আ’লীগ কর্মীদের বেধড়ক পিটুনি, আটক ৬০

শহীদ নূর হোসেন দিবসে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘিরে গতকাল রোববার রাজধানীতে ছিল ব্যাপক উত্তেজনা। এই কর্মসূচি প্রতিরোধে গণজমায়েত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিএনপি, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং ইসলামী ছাত্রশিবির পালন করে অবস্থান কর্মসূচি। রাজধানীর অলিগলিতে সতর্ক ছিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে কয়েকটি স্থানে ঝটিকা মিছিল ছাড়া কোথাও দাঁড়াতে পারেনি আওয়ামী লীগ। তবে বিভিন্ন স্থানে বেধড়ক পিটুনির শিকার হয়েছেন দলটির ২০ নেতাকর্মী। পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন অন্তত ৬০ জন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আওয়ামী লীগ একই স্থানে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করায় গতকাল ভোরেই জিরো পয়েন্ট, বায়তুল মোকাররম, পল্টন ও গুলিস্তান এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থান নেয়। টহল দেয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে তল্লাশি চালায় পুলিশ।

এর আগে শনিবার রাতে জিরো পয়েন্ট ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্র-জনতা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। সকাল হতে হতে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সেখানে অবস্থান নেন। কিছু সময় পরপর তারা মিছিল করে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ও গুলিস্তান এলাকা প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় তারা আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাবিরোধী স্লোগান দেন। আওয়ামী লীগ কর্মী বলে কাউকে সন্দেহ হলেই ছাত্র-জনতা মারধর করে তাকে পুলিশের হাতে দেয়।
সকাল ৮টার দিকে দুই তরুণ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের পূর্ব পাশে ঘোরাফেরা করছিলেন। এ সময় বিক্ষোভ মিছিল থেকে বের হয়ে একদল তরুণ তাদের মারধর করেন। পরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয় তাদের। সকাল সাড়ে ৯টায় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান এবং ‘শেখ হাসিনা আবারও ফিরে আসবেন’ বলায় অন্তত ছয়জনকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় ছাত্র-জনতা। সাড়ে ১০টার দিকে সন্দেহ হওয়ায় আরও কয়েকজনকে মারধর করা হয়।

দুপুর ১টার দিকে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এক যুবক হঠাৎ ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে রমনা ভবনের দিকে হাঁটা শুরু করেন। এ সময় ১০-১২ জন দৌড়ে ওই যুবককে ধরে মারধর শুরু করেন। পরে আরও ছাত্র-জনতা যুক্ত হয়, কেউ লাথি, কেউ ঘুসি মারে। লাঠি দিয়েও আঘাত করা হয়।

এতে তার গায়ের টিশার্ট ছিঁড়ে যায়। কয়েকজন তাকে রক্ষার চেষ্টা করেন। পরে তাকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। কিছুক্ষণ পর রাশেদ হায়দার নামের ওই যুবককে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ তাকে সচিবালয়ের মধ্যে নিয়ে যায়। তখন সচিবলায়ের বাইরের কলাপসিপল গেট ধাক্কা দিয়ে ছাত্র-জনতা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। পরে সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বিকেল ৪টার দিকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দুই নারী মোবাইল ফোনে বিক্ষোভকারীদের ছবি তুলছিলেন। আওয়ামী লীগ সন্দেহে তাদেরও মারধর করা হয়। সন্ধ্যা ৬টায় দুই নারীসহ তিনজনকে বেধড়ক মারধর করে পুলিশের হাতে দেয় ছাত্র-জনতা। ছাত্রলীগ কর্মী সন্দেহে গুলিস্তানের সমাবেশস্থলে রাকিব ও আফজাল নামে দুই যুবককে পিটুনি দেওয়া হয়। পরে তাদের হেফাজতে নেয় পুলিশ। একই সময় জিরো পয়েন্টে মারধরের শিকার হন কয়েকজন।

পল্টন থানার ওসি কাজী নাসিরুল আমিন জানান, আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও নূর হোসেন চত্বর এলাকা থেকে ২০ জনকে ছাত্র-জনতা পুলিশের হাতে দিয়েছে। শাহবাগ থানার পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে নারীসহ ৪০ জনকে। তাদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

আ’লীগের বিক্ষোভ মিছিল

ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের পরও গতকাল রাজধানীর কয়েকটি স্থানে ঝটিকা মিছিল করেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিকেল ৪টায় গুলিস্তান বিআরটিসি বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ব্যানারে শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী বিক্ষোভ মিছিল করেন। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কার্যালয়ের সামনে থেকে আরেকটি বিক্ষোভ মিছিলে যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

এর আগে বেলা সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর আরেকটি মিছিল শুরু হয়ে নূর হোসেন চত্বরে যাওয়ার পথে বাধার মুখে পড়ে। এ সময় শতাধিক নেতাকর্মী স্লোগান দিতে শুরু করলে তাদের ধাওয়া করে এক দল যুবক। একই সময় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের উল্টো পাশের গলি থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জিরো পয়েন্টের দিকে গেলে বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া ও মারধর করেন। এ ছাড়া মিরপুর ও যাত্রাবাড়ীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল করেন।

শাহবাগে শিবিরের সমাবেশ

জুলাই গণহত্যার বিচার দাবিতে গতকাল শাহবাগে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী সমাবেশ’ করে শিবিরের ঢাকা মহানগর শাখা। সমাবেশে এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের রূপরেখা ঘোষণার দাবি জানান শিবির নেতারা।
সমাবেশ শেষে শিবিরের কয়েক হাজার নেতাকর্মীর মিছিল গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট হয়ে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে শেষ হয়। মিছিলকারীরা দ্রুততম সময়ে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের সাজার দাবি জানান।

আমিনবাজারে পুলিশের তল্লাশি

সাভার থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, আওয়ামী লীগের ডাকা সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর প্রবেশমুখ সাভারের আমিনবাজারে যানবাহন ও ব্যক্তিগত গাড়ি তল্লাশি করে পুলিশ। সকালে সাভার মডেল থানা পুলিশ এ তল্লাশি চৌকি বসায়।
থানার এসআই ফয়সাল আলম বলেন, ‘রাজধানীর নিরাপত্তার জন্য আমিনবাজারে চেকপোস্ট বসানো হয়। তবে কাউকেই আটক করা হয়নি।’

নাটোরে গ্রেপ্তার আ’লীগের ৩৩ নেতাকর্মী

নাটোর প্রতিনিধি জানান, সেখানে আওয়ামী লীগের ৩৩ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত জেলার সাত থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠান।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন বড়াইগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল বারেক সরদার, নলডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর সাহেব আলী, সদর উপজেলার বড় হরিশপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ওসমান গনী ভুইয়া, সিংড়া উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সেলিম রেজা, লালপুর উপজেলার মাঝগ্রামের মুসা আলী, জামরুল ইসলাম, নাওদাড়া গ্রামের আমিরুল ও রামকৃষ্ণপুরের রিপন আলী।

নাটোরের পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন বলেন, ‘একটি চক্র দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্নিত করতে তৎপর হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অভিযান চালিয়ে ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’