আপনি যদি ব্লগিং নিয়ে কাজ করেন তাহলে আপনি অবশ্যই জানেন যে আপনার ওয়েবসাইটে ভিসিটর নিয়ে আসার জন্য এসইও কতটা গুরুত্বপূর্ণ।কোন ওয়েবসাইট যদি সফলতার শীর্ষে পৌঁছাতে চায় তাহলে অবশ্যই সেই ওয়েবসাইটের এসইও সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম শুরু থেকেই সঠিকভাবে করা জরুরী।
আমি আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের সাথে এমন পাঁচটি কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করব যেগুলোর মাধ্যমে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের আর্টিকেল খুব সহজেই র্যানক করাতে পারবেন।আমি কী-ওয়ার্ড রিসার্চ থেকে শুরু করে সাইট ইউজার এক্সপেরিয়েন্স পর্যন্ত মত পাঁচটি বিষয়ে এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করব।
মূল আর্টিকেল শুরু করার আগে আমি এসইও কি এবং কেন আমাদের ওয়েবসাইটের জন্য এসইও গুরুত্বপূর্ণ সেই সম্পর্কে আপনাকে একটা সংক্ষিপ্ত ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করব।
এসইও কি?
এসইও এর পূর্ণ রূপ হল সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।অর্থাৎ, কোন ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের জন্য উপযুক্ত করে তোলার জন্য যে কাজ গুলো আমাদের করতে হয় তাকেই এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বলা হয়।
কেন আমাদের ওয়েবসাইটের জন্য এসইও গুরুত্বপূর্ণ?
মনে করেন আপনি একটা আইল্যান্ড আবিস্কার করলেন এবংস এই আইল্যান্ড দেখতে পৃথিবীতে থাকা অন্যান্য আইল্যান্ড এর চাইতে অনেক বেশী সুন্দর কিন্তু সেখানে কোন মানুষ নাই।কিন্তু পৃথিবীর আরেক প্রান্তে একটা আইল্যান্ড আছে যেটা আপনার আবিস্কার করা আইল্যান্ড এর চাইতে অনেক কম সুন্দর কিন্তু সেখানে অনেক মানুষ বেড়াতে আসে।
এখন যদি আপনাকেই আমি প্রশ্ন করি যে আপনার আবিস্কার করা আইল্যান্ডের ভ্যালু বেশী নাকি যে আইল্যান্ডটি আপনার আবিস্কার করা আইল্যান্ডের চাইতে অনেক কম সুন্দর এবং মানুষ বেড়াতে আসে সেটার ভ্যালু বেশী?আপনি অবশ্যই যে আইল্যান্ডটি কম সুন্দর সেটার ভ্যালু বেশী এটাই উত্তর দিবেন।
এখন প্রশ্ন হল কেন আপনার আবিস্কার করা আইল্যান্ডটির ভ্যালু নেই?ভ্যালু না থাকার করনটি খুবই সিম্পল!কারন আপনি যে আইল্যান্ডটি আবিস্কার করেছেন সেটা সম্পর্কে শুধু আপনি জানেন আর কেউ জানেনা বিধায় এটার ভ্যালু নেই।অপরদিকে যেটা সম্পর্কে মানুষ জানে সেটার ভ্যালু অনেক বেশী।
এখন যদি আপনার আবিস্কার করা আইল্যান্ডের ভ্যালু বাড়াতে চান তাহলে আপনাকে কি করতে হবে?যদি আপনার আবিস্কার করা আইল্যান্ডের ভ্যালু বাড়াতে চান তাহলে আপনাকে আপনার আইল্যান্ড সম্পর্কে প্রচার করা শুরু করতে হবে এবং যখন সবাই এটা সম্পর্কে জানবে তখন সবাই আপনার আবিস্কার করা আইল্যান্ডে বেড়াতে আসবে এবং ধীরে ধীরে এই আইল্যান্ডের ভ্যালু বেড়ে যাবে।
