চাকরি জীবনে ভালো করার জন্য যে ৭ টি কাজ নিয়মিত করবেন

আমাদের দেশে আপনি কি ধরনের চাকরি করছেন তার উপরে নির্ভর করে তার সামাজিক অবস্থান।যদিও আমি এই ব্যাপারটা একদমি পছন্দ করিনা।কারন যারা মানুষের চাকরি দেখে সামাজিক অবস্থা নির্ধারণ করে তারা আর যাই হোক না কেন ভালো মানুষ যে নয় এটা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়।সে যাই হোক আমার আজকের লেখার বিষয় মোটেই এটা নয়।তাই এই বিষয়ে আর কোন কথা বলার দরকার নাই বলেই আমি মনে করি।

গবেষণা বলেছে কোন ব্যাক্তি যদি দীর্ঘ সময় একটানা চাকরি করে তাহলে সেই ব্যাক্তি অনেক বেশী হতাশা ও বিষন্নতা বোধ করেন।কারন তাঁকে প্রায় মাসের প্রতিটা দিন একটা রুটিন মাফিক কাজ করতে হয় এবং প্রতিদিন একই রকমের কাজ করতে করতে সে হাঁফিয়ে উঠে এবং প্রতিদিস সে ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরে।

গবেষকরা বলছে আপনি যদি চাকরি জীবনে কিছু কিছু বিষয় মেনে চলেন তাহলে আপনি চাকরি জীবনে নিজেকে একজন সুখি মানুষ হিসাবেই মনে করবেন।আমি আপনাদের সাথে এমন ৭ টি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করব যেগুলো আমি চাকরি জীবনে মেনে চললে অফিসে যেমন ভালো থাকবেন তেমনি আবার বাড়ীতেও ভালো থাকবেন।তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কি এমন ৭ টি কাজ যা করলে আপনার চাকরি জীবনে আপনি ভালো করতে পারবেন।

চাকরি জীবনে ভালো করার জন্য যে ৭ টি কাজ নিয়মিত করবেন

আমি এখানে যে সাতটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করব আপনি যদি এই বিষয় গুলো আপনি যখন চাকরি করছেন তখন নিয়মিত অনুসরণ করেন তাহলে দেখবেন আপনি চাকরি জীবনে কখনো হতাশা ও বিষন্নতা বোধ করবেন না।

চাকরি জীবনে যে সাতটি কাজ নিয়মিত করা উচিত সেগুলো হল-

  1. প্রতিনিয়ত শিখতে হবে
  2. সব সময় নিজেকে ইতিবাচক রাখতে হবে
  3. নিজের মধ্য সৃষ্টিশীলতা ধরে রাখতে হবে
  4. আপনার পরিবারকে সময় দিতে হবে
  5. আপনার অফিস লাইফ এবং ব্যাক্তিগত লাইফ এক করে ফেলবেন না
  6. ছুটি পেলে সেটা নষ্ট করবেন না এবং
  7. সোশ্যাল মিডিয়া ব্যাবহারে সতর্ক হতে হবে

এখানে যে সাতটি বিষয়ের কথা আমি বললাম আপনি হয়ত সেটা দেখেই একটু আন্দাজ করতে পেরেছেন যে আপনার আসলে কিভাবে জীবন যাপন করা উচিত বা চাকরি জীবনে কিভাবে আপনার লাইফ স্টাইল পরিচালনা করতে হবে।তারপরেও আমি আপনাদের সাথে এখন উপরের বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করব।তাহলে চলুন সাতটি বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

(১) প্রতিনিয়ত শিখতে হবে

আমি প্রায় ৮ বছরের মত হল চাকরি জীবনে প্রবেশ করেছি।প্রথম দিকে আমিও মনে করতাম একবার যখন চাকরি পেয়ে গেছি তাহলে আর আমাকে কিছু শিখতে হবে না।কিন্তু যখন আমি আমার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজ (যেগুলোর দায়িত্ব আমার উপরে দেওয়া আছে) করতে গেলাম তখন দেখলাম আমি পড়াশোনাতে অনেক ভালো হলেও প্রযুক্তি সম্পর্কে আমার কোন জানাশোনা নাই বললেই চলে।

যেমন আমি প্রথমে মেইল করতে পারতাম না।তখন আমি আমার এক কলিগের (পদবি অনুসারে আমার জুনিয়র) কাছে থেকে কিভাবে ই-মেইল ব্যাবহার করতে হয় সেই ব্যাপারে কয়েকদিন সময় দিয়ে শিখে নিলাম।আবার একদিন দেখলাম আমাদের প্রতিষ্ঠানের কিছু কিছু কাজ ওয়েবসাইটের অ্যাডমিন পানেলে ঢুকে করতে হয়।কিন্তু যেখানে আমি ই-মেইল ব্যাবহার করতে জানিনা সেখানে ওয়েবসাইট ব্যাবহার করা বিলাসিতা ছাড়া কিছু নয়।

