আপনি হয়ত ইউটিউবকে শুধু আপনার বিনোদনের মাধ্যমে হিসাবেই চিনে থাকেন।কিন্তু আপনি জানেন কি আমাদের চারপাশেই এমন অনেকেই আছে যারা ইউটিউবের মাধ্যমে টাকা আয় করে থাকে।তাঁরা ইউটিউবে কাজ করার মাধ্যমে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে নিজেদের মুক্ত করেছে।আপনি এই লেখাটি সার্চ ইঞ্জিনে থেকে “ইউটিউব থেকে টাকা আয়” অথবা ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম অথবা ইউটিউব থেকে ইনকাম লিখে সার্চ করে এসেছেন তাঁরা মানে আমি ধরে নিচ্ছি আপনি ইউটিউবে কাজ করে অন্যদের মত টাকা আয় করতে চান।
চিন্তার কোন কারন নাই আপনি একদম সঠিক জায়গায় এসেছেন।আমি আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে ইউটিউব থেকে ইনকাম করার সেরা ৮ টি উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব এবং একই সাথে ইউটিউবে কাজ শুরু করার জন্য কিভাবে পূর্ব প্রস্তুতি নিবেন সেই সম্পর্কে আপনাদের সাথে আলোচনা করব।তাহলে চলুন প্রথমে ইউটিউবে কাজ শুরু করার প্রস্তুতি সম্পর্কে বিস্তারিতি আলোচনা শুরু করা যাক।
ইউটিউবে কাজ শুরু করার পূর্ব প্রস্তুতি যেভাবে নিবেন
আপনি যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইউটিউবে কাজ শুরু করবেন তখন এখানেও ব্লগিং এর মত আপনাকে আপনার চ্যানেলে কাজ শুরু করার জন্য কিছু বিষয়ে পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহন করতে হবে।ইউটিউবে কাজ শুরু করার পূর্বে আপনাকে নিচের বিষয় গুলো সম্পর্কে আগে সিদ্ধান্ত এবং প্রস্তুতি গ্রহন করতে হবে।
- ভিডিও এর বিষয়বস্তু নির্ধারণ
- ভালো ক্যামেরা এবং আনুসাংগিক জিনিসপত্র এবং
- চ্যানেল মনিটাইজ পাওয়ার শর্ত পূরণ
আমরা এখন উপরের ৩ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিব যে কিভাবে আমরা আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে কাজ করে আয় করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করেতে পারি এবং ইউটিউব থেকে আয় করা শুরু করতে পারি।
(১) ভিডিওর বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা
আপনি যখন ইউটিউবের মাধ্যমে কাজ করে টাকা আয় করতে যাবেন তখন অবশ্যই আপনাকে আপনার ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করতে হবে।এখন আপনি যদি এলোমেলো ভাবে একেক সময়ে একেক ধরনের ভিডিও আপলোড করেন তাহলে আপনার ভিডিও মানুষ দেখতে চাইবে না এবং কেউ আপনার চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করতে চাইবে না।এবং অনেকেই বিরক্ত বোধ করবে।
এই জন্য আপনাকে আপনার চ্যানেলে সব সময় একই ধরনের ভিডিও পাবলিশ করার চেষ্টা করতে হবে।এখন প্রশ্ন হল আপনি কি ধরনের ভিডিও নিয়ে কাজ করবেন?এর সহজ উত্তর হল আপনি যে বিষয়ে নিয়মিত ভিডিও পাবলিশ করতে পারবেন এবং দীর্ঘদিন আপনার কাজ করার সুযোগ থাকবে সেই বিষয়ের ভিডিও নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে।
(২) ভালো ক্যামেরা এবং আনুসাংগিক জিনিসপত্র
