ইমেইল মার্কেটিং কি?ইমেইল মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে এবং কেন ইমেইল মার্কেটিং গুরুত্বপূর্ণ?

গত বছরের শেষের দিকে আমার ফেসবুক বন্ধু সাব্বির হোসেন তার নিজের প্রয়োজনে একটি ইমেইল আইডি তৈরি করেছিল।এবং সে সেটা তার বিভিন্ন কাজে ব্যাবহার করত।এক সময় সে দেখল যখন কোন ওয়েবসাইটে সে কোন লেখা পড়তে যায় তার মধ্য থেকে বেশ কিছু সাইট তার কাছে ইমেইল আইডি চাচ্ছে এবং এটা দিলেই সেই সাইট গুলোর কন্টেন্ট সে আক্সেস করতে পারবে।প্রথমে ভয়ে ভয়ে ইমেইল আইডি না দিলেও সেই কন্টেন্ট গুলো তার খুব দরকারি হওয়ার কারনে এক সময় সে তার ইমেইল আইডি সেই ওয়েবসাইট গুলোতে দিয়ে দেয়।

ইমেইল আইডি দেওয়ার পর সাব্বির দেখল তার ইমেইল আইডি দিয়ে কোন ক্ষতি হয়নি বরং সে সেই সাইট গুলোর কন্টেন্ট এখন আক্সেস করতে পারছে আবার সেই ওয়েবসাইট গুলো নতুন কোন কন্টেন্ট পাবলিশ করলে সাথে সাথে তার ইমেইলে মেইল করে জানানো হচ্ছে।

আবার সাব্বির ভাই বেশী কিছুদিন আগে একটি আইফোন কিনেছে।আপনারা জানেন আইফোন ব্যাবহারকারীদের আইফোনের অ্যাপ স্টোর অ্যাপলে রেজিস্ট্রেশন করতে হয় তাদের অ্যাপস গুলো ব্যাবহার করার জন্য।আর এই কারনে সাব্বির তার ইমেইল আইডি দিয়ে অ্যাপলের অ্যাপস স্টোরে রেজিস্ট্রেশন করে।এরপরেই সাব্বির খেয়াল করল অ্যাপল স্টোর থেকে সব ধরনের আপডেট তার ইমেইলে মেইল করে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

আর এভাবেই যে বিভিন্ন সাইটে আমাদের মেইল দেওয়ার কারনে তাঁরা আমাদেরকে যে মেইল গুলো করে এটাই মূলত ইমেইল মার্কেটিং।

ইমেইল মার্কেটিং এর ইতিহাস

গত শতাব্দীর শেষের দিকে ১৯৭৮ সালে ইমেইল মার্কেটিং এর যাত্রা শুরু হয়েছিলো।সেই সময়ের একজন মার্কিন মার্কেটার যার নাম গ্রে থিউর্ক যিনি ডিজিটাল ইকুইপমেন্ট কর্পরেশন প্রচারের জন্য সর্বপ্রথম ইমেইল মাধ্যমে সেই প্রতিষ্ঠানের পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রায় ৪০০ জনকে পাঠিয়ে দেন এবং পরবর্তীতে তিনি দাবী করেন যে এই ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে ডিজিটাল ইকুইপমেন্ট কর্পরেশন কোম্পানি প্রায় ১৩ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য করেছে।

এরপরে দুনিয়ার অন্য প্রতিষ্ঠান গুলো ইমেইলের মাধ্যমে কোম্পানি।পণ্যের প্রচারের এক নতুন মাধ্যম সম্পর্কে জানতে পারল এবং শুরু হল ডিজিটাল মার্কেটিং এর এক নতুন মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি।

ই-মেইল মার্কেটিং কি?

ইমেইল মাধ্যমে ব্যাবহার করে সরাসরি কোন সেবা/পণ্যের গ্রাহকের কাছে কোন নির্দিষ্ট ধরনের সেবা বা পণ্য বিক্রি অথবা কোন ধরনের ইনফর্মেশন প্রচার করার জন্য ইমেইল আদান প্রদানের মাধ্যমে যে মার্কেটিং করা হয়ে সেই মার্কেটিং পক্রিয়াকে ই-মেইল মার্কেটিং বলা হয়।

ই-মেইল মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে?

