আমারা সকলেই জানি যে বর্তমানে যত বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক আছে গুগল অ্যাডসেন্স তাঁর মধ্য অন্যতম।কিন্তু বর্তমানে অ্যাডসেন্স আপ্রুভাল পাওয়া অনেক মুশকিল হয়ে গেছে।কারণ বর্তমান সময়ে অ্যাডসেন্স আপ্রুভালের জন্য আবেদন করলে প্রায় সকলেরই লো ভ্যালু কন্টেন্ট সমস্যা ধরে অ্যাডসেন্স আবেদন রিজেক্ট করে দেয়।
কিন্তু আমরা অনেকি বুঝতে পারিনা কেন আমদের ওয়েবসাইট গুলো গুগল অ্যাডসেন্সের জন্য আবেদন করলে লো ভ্যালু সমস্যা ধরে রিজেক্ট করে দেয়।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অ্যাডসেন্স লো ভ্যালু সমস্যার কারণ এবং কিভাবে লো ভ্যালু সমস্যার সমাধান করতে হয় সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
লো ভ্যালু কন্টেন্ট কি? ভ্যালুয়েবল কন্টেন্ট লেখার পদ্ধতি কি?
আপনি যদি আপনার সাইটের লো ভ্যালু কন্টেন্ট সমস্যার সমাধান করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে প্রথমে জানতে হবে গুগল লো ভ্যালু কন্টেন্ট বলতে গুগল মূলত কোন ধরনের কন্টেন্ট কে বুঝাচ্ছে।
গুগল সব সময় চায় যে ওয়েবসাইটের অথররা তাঁদের ওয়েবসাইটে এমন কন্টেন্ট পাব্লিশ করুক যেগুলো মূলত সেই ওয়েবসাইট ব্যবহারকারী ব্যবহার করবে তাঁদের কাজে লাগে।
তাহলে আপনার উচিত হবে এমন কন্টেন্ট লেখা যে কন্টেন্ট গুলো আপনার ব্যবহারকারীদের ভ্যালু প্রোভাইড করবে।
এখন অনেক ওয়েবসাইটের মালিক আছে তাঁরা বলে আমি (ওয়েবসাইটের মালিক) গুগলে সার্চ করে যে টপিক গুলো পেয়েছি সেগুলো পড়ে সেই টপিক গুলোতে নিজের মত করে উপস্থাপন করে আর্টিকেল লিখেছি তাহলে কেন আমার কন্টেন্ট গুলোকে গুগল লো ভ্যালু কন্টেন্ট বলছে?
ওয়েবসাইট মালিকদের এই প্রশ্নের উত্তর হল, আপনি যখন আর্টিকেল গুলো পড়ে সেগুলোকে নিজের মত করে উপস্থাপন করছেন তখন আপনি সেখানে কোন অতিরিক্ত ভ্যালু প্রোভাইড করছেন কি?অবশ্যই করছেন না বলেই গুগল আপনার কন্টেন্টকে লো ভ্যালু কন্টেন্ট হিসাবে ধরে নিচ্ছে এবং ফলাফল হিসাবে আপনার অ্যাডসেন্স আবেদন রিজেক্ট করে দিচ্ছে।
আবার আপনি যদি এমন টপিকে আর্টিকেল লিখেন যেগুলো তেমন সার্চ হয়না আবার বিজ্ঞাপন দাতারা সেই টপিক গুলোতে বিজ্ঞাপন দেখাতে আগ্রহ দেখায় না তাহলেও আপনার ওয়েবসাইট অ্যাডসেন্সের জন্য আবেদন করলে লো ভ্যালু ইস্যু ধরে গুগল রিজেক্ট করে দেয়।
অর্থাৎ, আপনি যখন কন্টেন্ট লিখবেন তখন দুইটি বিষয় মাথায় রেখে আপনাকে কন্টেন্ট লিখতে হবেঃ