ঠিক একইভাবে আমরা যখন কোন নতুন ওয়েবসাইট তৈরি করি তখন আমাদের ওয়েবসাইট সম্পর্কে কেউ জানে না বিধায় আমাদের ওয়েবসাইটে কোন ট্রাফিক আসে না।আর এই ট্রাফিক না আসার কারন হল আমাদের ওয়েবসাইট সম্পর্কে মানুষ জানে না।এখন আইল্যান্ডের ক্ষেত্রে আপনি হয়ত কোন একটি দেশ বা শহরে মাইক ব্যবহার করে প্রচার করেছেন কিন্তু আপনার ওয়েবসাইটের টার্গেট লোকেশন যেহেতু সারা প্রথিবি সেহেতু এখানে আপনি চাইলেও মাইক দিয়ে প্রচার করতে পারবেন না।আবার সবার কাছে যেয়ে যেয়ে বলে আসা সম্ভব না।তাহলে উপায় কি?উপায় একটাই সেটা হল আপনার ওয়েবসাইটের এসইও করা।
যখন আপনি আপনার ওয়েবসাইটের এসইও সঠিক ভাবে করবেন তখন আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট রিলেটেড কোন কী-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করলে আপনার ওয়েবসাইট সেই সার্চকারীর সামনে আসলে তখন সে আপনার ওয়েবসাইট ভিসিট করবে ফলে ধীরে ধীরে আপনার ওয়েবসাইটের ভ্যালু সার্চ ইঞ্জিন এবং মানুষের কাছে বাড়তে থাকবে এবং আপনার ওয়েবসাইট তৈরির উদ্দেশ্য সফল হবে।সুতরাং, আমরা বলতে পারি যে আমাদের ওয়েবসাইট আমরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করি আমরা যদি সেই নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সফলতা অর্জন করতে চাই তাহলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটের জন্য সঠিকভাবে এসইও (SEO) সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন করতে হবে এবং এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বাড়ানোর জন্য সেরা ৫ টি এসইও কৌশল গুলো কি কি?
আমি এখন আপনাদের সাথে ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বাড়ানোর জন্য সেরা ৫ টি এসইও কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।বলতে পারেন আমি আপনাদেরকে কৌশল গুলো সম্পর্কে ধারনা দিব যাতে করে আপনারা এই বিষয়গুলো নিয়ে ইন্টারনেটে সার্চ করে আরও বেশী বেশী জানতে পারেন।
ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বাড়ানোর জন্য সেরা ৫ টি এসইও কৌশল গুলো হল-
- People Also Ask সেকশন থেকে কী-ওয়ার্ড নির্বাচন করা
- আপনি যে বিষয়ে কাজ করতে চান সেটার প্রতিযোগিতা সম্পর্কে পড়াশোনা করা
- ইন্টারনাল লিংক এবং ব্যাকলিংকের প্রতি নজর দেওয়া
- পুরাতন কন্টেন্ট গুলো আপডেট করা
- কোর ওয়েব ভাইটাল মেইনটেইন করা
ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বাড়ানোর জন্য যে পাঁচটি বিষয়ে নজর রেখে কাজ করলে খুব সহজে সফলতা পাওয়া যাবে আমি সেই পাঁচটি বিষয় এখানে উল্লেখ করেছি।এখন আমি আপনাদের সাথে আর্টিকেলের নিচের অংশে উপরের পাঁচটি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
(১) People Also Ask সেকশন থেকে কী-ওয়ার্ড নির্বাচন করা
আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইট অথবা আপনার ওয়েবসাইটের আর্টিকেল (কন্টেন্ট) লেখার জন্য কী-ওয়ার্ড নির্বাচন করার সময়ে সঠিক কী-ওয়ার্ড নির্বাচন করতে পারেন তাহলে সেটা আপনার ওয়েবসাইটের এসইও এর ৫০% কাজ সম্পন্ন করে দেয় বলেই এক্সপার্টরা বলে থাকেন।
আমরা যখন গুগলে কিছু লিখে সার্চ করি তখন অবশ্যই আপনি সার্চ রেজাল্টে People also ask নামের একটা সেকশন দেখে থাকবেন।আপনি যদি এখান থেকে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য উপযুক্ত কী-ওয়ার্ড নির্বাচন করতে পারেন তাহলে আপনি এই কী-ওয়ার্ড দিয়ে যে আর্টিকেল লিখবেন সেটা খুব দ্রুত র্যাঙ্ক করে।

আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আমি আপনাকে ১০০% নিশ্চয়তা দিতে পারি যে আপনি এখান থেকে কোন কী-ওয়ার্ড নিয়ে যদি খুব ভালোভাবে একটা আর্টিকেল লিখে পাবলিশ করেন সেটা অবশ্যই রাঙ্ক করবে।সুতরাং,আজকে থেকে গুগলের সার্চ রেজাল্টের People also ask থেকে কী-ওয়ার্ড নির্বাচন করার প্রতি ভালোভাবে নজর দিতে হবে।
(২) আপনি যে বিষয়ে কাজ করতে চান সেটার প্রতিযোগিতা সম্পর্কে পড়াশোনা করা
আপনি যে বিষয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান সেই বিষয়ে ইন্টারনেটে কেমন প্রতিযোগিতা আপনাকে সেই বিষয়ে ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হবে।কারন ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ করে সফল হতে হলে অবশ্যই এমন বিষয় নির্বাচন করা যাবে না যেখানে অনেক বেশী প্রতিযোগিতা আছে।
এখন প্রশ্ন হল কিভাবে বুঝবেন আপনি যে বিষয়ে কাজ করতে চাচ্ছেন সেই বিষয়ে কেমন প্রতিযোগিতা আছে।এটা বুঝার জন্য আপনাকে কিছু পেইড টুলসের সাহায্য নিতে হবে।যেমনঃ Semrush এবং Ahrefs এসইও টুলসের সাহায্য নিয়ে আপনি প্রতিযোগিতা এবং কী-ওয়ার্ডস রিসার্চ করতে পারবেন।
উপরের টুলস গুলোর সাহায্য নিয়ে খুঁজতে খুঁজতে যখন এমন কোন নিশ পেয়ে যাবেন যেটার সার্চ ভলিউম অনেক বেশী কিছু প্রতিযোগিতা তুলনামূলকভাবে অনেক কম তখন সেই বিষয়ের জন্য সহজ কী-ওয়ার্ড খোঁজা শুরু করতে হবে এবং এই টুলস দুইটির পাশাপাশি গুগলের People also ask সেকশনের সাহায্য নিতে হবে।
(৩) ইন্টারনাল লিংক এবং ব্যাকলিংকের প্রতি নজর দেওয়া
ইন্টারনাল লিংক আপনার ওয়েবসাইটের জন্য অনেক হেল্পফুল হিসাবে কাজ করে।কারন এই ইন্টারনাল লিংক আপনার ওয়েবসাইটের ভিসিটরদের বলে দেয় যে তুমি এই পেজে গেলে তুমি বর্তমানে যে আর্টিকেল পড়ছ সেই সম্পর্কিত আরও একটি ভালো আর্টিকেল পড়তে পারবে।
সুতরাং, আপনি যখন আপনার ওয়েবসাইটে ইন্টারনাল লিংক করবেন তখন আপনাকে অনেক বেশী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।যেখানে খুশি সেখানে (পড়ুন রিলেটেড নয় এমন কোন পেজে) ইন্টারনাল লিংক করা যাবে না।যদি আপনি রিলেটেড নয় এমন কোন পেজে ইন্টারনাল লিংক করেন তাহলে ভিসিটরের পাশাপাশি সার্চ ইঞ্জিন গুলোও আপনার ওয়েবসাইটকে খারাপ ভাবে দেখা শুরু করবে।
