২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে ব্যারিস্টার তানিয়া আমিরের সাম্প্রতিক মন্তব্য বিভ্রান্তিকর এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া তার বক্তব্যে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের ইঙ্গিত রয়েছে বলে বৃহস্পতিবার প্রেস উইংয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ‘সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস’-এ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
প্রেস উইং দাবি করে, তানিয়া আমিরের বক্তব্যের বিপরীতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পিলখানার ঘটনার সত্য উদঘাটনে আন্তরিক ও স্বচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এসব উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন, সাক্ষ্যগ্রহণ, তথ্য আহ্বান এবং নিহতদের যথাযথ মর্যাদা প্রদান।
২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর, সরকার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তের জন্য সাত সদস্যের একটি স্বাধীন জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে। অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এএলএম ফজলুর রহমানের নেতৃত্বাধীন এই কমিশন ইতোমধ্যে প্রায় ৩৭ জন সাক্ষীর (অফিসার, বিডিআর সদস্য এবং নিহতদের পরিবার) সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে।
কমিশনের দায়িত্ব ‘ঘটনার প্রকৃত প্রকৃতি’ উন্মোচন, দোষীদের শনাক্তকরণ এবং দেশীয়-বিদেশী ষড়যন্ত্রের সন্ধান করা। ২০২৫ সালের ১৮ এপ্রিল, কমিশন এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ২০০৯ সালের ঘটনার বিষয়ে যেকোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য বা সাক্ষ্য ওয়েবসাইট কিংবা ইমেইলের মাধ্যমে জমা দেওয়ার আহ্বান জানায়।
স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, সরকার পিলখানার ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কমিশনের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমানও জানান, প্রয়োজনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদসহ শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে।
তিনি বলেন, “তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত প্রকৃতি প্রকাশ পাবে এবং প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা হবে।”
১৮ এপ্রিল প্রকাশিত কমিশনের গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৬ বছর আগের একটি জটিল ঘটনার পুনঃতদন্তে তথ্যদাতাদের গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে। এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে সরকার কোনও তথ্য গোপন করার চেষ্টায় নেই বরং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে, বিডিআর বিদ্রোহ-সম্পর্কিত মামলায় কয়েক শত সাবেক বিডিআর সদস্যকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। যদিও ব্যারিস্টার তানিয়া আমির দাবি করেন, তাদের মুক্তি কোনো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই হয়েছে, প্রেস উইং স্পষ্ট করে জানায়, এসব মুক্তি আদালতের জামিনের ভিত্তিতে হয়েছে।
তবে নিহত সেনা অফিসারদের পরিবার এই মুক্তির প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাদের মতে, যারা সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত, তাদের পূর্ণাঙ্গ মুক্তি মেনে নেওয়া যায় না। একই সঙ্গে কিছু পরিবার নতুন অভিযোগ (যেমন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে) দায়ের করেছে এবং ন্যায়বিচার না পেলে নতুন করে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে।
নিহতদের সম্মান জানাতে অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৫ সালের মার্চ মাসে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা করে এবং পিলখানায় নিহত ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে ‘শহীদ’ মর্যাদা প্রদান করে।
প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে ব্যারিস্টার তানিয়া আমিরের আওয়ামী লীগের সঙ্গে পারিবারিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে তিনি এবং তার বাবা ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলাম কুষ্টিয়া-৩ এবং কুষ্টিয়া-৪ আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
তার বাবা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং সংবিধান প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এবং তাদের পরিবার ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগ সমর্থক।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “এই পটভূমির প্রেক্ষিতে, জেনেভা প্রেস ক্লাবে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে দেওয়া তার মন্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই প্রতীয়মান হয়।” সেখানে কোনও নতুন প্রমাণ উপস্থাপন না করে দীর্ঘদিন ধরে প্রচারিত বিরোধী দলের দাবিসমূহই শুধু পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র: সমকাল