সীমান্তে গোলাগুলি, ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা অব্যাহত

কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে টানা সপ্তম রাতেও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার গভীর রাতে কুপওয়ারা, উরি ও আখনূর সেক্টরে এই গোলাগুলি হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি অনুযায়ী, পাকিস্তানি সেনারা হালকা অস্ত্র দিয়ে গুলি চালায় এবং ভারত পাল্টা যোগ্য জবাব দেয়। তবে এ ঘটনায় এখনও কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে একটি সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস (ডিজিএমও) সম্প্রতি আলোচনায় বসেন। আলোচনায় ভারত পাকিস্তানকে বিনা উসকানিতে গুলি চালানো থেকে বিরত থাকার জন্য কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছে।

বর্তমান সংঘাত ২০০৩ সালে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ২০২১ সালে উভয় দেশ ৭৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার লক্ষ্যে চুক্তি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক গোলাগুলির ধারাবাহিকতা সেই চুক্তির ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।

এদিকে, আন্তর্জাতিক মহল থেকেও চলমান উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি স্থাপনে আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি নয়াদিল্লির সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপে ওয়াশিংটনের সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেনাবাহিনীকে প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সরকারি সূত্র।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বর্তমানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন। তিনি ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং যেকোনো ধরনের সামরিক সংঘাত এড়িয়ে চলার আহ্বান জানান। প্রয়োজনে ‘সৌহার্দপূর্ণ মধ্যস্থতা’র প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি।

জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে আলাপকালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ভারতের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ ও সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানোর অনুরোধ করেন। একইসঙ্গে ভারতের একতরফাভাবে সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, “সিন্ধুর পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করাকে পাকিস্তান কোনোভাবেই মেনে নেবে না।”

কাশ্মীর সীমান্তে ক্রমাগত সংঘর্ষ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও দুই দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনার বিস্তার উদ্বেগের বিষয়। শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে কূটনৈতিক চাপ ও সংলাপই হতে পারে ভবিষ্যতের মূল চাবিকাঠি।

তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