কিন্তু কি আর করা যাবে যদি আমি এখানে চাকরি করতে চাই তাহলে আমাকে এটা যত দ্রুত সম্ভব শিখে নিতে হবে।আমি যে ওয়েবসাইট ব্যাবহার করতে জানিনা সেটা আমার বসকে জানালাম।তখন বস বলল আপনি ওয়েবসাইট ব্যাবহার করে কাজ করতে জানেন না এটা কোন সমস্যা নয় তবে আপনি যদি এটা দ্রুত না শিখে নেন তাহলে সেটা অনেক বড় সমস্যা।

তখন আমার সিনিয়র কর্মকর্তা আইটি বিভাগের একজন কে ডেকে আমার বিষয়টা বুঝিয়ে বলে দিলে আমি তার কাছে মাত্র এক সপ্তাহ প্রশিক্ষণ নিয়ে ওয়েবসাইট ব্যাবহার করার বিষয়ে নারী-নক্ষত্র জেনে ফেলি।

আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে আমি বর্তমানে যে প্রতিষ্ঠানে আছি আমি বর্তমানে সেই প্রতিষ্ঠানের হেড অব আইটি হিসাবে নিয়োজিত আছি।

তাহলে এখান থেকে কি বুঝতে পারলেন?আপনি চাকরি জীবনে প্রবেশ করার পর যদি কোন বিষয়ে না জেনে থাকেন তাহলে আপনার উচিত হবে সেই বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব শেখার চেষ্টা করা।এবং এই অভ্যাস ধরে রেখে চাকরি চালিয়ে যাওয়া।

(২) সব সময় নিজেকে ইতিবাচক রাখতে হবে

আপনি যে ধরনের কাজ করতে পছন্দ করেন আপনি যে সব সময় সেই ধরনের কাজ পাবেন এটা আশা করা বোকামি ছাড়া আর কিছু না।এই যেমন আমার কথা ধরুন আমি আমার চাকরি জীবনের শুরু করেছি একটা গার্মেন্টসে চাকরি করার মাধ্যমে।সেখানে আমি সকাল ৭ টায় যেতাম আর সন্ধা ৭ টায় বাসায় আসতাম।যেহেতু আমি কোয়ালিটি বিভাগে চাকরি করতাম সেহেতু আমাকে এই পুরো সময়টা দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করতে হত।

দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করা কোন সমস্যা না।সমস্যা হল আমার এই গার্মেন্টসের চাকরিটা মোটেই ভালো লাগত না।কিন্তু কি আর করা যাবে জীবন যাপনের জন্য যেকোনো চাকরি আমার করা খুবই দরকার ছিল।

প্রথম প্রথম এই গার্মেন্টসের চাকরি ভালো না লাগলেও একটা সময়ে বুঝতে পারলাম আমাকে এই কাজের মধ্যই আনন্দ খুঁজে নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে হবে এবং পাশাপাশি অন্য চাকরির চেষ্টা করতে হবে।এবং মনে মনে নিজেকে বুঝাতাম আমার জন্য হয়ত এটাই ভালো হবে।এভাবে আমি গার্মেন্টসে প্রায় সাড়ে চার বছর চাকরি করলাম এবং পরে বর্তমানে যেখানে চাকরি করছি এই চাকরি পেয়ে গেলাম।

এখানে আমি আমার যে গল্প বললাম সেখান হতে আপনি কি শিখলেন?এখান হতে আপনি শিক্ষা নিতে পারেন যে আপনি যখন যেখানে যে ধরনের চাকরিই করেন না কেন আপনাকে সব সময় আপনার বর্তমান অবস্থান এবং কাজের ব্যাপারে সব সময় ইতিবাচক থাকতে হবে কখনো নেতিবাচক কোন কিছু চিন্তা করা যাবেনা।

আরও পড়ুনঃ আপনার পছন্দের চাকরি খুঁজতে পারেন এই ছয়টি উপায়ে

(৩) নিজের মধ্য সৃষ্টিশীলতা ধরে রাখতে হবে

পৃথিবীতে যত মানুষ আছে তাঁদের সকলেরই কোন না কোন বিশেষ গুন থাকে।যেমন আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা অনেক ভালো কবিতা,গল্প লিখতে পারে আবার কেউ অনেক ভালো জ্ঞান করতে পারে।আপনি চাকরিতে আসার আগে অবশ্যই এই গুলা চর্চা করতেন?এখন কি এগুলো চর্চা করেন?যদি না করেন তাহলে শুরু করে দেন।চাকরির ফাকে ফাকে আপনার এই সৃষ্টিশীলতা গুলো আপানার হতাশা ও বিষন্নতা বোধ কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।

তাহলে আমাকে প্রশ্ন করেন আমি কি এমন কোন সৃষ্টিশীল কোন কাজ করতে পারি?হ্যাঁ অবশ্যই পারি সেটা হল আমি লেখালিখি করতে পারি।আর লেখালিখি করতে পারি বলেই আপনাদের জন্য আজকের এই ব্লগ পোস্ট লিখতে পেরেছি।আমি চাকরি জীবনের অবসরে সময় পেলেই এই রকম ব্লগ পোস্ট আপনাদের সাথে শেয়ার করি।

