সর্বশেষ সংবাদ

পরীক্ষার ফি দিতে না পারায় অপমান!স্কুল ছাত্রর আত্মহত্যা

অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল মাহফুজুর রহমান। তার বাবা দিনমজুর হওয়ায় পড়ালেখার খরচ চালাতে পারতেন না। শিক্ষিত হওয়ার সংগ্রাম জারি রাখতে অন্যের ক্ষেতে কাজ করত শিশুটি। স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা চললেও দিতে পারেনি ফি। এভাবেই অনুরোধ করে পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে সে।

কিন্তু তা আর শেষ করতে পারেনি অসহায় এ শিক্ষার্থী। সামান্য কিছু টাকার জন্য তাকে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার পর অকালেই ঝরে গেছে তার প্রাণ। ধুলোয় মিশে গেছে তার অভিভাবকদের পাহাড়সম স্বপ্ন। রোববার বিদ্যালয় থেকে ফেরার পর উদ্ধার হয়েছে ঝুলন্ত লাশ। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে রংপুরের পীরগাছার গুঞ্জরখাঁ গ্রামে।

সোমবার আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে শিক্ষকসহ দু’জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে নিহতের পরিবার।

উপজেলার দেউতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান কৌশিক বলে, ‘অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল আমাদের সহপাঠী মাহফুজ। কিন্তু অভাব-অনটনের সঙ্গে যুদ্ধ করে সে লেখাপড়া করছিল। স্কুলে ছুটি পেলেই অন্যের ক্ষেতে দিন হাজিরায় কৃষি কাজ করত। এ কারণে হয়তো সে অষ্টম শ্রেণির নিবন্ধন করতে দেরি করেছিল।

গণিত পরীক্ষার দিন শিক্ষকরা ভরা শ্রেণিকক্ষে তাকে দেখে বলেন, পরীক্ষার ফি দিয়েছিস, মাহফুজ যখন বলল যে দেয়নি, তখনই স্যারেরা বললেন রুম থেকে বের হয়ে যা। এরপর তাকে ডেকে নিয়ে যান একজন অফিস সহকারী। অধ্যক্ষের কক্ষে নিয়ে সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম ও আবদুল হান্নান তাকে আরেক দফা অপদস্ত করেন বলে শুনেছি। বিকেলে জানতে পারি সে মারা গেছে।’

নিহতের বাবা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি দিনমজুর মানুষ। যা আয় হয়, তা দিয়ে দুমুঠো ডাল-ভাতই জুটাতে পারি না। ছোট্ট ছেলেটি আমার হাল ছাড়েনি; মাঝে মধ্যে মানুষের জমিতে কাজ করে যা পেত, তা দিয়েই নিজের খরচ বহন করত। তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল, ভেবেছিলাম বড় হয়ে একদিন সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু শিক্ষকদের অপমান সহ্য করতে না পেরে সে আত্মহত্যা করেছে। রোববার স্কুল থেকে এসেই ঘরে ঢুকেছিল। পরে তাকে ডাকতে গিয়ে দেখি, সে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলছিল।’

অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর বলেন, ‘চলমান অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষায় শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমানের নিবন্ধন হয়নি। এ কারণে আগামীতে তাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে বলা হয়েছিল।’

সোর্সঃ সমকাল অনলাইন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *