জাপানের সঙ্গে বিগ-বি প্রকল্প নিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে আগামী ১৫ মে টোকিওতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ষষ্ঠ ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি)। এ উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে উভয় দেশের পররাষ্ট্র সচিবেরা নিজ নিজ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে থাকবেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন এবং জাপানের পক্ষ থেকে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র উপমন্ত্রী।

এফওসি-কে সামনে রেখে গতকাল ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্র সচিব নিজেই। এতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে টোকিওর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বিভিন্ন দিক ও কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়।

আসন্ন বৈঠকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির উপর গুরুত্বারোপ করবে। অন্যদিকে, জাপানের পক্ষ থেকে মাতারবাড়ী প্রকল্প, সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এছাড়া ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল, কৃষি, অবকাঠামোগত সহযোগিতা এবং রোহিঙ্গা সংকটসহ বেশ কিছু আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যু আলোচনায় স্থান পাবে।

বাংলাদেশ জাপানের প্রস্তাবিত বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ (বিগ-বি) প্রকল্পে যুক্ত হয়ে তা এগিয়ে নিতে আগ্রহী। ২০১৪ সালে জাপান এ প্রকল্প হাতে নিলেও ২০২৩ সালে এর আওতা বাড়িয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার শিল্পায়ন কেন্দ্রিক এই প্রকল্পকে তিনটি স্তম্ভে ভাগ করেছে জাপান: শিল্প ও বাণিজ্য, জ্বালানি, এবং পরিবহন ব্যবস্থা।

যদিও সাম্প্রতিক সময়ে দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক কিছুটা জটিল, তবুও বাংলাদেশ চায় না বিগ-বি প্রকল্প থেমে যাক। বাংলাদেশ এই প্রকল্পকে এগিয়ে নিতে আগ্রহী এবং ভবিষ্যতে ভারতের অংশগ্রহণের জন্য দরজা খোলা রাখতে চায়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আসন্ন এফওসি-তে এই বাস্তবতা তুলে ধরা হবে।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা দক্ষিণ এশিয়ার সমৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে মিলিতভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির সফল বাস্তবায়নে বিগ-বি সহায়ক হবে বলে মত দিয়েছেন তিনি। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র বিগ-বি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত, যা বাংলাদেশের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হতে সহায়তা করবে।

জাপানের সদ্যবিদায়ী রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বলেছেন, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অবাধ ও মুক্ত পরিবেশ বজায় রাখতে বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে কানেক্টিভিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কানেক্টিভিটি উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বোঝাপড়া এবং আস্থা প্রয়োজন।

গত বছরের পঞ্চম এফওসি-তে বাংলাদেশ ও জাপান প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদারে একমত হয়েছিল। এবারের বৈঠকেও মেরিটাইম সিকিউরিটি, সামরিক সহযোগিতা ও প্রতিরক্ষা খাতের অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

চীনকে ঘিরে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাড়তি উত্তেজনার মধ্যে পশ্চিমা শক্তিগুলো নিজেদের বলয় তৈরির চেষ্টা করছে। জাপানের বিগ-বি প্রকল্পও এই উদ্যোগের অংশ। বাংলাদেশের এক কূটনীতিকের মতে, চীন সফরের সময় আঞ্চলিক কানেক্টিভিটির প্রসঙ্গ তোলায় ভারতের দৃষ্টিতে কিছুটা অনীহা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বিগ-বি-তে ভারতের সম্পৃক্ততা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও বাংলাদেশের অবস্থান সুস্পষ্ট—প্রকল্প থামানো নয়, বরং এগিয়ে নেওয়া।

বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে আসন্ন ষষ্ঠ ফরেন অফিস কনসালটেশন বৈঠকটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিগ-বি প্রকল্পসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক কৌশলগত অবস্থান নিয়েই দুই দেশের আলোচনা হতে যাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে এই বৈঠক দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

তথ্যসূত্র: দৈনিক সমকাল