এই লেখার শুরুতে সাব্বিরের যে গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি মূলত ইমেইল মার্কেটিং এভাবেই কাজ করে।কিন্তু গল্পে বলা সাব্বির ভাই নিজে থেকেই সেই ওয়েবসাইট গুলোতে তার ইমেইল আইডি দিয়েছিল বলেই তাঁরা তাঁকে ইমেইল পাঠাতে পেরেছিল।কিন্তু আপনি হয়ত অনেক সময় দেখে থাকবেন যে আপনি হয়ত কোন কোম্পানি থেকে বিজ্ঞাপন যুক্ত ইমেইল পেয়েছেন কিন্তু আপনি কখনো সেই ওয়েবসাইট গুলোতে আপনার ইমেইল আইডি নিজে থেকে দেন নি!তাহলে তাঁরা কিভাবে আপনার মেইল আইডি পেল?এটা মূলত বিভিন্ন ধরনের ইমেইল কালেক্ট করার সফটওয়্যার এর মাধ্যমে আপনার আমার সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট গুলো থেকে সংগ্রহ করা হয়।এই মেইল সংগ্রহ করার ব্যাপারে আপনাদের সাথে অন্য একটি আর্টিকেলে আমি বিস্তারিত আলোচনা করব।

আমাদের ই-মেইল আইডি গুলো সংগ্রহ করার পরে বিভিন্ন ই-মেইল মার্কেটিং সফটওয়্যার এর মাধ্যমে আমাদের মেইল গুলোতে মেইল সেন্ট করার হয়।সফটওয়্যার ব্যাবহার করার কারন হল তাঁরা একই মেইল এক সাথে কয়েক হাজার থেকে কয়েক লাখ ই-মেইল আইডিতে একসাথে সেন্ট করে থাকে।

ই-মেইল মার্কেটিং এর গুরুত্ব

এক গবেষণায় দেখা গেছে যে ইউএসএ এর মানুষ সসসাল মিডিয়া অথবা অন্য ওয়েবসাইট গুলোর চাইতে ইমেইল এর মাধ্যমে তথ্যর আদান প্রদান করতে বেশী অভ্যাস্থ।তাদের প্রায় ৯০% মানুষ ই-মেইলের মাধ্যমে অনলাইন সংক্রান্ত কাজ-কর্ম বেশী করে থাকে এবং এই ৯০% মানুষের মধ্য অন্তত ৪০% মানুষ দিনে কমপক্ষে এক-তিন বার তাদের ইমেইলে নতুন কোন মেইল আসছে কিনা চেক করে।সুতরাং, তাদের মেইলে ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে কোন সেবা/পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে অন্য মাধ্যমের চাইতে বেশী রিচ পাওয়া যাবে এটাই স্বাভাবিক।

আবার বেশী রিচ মানেই বেশী সেল হবে এটাই স্বাভাবিক।আপনি যদি কোন বিষয়ের বিজ্ঞাপন সরাসরি কোন ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতে পারেন তাহলে আপনার বিক্রি অনেক বেড়ে যেতে পারে।এবং বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে আপনি যদি অন্যান্য মাধ্যমে এবং ই-মেইল মার্কেটিং মাধ্যমে একই সাথে আওপ্নার পণ্যর জন্য মার্কেটিং করেন তাহলে অন্য মাধ্যমের চাইতে ইমেইল  মার্কেটিং মাধ্যমে ৬০% বেশী রিচ পাবেন।তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি যে অন্য মাধ্যমেই চাইতে ইমেইল মার্কেটিং মাধ্যমে আমাদের সেল এবং প্রফিত দুইটাই বেশী আসবে।

উপরোক্ত বিষয় গুলো থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ই-মার্কেটিং এর মাধ্যমে তাদের সেবা/পণ্য অথবা প্রতিষ্ঠানের প্রচার করা অন্য বিজ্ঞাপন মাধ্যম গুলোর চাইতে বেশী লাভজনক।

ই-মেইল মার্কেটিং এর প্রকারভেদ

ইমেইলের ধরনের উপরে নির্ভর করে ই-মেইল মার্কেটিংকে মূলত পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়।কারন এর একেক ধরনের মেইল গুলো একেক ধরনের সেবার মার্কেটিং এর জন্য ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।পাঁচ রকমের ই-মেইল মার্কেটিং এর ধরন গুলো হল-