(৪) আপনার পরিবারকে সময় দিতে হবে

আমি এই লেখার শুরুতেই বলেছি যে দীর্ঘ সময় চাকরি করলে তাঁরা সাধারণ মানুষদের চাইতে কয়েকগুন বেশী হতাশা ও বিষন্নতা বোধ করে।আমাদের মাঝে অনেকেই আছে অফিস টাইম ছাড়া ফ্রি টাইম পেলে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয় এটা মোটেই উচিত নয়।আমি আপনাকে বলছি না যে ঘুমানো যাবেনা।বাসায় এসে ফ্রি সময় পেলে কিছু সময় ঘুমিয়ে তারপরে আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার উচিত হবে আপনার বউ,বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানো।আর যদি অবিবাহিত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে যাওয়া উচিত।

আপনার ফ্যামিলি অথবা বন্ধুদের সাথে সময় কাটালে দেখবেন আপনার মন মেজাজ অনেক ভালো লাগছে এবং সেই হতাশা ও বিষন্নতা বোধ আর নেই।

এখন পরের দিন অফিসে যান দেখবেন আপনি অফিসে কাজ কর্ম করে অনেক ভালো বোধ করবেন।

(৫) আপনার অফিস লাইফ এবং ব্যাক্তিগত লাইফ এক করে ফেলবেন না

আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা তাঁদের অফিস জীবন এবং ব্যাক্তিগত জীবন এক করে ফেলেন।একটা কথা সব সময় মনে রাখতে হবে যে আপনি অফিসে কাজ করতেই যান।সুতরাং সেখানে আপনাকে কাজ করতে হবে এবং কাজ করতে যেয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।এখন যদি সেই সমস্যা গুলো আপনি আপনার বাসায় টেনে নিয়ে আসেন তাহলে আপনার ব্যাক্তিগত জীবন যে বিষিয়ে উঠবে তাতে কোন সন্দেহ নাই।সুতরাং, অফিসে যাই হোক না কেন সেই ব্যাপার গুলো অফিসের মধ্যই সীমাবদ্ধ রাখবেন।আবার বাসায় যা ঘটুক না কেন সেই ব্যাপার গুলো অফিসে কারও সাথে শেয়ার করবেন না।

(৬) ছুটি পেলে সেটা নষ্ট করবেন না

আমাদের মাঝে অনেকই আছে যারা অভারটাইমের জন্য তাঁদের ছুটি গুলো নষ্ট করে ফেলে।এটা করা মোটেই উচিত নয়।কারন এই ছুটি গুলো আপনার প্রতিষ্ঠান আপনার জন্য বরাদ্দ করেছে যেন আপনি ছুটি কাটিয়ে পূর্ণ উদ্যমে কাজে যোগদান করতে পারেন।

আপনি যখন ছুটি পাবেন তখন সেটা অবশ্যই ব্যাবহার করবেন।ছুটির দিন গুলোতে আপনার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসতে পারেন।আপনার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে পারেন অথবা তাঁদের সাথে পিকনিকও করতে পারেন।আবার আপনি চাইলে ছুটির দিন গুলো ঘুমিয়েও নিজেকে ফ্রেশ করে নিতে পারেন।মূল কথা হল ছুটি পেলে সেটার সর্বচ্চো ব্যাবহার করতে হবে।

(৭) সোশ্যাল মিডিয়া ব্যাবহারে সতর্ক হতে হবে

আপনি কি অফিসে কাজের সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যাবহার করেন ?আমার এই প্রশ্নের উত্তর যদি হাঁ হয়ে থাকে তাহলে আপনি যে বিপদজনক অবস্থানে আছেন সেটা আমি নিশ্চিতভাবে বলে দিতে পারি।আপনি যখন অফিসে থাকাকালীন সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট ব্যাবহার করবেন তখন যদি আপনি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যাবহার করেন তাহলে এটা আপনার কাজের বিঘ্ন ঘটাতে পারে। কারন এখানে বিভিন্ন ধরনের মানুষ পাবেন যারা বিভিন্ন রকমের তথ্য শেয়ার করে যা আপনার মনে প্রভাব ফেলে আপনার কর্ম পরিবেশ নষ্ট করে দিতে পারে।

এই কারনে যতক্ষণ আপনি অফিসে থাকবেন ততক্ষণ আপনার উচিত হবে শুধু অফিসিয়াল কাজের জন্য যতটুকু প্রয়োজন সেই সময়টুকু সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট এবং অনন্যা যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাবহার করা।

আমার শেষ কথা

আপনি যদি আপান্র চাকরি জবিনে ভালো করতে এবং রাখতে চান তাহলে অবশ্যই আপনি যখন চাকরি করছেন তখন এই সাতটি বিষয় সম্পূর্ণভাব মেনে চলার চেষ্টা করুন দেখবেন চাকরি জীবনের পাশাপাশি আপনার ব্যাক্তিগত জীবনও অনেক সুন্দর হয়ে উঠেছে।