- আপনি যদি অন্য কোন আর্টিকেল পড়ে সেই আর্টিকেল নিজের মত করে আর্টিকেল লিখেন তাহলে সেই কী-ওয়ার্ডে যারা গুগলের প্রথম পেজে আছে তাঁদের থেকে অতিরিক্ত তথ্য আপনার আর্টিকেলে যোগ করা।এই অতিরিক্ত তথ্য যোগ করলে গুগল আপনার কন্টেন্টকে একটি ভ্যালুয়েবল কন্টেন্ট হিসাবে হিসাব করবে এবং আপনাকে প্রথম পেজে জায়গা দিবে।
- আর আপনি আর্টিকেল লেখার জন্য যখন কী-ওয়ার্ড নির্বাচন করবেন তখন অবশ্যই সেই কী-ওয়ার্ডের জন্য অল্প পরিমান হলেও সার্চ ভলিউম আছে কিনা সেটা দেখে নিতে হবে এবং বিজ্ঞাপন দাতারা এই কী-ওয়ার্ডের জন্য বিজ্ঞাপন দেখাতে চায় কিনা সেটা দেখে নিতে হবে।
উপরের দুইটি বিষয় মাথায় রেখে কন্টেন্ট লিখলে আশা করা যায় গুগল আপনার কন্টেন্টকে আর লো ভ্যালু ধরবে না।
এছারাও নিচের বিষয় গুলো আপনার সাইটে আছে কিনা চেক করতে হবে।আমি এখন আপনাদের সাথে নিচে যে বিষয় গুলো সম্পর্কে আলোচনা করব সেগুলোর কারনেও গুগল অ্যাডসেন্স আবেদন করলে গুগল লো ভ্যালু ধরে থাকে।
(১) সাইটে একই ধরনের টাইটেল ব্যবহার করা
আমাদের মাঝে অনেক ওয়েবসাইটের অথর আছেন যারা তাঁদের আর্টিকেলে প্রায় একই ধরনের টাইটেল ব্যবহার করে থাকেন।কিন্তু আপনি জানেন কি একই ধরনের টাইটেল ব্যবহার করলে গুগল সেই টাইটেল গুলোকে এআই (AI) জেনারেট হিসাবে ধরে এবং ফলাফল হিসাবে আপনার অ্যাডসেন্সের আবেদন লো ভ্যালু ইস্যু ধরে রিজেক্ট করে দেয়।
সুতরাং, আপনি আপনার আর্টিকেল লেখার জন্য জন্য যখন টাইটেল লিখবেন তখন অবশ্যই আপনার কী-ওয়ার্ড গুগলে সার্চ করে আপনার মাথা খাটিয়ে একটি উইনিক আর্টিকেল টাইটেল ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন।
(২) সব সময় সার্চ ইঞ্জিনের জন্য আর্টিকেল লেখা
আপনি যদি আর্টিকেল লেখার সময়ে কী-ওয়ার্ড ব্যবহারের উপরে বেশি জোর দেন তাহলে আপনার আর্টিকেলটি অভার- অপটিমাইজ হয়ে যায় ফলে গুগল মনে করে আপনি আপনার আর্টিকেল আপনার ওয়েবসাইটের ইউজারদের জন্য নয় বরং সার্চ ইঞ্জিনের জন্য লিখেছেন।
আগে যখন আর্টিকেল লেখা হত তখন আর্টিকেলের প্রথম পারাগ্রাফে মেইন কী-ওয়ার্ড ব্যবহার করা হত।আর্টিকেল মাঝে একবার এবং শেষে একবার ব্যবহার করা হত।এবং আর্টিকেলের মাঝে H2 তে একবার ব্যবহার করা হত।
কিন্তু গুগলের রিসেন্ট আপডেট অনুসারে আর্টিকেল লেখার সময় আপনার জোর করে কী-ওয়ার্ড পুশ করানোর কোন দরকার নাই।বরং আপনি যখন লিখবেন তখন সেটাকে কী-ওয়ার্ড হিসাবে না ধরে একটি টপিক হিসাবে ধরে সেখানে কি বিষয়ে আলোচনা করতে হবে সেটার একটা রুপরেখা তৈরি করে নিয়ে লেখা শুরু করে দিবেন এবং ঐ টপিকের আন্ডারে যা কিছু কাভার করা যাবে সব কিছু কাভার করে দিবেন।পুরো টপিক শেষ করলে দেখবেন গুগল আপনার টপিক থেকে নিজে থেকেই আপনার আর্টিকেলের কী-ওয়ার্ড পিক করে নিয়েছে।
(৩) আপনি কি নিয়মিত আর্টিকেল পাবলিশ করেন?