ইউটিউব চ্যানেলে পাবলিশ করার জন্য ভিডিও কোয়ালিটি অবশ্যই ভালো হতে হবে।আর এই কারনে আপনার উচিত হবে একটা ভালো মানের ক্যামেরা কিনে নেওয়া।এখন আপনি যেহেতু নতুন সেহেতু আপনার অনেক ভালো মানের ক্যামেরা কেনার টাকা থাকবে না এটাই স্বাভাবিক, আর যদি কেনার সামর্থ্য থাকে তাহলেত কোন সমস্যাই নেই।যদি আপনার এই মুহূর্তে দামী ক্যামেরা কেনার মতও অবস্থা না থাকে তাহলে অন্তত ভালো মানের ক্যামেরা আছে এই রকম একটি স্মার্ট ফোন দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে হবে।
একই সাথে আপনি যদি নিজের ভয়েচ ব্যাবহার করতে চান তাহলে আপনার উচিত হবে একটা ভালো মানের মাইক্রোফোন কিনে নেওয়া।বর্তমানে বাজারে ৭০০-১০০০ টাকার মধ্য অনেক ভালো মানের মাইক্রোফোন কিনতে পাওয়া যায়।
আবার আপনি যদি ইনডোর (রুমের ভিতরে) ভিডিও তৈরি করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই একটি স্টুডিও সেটআপ করতে হবে।এখানে আপাতত শুধু ভালো একটি ব্যাকগ্রাউন্ড এবং একটু ভালো আলোর ব্যাবস্থা রাখলেই চলবে।
(৩) চ্যানেল মনিটাইজ পাওয়ার শর্ত পূরণ করা
আগে ইউটিউবে কাজ শুরু করা অনেক সহজ ছিল।একটা জিমেইল অ্যাকাউন্ট তৈরি করে যেমন তেমন একটা ভিডিও রেকর্ড করে চ্যানেলে আপলোড দিয়ে মনিটাইজের আবেদন করলেই ইউটিউব চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেখানো হত।এতে করে সবাই সহজেই কাজ শুরু করতে পারত।কিন্তু একটা সময় দেখা গেল এই সহজলভ্যতার কারনে অনেকেই চ্যানেল খুলে ইউটিউবে স্পামিং শুরু করে দেয়।এরপরেই ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজ করার জন্য দুইটি অতিরিক্ত শর্ত আরোপ করে।
শর্ত দুইটি হলঃ
- আপনি যদি আপনার ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজ করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার চ্যানেলে সর্বশেষ ৩৬৫ দিনে কমপক্ষে ৫০০ সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে।
- আপনার চ্যানেলের সবগুলো ভিডিও মিলে সর্বশেষ ৩৬৫ দিনে কমপক্ষে ৩০০০ ঘণ্টা ওয়াচ টাইম থাকতে হবে।
ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজ করার সকল শর্তগুলো দেখতে পারবেন এখানে।
ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার সেরা কয়েকটি উপায়
আমরা ইউটিউব চ্যানেলে কিভাবে কাজ শুরু করব সেটার পূর্ব প্রস্তুতি সম্পর্কে জেনেছি।এখন আমরা আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে কি কি উপায়ে টাকা আয় করতে পারি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।আমি এখানে আপনাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয় করার সেরা ৮ টি উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ইউটিউব ব্যাবহার করে আয় করার সেরা ৮ টি উপায় গুলো হল-
- বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয়
- ইউটিউব প্রিমিয়ামের মাধ্যমে আয়
- প্রোডাক্ট বিক্রি করে আয়
- ফ্যান ফান্ডিং এর মাধ্যমে আয়
- অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয়
- ভিডিও লাইসেন্সিং এর মাধ্যমে আয়
- চ্যানেল মেম্বারশিপের মাধ্যমে আয় এবং
