একটা সময় ছিল যখন ইন্টারনেট ছিল না।যোগাযোগ করা হত চিঠি পাঠিয়ে অথবা দূত পাঠিয়ে।তাঁর পর টেলিফোন আবিস্কার হল এবং ধীরে ধীরে চিঠি এবং দূতের ব্যবহার কমতে শুরু করল।এভাবে দীর্ঘ সময় চলার পর প্রযুক্তির সব চাইতে বড় এবং বিস্ময়কর আবিস্কার ইন্টারনেট আবিস্কার হল।আগের দিনে ইন্টারনেট বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক গুলো ব্যাক্তিগত সম্পদ হিসাবে থাকলেও ইন্টারনেট আবিস্কারের পর তা পাবলিক প্রোপার্টি হয়ে যায়।আর এই ইন্টারনেট আবিস্কারের পরেই ওয়েবসাইট বা ওয়েব এর ধারনা আসে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করা শুরু হয়।
প্রথমে যখন ইন্টারনেট আবিস্কার হয়েছিল সেই সময়ে তৈরি ওয়েবসাইট গুলো আজকের দিনের ওয়েবসাইটের চাইতে অনেক নিম্নমানের ছিল তবে সেি সময়ের যুগান্তকারী আবিস্কার ছিল এই ওয়েবসাইট গুলো।তারপর প্রযুক্তির উন্নতির ফলে আমরা বর্তমানে যে ওয়েবসাইট গুলো দেখতে পারি সেগুলো তৈরি করা হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত এই সকল প্রযুক্তির উন্নতি করার জন্য কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে বড় বড় টেক জায়ান্ট এবং প্রযুক্তিবিদেরা ওয়েব ৩.০ নিয়ে কথা বলছে।তাঁরা বলছে যে ভবিষ্যৎ ইন্টারনেট দুনিয়া কন্ট্রোল করতে যাচ্ছে ওয়েব ৩.০।কিন্তু এই ওয়েব ৩.০ আসলে কি এবং কিভাবে এই ওয়েব ৩.০ কাজ করবে?এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর জানার আগে আমাদের ওয়েব ১.০ এবং ওয়েব ২.০ সম্পর্কে জেনে নিতে হবে তাহলে আমারা ওয়েব ৩.০ সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পারব।
ওয়েব ১.০ এবং ওয়েব ২.০ কি?
লেখার শুরুতেই আমি বলেছি যে আজকের যে ওয়েবসাইট গুলো আমরা দেখি এবং ব্যবহার করি সেগুলো একদিনে তৈরি হয়নি।এই ওয়েবসাইট গুলো দিনে দিনে উন্নতিকরন করা হয়েছে।আমরা এখানে এখন প্রথমে ওয়েব ১.০ এবং ওয়েব ২.০ সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য জেনে নিব যাতে করে আমাদের ওয়েব ৩.০ কি সেটা বুঝতে সুবিধা হয়।
ওয়েব ১.০ কি?
ইন্টারনেট ব্যবস্থার শুরুর দিকে যে ওয়েবসাইট গুলো তৈরি করা হয়েছিলো সেই ওয়েবসাইট গুলোকে ওয়েব ১.০ বলা হয়ে থাকে।সেই সময়ের ওয়েবসাইট গুলোতে শুধু মাত্র টেক্সট দেখার সুবিধা ছিল।সেই ওয়েবসাইট গুলোতে ছবি অথবা ভিডিও অ্যাড করা যেত না এমনকি সেই ওয়েবসাইটের ব্যবহারকারীরাদের সেই ওয়েবসাইটে তাঁদের মতামত (মন্তব্য) প্রদানও করতে পারত না।১৯৯০ সাল থেকে শুরু করে ২০০০ সাল পর্যন্ত যে ওয়েবসাইট গুলো তৈরি করা হয়েছিলো সেগুলোকে ওয়েব ১.০ ওয়েবসাইট বলা যেতে পারে।
ওয়েব ১.০ ওয়েবসাইট দেখতে কেমন ছিল সেটা দেখার জন্য ভিসিট করতে পারেন info.cern.ch এই ওয়েবসাইটটি।এই ওয়েবসাইটটি প্রথমে যেভাবে তৈরি করা হয়েছিল এখনও তেমন রেখে দেওয়া হয়েছে সাক্ষি হিসাবে।আরও একটা আকর্ষণীয় তথ্য হল এটাই ইন্টারনেট দুনিয়ার প্রথম ওয়েবসাইট।
ওয়েব ২.০ কি?
ওয়েব ১.০ এর পরে ইন্টারনেট বিশ্বে জায়গা দখল করে নেয় ওয়েব ২.০।আমরা বর্তমানে যে ওয়েবসাইট গুলো ব্যবহার করি সেই ওয়েবসাইট গুলো সবই ওয়েব ২.০।আমরা বর্তমান ওয়েবসাইট গুলোতে টেক্সট,ছবি এবং ভিডিও দেখতে পারি।আবার চাইলে আমরা যেকোন কন্টেন্টের ব্যপারে আমাদের মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারি।এবং এখানে ওয়েব ২.০ এর মালিকরা আমাদের তথ্য ব্যবহার করে আমাদের সামনে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে তাঁদের ওয়েবসাইট থেকে ভালো অংকের টাকা আয় করে থাকে।এক কথায় বলা যেতে পারে ওয়েব ২.০ তে আমরা ব্যবহারকারীরা তাঁদের কাছে জাস্ট একটা পণ্য ছাড়া কিছু না।
ওয়েব ৩.০ কি?
যেহেতু আমরা উপরে ওয়েব ১.০ এবং ওয়েব ২.০ সম্পর্কে জানলাম সেহেতু এখন আমাদের ওয়েব ৩.০ বুঝতে অনেক সুবিধা হবে।প্রযুক্তিবিদরা বলছেন যে ওয়েব ৩.০ নিয়ন্ত্রন করা হবে সম্পূর্ণ ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে এবং সাথে থাকবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স(এআই)।
ব্লক চেইন প্রযুক্তির ফলে আপনার ব্যাক্তিগত ডাটা গুলোর নিয়ন্ত্রন সম্পূর্ণ আপনার হাতে থাকবে।ফলে আপনার ডাটা কোন তৃতীয় পক্ষ চুরি অথবা ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন দেখাতে পারবে না।এছারাও আমরা বর্তমানে বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে যেভাবে বিভিন্ন তথ্য জানার জন্য সার্চ করি সেই সার্চের জন্য ব্যবহার করা হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স(এআই),ফলে বর্তমানের চাইতে সার্চে পাওয়া ফলাফল হবে আরও উন্নত।
ওয়েব ৩.০ এর ওয়েবসাইট গুলো দেখতে কেমন হবে সেটা দেখতে চাইলে এই ওয়েবসাইট গুলো দেখে নিতে পারেন।যদিও এখন পর্যন্ত ওয়েব ৩.০ টেকনোলজি স্বয়ংসম্পূর্ণ না তাঁর পরেও এই সাইট গুলো দেখলে একটা ধারনা পাওয়া যাবে।
কিছু ওয়েব ৩.০ ওয়েবসাইট গুলো হল-
- www.dogeartclub.com
- cosmos.network
- ironfish.network
- kusama.network
- www.thetatoken.org
- brave.com
- www.helium.com
এই রকম আরও অনেক ওয়েব ৩.০ ওয়েবসাইট দেখতে পারবেন এখানে, এখানে এবং এখানে।