আপনার যদি একটি দোকান থাকে তাহলে সেই দোকান অবশ্যই আপনি প্রতিদিন খুলবেন।কারণ আপনিও জানেন যে নিয়মিত দোকান না খুললে দোকানের সব ক্রেতা অন্য কোন দোকানে চলে যাবে।ঠিক একই ভাবে আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নতুন কন্টেন্ট পাব্লিশ না করেন তাহলে আপনার ওয়েবসাইটের ভিসিটর গুলো অন্য কোন ওয়েবসাইটে চলে যায়।
আবার আপনার ওয়েবসাইটে হয়তবা আপনি ভালো মানের কিছু আর্টিকেল পাবলিশ করেছেন সেগুলো পড়ে যাদের ভালো লেগেছে তাঁরাও আপনার ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিসিট করে ভালো কন্টেন্ট পাওয়ার আশায়।কিন্তু যখন এসে দেখে আপনি কোন নতুন আর্টিকেল পাবলিশ করেননি তখন তাঁরা আপনার ওয়েবসাইট থেকে দ্রুত বের হয়ে যায়।আর এই দ্রুত বের হয়ে যাওয়ার কারনে আপনার সাইটের বাউন্স রেট বেড়ে যায় এবং গুগল মনে করে আপনার কন্টেন্ট গুলো আপনার ব্যবহারকারীদের কোন ভ্যালু প্রোভাইড করছে না বিধায় তাঁরা ওয়েবসাইটে এসে খুব অল্প সময় থেকে বের হয়ে জাচ্ছে।আর এর ফলাফল হিসাবে আপনার অ্যাডসেন্সের আবেদনটি রিজেক্ট করে দেওয়া হচ্ছে।
(৪) আপনার আর্টিকেলের জন্য সঠিক কী-ওয়ার্ড সিলেক্ট না করা
আপনি আপনার সাইটের জন্য আর্টিকেল লেখার জন্য যখন কী-ওয়ার্ড সিলেক্ট করবেন তখন অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে এমন কী-ওয়ার্ড নেওয়ার যেগুলোর অল্প পরিমান হলেও সার্চ ভিসিটর আছে এবং আপনি ভালভাবে আর্টিকেল লিখলেই গুগলে র্যাঙ্ক করতে পারবেন এবং একই সাথে এই কী-ওয়ার্ড গুলোতে বিজ্ঞাপন দাতারা বিজ্ঞাপন দিতে আগ্রহী।আপনি যদি এই তিনটি বিষয় মাথায় রেখে আপনার আর্টিকেল লেখার জন্য কী-ওয়ার্ড নির্বাচন করেন তাহলে আপনি আশা করতে পারেন যে অন্তত গুগল আপনার অ্যাডসেন্স আবেদনটি কন্টেন্ট সমস্যার জন্য রিজেক্ট করবে না।
(৫) কত ওয়ার্ডের পোস্ট পাবলিশ করছেন?
অনেকেই বলেন যে অ্যাডসেন্স আপ্রুভাল পাওয়ার জন্য কমপক্ষে ৫০০ প্লাস ওয়ার্ডের আর্টিকেল লিখতে হয়।কিন্তু এই ব্যাপারে আমার মতামত হল একটি আর্টিকেল স্বয়ং-সম্পূর্ণ ভাবে উপস্থাপন করার জন্য ঠিক যত ওয়ার্ড লেখা প্রয়োজন আপনার ঠিক তত ওয়ার্ডেরই আর্টিকেল লেখা উচিত।এই ক্ষেত্রে আপনার একটি কোয়ালিটি সম্পূর্ণ আর্টিকেল লেখার জন্য যদি দুই হাজার ওয়ার্ড লেখার প্রয়োজন হয় তাহলে আপনাকে দুই হাজার ওয়ার্ডই লিখতে হবে।আবার যদি কোন আর্টিকেল ৩০০-৪০০ ওয়ার্ডেই সম্পূর্ণ হয়ে যায় তাহলে সেটা সেখানেই শেষ করতে হবে।মূল কথা হল আপনি কত ওয়ার্ডের আর্টিকেল লিখছেন সেটা কোন ব্যপারা না।বরং আপনার আর্টিকেল কোয়ালিটি সম্পূর্ণ কিনা সেদিকে নজর দিতে হবে।
(৬) আপনার সাইটে পর্যাপ্ত পরিমান আর্টিকেল আছে কি?