- ইউটিউব চ্যানেল থেকে আপনার ওয়েবসাইটে ট্রাফিক নিয়ে যেয়ে আয়
আমরা এখানে ইউটিউব থেকে ইনকাম করার সেরা ৮ টি উপায় সম্পর্কে জানলাম এখন আমরা এই পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।তাহলে চলুন অযথা কথা না বাড়িয়ে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার সেরা ৮ টি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনার মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক।
(১) বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয়
যখন আপনার ইউটিউব চ্যানেলে ৫০০ সাবস্ক্রাইবার এবং ৩০০০ ঘণ্টা ওয়াচ টাইম পূর্ণ হয়ে যাবে তখন আপনাকে ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে আবেদন করতে হবে।আবেদন করার পর আপনার আপনার চ্যানেলটি বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য উপযুক্ত হলে গুগল আপনাকে আপ্রুভাল দিবে এবং আপনার চ্যানেলের ভিডিও গুলোতে গুগল অ্যাডসেন্সের বিজ্ঞাপন দেখানো শুরু করবে।তখন আপনার চ্যানেল ভিডিও দেখার সময়ে যে বিজ্ঞাপন দেখানো হবে সেখান থেকে একটা নির্দিষ্ট পরিমেন আয় আপনাকে প্রদান করা হবে।
(২) ইউটিউব প্রিমিয়ামের মাধ্যমে আয়
ইউটিউব প্রিমিয়ামের মাধ্যমে আপনার চ্যানেলের দর্শকরা চাইলে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে আপনার চ্যানেলের ভিডিও দেখার সময়ে বিজ্ঞাপন বন্ধ রাখতে পারবে।অর্থাৎ তাঁরা ভিডিও দেখার সময়ে আপনার ভিডিও গুলোতে কোন বিজ্ঞাপন দেখাবে না।আপনার ভয় পাওয়ার কারনে নাই।কারন তাঁরা যে টাকা খরচ করে আপনার ভিডিও গুলো বিজ্ঞাপন ছাড়া দেখবে সেখান থেকেও ইউটিউব আপনাকে নির্দিষ্ট হাড়ে আয় প্রদান করবে।এটাকে ইউটিউব প্রিমিয়াম প্রোগ্রাম বলা হয়ে থাকে।তবে এর জন্য আপনাকে অবশ্যই ইউটিউব প্রিমিয়াম প্রোগ্রামে সাইন আপ করে নিতে হবে।
(৩) প্রোডাক্ট বিক্রি করে আয়
আপনার যদি নিজের তৈরি করা প্রোডাক্ট থাকে সেগুলোর রিভিউ করে আপনার চ্যানেলের দর্শকদের কাছে সেই প্রোডাক্ট গুলো বিক্রি করে ভালো পরিমানের টাকা ইউটিউবের মাধ্যমে আয় করতে পারবেন।বর্তমানে অনেকেই তাদের বাড়ীতে তৈরি করা প্রোডাক্ট তাদের ইউটিউব চ্যানেল ব্যাবহার করে বিক্রি করে থাকে।
(৪) ফ্যান ফান্ডিং এর মাধ্যমে আয়
বর্তমানে অনেক ইউটিউব ভিডিও ক্রিয়েটর আছে যারা তাদের চ্যানেলের ভিডিও গুলোতে কোন বিজ্ঞাপন অথবা কোন ধরনের প্রোডাক্ট বিক্রি করে না।তাঁরা তাদের ভিডিও গুলোতে অনেক অনেক ইনফর্মেশন যুক্ত করে যা তাদের চ্যানেলের দর্শকদের অনেক উপকারে লাগে।তখন তাঁরা Buy Me A Coffee,Tipeee অথবা Patreon এর মত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তাদের চ্যানেলের দর্শকদের সাথে ফ্যান ফান্ডিং এর মাধ্যমে টাকা আয় করে।
(৫) অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয়
আমাদের দেশ থেকেি অনেকেই বর্তমানে অ্যামাজন অথবা এই ধরনের সাইট থেকে বিভন্ন ধরনের প্রোডাক্ট পছন্দ করে সেই প্রোডাক্ট রিলেটেড ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবের ভিডিও ডেশক্রিপশনে সেই প্রোডাক্টের অ্যাফিলিয়েট লিংক শেয়ার করে অথবা তাদের নিজেদের ওয়েবসাইটে একই ধরনের প্রোডাক্ট নিয়ে যে পেজটি আছে সেই পেজের লিংক শেয়ার করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে ইউটিউবকে ব্যাবহার করে টাকা আয় করছে।