  1. ওয়েলকাম ইমেইল
  2. ফ্ল্যাশ সেইল ইমেইল
  3. এবান্ডন্ট কার্ট ইমেইল
  4. রিওয়ার্ড ইমেইল এবং
  5. ট্রানজেকশনাল ইমেইল

(১) ওয়েলকাম ইমেইল

আমরা যখন কোন ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করি তুখন আমাদের সর্বপ্রথম যে মেইলটি পাঠানো হয় সেই মেইলকেই ওয়েলকাম ইমেইল বলা হয়ে থাকে।ই-মেইল ব্যাবহারকারীদের মধ্য প্রায় ৭৫% ব্যাবহারকারী চান যে তাঁরা যখন কোন ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করবে তখন যেন সেই ওয়েবসাইট থেকে তাদেরকে একটি ওয়েলকাম ইমেইল পাঠানো হয়।

(২) ফ্ল্যাশ সেইল ইমেইল

ফ্ল্যাশ সেল মেইল গুলো মূলত যারা সেন্ট করে তাঁরা তাদের ওয়েবসাইটে ট্রাফিক জেনারেট করে তাদের সেবা/পণ্য বিক্রি করার উদ্দেশ্য করে থাকে।এসব মেইলে মূলত বিভিন্ন ধরনের বিক্রয় অফার যুক্ত করা থাকে বিধায় অনেক ইমেইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এসব মেইলকে ফ্লাগ অথবা স্পাম হিসাবে চিহ্নিত করে রাখে বিধায় এই ধরনের মেইল গুলো বেশীরভাগ সময়ে আমাদের মেইলের স্পাম বক্সে আসে।

(৩) এবান্ডন্ট কার্ট ইমেইল

ধরেন আপনি কোন ই-কমার্স সাইটে আপনার ইমেইল ব্যাবহার করে নিবন্ধন করলেন অথবা পূর্বে থেকেই নিবন্ধন করা ছিল।এখন আপনি যদি তাদের ওয়েবসাইটে যেয়ে অনেক গুলো প্রোডাক্ট সিলেক্ট করেন অথবা আপনার কার্টে যোগ করেন কিন্তু না কিনে বেরিয়ে আসেন তখন সেই ই-কমার্স সাইট আপনাকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য যে মেইল গুলো আপনাকে পাঠায় সেই মেইল গুলোকেই এবান্ডন্ট কার্ট ইমেইল বলা হয়ে থাকে।

(৪) রিওয়ার্ড ইমেইল

রিওয়ার্ড ইমেইল মূলত একটি প্রি-রেডি ইমেইল টেমপ্লেট যা তৈরি করার প্রধান উদ্দেশ্য হল কোন প্রতিষ্ঠান তাদের বিশ্বস্ত গ্রাহকদের স্পেশাল অফারের ইমেইল পাঠানোর জন্য।বলা হয়ে থাকে এই ধরনের মেইল গুলো ব্যাপক হাড়ে কনভার্সন রেট বাড়াতে পারে।যেমন আমার কাছে প্রায়ই নেমচিপ থেকে কম দামে ডট কম ডোমেইন কেনার জন্য রিওয়ার্ড ইমেইল আসে।

(৫) ট্রানজেকশনাল ইমেইল

নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে যে এখানে টাকা-পয়সার বিষয় জরিত।এই ধরনের মেইল গুলোতে প্রধানত কেনাকাটার রিসিপট পাঠানো হয়ে থাকে। তবে টাকা-পয়সার ব্যাপার ছারাও এই ধরনের মেইলগুলোতে কার্ট এবান্ডনমেন্ট,সাপোর্ট রিকোয়েস্ট এবং পাসওয়ার্ড রিসেট টাইপের মেইল গুলোও পাঠানো হয়ে থাকে।

শেষ কথা

আমি আজকের লেখার শিরোনাম দিয়েছিলাম ইমেইল মার্কেটিং কি?ইমেইল মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে এবং কেন ইমেইল মার্কেটিং গুরুত্বপূর্ণ?আমি আশা করি যে আমার সম্পূর্ণ আর্টিকেলে আমার শিরোনামে দেওয়া বিষয় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এবং সাথে অতিরিক্ত অনেক তথ্য দিতে পেরেছি এবং এই আর্টিকেল থেকে আপনারা ই-মেইল মার্কেটিং সম্পর্কে বাস্তব সম্মত একটা ধারনা পেয়েছেন।