এক্সপার্টরা বলে থাকেন যে কমপক্ষে তিন-চারটি ক্যাটেগরিতে সর্বমোট ৩০-৪০ টি কোয়ালিটি সম্পূর্ণ আর্টিকেল পাবলিশ করার পর অ্যাডসেন্সের জন্য আবেদন করতে।তবে আমি অনেকেই দেখেছি ১৫-২০ টা আর্টিকেলের ওয়েবসাইটেও অ্যাডসেন্স আপ্রুভ পেতে।তবে আমার মতামত হল অ্যাডসেন্স পাওয়ার পরে আপনাকে যেহেতু সাইটে আর্টিকেল পাবলিশ করতেই হবে সেহেতু আপনার উচিত হবে আপনার সাইটে ৩০-৪০ টি ভালো মানের আর্টিকেল পাবলিশ করার পর গুগল অ্যাডসেন্সের জন্য আবেদন করা।বেশি আর্টিকেল পাবলিশ করার পরে অ্যাডসেন্স আবেদন করলে আপনার আবেদনটি প্রথমবারেই আপ্রুভ হওয়ার সম্ভবনা বেশি।
(৭) আর্টিকেলে ছবি এবং ভিডিও ব্যবহার করা
আপনি যখন আপনার ওয়েবসাইটের জন্য আর্টিকেল লিখবেন তখন আপনার আর্টিকেলে অবশ্যই আপনার আর্টিকেলের সাথে রিলেটেড ছবি,ভিডিও অথবা ইনফোগ্রাফ ব্যবহার করুন।রিলেটেড ছবি,ভিডিও অথবা ইনফোগ্রাফ ব্যবহার করলে আপনার কন্টেন্ট পড়ে আপনার সাইটের ইউজাররা সহজে আপনার কন্টেন্ট বুঝতে পারে।
(৮) ওয়েবসাইটের পোস্ট গুলো সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইটে শেয়ার করুন
আপনার সাইটে আর্টিকেল পাবলিশ করার পর সেই আর্টিকেল গুলো বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট গুলোতে পাবলিশ করুন।এতে করে আপনার দুইটি উপকার হবে।
সুবিধা দুইটি হলঃ
- আপনার ওয়েবসাইটে আপনি এখান থেকে অল্প পরিমান হলেও ভিসিটর পাবেন এবং
- আপনার পাবলিশ করা পোস্ট দ্রুত সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স হয়ে যাবে।
আমার শেষ কথা
আপনার ওয়েবসাইট যদি লো ভ্যালু কন্টেন্টের কারনে রিজেক্ট হয়ে থাকে তাহলে উপরের পরামর্শ গুলো সঠিকভাবে আপনার ওয়েবসাইটে প্রয়োগ করলে আমি আশা করি যে আপনার ওয়েবসাইটের লো ভ্যালু কন্টেন্টে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এবং আপনি আপনার ওয়েবসাইটে গুগল অ্যাডসেন্স আপ্রুভ পেয়ে যাবেন।
সতর্কতাঃ এই আর্টিকেল শুধুমাত্র বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা হয়েছে এবং আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার অ্যাডসেন্স আবেদনের লো ভ্যালু কন্টেন্ট সমস্যার সমাধান করার জন্য সহায়ক হতে পারে।এই আর্টিকেল কোন ভাবেই আপনার ওয়েবসাইটে অ্যাডসেন্স আপ্রুভালের গ্যারান্টি প্রদান করেনা।