একাকীত্ব এড়াতে যেসব অভ্যাস পরিবর্তন জরুরি!

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একাকীত্বও যেন এক অবধারিত ছায়ার মতো জীবনে এসে পড়ে—এমনই একটি প্রচলিত ধারণা। কিন্তু এখন সময় এসেছে এই ধারণা বদলে ফেলার। গবেষণা বলছে, ৫০ বছরের বেশি বয়সী প্রতি তিন জনে একজন মানুষ মাঝেমধ্যে একাকীত্ব অনুভব করেন। তবে আশার কথা হলো, এই একাকীত্ব অনেকটাই আমাদের দৈনন্দিন কিছু ছোট ছোট অভ্যাসের কারণে জন্ম নেয় এবং সেগুলোই আমাদের দীর্ঘমেয়াদি একাকীত্বে ঠেলে দেয়।

১) “পরে করব” বললে সম্পর্ক হারিয়ে যায়

প্রায়ই “সবকাজেই পরে করা যাবে” এমন অভ্যাস মানুষকে আপনার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। যারা বারবার এমন কথা বলেন, একসময় দেখবেন—তাদের ডাকাও বন্ধ হয়ে গেছে। তাই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে স্পষ্টভাবে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলাই ভালো। সময় না মিললে বিকল্প দিন বা প্রস্তাব দিন।

২) পড়ে যাওয়ার ভয়ে ঘরে বসে থাকা

বয়স বাড়লে পড়ে যাওয়ার ভয় অনেকের মধ্যে কাজ করে। তবে এই ভয়ই যদি বাইরে বের হওয়ার সাহস কেড়ে নেয়, তাহলে একাকীত্ব বাড়ে। তাই সেফটি গিয়ার ব্যবহার করুন, ভারসাম্য অনুশীলন করুন। আত্মবিশ্বাস বাড়লেই নিজেকে সামাজিকভাবে জড়ানো সহজ হবে।

৩) প্রযুক্তিকে এড়িয়ে চলা

বর্তমান যুগে প্রযুক্তি একাকীত্ব দূর করার অন্যতম হাতিয়ার। ভিডিও কল, গ্রুপ চ্যাট, অনলাইন ক্লাস—সবই আজ হাতের মুঠোয়। তাই ধাপে ধাপে শিখে নিন এসব ব্যবহার। প্রয়োজনে কোনো বিনামূল্যের প্রশিক্ষণ ক্লাসে যোগ দিন।

৪) সারা দিন চুপচাপ বসে থাকা

অকর্মণ্যতা কেবল শরীর নয়, মনকেও দুর্বল করে তোলে। প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম আপনাকে সজীব রাখবে এবং মানসিকভাবেও শক্তিশালী করে তুলবে।

৫) শুধু পরিবারের উপর নির্ভর করা

সবসময় পরিবারের সদস্যরা সময় দিতে পারবেন না। তাই কেবল তাদের উপর নির্ভর না করে প্রতিবেশী, বন্ধু, হবি-গ্রুপ—এদের নিয়েই একটি ‘মন থেকে তৈরি পরিবার’ গড়ে তুলুন। এতে সম্পর্কের পরিধি বাড়বে এবং একাকীত্ব কমে আসবে।

৬) পুরনো শখ ভুলে যাওয়া

শখ মানুষের আত্মাকে জীবিত রাখে। বয়স যতই হোক না কেন, পুরনো শখগুলোতে ফিরে যান। প্রয়োজনে সেগুলো একটু বদলে নিয়ে আবার শুরু করুন। শখের মাধ্যমে নতুন মানুষও পরিচিত হবে।

৭) সারাদিন খারাপ খবর দেখা

দিনভর নেতিবাচক সংবাদে ডুবে থাকা মানসিক অবসাদ বাড়ায়। তাই খবর দেখার সময় নির্ধারণ করুন। পাশাপাশি কিছু ভালোবাসার গান, হাসির অনুষ্ঠান বা প্রিয় সিরিজ দেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৮) পোষা প্রাণীকে ঝামেলা ভাবা

একটি পোষা প্রাণীর যত্ন নেওয়া মানে একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি হওয়া। এটি এক ধরনের সঙ্গও দেয়। আপনি যদি পোষা প্রাণী রাখতে না পারেন, তবে বন্ধুর পোষা প্রাণী সামলে দিন কিংবা কোনো পশু আশ্রয়কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবক হয়ে যান।

৯) মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন না নেওয়া

নিজের ভেতরের দুঃখ বা একাকীত্ব যদি চেপে রাখা হয়, তাহলে তা সম্পর্কেও প্রভাব ফেলে। কাউন্সেলর বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে কথা বলুন। এটি দুর্বলতার নয়, বরং আত্মসম্মানের পরিচয়।

একাকীত্ব হঠাৎ করে আসে না। এটি ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে কিছু ভুল অভ্যাসের মাধ্যমে। আর এই অভ্যাসগুলো ঠিকভাবে পরিবর্তন করতে পারলে বয়স যতই বাড়ুক না কেন, জীবনে থেকে যাবে বন্ধন, হাসি আর মানসিক শান্তি।

তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