(৬) ভিডিও লাইসেন্সিং এর মাধ্যমে আয়
মনে করেন আপনি এমন ধরনের ভিডিও তৈরি করেন যেগুলো প্রায়ি ভাইরাল হয়ে যায়।এখন যদি আপনার ভিডিও গুলো লাইসেন্স করা থাকে এবং কোন মিডিয়া যদি আপনার তৈরি করা ভিডিও প্রচার করতে চায় তাহলে আপনি এই মাধ্যমে থেকেও ভালো পরিমানের টাকা আয় করতে পারবেন।কিভাবে ইউটিউব ভিডিও এর লাইসেন্স করতে হয় সেই সম্পর্কিত একটা আর্টিকেল আমি খুব দ্রুত লেখার চেষ্টা করব।
(৭) চ্যানেল মেম্বারশিপের মাধ্যমে আয়
আপনি আপনার চ্যানেলে মেম্বারশিপ অপশন যুক্ত করতে পারেন।আপনার দর্শকদের আপনি বলতে পারেন যে তাঁরা যদি পেইড মেম্বারশিপ গ্রহন করে তাহলে তাঁরা এমন কিছু কন্টেন্ট পাবে যেগুলো ফ্রি মেম্বাররা পাবেনা।তবে এর জন্য আপনাকে অবশ্যই ফ্রি ভিডিও গুলোতে প্রমান করতে হবে যে আপনি যে বিষয়ে ভিডিও গুলো তৈরি করেন সেই বিষয়ে আপনি সত্যিকারের এক্সপার্ট।
(৮) ইউটিউব চ্যানেল থেকে আপনার ওয়েবসাইটে ট্রাফিক নিয়ে যেয়ে আয়
এই কাজটি বেশী করে যারা তাদের ওয়েবসাইটে গুগল অ্যাডসেন্স নিয়ে কাজ করে এবং বেশীরভাগ যাদের টেক ব্লগ আছে।আপনি খেয়াল করলে দেখতে পারবেন যে প্রায় সব জনপ্রিয় টেক ব্লগের একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে এবং সেখানে তাঁরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান নিয়ে ভিডিও পাবলিশ করে থাকে এবং একই সাথে সেই সমস্যার সমধান কিভাবে করা যায় সেই সম্পর্কিত একটি আর্টিকেল তাদের ওয়েবসাইটে/ব্লগে পাবলিশ করে থাকে।যখন তাঁরা তাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও পাবলিশ করে তখন তাদের সেই ভিডিও এর ডেশক্রিপশনে সেই আর্টিকেলের লিংকটি দিয়ে দেয়।ফলে যারা ভিডিও দেখে তাঁরা তাঁরা সেই লিংক ব্যাবহার করে তাদের ওয়েবসাইটে চলে যায়।এবং তাঁরা তাদের ওয়েবসাইটে আগে থেকেই বিজ্ঞাপন ব্যাবহার করার কারনে যখন কেউ তাদের ওয়েবসাইটে ভিসিট করে তখন তাঁরা সেখান থেকে ভালো পরিমাণে টাকা আয় করে থাকে।
আবার যখন তাদের কোন আর্টিকেল পড়ার জন্য মানুষ সার্চ ইঞ্জিন অথবা অন্য কোন মাধ্যম থেকে তাদের ওয়েবসাইটে আসে সেখানে তাঁরা তাদের সেই আর্টিকেল রিলেটেড তাদের ইউটিউব চ্যানেলে থাকা ভিডিওটি এমবেড করে রাখ ফলে সেখান থেকেও তাঁরা তাদের চ্যানেলের ভিডিও গুলোতে অনেক ভিউস পেয়ে থাকে।
শেষ কথা
আপনি যদি ইউটিউব থেকে আয় করতে চান তাহলে উপরের আলোচিত ৮ টি উপায়ের যেকোনো একটি নিয়ে শুরু করতে পারেন।তবে আপনি যদি একেবারেই নতুন হয়ে থাকেন তাহলে আপনার উচিত হবে বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে আয় করার সিস্টেম নিয়ে কাজ শুরু করা।আর আপনার চ্যানেলের ভিডিও গুলো অবশ্যই আপনার নিজের তৈরি করা হতে হবে।কারন ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য কোন কপিরাইট ভিডিও ইউটিউব অনুমোদন করে না।