর মতই দুইটি আকারে আসার সম্ভবনা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।একটি ৬.১ ইঞ্চি এবং অন্যটি ৬.৭ ইঞ্চি আকারে আসতে পারে বলে জানানো হয়েছে।আর আইফোন ১৫ তে অলেড ডিসপ্লে সুবিধা থাকবে।

তবে এর বডিতে কিছু পরিবর্তন আনা হতে পারে বলে বলা হচ্ছে।মূল বডিতে আগে যেখানে স্টেইনলেস স্টিল ব্যবহার করা হয়েছিলো সেখানে টাইটানিয়াম ব্যবহার করা হতে পারে।আর টাইটানিয়াম স্টেইনলেস স্টিলের চাইতে অনেক বেশী হালকা এবং বেশী মজবুত।

এছারাও আগের মডেলে যে ধরনের বাটন ব্যবহার করা হত সেখানেও কিছু চেঞ্জ আনতে পারে আইফোন ১৫ এর ক্ষেত্রে।বলা হচ্ছে আইফোন এসই, ম্যাকবুক প্রো ও ম্যাকবুক এয়ারের মত আইফোন ১৫ তে সলিড বাটন ব্যবহার করা হতে পারে।

থাকবে দ্রুতগতির ইউএসবি-সি পোর্ট

ইউরোপের সকল ডিভাইসের জন্য একটি ইউনিভার্সাল পোর্ট ব্যবহার করেত হবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এই ঘোষণার পর থেকেই সবাই মনে করেছিল যে অ্যাপল হয়ত ইউএসবি-সি পোর্ট যুক্ত করতে পারে।কারন এই ঘোষণার ফলে হয় অ্যাপলকে ইউরোপের জন্য আলাদা একটি আইফোন ডিজাইন করতে হত অথবা সারা বিশ্বব্যাপী পরিবর্তন করতে হত।

আইফোন ১৫ সিরিজের সকল মডেলে ইউএসবি-সি পোর্ট যুক্ত করা হলেওে শুধুমাত্র প্রিমিয়াম মডেলের ব্যবহারকারীরা উচ্চ গতিতে ডাটা ট্রান্সফার করার সুবিধা পাবে বলে জানানো হয়েছে।

প্রিমিয়াম মডেলের ব্যবহারকারীরা তাঁদের ফোন থেকে ক্যাবলের মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে ২০ গিগাবাইট থেকে ৪০ গিগাবাইট ডাটা ট্রান্সফার করার সুবিধা পেলেও আইফোন ১৫ এর বেসিক মডেলের ব্যবহারকারীরা সেই ইউএসবি ২.০ তেই সীমাবদ্ধ থাকবে ফলে তাঁরা ক্যাবলের মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ ৪৮০ মেগাবাইট ডাটা ট্রান্সফার করার সুবিধা পাবে।

রিভার্স ওয়্যারলেস চার্জিং সুবিধা

কোন ডিভাইসে যদি রিভার্স ওয়্যারলেস চার্জিং সুবিধা যুক্ত করা হয় তাহলে সেটা পাওয়ার ব্যাংকের মত কাজ করে।চিনা ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সর্বপ্রথম এই রিভার্স ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তি বাজারে নিয়ে আসে।যদি এই প্রযুক্তি কোন ফোনে ব্যবহার করা হয় তাহলে সেই ফোনের পিছন দিকে অন্য কোন ওয়্যারলেস চার্জিং সুবিধা যুক্ত ডিভাইস রাখলে সেটাও চার্জ হয়ে যাবে।আইফোন ১৫ তে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে বলে গুঞ্জন তৈরি হয়েছে।

এছারা আরও একটি গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে সেটি হল এতদিনের আইফোনের নামের ক্ষেত্রে যে প্রো-মাক্স ব্যবহার করা হচ্ছিল সেটা পরিবর্তন করে আইফোন আলট্রা রাখা হবে।২০২২ সালে সংবাদ মাধ্যম ব্লুমবার্গের সাংবাদিক মার্ক গারম্যান বলেছিল যে আইফোন ১৪ প্রো-মাক্সের নাম পরিবর্তন করে আইফোন আলট্রা রাখা হতে পারে।তবে এই ব্যাপারে অ্যাপল বলছে যদি আরও উন্নত কোন প্রযুক্তি দিয়ে কোন আইফোন তৈরি করা হয় তখন হয়তবা এই ধরনের নাম রাখা যেতে পারে।

তথ্যসূত্রঃ ফোর্বস এবং নিক্কেই এশিয়া