গুজরাটের সুরাটে চলমান ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ সনাক্ত অভিযানের প্রথম দিনেই ঘটে গেল এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। গভীর রাতে পুলিশের আচরণ ও একটি পরিবারের তিন সদস্যের হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে মানবাধিকার ও নাগরিক সুরক্ষা নিয়ে।
রাত প্রায় ৩টা। হঠাৎ করেই সুলতান মল্লিকের বাসায় পুলিশ হানা দেয়। পরিবারের সদস্যদের ঘুম ভেঙে যায় পুলিশের জোরে কড়া নাড়া ও হুমকিতে। পুলিশ দাবি করে, তাদের আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড যাচাই করতে হবে। এরপরই পুলিশ সুলতান মল্লিক এবং তার দুই কিশোর ভাগ্নেকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে ধরে নিয়ে যায়।
সুলতানের স্ত্রী শাহিনা বিবি জানান, “পুলিশ বলেছিল তারা কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেড়ে দেবে, কিন্তু এখন তিন দিন কেটে গেছে, কেউ ফেরেনি।” শাহিনার কণ্ঠে অসহায়ত্ব স্পষ্ট, “আমরা পাসপোর্ট এবং ১৯৯৩ সালের জমির দলিল জমা দিয়েছি, যেটা প্রমাণ করে সুলতান পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুরের স্থায়ী বাসিন্দা। তবুও কোনো সাড়া নেই।”
সুলতান মল্লিক বিগত ছয় বছর ধরে সুরাটে এমব্রয়ডারির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তার পরিবারের কথায়, তারা সুরাটে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলেন, কোনোদিন অবৈধভাবে কিছু করেননি। এই অবস্থায় পুলিশি আচরণে তারা আতঙ্কিত।
এই ঘটনার পর গুজরাটজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে যারা মুসলিম এবং বাংলাভাষী, তাদের মধ্যে ভয় বাড়ছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের সহায়তায় কাজ করে এমন একটি সংগঠন “পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ” ইতিমধ্যে একটি হেল্পলাইন চালু করেছে। সংগঠনটির রাজ্য সম্পাদক আসিফ ফারুক জানান, “মাত্র দু’দিনেই আমাদের হেল্পলাইনে ১০০টির বেশি অভিযোগ এসেছে।”
তিনি বলেন, “২০১৪ সাল থেকেই এই ধরপাকড় চলছে। পেহলগাম হত্যাকাণ্ডের পর থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।” তার প্রশ্ন, “বাংলাভাষী ও মুসলমান হলেই কি ভারতের যে কোনো রাজ্যে কাজ বা ব্যবসা করার অধিকার নেই?”
এরই মধ্যে আরও অভিযোগ আসছে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে। ফারজানা নামের এক নারী বিবিসির সঙ্গে কথা বলে জানান, তার হাতে মেহেদি ও একটি বিয়ের কার্ড থেকে স্পষ্ট যে তিনি গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের মুসলিম, বাংলাদেশি নন। তবুও তাকেও সন্দেহের চোখে দেখা হয়েছে।
আলমারা পাঠান নামের আরেক নারী জানান, তিনি গত ২৩ বছর ধরে আহমেদাবাদে বাস করেন। তার ছেলে রিয়াজ রাতে শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিল, সেখান থেকেই পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে যায়।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে অনেকে বলছেন, ‘অবৈধ অভিবাসী’ সনাক্ত করার নামে নির্দিষ্ট জাতি, ভাষা ও ধর্মের মানুষের ওপর নজরদারি ও হয়রানি করা হচ্ছে। যেখানে সুলতানের মতো নাগরিকদের বৈধ পাসপোর্ট ও জমির দলিল থাকা সত্ত্বেও নিখোঁজ থাকা প্রশ্ন তোলে আইনের কার্যকারিতা ও পুলিশের উদ্দেশ্য নিয়ে।
এই ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোর মাঝে চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। তারা চায় তাদের প্রিয়জনরা দ্রুত ফিরে আসুক এবং এমন আচরণ থেকে সাধারণ মানুষ রক্ষা পাক।
তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