আবার একই ভাবে আপনি যখন আপনার ওয়েবসাইটের জন্য ব্যাকলিংক করবেন তখনও আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে।একটা সময় ছিল যে সে ওয়েবসাইট থেকে ব্যাকলিংক নিলেই চলত এমনকি যার যত বেশী ব্যাকলিংক সার্চ ইঞ্জিন গুলো তাকে সার্চ রাঙ্কে সামনের দিকে রেখে দিত।কিন্তু বর্তমানে গুগল বলছে বেশী স্প্যাম লিংকের চাইলে অল্প সংখ্যক কোয়ালিটি ব্যাকলিংক যেকোনো ওয়েবসাইটের জন্য বেশী কাজ করে।
সুতরাং, হাজার হাজার আজে-বাজে ব্যাকলিংক না করে অল্প সংখ্যক কোয়ালিটি ব্যাকলিংক করার দিকে নজর দিতে হবে।কোয়ালিটি ব্যাকলিংক কম হবার কারনে আপনি হয়ত ফলাফল একটু দেরিতে পাবেন কিন্তু আপনার রেজাল্ট হবে দীর্ঘ মেয়াদী।
(৪) পুরাতন কন্টেন্ট গুলো আপডেট করা
আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছে যারা ওয়েবসাইটে একবার কন্টেন্ট পাবলিশ করে আর খোঁজ রাখেন না।কিন্তু এমনটা করা কখনো উচিত নয়।আর্টিকেল ইনডেক্স হবার পর সেটা একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর চেক করতে হবে।যদি কোন আপডেট করার প্রয়োজন হয় সেটা করতে হবে।
এখন প্রশ্ন হল কি আপডেট করবেন?আর্টিকেল ইনডেক্স হবার পর থেকে সেটা বিভিন্ন কী-ওয়ার্ডে ইম্প্রেসশন পাওয়া শুরু করে যার মধ্য এমন কিছু কী-ওয়ার্ড থাকে যা আমদের মাথায় আসে না এমনকি এই কী-ওয়ার্ডস গুলো পেইড কী-ওয়ার্ড টুলস গুলোও আপনাকে দিতে পারেনা।এই কী-ওয়ার্ড গুলো আপনাকে গুগল সার্চ কনসোল টুলস থেকে খুঁজে বেড়ে করে নিয়ে সেই অনুসারে আপনার কন্টেন্ট আপডেট করে দিতে হবে।
(৫) কোর ওয়েব ভাইটাল মেইনটেইন করা
কোর ওয়েব ভাইটাল বলতে আপনার ওয়েবসাইটের স্পিড এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি কিনা সেটা ঠিক রাখা বুঝানো হয়ে থাকে।বর্তমানে কোর ওয়েব ভাইটাল সরাসরি গুগল র্যাঙ্কিং ফ্যাক্টর গুলোর একটি।অর্থাৎ,আপনার কোর ওয়েব ভাইটাল স্কোর সরাসরি আপনার ওয়েবসাইটের র্যাঙ্কিংয়ে প্রভাব ফেলবে।
কোর ওয়েব ভাইটাল স্কোর ঠিক রাখার জন্য যেকোনো লাইট ওয়েট থিমস ব্যবহার করতে হবে এবং প্রয়োজন নেই এমন প্লাগইন্স সাইট থেকে রিমুভ করে দিতে হবে।এছারাও আপনার ওয়েবসাইটে থাকা ছবি গুলোর ফরম্যাট এবং সাইজ ঠিক রাখতে হবে এবং ওয়েবসাইটের জন্য থিম নির্বাচন করার সময়ে আমাদের নিশ্চিত হতে হবে যে আমরা আমাদের ওয়েবসাইটের জন্য যে থিমস ব্যবহার করতে চাচ্ছি সেটা মোবাইল ফ্রেন্ডলি থিম।
আমার শেষ কথা
আমি আপনাদের সাথে আজকের এই আর্টিকেলে ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বাড়ানোর জন্য সেরা ৫ টি এসইও কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করলাম এই কৌশল গুলো সরাসরি আমি আমার প্রায় প্রতিটা নিশ ওয়েবসাইটে প্রয়োগ করে থাকি এবং আমি আশা করি আপনি যদি এই পাঁচটি কৌশল আপনার ওয়েবসাইটে প্রয়োগ করেন সেটা আপনার ওয়েবসাইটের অর্গানিক ভিসিটর বাড়াতে বেশ সাহায্য করবে।